ব্যালকনিতে আসলেই ছেলেটাকে দেখতে পাই। কেমন উদ্ভট ভাবে তাকিয়ে থাকে আমার ব্যালকনিতে রাখা গাছের টবের দিকে..আবার দু-একবার আমার দিকে ও তাকায়! বেশ কদিন থেকে দেখছি ছেলেটাকে, মাকে বলবো বলবো করে ও বলা হইনি। ছেলেটাকে দেখে মনে ও হয় না যে বখাটে টাইপের..কেমন যেন নিশ্চুপ, চেহারায় স্নিগ্ধতা! আমাকে দেখতে আসে কি না সেটা বুঝার জন্যে আমি গতদিন ব্যালকনিতে যাই নি, যদি সে আমাকে দেখতে না পেয়ে চলে যায় তাহলে ভাববো আমার ধারণাটাই সঠিক..আমি আমার রুমের জানালা থেকে দেখলাম প্রতিদিনের মতো ব্যালকনির ঠিক উল্টো রিমিদের বাসার নিচে এসে দাড়ালো, ব্যালকনির দিকে তাকালো..মনে মনে ভাবছি চান্দু তুমি দেখি আজ কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারো!
১৫ মিনিট পর ছেলেটা চলে গেলো, তাহলে আমার ধারণাটাই ঠিক। কিন্তু ছেলেটার আমাকে কিছু বলার থাকলে তো বলবে, এভাবে হাবার মতো তাকিয়ে থাকে কেন,আশ্চর্য !! আমি নীলা, দেখতে ফর্সা সুন্দরী নাহ,শ্যাম বর্ণের! কিন্তু বান্ধুবিরা বলতো তোর চেহারায় অনেক মায়া আর তোর চোখ যেকোনো ছেলেকে বশ করতে পারবে..আমি হেসে বলতাম আরে আজকাল এসবে কেউ ইম্প্রেস হয় নাহ রে, সবাই ফরসা মুখ খুজে..তাহলে কি সত্যি ছেলেটা আমার চোখের মায়ায় জড়িয়ে গেছে?? ধ্যাত! কি ভাবছি আমি!
ছেলেটা দেখতে উজ্জ্বল শ্যামলা, মুখে মোটা ফ্রেমের চশমা আর মাথাভর্তি হালকা কোকড়ানো চুল..চেহারায় লেখক লেখক ভাব..এইরকম ছেলে আমার অনেক পছন্দ.. কিন্তু উনাকে দেখতে যেই পরিমান হাবাগোবা মনে হয়, না থাক!! এই ১৭ দিনে দেখলাম ছেলেটা মাত্র ৩টা পাঞ্জাবি পরে আসতে। ছেলেটার লজ্জা বলতে ও কিছু নাই,এক পাঞ্জাবি এক দিন পরে পরে ও তো বদলে পরা যায়। দেখা যায় এক পাঞ্জাবি টানা ৩ দিন পরে চলে আসে..আমার ও এখন কেন জানি ব্যালকনিতে গেলেই মনে হয় ছেলেটা এসেছে তো! এটা ও ভাবি আজকে নিশ্চয়ই সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি পরে এসেছে, গিয়ে দেখি নাহ নীল রংঙেরটা পরে এসেছে, আবার অনেক সময় মিলে ও যায়! গান আমার খুব পছন্দ, ওইদিন দেখলাম ছেলেটার কাধে গিটার..মনে হয় ছেলেটা ও গান জানে.. আমার ও কেন জানি ভালোলাগে ছেলেটার এসে দাড়ানোটাকে, আমি ও কেন জানি চাই আসুক সে, করুক আমার জন্য অপেক্ষা!
এভাবে প্রায় ২০-২১ দিন কেটে গেল বিকেলে চায়ের কাপ নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি ছেলেটা নাই! ভাবলাম হয়েতো একটু পর আসবে। রুমে এসে কিছুক্ষণ পর আবার গিয়ে দেখি আসে নি! এভাবে ৩-৪ বার গেলাম, গিয়ে দেখি আসে নি। কেন জানি আচমকা মনটা খারাপ হয়ে গেল..রুমে এসে ফ্যান ছেড়ে শুয়ে পড়লাম..এ-কদিনে ছেলেটার সাথে কোন কথা হয় নি, তাও কেন জানি একটা অনুভুতি কাজ করছে..আমি যথেষ্ট ম্যাচুয়েড, অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ি..এই বয়সে আবেগ নিশ্চয়ই কাজ করছে নাহ! তাহলে ছেলেটার না আসাতে আমার মন খারাপ হচ্ছে কেন?
পরের দিন ও অপেক্ষা করলাম, ছেলেটা আসে নি..এভাবে ১ সপ্তাহ হয়ে গেলো ছেলেটা আসছে নাহ! আমার ও কেন জানি এখন আর আগেরমতো ব্যালকনিতে যেতে ভালো লাগে নাহ সকালে বিছানায় বসে বসে হুমায়ুন আহুমেদের জলপদ্ম পড়ছিলাম..হঠাৎ কলিংবেল আসলো, খুলে দেখি বাসার কাজের বুয়া এসেছে,উনাকে রাফির মা বলেই ডাকি ..কাজের বুয়াদের এই এক সমস্যা, সপ্তাহে তিনদিন আসলে বাকি চারদিন আসবেন নাহ.। বাসায় আমি আর মা থাকি..তেমন কাজ নেই তাও সকালের বাসন ধোয়া আর ঘর মুচা নিয়ে অসুবিধা দেখা দেয়। তা এবার তিনি পুরো ১ সপ্তাহ ছুটি কাটিয়ে এসেছেন ।
দরজা খুলার পরপরই সালাম দিয়ে রাফির মা বলতে লাগলো আফা, এইবার আসলে একটু বেশিই ছুট্টি নিছিগা, রাফির পরীক্ষা শেষ হইছে তাই ভাবলাম বাপের বাড়ি থাইকা আইই। এখন যদি আমি না বলি যে রাফির মা হইছে এতকিছু বলতে হবে নাহ,কাজে যাও। তাহলে সে চুপই করবে নাহ, বাপের বাড়ি গিয়া কি কি হইছে না হইছে সব বলতে লাগবে..এটা রাফির মায়ের সমস্যা, অতিরিক্ত কথা বলে। তাই নিজ থেকে বললাম, ভালো হইছে ঘুরে আসছো, এখন যাও রান্নাঘরে। সব গুলা দাত বের করে হেসে বললো আইচ্ছা আফা যাইতাছি.. এসে আবার উপন্যাসটা হাতে নিলাম..কেন জানি ছেলেটার কথা মনে পড়ছে, হুট করে কই থেকে আসলো, আবার হুট করেই চলে গেলো!
বিকেলে গান শুনছিলাম, বাচ্চারা নিচে ক্রিকেট খেলছে…ভাবলাম যাই ব্যলাকনিতে গিয়ে দেখে আসি। গিয়ে দেখি রাফি ও খেলছে, রাফি যে আমাদের কাজের বুয়ার ছেলে..হঠাৎ ওকে দেখে মনে হলো ওইদিন দেখেছিলাম সেই ছেলেটা রাফির সাথে কি নিয়ে যেন হেসে কথা বলছিলো..তখনি ভেবেছিলাম রাফিকে জিজ্ঞেস করবো ছেলেটার সম্পর্কে। পরে কিভাবে যেন ভুলে গেছি,যাই হোক রাফিকে ডাক দিয়ে বললাম একবার বাসায় আয় তো। ও ক্লাস ফোরে পড়ে, মাঝে মাঝে ওর মায়ের সাথে বাসায় আসে..ও এসেই বললো খালা ডাকছেন কেন? বললাম ১৫-১৬ দিন আগে লম্বা নিয়ে একটা ছেলের সাথে আমাদের বাসার নিচে কথা বললি,চিনিস ছেলেটাকে ? বললো হ্যা চিনবো না কেন,উনি তো আকাশ স্যার।
শুনে আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম! তোর স্যার মানে? আরে খালা উনি আমাদের বাসার পাশের বাসায় ব্যাচেলর থাকেন..আমি উনার কাছে কাছে মাঝে পড়তে যেতাম,উনি খুব ভালো। আমার সাথে আমাদের বস্তির ৩-৪ টা ছেলে যেতো উনার কাছে পড়তো, কোন টাকা রাখতেন নাহ। মাঝেমাঝে আমাদের গিটার বাজিয়ে গান ও শুনাইতো..জিজ্ঞেস করলাম ওইদিন কি কথা হইছিলো? রাফি বলতে লাগলো আরে আপনাদের ওইখানে খেলতে আইছি,এখন স্যার রে দেইখা সালাম দিলাম..জিজ্ঞেস করলেন এই খানে আসছি ক্যান? কইলাম খেলতে আইছি। শুনে বললাম ওহ, আচ্ছা। তুই এখন যা..ওকে বিদায় দরজা লাগাতে যাবো তখনই রাফি বলতে লাগলো খালা আরেকটা কথা কইতে ভুইলা গেছি,স্যার আপনাগো বাসার ব্যালকনি দেখাইয়া জিগাইছিলো এইখানে যে একটা মেয়ে আসে আমি চিনি কি নাহ?
কথাটা শুনে কেমন জানি একটা চমকে গেলাম! তারপর? কইলাম যে চিনি, উনি হইলেন নীলা খালা.. উনাগো বাসায় মায়ে কাম করে। শুনে কেমন জানি খুশি লাগছে! আর কিছু বলছে? না, আর কিছু কয় নাই। বললাম তুই একটা কাজ করতে পারবি? উনারে গিয়ে বলবি আমি বলছি কাল বিকালে আমাদের বাসার নিচে যেন আসে! রাফি বলে উঠলো, উনি তো নাই, চইলা গেছে। চইলা গেছে মানে? জানিনা খালা, মায়ে কইলো উনি নাকি মায়েরে রাস্তায় পাইয়া কইছি উনি কই যাইতাছে আর পড়াবো নাহ..কথাটা শুনে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেছে! রাফি বললো, গেলাম খালা।
হঠাৎ করে ছেলেটার কি হলো? কে জানে? আমি ওকে নিয়ে কেন এত ভাবছি? এভাবেই কি ভালোবাসার শুরু? এক মুহুর্তের জন্য ও ওকে ভুলতে পারছি নাহ। কীভাবে এত তাড়াতাড়ি ও আমার মনে জায়গা করে নিলো! কেন এভাবে আমার সাথে ও লুকোচরি খেলছে!!
রাতে ফেসবুকিং করছিলাম,” অনিকেত প্রান্তর ” নামে একটা আইডি থেকে ২ ঘন্টা আগে মেসেজ রিকু আসছে “প্রতিদিন ব্যালকনিতে যাওয়া হয়?”.. মেসেজটা পড়ে আমি আশ্চর্য হয়ে গেছি একি সেই ছেলে? ছেলেটার নাম তো আকাশ! তাহলে এটা কি ফেইক আইডি? মেসেজের রিপ্লাই দিতে গিয়ে দেখি ব্লক দিয়ে দিয়েছে! কি অদ্ভুত রকমের ছেলে! আইডি টা ও চেক করতে পারলাম নাহ। অনেক রাগ হচ্ছে ছেলেটার উপর, আমাকে কোন সুযোগই দিচ্ছে নাহ।
এর ১৩ দিন পর আবার সেই আইডি থেকে মেসেজ আসছে ” আজকে একটা চিরকুট পাঠাবো, পড়ে নিবেন প্লিজ…”” দিয়েই আবার ব্লক করে দিছে। বিকেলে রাফি এসে বললো খালা,আকাশ স্যার আফনারে এইটা দিতে কইছে..আর সাথে কইছে কেউরে এই বিষয়ে না কওয়ার জন্য..ঠিক আছে, তুই এখন যা বলে চিঠিটা খুললাম..মনে মনে ভাবছি মেসেজেই তো বলতে পারতো এই যুগে এই সময়ে চিঠি দেয়ার কি? ছেলেটা পুরোটাই অদ্ভুত!!!
” প্রিয় নীলা, নিশ্চয়ই ভাবছো ছেলেটা মেসেজেই তো বলতে পারতো,চিঠি দিলো কেন! চিঠি দিতে পারতাম, কিন্তু মনে হলো মেসেজে তোমাকে খুলে বলতে পারবো নাহ,আর তুমি ও ভালোভাবে বুঝবে নাহ..চিঠিতেই কেন জানি তুমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়বে আর বুঝবে।
একদিন তোমাদের বাসার পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম একটা কাজে..হঠাৎ বৃষ্টি নামায় যেখানটায় দাঁড়িয়ে আমি তোমাকে দেখি ঠিক সেখানটায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ তোমার ব্যালকনিতে চোখ পরলো..দেখলাম কেউ এক জোড়া হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোটা স্পর্শ করছে। একটু ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি আমার আকাশে ভেসে যাওয়া একটুকরো মেঘ যেন আমাকে হাতছানি দিচ্ছে! চোখ বন্ধ করে মেয়েটা বৃষ্টির ফোটা স্পর্শ করছে.. চোখ বুজলে ও যে মানুষকে এত্ত অপরূপ দেখায় মেয়েটাকে না দেখলে বুঝতামই নাহ..যখন মেয়েটা চোখ খুললো বিশ্বাস কর! এই চেহারাটা এত পবিত্র যেটা আমি আমার জীবনে দ্বিতীয় বার দেখছি..প্রথমটা হলো আমার মায়ের মুখ যেটা আমি সবসময় দেখেছি…আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পাচ্ছি নাহ কেমন লেগেছিলো আমার!!
আর সেই মেয়েটা হলো তুমি! তোমার চোখের মায়ায় আটকে গিয়েছিলাম..প্রেমে পরেগিয়েছিলাম, এর পর থেকে প্রতিদিন তোমাকে দেখতে আসতাম। তুমি ও হয়তো বুঝেছো..আমি তোমার সাথে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে তোমাকে যে গিটারের সুর টানে তার পূর্ণতা দিতে চাইই! তুমি তোমার হুমায়ুনের উপন্যাস পড়বে আর আমি তোমাকে কাপের পর কাপ চা বানিয়ে দিতে চাই। প্রতিদিন তোমাকে একটা করে শিউলি ফুলের মালা বানিয়ে দিতে চাইই। কাঠগোলাপে তোমার ব্যালকনি ভরিয়ে দিতে চাইই। বৃষ্টির দিনে হাতে হাত রেখে রিকশার হুড ফেলে পুরোটা শহর ভিজে ভিজে ঘুরতে চাইইইই। তোমার রোমান্টিসিজমে ভরপুর অস্তিত্বের অংশীদার হতে চাই। হবে আমার??
আমি হয়েতো তোমাকে ঐশ্বর্যে রাখতে পারবো নাহ,কিন্তু দুরুমের একটা বাসা নিবো যেখানে একটা সুন্দর ব্যালকনি থাকবে..যেখানে তুমি প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকবে আর আমি দেখবো..আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবাসবো..আমি তোমাকে নিতে আসবো কিন্তু আমার একটু সময়ের প্রয়োজন.. জানিনা আমার জন্য অপেক্ষা করবে কি না! কেন জানি মনে হচ্ছে করবে! আর যদি না করো তাও আগেরমত প্রতিদিন তোমাকে দেখার জন্য সেই জায়গায় আসবো।আর যদি পছন্দ করে থাকো আমায় তাহলে শুধু মাত্র ‘আকাশ ” শব্দটা লেখে পাঠিয়ে দিও, আমি বুঝে নিব। ভালোথেকো নীল হয়ে!
ইতি
আকাশ
চিঠিটা পড়ে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি! এতোটা ভালোবাসে সে আমায়। আমি সবসময় চাইতাম আমার প্রিয় মানুষটা আমার মতো হোক! ওর প্রতিটা কথায় রোমান্টিকতা লেপ্টে আছে..আমি চেয়েছিলাম এইরকই কাউকে! অপেক্ষা জিনিসটা অনেক কষ্টের, কিন্তু এই অপেক্ষা করাটা আমার কাছে কেন জানি এত সুখের মনে হচ্ছে! ওকে কাছে পাবো পাবো বলে..
মা একবছর থেকে তড়িঘড়ি করছিলেন আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য..মাকে বুঝিয়ে বললাম মাস্টার্স টা শেষ করতে দাও প্লিজ..আর তুমি ও এখন অসুস্হ, সুস্থ হও। তারপর ভাবা যাবে..মা রাগ করে বললেন এই কিন্তু শেষবার, আর শুনবো না তোর কথা..হেসে মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম বিয়ে করলে ও তোমাকে রেখে আমি দুরে কোথাও যাবো না,তোমার আশেপাশেই থাকবো। রাফিকে দিয়ে পাঠিয়েছিলাম চিরকুটটা, ভেবেছিলাম এর পর আবার কোন চিরকুট আসবে, কিন্তু আর আসে নি। এরপর থেকে প্রতিদিন আমি ব্যালকনিতে যেতাম আর ভাবতাম আজকে হয়েতো আসবে!! এভাবে ৭ মাস চলে গেলো..
সন্ধ্যায় মাথাব্যাথা করছিলো তাই ঘুমিয়ে ছিলাম..হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গতে দেখি সোফার রুম থেকে অপরিচিত আওয়াজ আসছে..উঠে দেখি কালো রংয়ের পাঞ্জাবি পরা, কালো ফ্রেমের চশমা,মাথা ভর্তি চুল আর মুখে দাড়ি সেই ছেলেটা যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করেছি সে.. আমার বুকের ভেতরটা ধুকধুক করে উঠলো..বুঝাবার মতো নাহ, অপেক্ষার পর কাঙ্কিত জিনিসটা যখন মানুষ পায় সেই আনন্দ বলে বুঝাবার মতো না..! আমাকে দেখে মা হেসে বললেন,কি রে নীলা তুই তো আমাকে আগে কিছু বলিস নি কেন! তুই বস, আমি ভেতরটা থেকে আসছি..কেমন জানি অসস্ত্বি লাগছিলো আর লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম নাহ! অথচ এই দিনের জন্যই না এত অপেক্ষা করলাম..আবার রাগ ও লাগছিলো এতদিন অপেক্ষা করিয়েছে আমায়!
সরি বলেই শুরু করলো, আসলে আমি সত্যি দুঃখিত এতদিন তোমাকে অপেক্ষা করিয়েছি..আসলে যেদিন তোমাকে আমি শেষ দেখতে আসি, সেদিন বাসায় যাওয়ার পর খবর আসে বাবা খুব অসুস্থ। বাড়িতে চলে যাই এর এক সপ্তাহ পর বাবা মারা যান..মা আমি যখন কলেজে ভর্তি হই তখনই আমাকে রেখে চলে গেছেন..পরিবারে আর কেউ নেই..তার কদিন পর আবার শহরে চলে আসি..কিন্তু তোমার সামনে আসতে চাই নি,কারন আসলেই মায়ায় জড়িয়ে যাবো..নিজেকে প্রস্তুত করেই আসতে চেয়েছিলাম..চাকরির অনেক চেষ্টা করছিলাম, গত মাসে একটা প্রাইভেট কলেজে লেকচারারে পদে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম,
চাকরিটা হয়ে গেছে তাই এখন আসলাম..একনাগাড়ে এতগুলো কথা বলে আকাশ সাহেব নিঃশ্বাস নিলেন..তারপর খুব বাচ্চাদের মতো বলতে লাগলো “বেশি দেরি হয়েগেছে”? আমার কেন জানি হাসি পেলো..হাসি চেপে রেখে বললাম ‘কিছুটা তো হয়েছে, সমস্যা নেই পরবর্তীতে তা বুঝে নেব’..ও হেসে বললো আপনার আপত্তি না থাকলে সেই সুযোগটা আগামী শুক্রবার দিয়ে নিজেকে ধন্য করতে চাইইই..হঠাৎ মনে পড়লো মা! উনি কি রাজি হবেন? ও হেসে বললো উনি যদি রাজি না হতেন তাহলে কি তোমাকে এখানে বসতে বললেন..তাই তো!
কিন্তু মাকে কিভাবে রাজি করিয়েছেন? ও হেসে বললো ‘ম্যাডাম, আমি মানুষকে ইম্প্রেস করার অদ্ভুত এক শক্তি নিয়ে জন্মেছি..তোমার সাথে সরাসরি কথা না বলেই যেভাবে তোমাকে আমার করে নিয়েছি! তাহলে বুঝে নাও শাশুড়ী মাকে কিভাবে রাজি করাবো।। কথাটা শুনে হেসে বললাম ঠিক আছে স্যার বুঝলাম..কিন্তু মা যে বললো আমি আগে কেন উনাকে বলিনি? মানে কি ছিল? সে হেসে বলল ম্যাডাম! আমি কিঞ্চিৎ মিথ্যা বলিয়াছি যে আমি আমরা এক ভার্সিটিতে পড়েছি তুমি আমার জুনিয়র.. আর আমরা দুজন দুজনকে আগে থেকেই ভালোভাবে চিনি। কথাটা শুনে বললাম আপনি বেশ দুষ্টি..!
৫ বছর পর আজও দাঁড়িয়ে আছি ব্যালকনিতে তার অপেক্ষায়..আগে সে আমার অপেক্ষা করতো, আর এখন আমি করি! হ্যা, এখন আমি একা অপেক্ষা করি নাহ, সাথে আমাদের পৃথিবী ৩ বছরের রাজকন্যা অনীলা কে নিয়ে..আমরা মা মেয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে গুনগুন করে গান গাইতে থাকি এরমধ্যেই তিনি চলে আসেন। এসে ব্যালকনির ঠিক বিপরীতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ আমাদের দিকে দেখেন সেই আগের ভঙ্গিতে,আর সেটা ৫ বছর থেকেই করে আসছেন..আর এভাবেই করবেন সারাজীবন আগে খালি হাতে আসতেন আর এখন একটা আইসক্রিম আর একটা চকোলেট..চকোলেট মেয়ের জন্য, আর আইসক্রিমটা আমার জন্য। আর হ্যা, পাঞ্জাবীর পকেটে আমার সেই প্রতিদিনকার শিউলিফুলের মালা।