ছেলেদের রুপচর্চা

ছেলেদের রুপচর্চা

সেদিন যখন ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারার দিকে তাকালাম দুই গালে চার থেকে পাঁচটা ব্রণ দেখে নিজের ই নিজেকে চিনতে অসুবিধে হলো।আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবি দেখলাম।তারপর বিড় বিড় করে বললাম, “এটা কি হল!কিভাবে হলো?এরা কোথা থেকে এলো?” কিন্তু কোনো উত্তর খুঁজে না পেয়ে এক রাশ হতাশা নিয়ে আমি ওয়াশরুম থেকে ফিরে এলাম।জানালায় মাথা ঠেস দিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম, “এখন আমার কি হবে?আমাকে কি আর কোনো মেয়ে পছন্দ করবে না!কিউট ছেলে বলে কেউ গাল টেনে দিবে না?কেউ কি আর আমাকে বিয়ে করবে না?”

সারাদিন ঘরে থাকা মা বোনের নানা প্রসাধনী ব্যবহার করেও কোনো কাজ হলো না।রাতে যখন খেতে বসলাম তখন ছোটো ভাই টিভি দেখছিলো হঠ্যাৎ করে একটি বিজ্ঞাপন শুনে ছুঁটে গেলাম। টিভিতে জয়া আপু লেহেঙ্গা পরে এসেছে।উনার হাতে একটি সাবান।উনি লেহেঙ্গা পরা অবস্থায় বাথটবে বসে সাবান টা ধরে আছে।আমি আমার চোখ কে সাবানের দিকে জুম করালাম তখনই জয়া আপু বলে উঠলো, “স্যান্ডেলিনা স্যান্ডেল সোপ,আমার সৌন্দর্যের রহস্য, রুপচর্চায় আভিজাত্য”

বিজ্ঞাপন শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আরেকটা বিজ্ঞাপন চলে এলো।এবার ভারতীয় অভিনেত্রী ইয়ামি গৌতম এসেছে। উনার হাতে “ফর্সা এবং লাভলী” উনি ও এসে জয়া আপুর মতো সৌন্দর্য নিয়ে অনেকগুলো মিষ্টি কথা বলে গেলো। এসব দেখে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো।শুধু মেয়েদের জন্যই কেনো টিভিতে এসব বিজ্ঞাপন দেয়।নারী পুরুষ সমান অধিকার তাহলে কেনো ছেলেদের রুপচর্চা নিয়ে কিছু বলে না।কেনো ছেলেদের ব্রণের কোনো সমাধান দেওয়া হয় না,কেনো ছেলে মেয়েকে আলাদা চোখে দেখা হয়?

এভাবে আরো দশদিন কেটে গেলো।এখনো আমার গালে বরইয়ের মতো ব্রণ গুলো রয়ে গেছে।শুধু রয়েই যায় নি তারা এখানে বংশবৃদ্ধি করে পাঁচ টা থেকে বারটা হয়ে গেছে।নিজের চেহারার উপর এভাবে ব্রণের জনসংখ্যা বাড়তে দেখে আমি এক প্রকার ডিপ্রেশনে চলে গেলাম। নিজের চুল নিজেই টেনে ছিঁড়তে চেয়ে উন্মাদের মতো আচরণ করতে শুরু করলাম। লোকে ডিপ্রেশনে গেলে আত্নহত্যা করে।কিন্ত আমি ডিপ্রেশনে যাওয়ায় আমার ডিপ্রশনের কারণ উপন্যাস আকারে লিখতে বসে পড়লাম। “ছেলেদের কি রুপচর্চা বলে কিছু নেই,তাদের কি সৌন্দর্য বলে কিছু নেই,কেনো ছেলেদের প্রতি এতো অবহেলা করা হয়,তারাও তো কারো বাবা-ছেলে-ভাই-জামাই কিংবা কারো ভবিষ্যৎ বর”

এভাবে আমি আরো পাঁচ ছয়দিন নিজের কষ্টের কথা লিখে গেলাম।তখন নিজেকে কেমন সাহিত্যিক মনে হতে শুরু করলো। কিন্তু সেদিন বিকেলে যখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমার এক প্রবাসী বন্ধুকে ফোন দিলাম সে তখন বললো আমি যেনো ডেটল সাবান ব্যবহার করে মুখে গোলাপ লাগাই। বন্ধুর উপদেশ ফলো করার আগেই বন্ধুকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে সাথে সাথেই একটি ডেটল সাবান কিনে আনলাম।টানা আধাঘন্টা মুখে ডেটল সাবান ঘষলাম।তারপর মুখ ধোঁয়ার পর মুখে কেমন যেনো একটা ভাব চলে এলো।নিজের মুখ টা কেমন ফ্রেস মনে হলো। আমি এই ডেটল সাবানের কথা আমার উপন্যাসে লিখলাম।

কিন্তু সমস্যা টা বাধলো মুখে গোলাপ লাগানো নিয়ে।বন্ধুকে অনেকবার কল দিয়েও বন্ধু পরবর্তী দুইদিনেও একটি বারের জন্য ফোন রিসিভ করলো না।গোলাপ মুখে কিভাবে লাগাবো সেই বিষয় টা আমার আগেই জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিলো কিন্তু এটা আমি আগে ভাবি নি এজন্যই হয়তো প্রবাদ আছে, ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ নিজের কপাল টাই খারাপ মনে হলো।আবারো জানালায় মাথা ঠেস দিয়ে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম, “এখন আমার কি হবে?আমাকে কি আর কোনো মেয়ে পছন্দ করবে না!কিউট ছেলে বলে কেউ গাল টেনে দিবে না?কেউ কি আর আমাকে বিয়ে করবে না?”

আমার ভাবনার ঘোর কাটালো আম্মার ডাকে।বড় হওয়ার পর থেকে আম্মা শুধু কাজের জন্যই ডাকে।উনার কাছে যাওয়ার সাথে সাথেই উনি হাতে বাজারের ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। আমি তপ্ত রোদের দিনেও মুখে মাফলার বেধে বেরুলাম। কেউ যদি আমার মুখের ব্রণ দেখে ফেলে কেলেঙ্কারি বিধে যাবে।শেষে কোনো মেয়েই আমাকে বিয়ের জন্য রাজি হবে না।

রাস্তায় যাওয়ার পর সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো। আমার নিজেকে জুকার মুভির জুকারের মতো মনে হলো। আমি এসবে পাত্তা না দিয়ে বাজার খরচ পর্ব টা সারলাম।আসার পথে একটা কলেজের সামনে থাকা একটা কসমেটিকস এর দোকানে চোখ পড়লো।সোকেশের ভেতর রাখা, “Tibet Pomade with Rose Oil”
আমি যেনো আলাদিনের চেরাগ হাতে পেলাম।গোলাপের দাম এমনিতেই বেশি তাছাড়া গোলাপ কিভাবে লাগাবো তাও জানি না তার থেকে এটাই হয়তো ভালো।সাথে সাথেই আমি এক কার্টুন কিনে হাসি মুখে বাসায় ফিরলাম।

বাসায় এসেই এটা লাগানোর দুদিনের ভেতরেই ফল পেলাম।আমার গাল আগের চেয়ে অনেক গুণ নরম তুলতুলে হয়ে গিয়েছে।এবার আবারো অনেক মেয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বলবে, “কি কিউট ছেলে!” এটা ভাবতেই আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।চারদিনের মাথায় আমার মুখে থাকা ব্রণের বংশের নাম নিশানা মিঠে গেলো। আমি এই বিষয় টা ও খাতায় লিখে রাখলাম। ওমা একি! আমি তো ছোটো খাটো একটা উপন্যাস লিখে ফেলেছি।এটাকে ২০২০সালের বই পেলায় প্রকাশ করা যায়। আমি উপন্যাসের একটা নাম দিলাম “ছেলেদের রুপচর্চা”।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত