পাখি

পাখি

” আপনার নাম কি? ” এই কথা বলেই একটা মেয়ে আমার দিকে তীর রাখল। আমি ভয়ে বললাম ” প্লিজ আমাকে মারবেন না। আমার নাম তামিম। আমি সিলেট থেকে এসেছি। ” মেয়েটা আমার কাছে এসে বলে ” ব্যাগে কি আছে তাড়াতাড়ি বের করেন নইলে তীর মারব। ” আমি তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে কাপড়চোপড় বের করলাম। মেয়েটা শান্ত হয়ে বলে ” এখানে কিসের জন্য আসছেন? আমি ভয় ভয় ভাব নিয়ে বললাম ” সুন্দরবন দেখতে আসছি। সব কিছু ঘুরে দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মেয়েটা বলল ” আপনার সাথে কে কে আসছে? ”

আমি বললাম ” কেউ না আমি একা আসছি। মেয়েটা কে বললাম ” আপনি এখানে কি করেন? ” মেয়েটা বলল ” এখানে আমার বাসা। মা – বাবা এখানে বাসা করে ছিলেন। তাই এখানে আমি থাকি। ” আমি ভাবতে লাগলাম। মেয়েটা ভূত নয় তো। এতো ভয়ংকর জায়গায় কেউ থাকে কি করে ভাবতেই ভয় লাগে। তাই বললাম ” আপনার মা – বাবা কোথায়? ” মেয়েটা মন খারাপ করে বলল ” মারা গেছেন। ” আমি বললাম ” ও। সরি। ”

মেয়েটা দেখলাম হাঁটতে লাগল। আমিও মেয়েটার পিছন পিছন হাঁটতে লাগলাম। মেয়েটা সাপের মতো এসে আমাকে বলে ” আপনি আমার পিছন পিছন আসেন কেন? মেরে পেলব। একদম চালাকি করবেন না। ”
আমি কি করে যে মেয়েটা কে বুঝাব বুঝতে পারি নি। মেয়েটা মনে হয় আমার ভাষা বুঝতে পারে নি। ইশ! কি ঝামেলায় পড়লাম। আমি মন খারাপ করে বললাম ” আমার অনেক খিদা লাগছে খাব? ” মেয়েটা এবার তীর সোজা করে বলে ” এবার আপনাকে মেরে দিব। আমাকে খাওয়ার জন্য আসছেন? আমি হাত উপরে তুলে বললাম ” না। না। আমার অনেক খিদা লাগছে ফল খাব। ”

মেয়েটা এবার বুঝতে পারছে। তাই আমাকে নিয়ে বাসায় গেল। তারপর অনেক ফল দিল। আমি খাইলাম। আমি বললাম ” আপনার নাম কি? ” মেয়েটা হাসি দিয়ে বলে ” স্যার। আমার নাম অতিথি। আসলে স্যার হইছে কি জানেন মা – বাবা অনেক আগে মরে গেছেন তো তাই সব ভাষা বুঝতে পারি না। লেখাপড়া করি নি। আপনি এখানে কিসের জন্য আসছেন? আমি বললাম ” আমার যখন মন খারাপ হয় তখন আমি ঘুরতে বের হই। তাই সুন্দরবন আসলাম।  ও স্যার। এখানে অনেক কিছু আছে। আমি আপনাকে দেখাব। কিন্তু স্যার এসব আমার ভালো লাগে না। আমি আপনাদের মতো করে বাঁচতে চাই। ”

এই কথা বলে অতিথি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তাকল। আমি মেয়েটাকে বললাম ” আমাকে নাম ধরে ডাকতে পারেন। আমার নাম তামিম। ” তিনদিন ধরে সব কিছু দেখলাম। একটা বানর আমার ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিল। অতিথি খুব চালাকি করে ব্যাগ টা আবার নিয়ে আসল। আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি বললাম ” আপনি বানর থেকেও খুব চালাক। অতিথি হাসি দিয়ে বলে ” তা না হলে কিভাবে এই বনের মধ্য থাকব। এদের সাথে আমি সব সময় যুদ্ধ করি। তবে আমি অনেক ক্লান্ত। একটা কথা জানেন মা বলছেন একটা শহর আছে সেখানে শুধু মানুষ। আমারও সেখানে যেতে ইচ্ছা করে কিন্তু আমি যেতে পারি না। আমি এবার মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ” আমার সাথে যাবেন? নিয়ে যাব। অতিথ বলল ” সত্যি। ” তারপর কেঁদে দিল।

আমি অতিথি কে সাথে করে যখন সময় নিয়ে আসলাম। অতিথি কান্না করে ছিল।। হয়তো বনের মায়া ভুলতে পারবে না। আমি অতিথি কে আমাদের সিলেট নিয়ে আসলাম। অতিথি আনন্দে হাসতে থাকল। আমি একটা রিক্সা করে বাসায় আসতে যাব। অতিথি আমাকে বলল ” এই গাড়ির নাম কি? আমি হাসতে হাসতে বললাম ” রিক্সা। ” অতিথি বলল ” খুব। সুন্দর। এটা এখন কোথায় যাবে? ” বললাম ” আমার বাসায়। ” অতিথি মুখ টা কালো করে দিল। একসময় বলল ” আমাকে আমার নানুর বাসায় দিয়ে আসেন। ” একটু ভেবে চিন্তে বললাম ” আপনার নানুর বাসা কোথায়? ”

এবার মেয়েটা চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না। হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। বাসায় আসতেই মা কে বললাম ” একজন মেহমান নিয়ে আসছি। মা অতিথি কে দেখেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। মা একটা চশমা নিয়ে এসে মেয়েটার চোখে রাখলেন। মা আশ্চর্য হয়ে বললেন ” একদম রহিমার মতো। ” তুমি কে মা? ” মেয়েটা আশ্চর্য হয়ে বলল ” আপনি আমার মায়ের নাম জানলেন কি করে? ” মা কাছে এসে বললেন ” রহিমা তোমার মা হয়? ” অতিথি বলল ” হ্যাঁ। ” মা জড়িয়ে ধরে বললেন। রহিমা আমার বান্ধবী ছিল। এক সাথে তাকতাম। তোমার বাবা রহিমা কে খুব ভালোবাসতেন। এক সময় তারা বিয়ে করে পালিয়ে যায়। তারপর তার খুঁজ আমি পাই নি।

অতিথির নানুর বাসার খুঁজ পেলাম। একদিন আমি তাকে নিয়ে গেলাম। সবাই তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। সবাই বলছে রহিমা আসছে। সবাই তাকে পেয়ে খুশি। মেয়েটার নানু এসে বললেন ” তুমি কি রহিমার মেয়ে? ” অতিথি কান্না করে বলল ” হ্যাঁ। “মেয়েটার নানু তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে তাকলেন। বাসার সবাই কান্না করছে। হয়তো আদরের ঘরের দুলালীর মেয়ে ঘরে আসছে। আমি একটা সোফায় বসে তাকলাম। আমার দিকে কোনো খেয়াল নেই। এক সময় একজন মানুষ বললেন ” তুমি কে? ”

আমি লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে বললাম ” অতিথির সাথে করে আসছি। ” সবাই তাকে নিয়ে আনন্দ করতে থাকল। অতিথি যখন আমার খুঁজ নিচ্ছিল না তখন আমি চলে আসতে লাগলাম।শুনলাম অতিথির বিয়ে নাকি তার মামার ছেলের সাথে ঠিক হয়েছে। তাই আমাদের বাসায়ও বিয়ের কার্ড আসল। আমিও মা – বাবার সাথে গেলাম। আমার মন টা বেশ খারাপ। আমি অতিথি কে ভালবেসে ফেলেছি। আমি হয়তো প্রকাশ করতে পারি নি। কিন্তু অতিথি আমাকে একটাবার কিছু জিজ্ঞাস করতে পারত না। ভাবতে ভাবতে এক সময় অতিথির বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে গেলাম। অতিথি বেশ আনন্দে আছে।

এক সময় দেখতে পেলাম অনেক গুলা পাখি অতিথির কাছে এসে বসে আছে। অতিথি এখন কান্না করছে। সবাই অবাক হয়ে আছেন। অতিথি কান্না করে বলে ” এরা পাখি হলেও এরা আমার বন্ধু। এদের সাথে আমি তাকতাম। এরা আমাকে বলছে ” তোমাকে যে ছেলেটা নিয়ে আসছে তাকে বিয়ে না করে অন্য একটা ছেলে কে বিয়ে করছ তা কি ঠিক? তুমি ভুল করছ বন্ধু। এমন ভুল করো না বন্ধু। ছেলেটা কে তুমি ঠকাচ্ছ। ” অতিথি আমার কাছে আসল। আমার হাত ধরল। অতিথি বলল ” আমি ভুল করছিলাম। আমাকে মাফ করে দিবেন না? ” আমি বললাম ” করব তো। বিয়েও করব। ” অতিথি হিহিহি করে হেসে দিল।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত