ফিউনা রাগান্বিত ভাব নিয়ে যখন বললো “তোমার সাথে আমার রিলেশনে জড়ানোই ঠিক হয়নি। এই বালের সম্পর্ক আমি আর রাখবো না।” তখন আমার মাঝে কিংবা আমার মনের ভিতর একটুও কার্পন্যবোধ তৈরি হয়নি। আমি তাকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম ”যাও মুক্তি দিলাম।” সে আমার কথা শুনে আরো খানিকটা রেগে হাতের বাহুতে কয়েকটা ঘুষি মেরে বলে “শালা আমার মত মেয়ে পাইছিস বলেই তোর মত বলদের সাথে দিব্বি আছি। অন্য মেয়ে হলে তোর কপালে ঝাটা মেরে কবেই চলে যেত।”
আমি মুখে উফ নামক শব্দ উচ্চারন করে হাতের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে তাকে বলি ”বিশ্বাস করো আমি তোমাকে মুক্তি দিতে চাই। তোমার এই কিল ঘুষি খেতে খেতে আমার সমস্ত দেহ ব্যথাময় হয়ে আছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করো বোইন। এখন থেকে তোমাকে আমি বোনের নজরেই দেখবো কথা দিচ্ছি।” আমার এসব কথা শুনে ফিউনা রাগে আরো ভীষন ফুসতে থাকে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি আমার সাথে আরো অনেক কিছু হতে পারে। মনে মনে দৌড় দেওয়ার যেই প্রস্তুতি নিলাম তখনি ও উঠে দাঁড়ায়। আমিও আর কিছু না ভেবে উঠে দাঁড়ালাম। তারপর সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে দ্বিতীয় বার আমার হাতের বাহুতে ঘুষি মেরে বলে “তোর মত বলদের সাথে এই বালের সম্পর্ক না রাখাই বেটার।”
এটা বলেই ও হনহন করে আমার সন্নিকট হতে গমন করে। আমি আবার উফ নামক শব্দ উচ্চারন করে হাত বুলাতে লাগলাম আর তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। এক স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে উপর ওয়ালাকে শুকরিয়া জানিয়ে বললাম আমাকে আবার সিঙ্গেল করে দেওয়াতে তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই মেয়ে যেমন গালিবাজ তেমন ভয়ানক ঝগরাঠে মারমুখি। আর তার কথায় কথায় ‘‘বাল” নামক শব্দটা উচ্চারন হয়। এই শব্দটা যদি দৈনিক মুখ হতে উচ্চারন না হয় যেন তার পেটের ভাত হজম হয় না। পাঠক নিশ্চয় এতোক্ষনে বুঝতে পেরেছেন কেন আমার এই লেখার শিরোনাম ‘‘অদ্ভুত ব আকার ল” রেখেছি।
তার রেগে যাওয়ার কারণটা না হয় একটু করে বলি। আসলে ফিউনার রাগের মূল কারণই হচ্ছি আমি। আমি অনেক কথা কম বলি। কোন একটা কাজই ঠিক মত করতে পারি না। আমি মাঝে মাঝে অনুধাবন করে কিছুই মিলাতে পারি না কেন আমার মত একটা ছেলেকে ও ভালোবাসতে গেল? যেখানে আমার দিক থেকে তার প্রতি কোন অনুভূতি প্রথমে প্রকাশ পায়নি সেখানে কি ভেবে সে আমার সাথে এই ভালোবাসা নামক বিষয়টায় জড়ালো? সত্যি আমি এখনো তা বুঝে উঠতে পারিনি। গত তিন সপ্তাহ ধরে সে আমাকে বলে আসছে ”তোমার কি একটা দিন সময় হবে?”
আমি তাকে বললাম ”হঠাৎ এই কথা? একদিন কেন? তোমার সাথে তো আমার দেখা এমনিতেই হয়।” সে একটু ইতস্তত হয়ে বলে, না মানে একটা দিনই তো। তোমাকে তো কোথাও যেতে বললে যেতে চাও না। সকালে বের হয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া বাহিরেই করে একদম সন্ধ্যার নাগাত বাসায় ফিরবো।” তার কথা শুনে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলি “আচ্ছা ঠিক আছে।” এই আচ্ছা ঠিক আছে করতে করতে আজ না কাল, কাল না পরশু এইভাবে তিন সপ্তাহ অতিক্রম হয়। আসলে আমি মোটেও চাচ্ছিলাম না তার সাথে আমার সারাটাদিন অতিক্রম হোক। পাঠক নিশ্চয় আমাকে বোকা ভাবছেন কিংবা ফিউনার মত বলদ ভাবছেন সারাটাদিন কেন আমি হাতছাড়া করতে যাচ্ছি। যেখানে তার সাথে আমার ভালো ভালো মুহুর্ত কাটাতে পারতাম। কিন্তু পাঠক আমার পকেট খালি সেটা কি আপনারা জানেন? একটা মেয়ে যদি একটা ছেলের সাথে কোথাও যায় কখনো কি দেখেছেন মেয়েরা টাকা খরচ করতে? আমি আজ অব্দি দেখিনি। হ্যাঁ এর আগেও আমি ফিউনার সাথে বের হয়েছিলাম বিশ্বাস করেন আমার পাক্কা এক হাজার সাতশত বিরাশি টাকা খরচ হয়েছে। তারপর থেকেই আমি কান ধরে তওবা কেটে ছিলাম আমি আর ফকির হতে চাই না।
ফিউনা আমার ভার্সিটির ফ্রেন্ড। আমি ক্লাসে কারো সাথেই মিশতাম না। কেমন যেন মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলে আমার ভিতরে লজ্জা নামক বিষয়টা চলে আসে। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কয়েক মাস পর সে একদিন আমাকে ডাক দিয়ে বলে ”এই ছেলে দাঁড়াও তোমার নাম জাহেদ না?” আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই বললাম হ্যাঁ। তারপর সে একটু চুপ হয়ে আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে বলে “তুমি মেয়েদের সাথে কথা বলো না কেন?” আমি মাথার চুল চুলকিয়ে একটু হেসে বললাম “হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কখনো ভালো বন্ধু হয়ে বেশিদিন থাকতে পারে না। তাই কথা বলি না। কথা বললেই তো বন্ধু হয়ে যাবো আর বন্ধু মানেই তো প্রেম।” আমার এমন কথা শুনে ফিউনা হাসতে থাকে। সে হাসতে হাসতেই বললো তুমি একটা বাল মিয়া।” ওর মুখে এমন কথা শুনে আমি আর একটুও দাঁড়াইনি। তার সামনে থেকে সোজা হাটা দেই। তখনি বুঝতে পারি এই মেয়ে একটা চিজ মাইরি।
তার কয়েক দিন পরই তার সাথে আমার হুট করে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমাদের বন্ধুত্বটা চলে আসে তুই এর ভিতর। ক্যান্টিনে বসে আমি যখন মগ্ন ছিলাম শাকিল আর ফিউনা আমার পাশে বসে। তারপর শাকিল বলে “কিরে কি ভাবিস? আমি চুপ করে থাকি। আমার চুপ থাকা দেখে ফিউানা বলে “কিরে আবালের মত বইসা আছিস ক্যান? কারে নিয়া ভাবিস?” আমি বললাম ”অনেক দুঃখে আছিরে। আমি একটা মেয়েকে তিন বছর ধরে পড়াই। মেয়ে এখন ক্লাস নাইনে পড়ে। আমার ছাত্রী আমারে গতকাল বললো ”স্যার একটা কথা বলবো?” আমি ইতস্তত হয়ে