এ কেমন জরিমানা?

এ কেমন জরিমানা?

দোকানে যাচ্ছিলাম চা খেতে পথিমধ্যে এক ভিক্ষুক এসে ধমকের সুরে টাকা চাইলো। মানিব্যাগ খুলে দেখলাম একটা পাঁচ টাকার নোট আর একটা দুই টাকার নোট আছে পুরো মানিব্যাগটা জুড়ে। পাঁচ টাকাটা আমার লাগবেই চা না খেয়ে আসলে হবেনা। তাই পাঁচ টাকাটা ভিক্ষুক কে না দিয়ে দুই টাকার নোটটা তার হাতে দিলাম। ভিক্ষুক টাকাটা হাতে নিয়েই হুংকার দিয়ে বলল, “হুর মিয়া আজকাল কেউ দুই টাকা দেয় নাকি? লাগবেনা আপনার টাকা। আপনি বড়লোক হইলেও মনটা ছোটলোকের পাইছেন। ”

আমি কিছু বলতে যাবো তখন আমায় থামিয়ে দিয়ে তিনি উল্টো পাঁচ টাকা আমায় দিয়ে বললেন, “এই লন। গরিব হইতে পারি মাগার ছোটলোক না। এই বলে সে চলে গেল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছি কাঠ হয়ে। লোকটা কি ভাব টাই না দেখালো। শালার ভিক্ষুক, মনের কথা যদি বুঝতি তাইলে এমন করতি না। ওমা একি? আমার হাতে একজন আন্টি দশ টাকা দিয়ে বলতেছে, ” বাবারে তোমায় দেখে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। বড় ধরনের বিপদে পড়ে গেছ হয়তো। সত্যি তোমাকে মানাচ্ছে না এই অবস্থায়। এই বলে রিকশাওয়ালাকে বলল, এই চলো।

আমি তাড়াহুড়ো করে আন্টিকে বললাম, আপনি যা ভাবছেন আমি…. আসলে বইলা লাভ নাই আন্টি অলরেডি চলে গেছে। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। টাকাটা ভিক্ষুক মামাকে ফিরিয়ে দিয়ে বাসায় আসলাম। ফ্যানের নিচে বসে মাথা ঠান্ডা করতেছি। কী একটা ব্যাপার ঘটে গেল? আল্লাহ বাঁচাইছে যদি কেউ দেখত তাহলে কী হইত জানা নাই। ঠিক এই মূহুর্তে লোডশেডিং হলো। ধুর এটা কোন কাজ হইলো। বাসা থেকে বের হয়ে ছাদে যাব। যেই বাসা থেকে বের হলাম অমনি পাশের বাসার আন্টির সাথে মুখোমুখি দেখা। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ” কী ব্যাপার আকাশ? কোথাও যাচ্ছ নাকি? আমি বললাম, “এই তো আন্টি ছাদে যাব। ”

– আচ্ছা যাও। তবে রাতুল (আন্টির ছেলে) চাকরি পেয়েছে জানোতো?
– জি আন্টি কিছুক্ষণ আগে জানলাম। শুভকামনা রাতুল ভাইয়ের জন্য।
– ধন্যবাদ। কিন্তু বলি কী এভাবে সারাদিন এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি না করে একটু চাকরির খবরা খবর রেখো। তোমার আম্মুকে খবরটা জানিয়ে আসি।

এই বলে আন্টি আমাদের বাসায় খুশি খুশি মনে ঢুকে গেলেন। বেচারা আম্মুর অবস্থা কিছুক্ষণ পর ভয়াবহ হয়ে উঠবে। আমার সহজ-সরল আম্মুর কথা ভেবে মনটা কেঁদে উঠলো। ছাদে উঠে দেখলাম কয়েকটা ছেলে ব্যাডমিন্টন খেলছে। ভাবলাম কিছুক্ষণ ব্যাডমিন্টন খেলে মনটাকে শান্ত করি। “এই দাওতো একটু খেলি” বলার সাথে সাথে ছেলেটা একটা ত্রিভুজাকৃতির ভয়ানক হাসি দিয়ে বললো “সরি দেওয়া যাবে না। ওই রাফি ফ্লাওয়ার মার” শক খেলাম, কীভাবে ইগনোরটা করলো আমায়। আধুনিক পোলাপাইন এসব হতেই পারে। বাধ্য হয়েই ব্যাপারটা মেনে নিলাম। দক্ষিণ দিকে ঘুরে বাতাস লাগাতে থাকলাম গায়ে। আহ শান্তি! এই মুহূর্তে গার্লফ্রেন্ড রিমু ফোন দিলো।

– হ্যালো রিমু বলো।
– এত ছোটলোক তুমি, আমি কখনো ভাবিও নাই। তোমার সাথে রিলেশন রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।
– কী বলছো? আমি কী করেছি? প্লিজ বুঝিয়ে বলো?
– তুমি ভিক্ষুকের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নাও, ছিঃ। আমার কাছে মাঝেমধ্যে চাইলে কি আমি কখনো তোমাকে মানা করেছি বলতো? তোমার বিরুদ্ধে বলেছি?
– না কিন্তু শোনো ব্যাপারটা আসলে কী।
– তোমার বলা লাগবে না। তুমি কি টাকা নাওনি ভিক্ষুকের কাছ থেকে? আমি নিজ চোখে দেখেছি। বলো নাওনি? উত্তর দাও?

– হ্যাঁ নিয়েছি কিন্তু….
– শোনো আকাশ, চিল্লায়া মার্কেট পাওন যায় না। তোমার ছোটলোকি কাজকারবার সব ধরা পড়ে গেছে। আমাকে আর ফোন দিবা না। বাই। ফোন কেটে দিল রিমু। কী সুন্দর তিল থেকে তাল হয়ে গেল ব্যাপারটা। এসব কী ঢেলে দিলো রিমু আমায়? ধুর কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। রিমু অনেক রাগী একটা মেয়ে। ওর রাগ সহজে কমবে না। আর ও যেটা বিশ্বাস করে সেটা করেই। আসলেই রিমু আমায় অত্যাধিক পরিমাণে আর্থিকভাবে সহায়তা করে থাকে। যার জন্য আমি এতোটা ভালবাসি রিমুকে। কী করব আমি? কিচ্ছু ভেবে পাচ্ছিনা।

দুই দিন পার হয়ে গেল। রিমু কোন ফোন দিচ্ছে না আমায়, ধরছেও না। বাধ্য হয়ে সেই ভিক্ষুক মামাকে খুঁজতে বের হলাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখলাম তিনি আরাম করে চা খাচ্ছেন একটা দোকানে। আমি কাছে গিয়ে সব খুলে বললাম এবং এও বললাম প্লিজ দয়া করে রিমুর সামনে যখন আপনি বলবেন সত্যিটা বলবেন। বলবেন, আমি আসলেই আপনার কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেই নাই। ব্যাপারটা কী হয়েছিল সত্যিটা বলবেন। মনে থাকবে তো?
তিনি বললেন ” আসলে বাবা আমার একটু কম মনে থাকে। স্মৃতিশক্তি বড্ড দুর্বল। তবে তুমি যদি এখন আমাকে পঞ্চাশটা টাকা দাও আমার সব মনে থাকবে। আমার মাথায় রক্ত উঠে গেছে। কী বলল এটা? ঘুষ দিব আমি? কিন্তু না, মাথা ঠান্ডা করে রাখতে হবে কারণ উল্টাপাল্টা কিছু বললে সব গেল। রিমুর সামনে গিয়ে যদি বলে যে আসলেই আমি টাকা চেয়েছিলাম, তাহলে তো সবই গেল। বাধ্য হয়ে বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আপনাকে পঞ্চাশ টাকা দিব। এখন চলেন যাই।

দুই ঘন্টা যাবত মামাকে নিয়ে রিমুদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কল দিচ্ছি কিন্তু রিমু ধরছেনা। রিমুদের বাসার সামনে শুধু যে দাঁড়িয়ে থাকছি তা না ভিক্ষুক মামা কে প্রতি আট মিনিট পরপর নাস্তা করাতে হচ্ছে। এই মূহুর্তে তিনি একটা রুটির প্যাকেট হাতে নিয়ে কলা খাচ্ছেন। আর আমি আরেকটি ছেলেকে বিশ টাকা দিয়ে উপরে পাঠালাম রিমুকে ডাকার জন্য।

আরো বেশ কিছুক্ষণ পর অবশেষে রিমু আসলো। এসে সব শুনে বললো, ” আচ্ছা ঠিক আছে তোমায় ক্ষমা করলাম। তবে সাময়িক ভাবে আগামী তিনদিন আমার ধারে কাছেও ভিড়বে না, এমনকি কল, মেসেজও না।” যাক বাবা বাঁচা গেল। এরপর থেকে ভিক্ষুক মামাদের ক্ষেত্রে আমি বেশ সচেতনতার সাথে সম্মান দিয়ে থাকি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত