মাদক

মাদক

আমার গার্লফ্রেন্ড সিন্থিয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল ৷ কিন্তু ভাগ্যটাই আমার খারাপ ৷ বিয়ের ৭দিন আগে সিন্থিয়া বৃষ্টির রাত্রে বাসা থেকে উধাও হয়ে যায় ৷ তার এভাবে বাসা থেকে উধাও হবার কোনো কারণ খুঁজে পাইনি ৷ এটা উধাও হওয়া নাকি পালিয়ে যাওয়া? সে তো আমাকে ভালবাসতো, তাহলে বিয়ের আগে বাড়ি ছেড়ে যাবার কি কারণ হতে পারে? নাকি তাকে কেউ কিডন্যাপ করে নিয়ে গেছে? পুলিশকে বিষয়টা জানাবে এমন সাহস হলোনা সিন্থিয়ার পরিবারের কারোর ৷ সে বাসা ছেড়ে চলে যাবার ৪ দিন পর আমাকে ফোন দিয়ে বলল,

—-আমি তোমাকে বয়ফ্রেন্ড হিসেবে মানি কিন্তু কখনোই স্বামী হিসেবে মানতে পারবোনা ৷ তাই বাসা থেকে পালাতে হলো! আশা করি আমাকে হারানোর শোকে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিবেনা! সিন্থিয়ার কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছিল ৷ আলোকিত পৃথিবীটা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গিয়েছিল ৷ বেঁচে থাকার সব স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গিয়েছিল!

সিন্থিয়াকে অনেক খোঁজার পরও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি ৷ কয়দিন পর খবর পাওয়া গেল সে একজনকে বিয়ে করে নিয়েছে ৷ বিয়ের খবর পেয়ে কষ্টটা আরো বেড়ে গিয়েছিল ৷ তার এতবড় প্রতারণা আমাকে বিষাদের অনলে পুড়ে মারছিল! সিন্থিয়া শুধু গার্লফ্রেন্ডই ছিলনা সম্পর্কে ছিল আমার খালাতো বোন ৷ সে আমাকে এরকম ভাবে ধোঁকা দিবে কখনো ভাবতে পারিনি ৷ তার এহেন কর্মের কারণে আমার সবকিছু উলটপালট হয়ে গিয়েছিল ৷ কোনটা রাত আর কোনটা দিন এটাও ঠাওর করার মত অবস্থা ছিলনা ৷ একদম ঘরে বন্দি হয়ে গিয়েছিলাম ৷ আমার জীবনটা হয়ে গিয়েছিল মরুভূমির ন্যায় ৷ যথেষ্ঠ সচেতন মানুষ হওয়া সত্বেও তাকে হারিয়ে ফেলার শোকে ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান লোপ পেয়েছিল ৷ আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু গর্হিত কাজটি করতে পারিনি বড় আপুর কারণে ৷ সে কেমনে যেন বুঝে গিয়েছিল যে আমি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছি ৷ যেদিন আত্মহত্যা করার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করি, সেদিন আপু আমাকে বলল,

—-একটা মেয়েকে হারানোর শোকে যদি নিজের জীবনটাকে শেষ করে দিতে চাস, তো শেষ করে দে ৷ নিষেধ করবো না ৷ কিন্তু এমন কোনো কাজ করিসনা, যে কাজ করলে বাবা, মা ও বড় ভাই কষ্ট পায় ৷ এই রকমের কোনো কাজ করার অধিকার তোকে দেওয়া হয়নি ৷ আমি কিছুতেই তোর উল্টাপাল্টা কাজের জন্য কষ্ট পেতে চাইনা ৷ তাই খবরদার এমন কাজ করার ইচ্ছা ভুলেও মাথায় আনবিনা! আপুর কথায় নিজের পঁচে যাওয়া মাথায় হুশ ফিরেছিল ৷ বাবা, মায়ের প্রতি আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ হয়েছিল ৷ ৭দিন পর বাবা, মা আবারো আমার জন্য বিয়ে ঠিক করলো ৷ পাত্রী অন্য কেউ নয় সিন্থিয়ার ছোট বোন সুমি ৷ তারা আসলে জমজ বোন ৷ সিন্থিয়া ১৫ মিনিট পূর্বে জন্ম নিয়েছিল ৷ দুজনের চেহারাতে অনেক বেশি মিল রয়েছে ৷ আমি তো মাঝেমধ্যে বুঝে উঠতে পারিনা কে সিন্থিয়া আর কে সুমি ৷ তাদেরকে চিহ্নিত করার উপায় হচ্ছে গালের তিল ৷ সিন্থিয়ার ডান গালে তিল আছ আর সুমির গালে কোনো তিল নেই!

সিন্থিয়ার সাথে রিলেশন হবার ৩ মাস পর সুমি আমাকে তার পছন্দের কথা বলেছিল ৷ সে আমাকে ভালবাসে এই কথাটি খুব সহজে বলে দিয়েছিল ৷ কিন্তু আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, আর এটাই তো হওয়া উচিত ৷ ঐদিন পর সে আর আমার সাথে কথা বলেনি! সেই সুমির সাথেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে! তার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে শুনে খুশি হবো নাকি নারাজ হবো বুঝতে পারছিলাম না ৷ তবে বাবা, মায়ের কথা ভেবে বিয়েতে রাজি হতেই হলো ৷ অবশেষে বিয়েটা হয়েই গেল!

বিয়ের রাত্রীতেঃ কম্পমান বুক নিয়ে পা টিপেটিপে বাসর ঘরে ঢুকে যা দেখতে পেলাম, তাতে আমার চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে গেল ৷ সুমি ঘুমিয়ে গেছে ৷ গায়ে কম্বল জরানো আছে ৷ তাকে ঘুম থেকে জাগাবো কি জাগাবো না এটা নিয়ে বিস্তর রকমের দ্বিধায় পড়ে গেলাম ৷ অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে ঘুম থেকে জাগাতেই হবে, অন্যথায় মধুর রাতটাই মাটি ৷ তার গায়ে হাত দিয়ে একটু জোরেই ধাক্কা দিলাম যাতে সে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় ৷ জাগাতে গেলে দেখলাম সে নড়ে উঠলো৷ আমার দিকে চেহারা ঘুরিয়ে কেমন করে যেন তাকালো! আসামীর দিকে লোকেরা যেভাবে তাকায় সেভাবেই তাকালো ৷ নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার তাকানো দেখে ৷ সুমি জোরালো কন্ঠে আমাকে বলল,

—-আমি জানি বাসর রাতে বর কনে কি করে! তারা মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে থেকে একে অপরের নানা রকম ব্যক্তিগত কথা শেয়ার করে ৷ এরপর দুজনে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয় ৷ অতঃপর দুজনের কামনা বাসনা পূরণ করে ৷ কিন্তু আমি এসবের একটাও আজ করবোনা ৷ আজ বাদে কাল থেকে সব হবে ৷ তবে যখন আমার মন চাইবে তখন ৷ সব আমার ইচ্ছাতে হবে ৷ যদি আপনার মনে হয় আমি বাড়াবাড়ি করছি, তবে তাই ৷ আমি বাড়াবাড়ি করতে ভালবাসি! সুমির কথায় মৃদ্যু ভাবে হাসলাম ৷ এরপর নিচুস্বরে বললাম,

—-ঠিক আছে আমার কোনো আপত্তি নেই ৷ তবে কিছু সময় তো আমরা কথা বলতেই পারি, তাইনা?
—-জি না, আমার এখন কথা বলার কোনো মুড নেই ৷ আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড না যে সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হবে!

—-এরকম ভাবে কথা বলছো কেন?
—-আমি তো এভাবেই কথা বলি! আপনার গার্লফ্রেন্ড তথা আমার বোন তো নেই ৷ তার কথা কি খুব মনে পড়ছে? যদি তাকে মনে পড়ে থাকে তো আমার হেল্প নিতে পারেন ৷ আপুর সাথে আমার প্রায় দিনই কথা হয় ৷ এক কাজ করেন, আমার থেকে আপুর নতুন সিমের নম্বরটি নিয়ে কথা বলুন ৷ ব্যাস, আমার সাথে আপনার আর কথা বলার দরকার পড়বেনা! আমার চেহারার রং ফ্যাকাশে হয়ে গেল বুঝতে পারলাম ৷ রাগের উদয় হলো ৷ কিন্তু সুমিকে বুঝতে দিলাম না রাগ করেছি ৷ তবে তীক্ষ্ণকন্ঠে তাকে বললাম,

—-মানে কি এসবের? আমি বিয়ে করা বউয়ের সাথে কথা না বলে অন্য একজনের বউয়ের সাথে কেন কথা বলবো? তুমি কি ভুলে গেছো যে তোমার বোন ম্যারিড? সুমি তীক্ষ্ণকন্ঠেই জবাব দিলো,

—-তার বিয়ে হলে কি হবে? আপনি তো আজও তাকে ভালবাসেন ৷ এখনো আপনার হ্নদয়ে সে প্রেমিকা হিসেবেই জায়গা দখল করে আছে! কি ভুল বললাম?

—-অবশ্যই ভুল বলেছো, সিন্থিয়া নামের যে মেয়েটির সাথে অতীতে যা ছিল সবই আমার স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে ৷ সিন্থিয়া নামের কিছু আর এই হ্নদয়ে থাকতে পারেনা! সুমি মুচকি হেসে বলল,

—-এটা আপনার মনের কথা নয় ৷ যাইহোক, আমি ঘুমাবো ৷ গুড নাইট!

সুমি ঘুমিয়ে গেল ৷ বুঝতে বাকি রইলোনা যে সে আমার ওপর এখনো অভিমান করে আছে ৷ তাকে প্রেমের প্রস্তাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম এই কষ্টটা আজও সে পুষে রেখেছে! সকালে ঘুম থেকে জেগেই দেখি সুমি শাওয়ার নিয়ে এসে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে টাওয়ালটা ঠিক করতে করতে রুমের দিকে ঢুকছে ৷ রুমের সাথে অ্যাটাস করা ওয়াশরুম থাকায় সুমির জন্য ভালই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে ৷ এক ঝলকের জন্য হলেও তার গোপন সৌন্দর্য আমার চোখে ধরা পড়লো ৷ ইম্প্রেশড আমি ৷ সুমি তার গা থেকে টাওয়ালটা সরিয়ে ব্লাউজ,পেটিকোট এরপর হলুদ রংয়ের শাড়ি পড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল ৷ বেশ কিছুক্ষণ পর হাতে করে এক কাপ চা নিয়ে এলো! আমার হাতে চা দিয়ে মিষ্টি স্বরে বলল,

—-নেন, চা খেয়ে নেন! আমি ভ্রু কুঁচকে মৃদ্যু হাসি হেসে বললাম,
—থ্যাংকস! কিন্তু তুমি খাবেনা চা? একসাথে চা খাবার মধ্যে ভালবাসা লুকিয়ে আছে, বুঝছো?
—-আমি এটা জানিনা, অভিজ্ঞতা নেই ৷ আপনি তো আপুর সাথে অভিজ্ঞতাটা অর্জন করতে পেরেছিলেন ৷ যাইহোক, আমি চা খাবো, তবে আপনার কাপ থেকে ৷ আপনি কিছুটা খান, এরপর বাকিটুকু আমি খেয়ে নিবো! সুমির কথা শুনে হা হয়ে গেলাম ৷ এত ভালবাসা তার মনে, যে আমার আধ খাওয়া চা খাবে বলছে?
কপালে ভাঁজ ফেলে সুমিকে বললাম,

—-তুমি আমার মুখে নেওয়া আধ-খাওয়া চা খাবে? ঘৃণা লাগবেনা? মুখ ফুলিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলল,

—-ঘৃণা লাগলে আপনাকে বিয়ে করতাম নাকি? কথা না বলে চা কিছুটা খেয়ে আমাকে দেন! কয়েক চুমুক গিলে, চায়ের কাপটা বউয়ের হাতে দিলাম ৷ সুমি নির্বিগ্নে চা-টা খেয়ে নিলো ৷ চা খাওয়া শেষ করে মিষ্টি হেসে বলল,

—-থ্যাংকস! আর বিছানা ছেড়ে বাইরে গিয়ে হেঁটে আসুন, আমি ব্রেকফার্স্ট রেডি করছি!

বাসার বাইরে গেলাম ৷ ব্রেকফার্স্টের সময় হলে বাসায় ফিরে এলাম ৷ ব্রেকফার্স্ট শেষ করলে সুমি বলল অফিসে যেতে৷ কিন্তু বাবা, মা আর বড় আপু অফিস যেতে নিষেধ করলো ৷ ভাই ভাবী সুমির দলে ৷ সুমির জোরাজুরিতে অফিসে যেতেই হলো ৷ অফিসের সামনে দেখা হয়ে গেল একজন লোকের সাথে ৷ গাড়ি থেকে নামা মাত্র লোকটি আমাকে থামিয়ে দিয়ে উত্তেজিত গলায় বলল,

—-থামুন! আপনার সাথে কথা আছে ৷ আমি জানি আপনি সিন্থিয়ার বয়ফ্রেন্ড ৷ আপনাকে সহজ ভাবে বলছি সিন্থিয়ার জীবন থেকে সরে দাঁড়ান, নইলে কপালে খারাপ আছে! লোকটার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম ৷ কে সে সেটাও বুঝলাম না ৷ তাকে তীক্ষ্ণকন্ঠে বললাম,

—-আপনি কে? এসব কথা আমাকে বলছেন কেন?
—-আমি সিন্থিয়ার এক্স বয়ফ্রেন্ড ৷ সে আমার জন়্য বাসা ছেড়েছিল ৷ কিন্তু আমার বাসার গেটে আসার পরই ফের কই যেন উধাও হয়ে গিয়েছিল ৷ আমি জানি সে আপনার কাছেই আছে! বলছি তাকে আমার হাতে তুলে দিন!
—-মানে কি এসবের? সে যদি আপনার প্রেমিকা হয়, তাহলে তো আপনি তার স্বামী ৷ আমি জেনেছি সিন্থিয়া তার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে নিয়েছে!

—–বিয়ে করতেই সে আমার নিকট এসেছিল ৷ কিন্তু পরে কি যে হলো আমার বাসা ছেড়ে চলে গেল সে!
—-দেখুন, সিন্থিয়ার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই ৷ তাকে আমি আর ভালওবাসিনা, সে আমার নিকট মৃত!
—- সে আপনার কাছে নেই? তাহলে গেল কই?
—-সেটা আমি তো বলতে পারবোনা ৷ যাহোক, আমার অফিসে প্রচুর কাজ ৷ আসি! সারা দিন সিন্থিয়ার বিষয়টা নিয়ে ভাবলাম ৷ সন্ধ্যা পর বাসায় ফিরলাম! রাতে শোবার সময় সুমিকে ঈষৎ রাগস্বরে বললাম,৷

—-গতরাত্রে ওরকম আচরণ করলে কেন, বলোতো? সুমি চাপা কন্ঠে বলল,
—-আপনার উপর রাগ করে ৷ আচ্ছা আমার ঐ প্রস্তাবে কেন রাজি হননি, বলুন তো?
—-আরে, আমি রিলেশনে থাকাকালিন তোমার প্রস্তাব কেন মেনে নিবো? দু বোনের সাথে একত্রে প্রেম করা যায়?
—-আপনার কি মনে হয় আপু আপনাকে ভালবাসতো? কখনো না ৷ আপনার সাথে খেলা করেছিল ৷ আপনি বুঝতে পারেননি ৷ আমি প্রোপজ করেছিলাম আই লাভ ইউ বলে ৷ সেই সাথে আপনার হাতে একটা চিঠি দিয়েছিলাম ৷ আপনাকে চিঠিটা পড়তে বলেছিলাম ৷ এও বলেছিলাম আমাকে উত্তরটা ভেবে চিন্তে দিবেন ৷ আচ্ছা, আপনি চিঠিটা কি পড়েননি?

—-না তো! আমি তখন ভাল করে বুঝতে পেরেছিলাম তুমি চিঠিতে কি লিখতে পারো ৷ তাই পড়িনি!
—-মস্তবড় ভুল করেছিলেন ৷ ঐ চিঠির ভেতর একটা মেমোরি কার্ড ছিল ৷ ওতে, আপুর সাথে তার আসল বয়ফ্রেন্ডের ক্লোজ কিছু ফটোস ছিল ৷ ভেবেছিলাম ওগুলো দেখে আপনি আপুর জীবন থেকে সরে দাঁড়াবেন ৷ কিন্তু আপনি কি করেছিলেন এটা? অথচ আমি জানতাম আপনি সব জেনেই আপুর সাথে সম্পর্ক কনটিনিউ করছিলেন ৷ আর আমার চিঠিটা পড়ার পরই আমাকে রিজেক্ট করেছিলেন!

—–ওহ নো! কি বলছো এসব? সত্যি বলছো কি? ওয়েট! চিঠিটা এখনো ওয়্যারড্রবের ভেতর আছে ৷ আমি পড়বো! চিঠিটা ওয়্যারড্রবের কাপড়ের ভাঁজের ভেতর থেকে বের করলাম ৷ এরপর খাম থেকে চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলাম ৷ চিঠিতে লেখা ছিল,

“প্রিয়তম রাফাত,
বেশি কিছু লিখবনা ৷ এতটুকু বলব, যাকে তুমি মনের মানুষ মনে করে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছো, সে আসলে তোমার ঐ নীলপরী নয় ৷ ফেসবুকের নীলপরী আইডিটা সিন্থিয়া আপু নয়, আমিই ব্যবহার করতাম; কারণ আইডিটা আমার ছিল ৷ একদিন আপু আমার আইডির পাসওয়ার্ডটা জেনে যায় ৷ সে পাসওয়ার্ড ও নম্বর চেঞ্জ করে নিজেই ব্যবহার করতে থাকে ৷ এটা আমি মাত্র ৭দিন আগে জানতে পারি ৷ ভেবেছিলাম আইডিটা হ্যাক করেছে কোনো হ্যাকার ৷ আইডি হারানোর পর অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম তোমাকে বলে দিব যে নীলপরী আইডিটা আমি ইউস করতাম, আপু নয় ৷ কিন্তু আপুর সাথে তোমার প্রেম হয়ে গেলে আর বলার সাহস হয়নি ৷ কিন্তু যখন জানতে পারলাম আপু আমার নীলপরী আইডিটার মাধ্যমেই তোমাকে ঘায়েল করে নিজের করে নিয়েছে তখন আর চুপ থাকতে পারলাম না ৷

আরো চুপ থাকতে পারলাম না যখন আপুর আসল প্রেমিকের সম্পর্কে জানতে পারলাম ৷ আমাদের নানু বাড়িতে গিয়েছিলাম সেবার ৷ নানুর প্রতিবেশীর এক ধনী লোকের ছেলের সাথে আপুর সম্পর্ক চলছিল ৷ আপু ছেলেটার সাথে বাগানের ঝোঁপে দেখা করে ৷ দুজনে হাগ কিসও করছিল, সেটা আমি মোবাইলে ক্যামেরা করে রাখি, যাতে ওগুলো তোমাকে দেখাতে পারি ৷ ফটোগুলো মেমোরির ভেতরে আছে, তুমি দেখে নিতে পারো! আর শোনো বিশ্বাস করো আমিই তোমার সেই নীলপরী ৷ সিন্থিয়া আপু নীলপরী নয়! আমি তোমাকে হারাতে চাইনা ৷ তাই শেষপর্যন্ত সামনসামনি তোমাকে মনের কথাটি বলে দিলাম ৷ অাশা করি ফেসবুকে আমরা যেরকম ছিলাম, বাস্তব জীবনেও সেরকম ভাবে সম্পর্ক চালিয়ে যাবো ৷ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা আপুর ওরকম ধোঁকাবাজির কারণে!

ইতি,
তোমার নীলপরী সুমি! চিঠিটা পড়ার সময় চোখের জল টপটপ করে পড়ছিল ৷ এতবড় ভুলে করেছিলাম আমি? সুমিকে এত কষ্ট দিয়েছিলাম একজন ছলনাময়ী নারীর জন্য? চিঠিটা পড়া শেষ করে মেমোরিটা মোবাইলে সেট করে ফটোগুলো দেখলাম ৷ সুমি ঠিকই বলেছে ৷ আর সিন্থিয়ার বয়ফ্রেন্ড সেই লোকটি যে আমার সাথে অফিসের সামনে দেখা করেছিল! সুমিকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ঝরিয়ে বলতে লাগলাম,

—-জান, আমি ভুল করেছিলাম ৷ প্লিজ মাফ করে দাও ৷ কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছিনা, সিন্থিয়া তোমার সাথে এমনটা কেন করতে গেলো? তুমি তার ছোট বোন এমনটা করে কি পেলো সে? সুমির চোখ অশ্রুসিক্ত ছিল, চোখের কোণ ও গালে পানি জরানো আছে ৷ সে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চোখের কোণে লেগে থাকা পানি মুছে কাঁপা স্বরে বলল,

—-আপুকে বলেছিলাম, “কেন এতবড় ক্ষতি করলে আমার?” এর উত্তরে সে বলেছিল, “তুই চুপ কর, আমি চাইনা রাফাত তোর হোক ৷ খবরদার! তুই ওর পিছু নিবিনা! পারলে রাফাত বাদে অন্য কারো সাথে সম্পর্ক কর!” হয়তো আপু চাইতোনা আমি আপনার হই, এজন্যই সে এমনটা করেছিল!

—-যাইহোক, সে আমার জীবন থেকে চলে গিয়ে ভালই করেছে ৷ আর শোনো, চিঠিতে যেভাবে আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করেছো, সামনাসামনিও সেভাবে ডাকবে আমাকে ৷ বুঝলে?

—-না, আমি আপনাকে আপনি করেই ডাকবো! এসব বিষয়ে কথা না বলে, নেন আমাকে ঠিক ভাবে জড়িয়ে ধরেন! শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরার পর কারেন্ট চলে গেল! ঠিক তখনই সুমির ফোনে রিং বেজে উঠলো ৷ কে যেন কল দিয়েছে? সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে ফোনটা রিসিভ করল ৷ আমি আমার ফোনে টর্চলাইট জ্বালালাম ৷ সুমি কি যেনো শুনে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো! বুঝলাম না কি হয়েছে? তাকে কৌতূহলচিত্তে বললাম,

—কি হলো তোমার? কে ফোন দিয়েছিল? সুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলল,

—-আম্মু ফোন দিয়ে বলল আপুকে জেলখানায় আটক করা হয়েছে ৷ আপু নাকি ইয়াবা সেবনকারী ও ব্যাবসায়ী!

সুমিকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তার কান্না থামছেনা ৷ বোনের বিপদে আরেক বোন ধৈর্য্যহারা হবে এটাই স্বাভাবিক! পরেরদিন জানতে পারলাম সিন্থিয়া ১ বছর হলো ইয়াবা সেবন করছে ৷ সে ইয়াবার খরচ জোগাতে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করে টাকা নিতো! আমিও তাকে প্রায় হাজার বিশেক টাকা দিয়েছি বিভিন্ন সময়ে! আসলে মাদক মানুষের বিবেককে নষ্ট করে দেয়, যেটার প্রমাণ সিন্থিয়া ৷ ইয়াবার টাকা জোগানোর জন্য সে তার ছোট বোনের ভালবাসার মানুষকে পর্যন্ত হাত করতে বাধ্য হয়েছিল!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত