বদ অভ্যাস

বদ অভ্যাস

আমি আমার খালার বাসায় থাকি।আমার মা আমি ছোট থাকতেই মারা যায় প্রচন্ড জ্বরে।বাবা আরেক টা বিয়ে করে কিন্তু আমার ঠায় হয়নি বাবার নতুন সংসারে।একমাত্র খালা আর খালু আমায় তাদের সাথে নিয়ে আসে।খালার একটাই ছেলে আসিফ ভাইয়া।আমার থেকে ছয় বছরের বড়।আমার এখানে আসাটা আসিফ ভাইয়া মেনে নিতে পারেনি।তার কাছে মনে হয় যে খালা খালু আমাকে তার চেয়ে বেশি ভালবাসে।আমি তার জায়গা দখল করে নিচ্ছি।আসিফ ভাইয়া আমার সাথে তেমন কথা বলেনা।

যে টুকু বলে দূর ছাই ব্যবহার করে।সব সময় আমার সাথে কড়া মেজাজে কথা বলে।আমি যতটুকু পারি তাকে এরিয়ে চলি।আসিফ ভাইয়া সব সময় আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।যখন তখন অপমান করে।আর অর্ডার করে।সিমিন আমার এইটা কই? সিমিন তোকে না বলেছি ঐ টা করতে।আমি জেনো তার ফাইফরমাশ খাটানো বুয়া।আসিফ ভাইয়ার একটা বদ অভ্যাস আছে মাঝরাতে কফি খাওয়ার। আমি ঘুমিয়ে গেলেও সে ঠিক করে দুইবার আমায় জাগিয়ে কফি বানিয়ে নিবে।আমি খালার কাছে প্রায়ই বলি তোমার এই বদ ছেলের বদ অভ্যাস গুলো ছাড়তে বলো।তার আরো বদ অভ্যাস আছে এলোমেলো অগোছালো পুরো ঘর গুছিয়ে রাখলে দশ মিনিটেই আবার আগের মতো করে ফেলে।

তার সাথে আমি ঝগড়া তে ও পারতাম না বার বার আল্লাহ কে বলছিলাম ইয়া আল্লাহ এই বদের হাড্ডি থেকে আমায় মুক্তি দাও।হুট করে একদিন বাসায় ফাহিম ভাইয়া এলো।আসিফ ভাইয়ার বন্ধু।ফাহিম ভাইয়ারা আমেরিকায় থাকে পরিবার সহ। ফাহিম ভাইয়া দেশে এসেছে বিয়ে করতে। মেয়ে দেখছে ফাহিম ভাই।প্রথম দিন এসেই বার বার আমায় দেখছিলো।কে আমি জানতে চাইলে আসিফ ভাইয়া বলে দেয় আমি তার মায়ের বোনের মেয়ে তার চিরশত্রু। কি অপমান টাই না আমায় করলো একটা অচেনা মানুষের সামনে।

ফাহিম ভাই চা খেয়ে চলে গেলো আর আমার চায়ের খুব প্রশংসা ও করলেন।বিদেশে কফি খেতে খেতে নাকি বিরক্তি এসে গেছে তার।দুইদিন পরেই ফাহিম ভাই আবার এলেন সাথে তার পরিবার নিয়ে একেবারে হুট করে।ফাহিম ভাইয়ের জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাব এনেছেন।খালা খালু তো ভিষণ খুশি।আমেরিকায় সেটেল্ড ছেলে আর কি লাগে আর পাত্র চেনা জানা।আমার কোনো মতের প্রয়োজন হলো না কি বা বলার আছে আমার।খালা খালু যা ভালো বুঝবে তাই হবে।কিন্তু আসিফ ভাইকে দেখলাম নিরব ছিলো।আমাকে আংটি পড়িয়ে গেলো ফাহিমের পরিবার।এখন আর ফাহিম ভাই নয় শুধুই ফাহিম।

ফাহিমের সাথে আমার প্রতিদিন কথা হতে থাকে।আসিফ ভাই যখন তখন আমার ঘরে চলে আসে।ইদানিং তার ফাই ফরমাশ আরো বেড়েছে। রাতে এখন দুইবার না যখন তখন কফি খাচ্ছে আর বার বার আমায় সেই কফি বানাতে হচ্ছে।বুয়া কাপড় ধুলে তার পছন্দ হয়না আমাকে ধরিয়ে দেয়।ফাহিমের সাথে সেদিন বের হলাম উনি সেখানে হাজির বলে কি উনি জানতেন না আমরা এখানে আসব।আবার ফাহিম বাসায় এলেও আসিফ ভাই বাহিরে থাকলে কোথায় থেকে জেনো চলে আসে।ফাহিমের সামনেই আমাকে টুকটাক অর্ডার করে।

বাসায় বিয়ের তোর জোর চলছে। খালু কোনো কার্পণ্য করছে না আমার বিয়েতে।ফাহিমের ভেতর ইদানিং একটু চেঞ্জ দেখতে পাচ্ছি।আমার সাথে প্রাইভেট ভাবে দেখা করতে চাইছে।আমেরিকায় থাকতে থাকতে তার সবকিছু একটু অন্যরকম।আমি অমত জানালে আমার সাথে একটু রাগারাগি ও করে।ওয়েস্টার্ন পোশাকে আমায় দেখতে চায়।একটু অন্যরকম ভাবে ছবি চায়। আমি তাতেও নিরব। আসলে এই ফাহিম কে আমি চিনতে পারছিনা।আমি ভাবছি বিয়ে টা না হলেই ভালো।আবার খালা খালু কে ও কিছু বলতে পারছিনা।

এলাকার সবাই জানে আমার বিয়ে।সারা বাড়ি রঙিন লাইট দিয়ে সাজানো হয়ে গেছে আজ গায়ে হলুদ। হলুদ ও হয়ে গেলো। আসিফ ভাইকে সবাই জোর করে হলুদ লাগিয়ে দিলো। বিয়ের হলুদ লাগালে নাকি তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়।হলুদ শেষেও আসিফ ভাই আমাকে নিস্তার দেয়নি।সেই আবার কফি। কফি করে আসিফ ভাইকে বললাম শেষ কফি খেয়ে নিন।আসিফ ভাই নিরব। আমাকে অনেক সকালে পার্লারে নিয়ে যাওয়া হলো বউ সাজাতে।বউ সেজে কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসেছি কিন্তু ফাহিমের পরিবারের কেউ আসছেনা।

হঠাৎ ফাহিমের একটা এস,এম,এস পেলাম আমাকে বিয়ে করা ফাহিমের সম্ভব না।এই সময়ের মেয়ে হয়েও আমি আপডেট না।আমাকে নিয়ে সে আমেরিকায় তার বন্ধু, কলিগ, প্রতিবেশীদের সামনে যেতে পারবে না।
বিয়ে ভেঙ্গে গেলো। বাসায় ফিরে এলাম কিছু আত্মীয় অনেক বাজে কথা শুনাচ্ছিলো।খালা খালুও অনেক ভেঙ্গে পড়েছে।এতো কটু কথা আমি নিতে পারছিনা তাই সেই রাতেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাই সবার অগোচরে, হাতের কাছে যা কাপড় পাই তাই নিয়ে।বাস স্টপে বাসে উঠতে যাবো এমন সময় পেছন থেকে কেউ আমার হাত টেনে ধরলো। কোথায় যাচ্ছো সিমিন?পেছন ফিরে দেখি আসিফ ভাই!এই প্রথম সে আমায় তুমি বলছে?

–যেতে দিন আসিফ ভাই অনেক সম্মান নষ্ট হয়েছে আপনাদের।আর নাহ একটা এতিম কে অনেক দয়া করেছেন।

–তুমি আমার বদ অভ্যাস গুলোর একটা যা আমি ছাড়তে পারবো না।রাতে তোমার ঘুম ঘুম চেহারার প্রেমে আমি পরে যাই আর সেই চেহারা দেখতেই আমি রাতে তোমায় জাগিয়ে কফি খাওয়ার বাহানায় তোমায় দেখি।ঘর বার বার এলোমেলো করি জেনো তোমার বিচরণ বার বার হয় আমার ঘরে।কাপড় তোমায় দিয়ে ধোয়াই কারণ তোমার পরশ থাকে তাতে।তুমি মায়ের কাছে বলনা যে আমার বদ অভ্যাস গুলো ছাড়তে?কি করে ছাড়ি?বাকি বদ অভ্যাস ছাড়লে যে তোমায় ও ছাড়তে হবে আমার।পারবো না সিমিন।থাকোনা আমার বদ অভ্যাস হয়ে।

ফেরাতে পারিনি সেদিন আসিফ কে, হুম আসিফ ভাই থেকে এখন সে আমার আসিফ।আর এখন আমাদের মাঝে আছে সপ্তক।আসিফের বাকি সব বদ অভ্যাস এখনো আছে।আর আমাকে ঘিরেই তার সব বদ অভ্যাস।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত