একজন

একজন

বয়ফ্রেন্ড দুইটা থাকলে যা হয়, রিয়ার কপালেও তাই হলো। ঈদের শপিং করতে গিয়েছিল, রিয়া আর রাকিব। রিয়ার সাথে রাকিবের এক বছরের রিলেশন। রিয়াকে দুইটা ড্রেস, দুইটা প্লাজু, কসমেটিক্স সহ মোট ৬০০০ টাকার শপিং করে দিল রাকিব। রিয়া আর রাকিব শপিং সেরে শোরুম থেকে বের হতে যাবে, ঠিক সেই সময়েই নিশাত তাদের দুজনকে দেখে ফেলল।

রিয়ার সাথে নিশাতের রিলেশন দেড় বছরের মত হবে। গতকাল রিয়াকে ৫০০০ টাকার শপিং করে দিয়েছে নিশাত। নিজের জন্য একটি প্যান্ট কিনেছিল, বাসায় গিয়ে দেখে সেই প্যান্টের চেন নষ্ট। সেই প্যান্ট ফেরত দিতেই নিশাত আজ এখানে এসেছিল। রিয়া আর রাকিব শোরুম থেকে বের হচ্ছিল। হঠাৎ করে রিয়া বলল, আরে একটা ব্যাগ তো ভুলে ফেলে আসছি। তুমি দাড়াও আমি নিয়ে আসি। বলেই রিয়া দ্রুত ভেতরে গেল। এই ফাকে নিশাত রাকিবের কাছে এসে বলল, ভাই মেয়েটি আপনার কি হয়? রাকিব বলল, সে আমার গার্লফ্রেন্ড। কথাটা শোনার পরই, নিশাত রাকিবের কলার চেপে ধরে বলল, রিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড।

রাকিবও নিশাতের কলার চেপে ধরে বলল, তোর নয়, রিয়া শুধুই আমার। এরই মধ্যে রিয়া এসে তাদের দুজনকে এমন অবস্থায় দেখে থ হয়ে গেল। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিশাত রাকিবের নাকে এক ঘুসি মেরে বলল, রিয়া, এই হারামজাদা বলছে, তুমি নাকি তার গার্লফ্রেন্ড!!! রাকিবও নিশাতের নাকে এক ঘুসি মেরে বলল, রিয়া, এই বদমাসটা বলছে, তুমি নাকি তার গার্লফ্রেন্ড!!! রিয়া কিছুই বুঝতে পারছে না, কার পক্ষ নিবে। তারা দুজনেই তাকে খুব ভালোবাসে।

নিশাত আর রাকিবের মধ্যে তুমুল মারামারি শুরু হয়ে গেল। একবার নিশাত রাকিবকে মারছে, আবার রাকিব নিশাতকে মারছে। রিয়া কোন উপায় না পেয়ে, যখন নিশাত রাকিবকে মারছে, রিয়া তখন নিশাতের পক্ষ নিয়ে বলছে, “মার মার আরও জোরে মার।” আবার রাকিব যখন নিশাতকে মারছে, রিয়া তখন রাকিবের পক্ষ নিয়ে বলছে, “মার মার আরও জোরে মার।”

এমন মারামারি দেখে, শোরুমের লোকজন এসে তাদের মারামারি থামিয়ে দিল। এবং কি জন্য তারা মারামারি করছে জানতে চাইল। নিশাত আর রাকিব সবকিছু বলল। ঘটনা শুনে উপস্থিত সবাই বলল, এটা আপনাদের ব্যাক্তিগত সমস্যা। বাইরে গিয়ে সমাধান করেন। নিশাত ও রাকিব দুজনেই রিয়াকে অনেক ভালোবাসে। রিয়া তাদের নিয়ে এক পার্কে এসে বসল।

রিয়া বলল, “তোমরা দুজনেই আমাকে ভালোবাস কিন্তু আমার একার পক্ষে দুজনকে বিয়ে করা তো সম্ভব না। তাহলে তোমরা নিজেরাই ডিসাইড করে নাও কে আমাকে বিয়ে করবা।” নিশাত বলল, “আমার সাথে রিয়ার দেড় বছর ধরে রিলেশন, তুই রিয়ার লাইফ থেকে কেটে পর।” রাকিব বলল, “আমার সাথে রিয়ার এক বছর ধরে রিলেশন, তুই রিয়ার লাইফ থেকে সরে পর।” রিয়া বুঝতে পারল, আবারও ঝগড়া লেগে যাবে দুজনের মধ্যে। তাই রিয়া বলল, “তোমরা বাড়ি চলে যাও, রাতে ভেবে সিদ্ধান্ত নাও। কাল আবার এখানে অাসবা” সবাই বাড়ি চলে গেল।

রাতে শুয়ে শুয়ে নিশাত আর রাকিব ভাবতে লাগল, একজন মানুষকে দুজন কখই পাবে না। যে কোন একজনই পাবে। কিন্তু তারা কেউই রিয়াকে ছাড়তে রাজি নয়। রিয়াও শুয়ে শুয়ে ভাবছে, “কেন যে দুইটা রিলেশন করতে গেলাম। এখন যদি তারা মারামারি করে কিছু করে বসে, আর বাড়িতে যদি জেনে যায় তাহলে কি হবে। কিন্তু এমন কিছু করতে হবে, যাতে সাপ মরবে কিন্তু লাঠি ভাংবে না।” দ্বিতীয় দিন তারা আবার সেই পার্কে এসে উপস্থিত হলো।

নিশাত আর রাকিব বলল, “শুনো রিয়া, আমরা দুজনই কাল সারারাত ভেবেছি, ডিসাইড করেছি তুমি যাকে চাইবে সেই তোমার সাথে থাকবে।” রিয়া বলল, “দেখ, তোমরা দুজনই আমাকে লাভ করো সো তোমরাই ডিসাইড করে সিলেকশন কর কে আমার সাথে থাকতে চাও।” নিশাত বলল, “আমি মোবাইল বিক্রি করে শপিং করে দিছি রিয়াকে। হাত কেটে নাম লিখছি রিয়ার। আমি অনেক ভালোবাসি।” রাকিব বলল, “তোর চেয়ে ডাবল ভালোবাসি আমি রিয়াকে। হাতের স্বর্ণের আংটি বিক্রি করে গতকাল শপিং করে দিছি রিয়াকে। আমি রিয়াকে বেশি ভালোবাসি, এই দেখ হাতে R+R লেখা।”

আবারও তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেল। এভাবে প্রতিদিনই নিশাত আর রাকিবের মাঝে ঝগড়া-মারামারি লাগাতে থাকল রিয়া। এভাবে ঝগড়া করতে করতে নিশাত আর রাকিব পাগল হয়ে গেল। রিয়া তাদের দুজনকে পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করে দিল। নিশাত আর রাকিবকে একই রুমে পাশাপাশি বেড দেওয়া হল। নিশাত আর রাকিব তারা ঝগড়া করেই চলল এ বলছে, রিয়া আমার, আবার ও বলছে, রিয়া আমার। কিছুদিন পর পাবনা মেন্টাল হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার P.K এর সাথে রিয়ার বিয়ে হয়ে গেল।

এভাবে কেটে গেল অনেক বছর। এখনো নিশাত আর রাকিব ঝগড়া করছে, রিয়া আমার, রিয়া আমার বলে। যখনই নিশাত আর রাকিব ঝগড়া করা কমিয়ে দেয়। তখনই ডাক্তার P.K রিয়াকে গিয়ে খবর দেয়। প্রতিবারই রিয়া এসে, নিশাত আর রাকিবের মাঝে দাড়িয়ে বলে, “এখন, তোমরাই ডিসাইড কর কে আমার সাথে থাকবা” সাথে সাথেই আবার শুরু হয়ে যায় নিশাত আর রাকিবের ঝগড়া।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত