শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। খালাতো বোন জেরি এসে বললো, ভাইয়া, বাসায় তোর ঘটকী এসেছে! আমি বই রাখতে রাখতে বললাম, আমার ঘটকী মানে কী?এই ঘটকীটা আবার কোন প্রানী? আরে, তোর জন্য যে মেয়ে দেখেছে! সে তো ঘটক! ঘটকী বলছিস কেন? ফাজলামো করছিস? চড় মেরে তোর আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়া দরকার! আক্কেল দাঁত ফেলবি কীভাবে?
আমার তো আক্কেল দাঁতই উঠেনি! ঘটকী বলছি,কারন তোর ঘটক একজন মহিলা! তাই বল! তা মেয়ে দেখতে কেমন? তোর চেয়ে বেশি সুন্দরী? ঘটকী তো বলছে পরীর চেয়েও বেশি সুন্দরী। তুই দেখলে নাকি ফিট খেয়ে যাবি! বলিস কী রে! এর আগেও তো একই কথা বলেছে। ওরা পেত্নীকেও পরীর চেয়ে বেশি সুন্দর বলে! তা মেয়ের হাইট কেমন? আমি কিন্তু খাটো মেয়ে বিয়ে করবো না। তোর ঘটকী বলছে, মেয়ে যতখানি লম্বা বিদ্যুতের খুঁটিও নাকি এতো লম্বা না! আর মাথার চুল এতো লম্বা যে তা দিয়ে নাকি উঠোন ঝাড়ু দেওয়া যাবে!!
এই হারামি মহিলা বানিয়ে বানিয়ে বলছে না তো! একবার পরী দেখাতে গিয়ে এই হারামি কি করেছিল মনে নাই? কুচকুচে কালো,,,,, এইবার নাকি এমন হবে না। খালাম্মাকে ঘটকী বলেছে মেয়ে পছন্দ না হলে খালাম্মার জুতা,ঘটকীর গাল!! একদিন বন্ধু রাতুল আর খালাতো বোন জেরি এবং মাকে নিয়ে মেয়ে দেখতে গেলাম। আহামরি সুন্দরী নয় তবে মায়া কাড়া চেহারা। হাইট পাঁচ ফুট তিন ইন্ঞি, চুল কোমড়ের নীচে ছাড়াবে। মোটামুটি ভালো লাগলো। আমি মেয়ের সাথে একান্তে কথা বলতে চাইলাম। নাম লিমা।জেরি লিমার সাথে কথা বলার ব্যবস্হা করলো। আমরা ছাদে চলে গেলাম।
আমি বললাম, তোমাকে বিয়ে করতে পারি,আমার কিছু শর্ত আছে। রাজি? লিমা বললো,আগে শর্তগুলো শুনি তারপরে মতামত জানাই,,,, ওকে, প্রথম কথা হচ্ছে, আমার সাথে ঝগড়া করতে পারবে না। লিমা বললো, রাজি। অহেতুক সন্দেহ করতে পারবে না। স্টার জলসা, জি বাংলা টাইপ ইন্ডিয়ান চ্যানেল দেখা যাবে না। রিমোট নিয়ে টানাটানি করা যাবে না। পরিবারের সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে। আর কিছু? শুধু আমাকে ভালোবাসতে হবে। সবই মানলাম। আমারও একটা শর্ত আছে, যদি মানেন তাহলে আপনাকে বিয়ে করতে পারি,,,, কী শর্ত?
এখন বলবো না,বিয়ের দিন বলবো। এখন বলেন আপনি রাজি কিনা। তুমি আমার এতোগুলা শর্ত মানবে,আর আমি তোমার একটা শর্ত মানবো না, তা কি হয়?আমি রাজি। ফিরে আসার সময় রাতুল বললো, দোস্ত মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে, যদি এই মেয়ে বিয়ে না করিস তাহলে তোকে খুন করে ফেলবো! এই মেয়ে লাখে একটা। এমন লক্ষী মেয়ে তুই কোথাও পাবি না।আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, এর চেয়ে ভালো মেয়ে তুই জীবনেও পাবি না।গ্যারান্টি দিলাম। বিফলে মূল্য ফেরত!! আমি কোন কথা বললাম না।
রাতুল আবার বললো, বাই দা রাস্তা, দোস্ত বাসর রাতেই বিড়াল মেরে দিবি।যদি বাসর রাতে বিড়াল না মারিস তাহলে কিন্তু সারাজীবন ভূগতে হবে। বউ কন্ট্রোল করতে পারবি না।যে করেই হোক বিড়াল মারা চাই! শালা, তুই পুরুষ মানুষ, বাঘের মতো আচরণ করবি!! আমি বললাম, যদি কোন কারনে বিড়াল না মারতে পারি, তাহলে কি হবে? ইঁদুর মারলে হবে না, দোস্ত,? ইদুর মারলে কি বউ কন্ট্রোল করা যায় না? রাতুল রাগী চোখে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, বুঝেছি শালা! তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না!! বিড়াল তো দুরের কথা, তুই শালা বাসর রাতে মশাও মারতে পারবি না!!! আমি ভয় পাওয়া গলায় বললাম, তাহলে উপায়?
রাতুল বিজ্ঞের মতো করে বললো, একটা উপায় অবশ্য আছে,সেক্ষেত্রে আমিও তোর সাথে বাসর ঘরে থাকলাম, সব কিছু শিখিয়ে পড়িয়ে দিলাম,,,,,, লিমার সাথে ধুমধামে বিয়ে হয়ে গেল। বাসর রাতে লিমা একা একা বসে আছে।আমি ঘরে ঢুকে আস্তে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে ঘুরার আগেই বাজখাই গলায় আওয়াজ পেলাম, এই হাঁদারাম!দরজা লাগাতে এতোক্ষণ লাগে?? এমন কর্কশ গলায় বাসর রাতে কথা বললো কে? আমি এদিকওদিক খুঁজতে লাগলাম। তাকিয়ে দেখি, লিমা রাগী রাগী চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! বাঘের মতো আচরণ করবো কি,ভয়ে আমার আত্মা শুকিয়ে গেলো!
আমি কাছে গিয়ে বললাম, কি হয়েছে, জান? তোমার কি বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে? মশায় কামড় দিচ্ছে? মশারী টানিয়ে দেবো? ঐ বেকুব! বাসর ঘরে কেউ কি মশারী টানায়? তুই এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?আমাকে এতোক্ষণ একা একা বসিয়ে রেখেছিস কেন? তুই তোকারি করেছো কেন? আমি তোমার স্বামী,,,,, রাখ, তোর স্বামী! আমি একটা শর্তের কথা বলেছিলাম, মনে আছে?
আমি বললাম, আছে।কী শর্ত? আমার শর্ত হচ্ছে, আজ থেকে আমার কথা মতো তোকে চলতে হবে। কোন অবাধ্য হওয়া যাবে না। আমার কথা ছাড়া নট নড়নচড়ন!! হায় আল্লাহ! রাতুল বলেছিল এই মেয়ে লক্ষী! এই তার নমুনা!! এ তো সাক্ষাৎ ডাইনি!!! আমি ভয় পেয়ে বললাম, ঠিক আছে, জান।কি হয়েছে তোমার,জানপাখি, ময়নাপাখি,টিয়া পাখি? মাথা টিপে দেবো? দে।আমি ঘুমিয়ে গেলে তুই নীচে গিয়ে শুয়ে পরবি!আমার ঘুমের যেন ডিস্টার্ব না হয়, তাহলে তোর খবর আছে!! আমি মাথা টিপতে টিপতে ভাবতে লাগলাম, হায় আল্লাহ! এটা বাসর রাত নাকি বাঁশের রাত!! বাসর রাতেই এমন বাঁশ খেয়ে গেলাম!!!
মাথা টিপতে টিপতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি মনে নাই, জেগে উঠে দেখি আমি লিমার কোলে শোয়া।আমি জেগে উঠতেই সে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো! আমি কিছুই বুঝলাম না। আমি কিছু জিগ্যেস করার আগেই সে হাসতে হাসতে বললো, তুমি বাসর ঘরে বিড়াল মারতে চেয়েছিলে, আমি বাঘ মেরে দিলাম! কেমন হলো বলো তো!! আমি তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, তুমি আমার লক্ষী বউ। লিমা আমাকে আরোও জোরে জড়িয়ে ধরলো!