আগামীকাল থেকে দেশে লকডাউন শেষ। দেশ করোনা আতঙ্ক থেকে মুক্ত! দেশের প্রত্যেক টা ইউনিভার্সিটি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত অবশেষে খুলেছে! আপনারা সবাই যে যার মতো পুনরায় কাজে ফিরুন। খবরটা এতক্ষন পড়ছিলেন নিউজ রিপোর্টার মায়া। মায়ার নাম টা যেমন তা চেহারা ও তেমন মায়াকাড়া।অফিসে আসলে সবাই কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আজ অনেকে দেখেই নাক সিটকাচ্ছে কারণ লকডাউনে থাকাকালীন সব সুন্দর সুন্দর ড্রেস পরে ছিড়ে ফেলেছিলেন তিনি!
এখন যে পরে অফিসে আসতে হয়েছে সেটা হলো, সুতির কাপড় যার কয়েক জায়গায় আবার রিপ্যু করা!
পরের দিন সকালে- আজ সবাই অফিসে যেতে রাস্তায় বের হয়েছে। অনেকদিন পর ফার্মগেটের রাস্তায় যাওয়া বাসে মানুষ বাদুড়ঝোলা হয়ে অফিসে যাচ্ছে! কারো গায়ে ছেড়া শার্ট, কেউ থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, কেউ আবার লুঙ্গির সাথে পাঞ্জাবি। দলে দলে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। বাচ্চাদের অনেকের গায়ে শার্ট পর্যন্ত নেই। মেয়েদের গায়ে হাতে বুনানো জামা দেখা যাচ্ছে। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে অনেক গুলো কদবেল! সেই কদবেল গুলোর সাথে ম্যামদের শাড়ির আঁচল না বিধলেও আর সবকিছুই বিধেঁ যাচ্ছে! রোদের তাপে একেকটা কদবেল ভেতর থেকে বলে উঠছে, ছাইড়া দে মা, কাইন্দা বাঁচি। কোন ফইন্নির পাল্লায় পইড়া ডেয়ার নিছিলাম আল্লাহ মাবুদ জানে!
ক্রাশ মেয়ে টারে কোয়ারান্টাইন এ ঘরে বসে যা একটু পটাইছিলাম তাও এই কদবেল দেইখা দৌড়াইয়া ভাইগা গেলো!
এইটা কিন্তু গাছের ফল কদবেল না! গাছের কদবেল হইলে তো ভালো হইতো, এই গরমে শরবত বানিয়ে খেয়ে ফেলা যেত! এটা হইলো মুন্ডু। ন্যাড়া করা মাথা। হোম কোয়ারান্টাইন এ ডেয়ার গেইম পেয়ে সবাই ন্যাড়া করে ফেলেছিলো। কোনো কোনো পড়া চোর তো ভেবেই নিয়েছিলো আর কখনো পড়তে হবে না! ব্যাস আর পায় কে! বইগুলো সব নিজের সাথে সাথে কোয়ারান্টাইন এ পাঠিয়ে দিয়েছিলো! ইউনিভার্সিটি তে আসারা আগে আর বই খুঁজেই পাওয়া যায় না!
এই নিয়ে বাসায় এক ছোট্ট খাট্টো মহাপ্রলয় করে ফেলেছে তাদের বাপ মা।আবার শুরু হয়ে গেলো তাদের সেই ডায়লগ, কি জন্ম দিয়েছি? কি সন্তান ধরেছি এই পেটে? জীবনটাই বৃথা আমার! কোনো পড়া করা হয় নাই! বইয়ের একটা পৃষ্ঠা উল্টায়ে দেখলেই আয়তুল কুরসি পইড়া বুকে ফু দিয়া মনে করতেছে, ওহ মোর আল্লাহ, এইডা কি মোর পড়ার বই নাকি! আমি কিছু পারি না কেন! আমি কিছু বুঝি না কেন! আমি তো এখন চৌউক্ষে ও দেখতে পাইতেছি না কিছু! যারা আয়তুল কুরসি জানে না, তারা লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা পড়তেছে। যে স্যার ম্যামের ক্ষোভ ছিলো কারো উপর তারে কান ধরাইয়া, মুরগী কইরা রাখছে!
প্রত্যেকটা মানুষের ভুড়ি বাইরা গিয়া যাচ্ছেতাই অবস্থা! এক ভুড়িওয়ালা আরেক ভুড়িওয়ালার সঙ্গে ধাক্কা খায় আর বইলা উঠে, মিয়া আপনার এত্ত ভুড়ি কেন? সেও আবার বইলা উঠে, আরেহ মিয়া রাখেন আমার ভুড়ি আগে নিজেরটা দেখেন। লকডাউন খুলছে, বফের আবদার, আইজ ই দেখা করতে হবে জান! বলেছিলা কিন্তু লকডাউন খুললেই দেখা করবা। আমাদের তিন মাসের রিলেশন অথচ কেউ কাউকে দেখি না। কোয়ারাইন্টাইনের সময় সকল ধরনের মেকাপ, শাড়ি পরে পিক উঠিয়ে দেখাতে দেখাতে সব মেকাপ শেষ! বিনা মেকাপে যাওয়ার পর ব্রেকাপ হাজার হাজার ক্যাপলের!
এমনই অবস্থা হবে হয়তো একদিন! আমরা জানি না সেই একদিন কবে আসবে! সুস্থ পৃথিবীতে আবার কবে আমরা শ্বাস নিতে পারবো বুক ভরে। হুড নামানো রিকশায় ঘন্টা চুক্তি হিসেবে, আকাশের দিকে তাকিয়ে কিলো রোডের পাতা ঝরা রাস্তায় হারিয়ে যাওয়া যাবে! জানি না কবে আবার শাহবাগের এক ঘন্টার জ্যাম ঠেলে প্রিয় মুখটা দেখার জন্য, হাকিম চত্বরে খিচুড়ি, টি এস সি তে বিশ টাকার ফুচকা কিংবা রবীন্দ্র সরোবরে রিকশায় উঠে ঘুরা হবে! আমরা কেউই জানি না কবে কিন্তু এমন দিন আবার আসবে এটা তো জানি তাই না?
সেজন্য নিজেকে নিরাপদ রাখুন! বের হয়েন না দয়া করে। এই তো দেখবেন আর মাত্র কয়টা দিন পর আবার কত এমন সুযোগ হবে! ততদিন না হয় প্রিয় মানুষগুলোর জন্য হলেও সচেতন থাকুন! একসাথে কফি হাতে আরেকবার মুখোমুখি হওয়ার জন্য ও নিরাপদ থাকুন! প্রিয়জনের মুখের হাসি দেখার জন্য হলেও ঘরে থাকুন।