বললাম ” সংকোচ বোধ করার কিছু নেই বলে ফেল।” তারপর সে বলে “স্যার আমি একটা অন্যায় করে ফেলেছি।” আমি বললাম কি অন্যায়? সে জানায় ”আমাদের ক্লাসের তুহিন নামের একটা ছেলে বেশ কয়েক মাস ধরে আমার পিছনে ঘুরঘুর করছিল। আজ সে প্রোপজ করেছে।” এইটুকু বলে সে থামে। তারপর আবার সে বলতে থাকে “ আসলে প্রবলেম এখানে না। আমি তুহিনকে জানিয়েছি আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।” আমি বললাম “এমা তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। আগে কখনো বলো নাই তো।” তারপর আমার ছাত্রী যা বললো তার জন্য আমি মোটেও প্রশ্তুত ছিলাম না। সে বললো ”আমি তুহিনকে আপনার কথা বলেছি। বলেছি আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। আমি ভেবে দেখেছি আপনাকে আমার পাশে দাঁড়ালে খুব মানায়।”
আমার এইসব কথা শুনে ফিউনা আর শাকিল হাসতে থাকে। শাকিল হাসতে হাসতে বলে “এখানে দুঃখের বিষয়টা কি বুঝলাম না।” আমি বললাম ব্যাটা এই মেয়েরে পড়াইয়া আমি মাসে তিন হাজার টাকা পাইতাম এখন তা আর হবে না। কারন টিউশনিটা আমি ছেড়ে দিছি। একেবারে ফকির হয়ে গেলামরে। ” ফিউনা হাসতে হাসতে বলেছিল ”তোর এই বালের ভালুবাসার কিচ্চাকাহিনী শুনে আবেগে আমার চোখে পানি আসে।” ওর কথা শুনে একটু তিক্ত হয়ে বলেছিলাম কথায় কথায় বাল না বললে হয় না?” তখন শাকিল বলে “দোস্ত আমাদের জন্মের সময় আমাদের মা খাটি ডাবর মধু খাওয়াইছিল তাই আমাদের মুখে এসব কথা আসে না। ফিউনার জন্মের সময় ওরে ওর মা বাল মার্কা মধু খাওয়াইছিল তো তাই কথায় কথায় বাল বলে।” শাকিলের এই কথা শুনে ফিউনা ওর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল তা না বললে আপনারা বিশ্বাস করবেন না। ক্যাম্পাসে সারাদিন এক পায়ে কান ধরে দাঁড় করিয়েছিল। পা একটু নামালেই ওর গালে কষে থাপ্পড় লাগাতো। যাবার বেলায় আমাকে একশ টাকা দিয়ে বলে গিয়েছিল ”এই ধর এই ছাগলটারে বাসায় দিয়ে আসিস। যে অবস্থা মনে হয় হাটতে পারবো না। এরপর থেকেই ওর সাথে ক্লাসের সবাই হিসেব করে কথা বলতো।
আমরা এখন তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। ক্লাসে যে ল্যাকচার চলছে তার দিকে বিন্দুমাত্রও আমার খেয়াল নেই। আমি ফিউনার দিকে খেয়াল করে দেখলাম সে খুব মনোযোগ দিয়ে স্যারের ল্যাকচার শুনছে। গতকাল তার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়েছে। আজ ভার্সিটিতে আসার এখন পর্যন্ত তার সাথে আমার কথা হয়নি। কথা হয়নি বললে ভুল হবে সে আমাকে দেখেও কথা না বলে না দেখার ভান করে এড়িয়ে গেছে। তার চেহারার মাঝে হতাশা কিংবা মন খারাপের কোন কিছু দেখতে পাইনি আমি। এমন একটা ভাব যেন তার সাথে আমার কিছুই ঘটেনি। এইসব কথা চিন্তা করতেই হঠাৎ মনের ভিতর বিষন্নতা ছুয়ে গেল। এইরকম বিষন্নতা আমাকে আরো একবার ছুয়েছিল। যে বিষন্নতার মাঝে একটা চাপা কষ্ট আমার মনের ভিতর ভর করেছিল। আর সেই বিষন্নতার নাম ছিল অদ্রিতা।
আমি তখন প্রথম বর্ষের ফাইনালের দিকে। অদ্রিতা নামক মেয়েটা আমাদের পাশের এলাকায় থাকে। তার প্রতি আমার একটা ভালো লাগা কাজ করতো। বিকেল হলে সুযোগ পেলেই তার বাড়ির আশ পাশ ঘুরঘুর করতাম। মাঝে মাঝে সাইকেল করে তার বাড়ির পাশ দিয়ে যেতাম শুধু তাকে দেখার জন্য। এইসব যখন শাকিল খেয়াল করলো তখন বিষয়টা ক্লাসে ছড়ায় যায়। ফিউনা আমায় জিজ্ঞেস করে কিরে মেয়ের নাম কি? আমি বলেছিলাম ”কিসের মেয়ে কোন মেয়ে? সে বলে ”লুইচ্চা কোথাকার। যে মেয়ের বাড়ির আশপাশ ঘুরঘুর করিস সে মেয়ে।” আমি বিষয়টা ধামাচাপা দিতে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতেও যেতে পারিনি। ফিউনা আবার জিজ্ঞেস করলে বলি “মেয়ের নাম ম্যাও। সে হাসতে হাসতে বলে “তুই ব্যাটা আসলেই বলদ, মানুষ না ধরে বিড়ালরে ধরতে গেছিস ক্যান? আমি তাকে বলেছিলাম ”আরে দুর, ওর একটা বিড়াল আছে।
যখনি বারান্দায় দেখি একটা বিড়ালকে কোলে করে নিয়ে থাকে। তাই ওরে আমি ম্যাও ডাকি। ওর ভালো নাম অদ্রিতা। কিছুদিন আগে ওকে নিচে দেখতে পেয়ে ওর হাতে একটা কবিত লিখে ধরিয়ে দিয়ে দৌড় দিয়েছিলামে। গতকাল যখন ওর বাড়ির আশে পাশে ঘুরঘুর করছিলাম তখন বারান্দা থেকে একটা কাগজের টুকরো ফেলে। তাতে লিখা ছিল আপনার কবিতাটা আমার কিউট বিড়ালটার মত।” আমার কথা শুনে ফিউনা ফের হাসতে থাকে। ওর এমন হাসি দেখে তার সামনে থেকে চলে গিয়েছিলাম। সেদিনের পর থেকেই আমি অদ্রিতার জন্য কবিতা লিখি। আমার আউলা ঝাউলা শব্দগুলো দিয়ে তার জন্য কবিতা সাজাতাম ঝাপসা শব্দের সংমিশ্রনে আমার গাড় নীলের ভালোবাসা নিও যতবার তোমার লজ্জাসিক্ত চোখের শহরে ডুবেছি ঠিক ততবার ধূসর সময়ে আমার হয়েছে নিশ্চুপ মৃত্যু…
একবছর ধরে আমি অদ্রিতার পিছনে ঘুরি। পিছনে ঘুরি তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। যে ভালোবাসায় রঙিন সুতোয় আমরা আকাশে উড়বো। কিন্তু আমার গাড় নীলের ভালোবাসা তার জন্য ছিল না। মিথ্যের মায়ায় আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম এক শূন্যতার ভিতর। যে শূন্যতা আমাকে আকড়ে ধরেছিল। হৃদয়ের সমুদ্রে পথভ্রষ্ট এক নাবিক হয়ে হাতড়ে ফিরেছি বহুবার। একদিন সে আমায় বললো ”আপনার কবিতা গুলো আমার কাজে লেগেছে। আপনি আমাকে যে কবিতা গুলো লিখে দিতেন সেগুলো আমি সাদমানকে দিতাম। সাদমান মনে করেছে তার প্রতি আমার অগাড় ভালোবাসা। প্রত্যেকটা মানুষের ভালো লাগা আলাদা/এক নয়। আমাকে যেমন আপনার কাছে ভালো লাগে ঠিক তেমন সাদমানকে আমার ভালো লাগে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনার কবিতার জন্যই আমি সাদমানকে কাছে পেয়েছি।”
অদ্রিতার এমন কথা শুনে আমি পুরো বলদ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। বিশ্বাস করেন পাঠক অদ্রিতার জন্য তখন আমার কাছে একটুও ঘৃনাবোধ তৈরি হয়নি কেন যেন। আমি শুধু অশ্রুসিক্ত হৃদয় নিয়ে মনে মনে বলেছিলাম ভালো থেকো তোমার প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে।
এই ঘটনার পর আমি হতাশায় ছিলাম। ক্লাসে আমার মন মরা চেহারা বিরাজ করতো। ফিউনা জানতে পেরে আমায় শান্তনা দিয়ে বলেছিল “তুই যদি আমার পিছনে এইভাবে ঘুরতি বা আমার জন্য কবিতা লিখতি তাইলে এতোদিনে তোর গলায় ঝুলে যেতাম বুঝলি হাদারাম হা হা হা। ” আমি চুপ করে ছিলাম। ওরা হাসি ঠাট্টা শুরু করে।
অদ্রিতার পিছনে প্রথম বর্ষের ফাইনালের দিকে ঘুরতে ঘুরতে আমি দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে চলে আসি। দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল এক্সাম এর পরই কক্সবাজার ঘুরতে যাই ক্লাসের দশ পনোরো জন মিলে। মূলত আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। ফারহাজ আর শাকিল নিয়ে যায়। ফিউনাও গিয়েছিল। কক্সবাজারে একটা জিনিস আমার হৃদয়ে শিহরিত করেছিল। নির্জন রাত্রিতে সবাই যখন শুয়ে থাকাতে ব্যস্ত তখন আমি সমুদ্রের তীরে একা একা হাটছিলাম। আমার বুকের গভীর অন্ধকারে সমুদ্রের শো শো শব্দ গুলো ধেয়ে আসে। অনাবিল আকাশে তারারা ঝিকিমিকি করে জ্বলে। নিজেকে অনুধাবন করি এই শূন্যতার মাঝে আমি খুব ক্ষুদ্র। যে ক্ষুদ্রতার মাঝে আমার ভাঙ্গা স্মৃতি গুলো তাড়া করে বেড়ায়। এর একটু পরেই আমি উপলব্দি করছিলাম কেউ একজন আমার পাশে হাটছে। আমি তাকিয়ে দেখি ফিউনা। তাকে জিজ্ঞেস করলাম “ঘুমাস না? সে বলে ”নারে ঘুম আসে না। “ আমি আর কিছু বলি না। দুজনেই হাটতে থাকি। হাটতে হাটতে আমি বালির উপর বসে পরি। সে বললো হঠাৎ বসে গেলি কেন? আমি বললাম “অনেকক্ষন হেটেছি। একটু বস। ফিউনা আমার সাথে বসে থাকে। অনুভূতি গুলো চুপসে হাওয়ায় ঘুরপাক খায়।
হৃদয়ের অতল গভীরে যে শূন্যতা বসবাস করে আমি তার নাম দিয়েছি অদেখা আলো। সে আলোর মাঝে দিন গুনে সময় পার করেছি কিন্তু দিন শেষেই একটা অসমাপ্ত গল্প আমার চিবুকের মাঝে ঠায় পেয়েছে। হঠাৎ ফিউনা ঝিকিমিকি করা আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে বললো ”আমার জন্য কবিতা লিখবি?” ওর এমন কথা শুনে আমি চুপ হয়েছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। তারপর সে আবার বললো ”আমি অদ্রিতার মত অমন করবো না কথা দিচ্ছি। লিখবি আমার জন্য কবিতা?” তার পরের কথা নাই বা বলি। পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই কবিতা দিয়ে সে আমাকে কি বুঝাতে চেয়েছে। হ্যাঁ আমার কিছুটা দিন সময় লেগেছিল ফিউনাকে নিয়ে ভাবতে। কারণ ওকে নিয়ে আমি আগে কখনো ওভাবে ভাবিনি।
রাত নয়টার মত বাজে। প্রায় দুদিন অতিক্রম হয়েছে ফিউনা আমার সাথে কথা বলে না। তার সাথে আমি কথা বলতে চাই। এই দুদিনে তার সাথে না বলা অব্যক্ত কথা গুলা আমার ভিতর জমা হয়ে আছে। মনস্থ করে আমি দৌড়ে তার বাড়ির গেইটের কাছে গিয়ে তাকে ফোন দেই। কানে ফোন রেখে সে চুপ করে থাকে। আমি বললাম…
‘‘একটু নিচে আসবা?
”ভাইয়া কেন নিচে আসবো? আপনার এই বোনকে কেন ফোন দিয়েছেন?
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলাম “হ্যাঁ আমি তোমার ভাই, নানা, দাদা সবি হই এখন তুমি নিচে আসো একটু। সে বলে ”আমার খেয়ে দেয়ে কাজ নাই নাকি? আমি বললাম ”আমি অপেক্ষা করছি। এইটা বলে ফোনটা রাখি। আমি পূর্ণ আস্থার সহিত অপেক্ষা করতে লাগলাম। শীতটা এসেই পড়েছে। ঠান্ডা বাতাস শরীরের মাঝে মিশে একটা শীতল মনোভব তৈরি করছে। এর একটু পরেই ও একটা শাল গায়ে দিয়ে নিচে নেমে এসে বলে ”কি বলবা বলো। বলে বিদায় হও।
আমি ইতস্তত হয়ে বললাম ”আগামীকাল সারাদিন তোমার সাথে থাকবো। সে চোখ গুলো বড় বড় করে কোমড়ে হাত রেখে বলে ”তুমি এই বালের কথা বলার জন্য এইখানে আসছো? আমি একটু হেসে হ্যাঁ সূচক ইশারা দিয়ে বললাম “তুমি যা বলবা তাই হবে বাবু, কি যাবা না? সে একটু ন্যাকামি টাইপের গোঙানী দিয়ে বলে “দুদিন হয়ে যাচ্ছে আর তুমি এখন আসছো আমার রাগ ভাঙ্গাতে? এইটা বলে সে চুপ করে থাকে।” আমি আবার বললাম “আগামীকাল সকাল বেলাই বের হবো ঠিকাছে। তবে একটা শর্ত আছে। ফিউনা একটু অবাক হয়ে বলে “আবার শর্ত কেন? আমি বললাম “ইয়ে মানে তেমন কিছু না, আগামীকাল খাওয়া দাওয়া ঘোরাঘুরির যত খরচ হবে ফিফটি ফিফটি দিব কেমন?”
ফিউনা একটা হাসি দিয়ে বলে ”তুমি না আসলে একটা বাল। গাধা তোমার কোন টাকা খরচ করতে হবে না বুঝছো। মেয়েরাও খরচ করে।” আমি তাকে বললাম ”এইযে কথায় কথায় বাল বলো এটা বাদ দেওয়া যায় না? পাঠকরা কি ভাবছে তোমাকে নিয়ে খেয়াল করেছো? আমি চাইনা আমার মানুষটাকে কেউ খারাপ ভাবুক। সে বলে “কি করবো মুখে চলে আসে। যাও কথা দিচ্ছি নিজেকে সংযত রাখবো এই শব্দটা থেকে। এর একটু পর খেয়াল করলাম সে আমার হাতটা ধরেছে আমি তাকে বললাম ”চলো কিছুক্ষন হাটি। ফিউনা চাদরটা শরীর থেকে খুলে দুজনের মাঝেই দিয়ে দেয়। শালের ভিতর সে আমার হাতটা আকড়ে ধরে আছে। আমরা এই নগরীর রাতের আলোয় হেটে যাচ্ছি। কেমন যেন একটা ভালো লাগা কাজ করছে। না একটু হাটা যাক এই শহরের রাতের আলোয়…