তেল পড়া

তেল পড়া

প্রচন্ড গরমে বাবার প্রেসারটা বেড়ে যায় যে কারণে বাজার থেকে বাসায় আসার পরেই বাবা অজ্ঞান হয়ে যায়। কিছুক্ষণ বাবার মাথায় পানি ঢালার পর বাবার জ্ঞান ফিরলো কিন্তু আমার মা’র চিন্তা বেড়ে গেলো। মা আমাকে আড়লে ডেকে নিয়ে বললো,

~ এটা তোর চাচার কাজ।তোর চাচার সাথে তোর বাবার জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। এজন্য নিশ্চয় তোর চাচা তোর বাবার সাথে কবিরাজি করেছে। বান মেরেছে তোর বাবাকে মারার জন্য আমি মার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,

— বান আবার কি? মা আমার কানের কাছে আস্তে আস্তে বললো,
~ বান কি সেটা কবিরাজ জানে। ওরা মন্ত্রপড়ে একটা পুতুলের গলায় সুতা দিয়ে বাঁধে আর শত্রুপক্ষ ধম আটকে মারা যায় আমি মার দিকে বিরক্ত হয়ে বললাম,

— বান দিয়ে যদি শত্রুপক্ষ মারা যেনো তাহলে খালেদা জিয়া শেখ হাসিনাকে আর শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে কবেই বান দিয়ে মেরে ফেলতো। এইসব ফালতু কথা রেখে তুমি বাবার মাথায় আরো পানি দাও। বাবার প্রেসারটা বেড়ে গিয়েছিলো মা আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,

~ তোকে আমি পেঠে ধরেছি তাই আমার থেকে বেশি বুঝার চেষ্টা করবি না। তুই এখনি সানকিপাড়া যা। সানকিপাড়া রেলক্রসিং এর সামনের গলির ভিতরএক পীর বাবা আছে। তুই উনার কাছ থেকে তেল পড়া নিয়ে আয় মায়ের জোরাজোরিতে আমার ইচ্ছে না থাকা শর্তেও যেতে রাজি হলাম। মা আমাকে একটা কাচের বোতলে সরিষার তেল ভরে বলবো, পীর বাবার থেকে যেন ফুঁ দিয়ে নিয়ে আসি সানকিপাড়া এসে গলির ভিতর ঢুকলাম কিন্তু পীর বাবার ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছি না। আশে পাশেও কাউকে দেখছি না যে জিজ্ঞেস করবো। এমন সময় খেয়াল করলাম কলেজ ড্রেস পড়া একটা মেয়ে আসছে। এই গরমে মেয়েটার ফর্সা গাল গুলো একদম লাল হয়ে আছে। মেয়েটা যখন আমার পাশ দিয়ে যায় তখন আমি মেয়েটাকে বললাম,

–একটু দাড়াও তো মেয়েটা আমাকে খুব ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। তারপর চিৎকার করে বলতে লাগলো,
~”তোমরা কে কোথায় আছো আমাকে বাচাও। এই ছেলেটা আমাকে মেরে ফেললো” এতক্ষণ আশে পাশে একটা মানুষও ছিলো না। কিন্তু মেয়েটার চিৎকার শুনে দলে দলে মানুষ এসে আমাদের ঘিরে ফেললো। মেয়েটা তখন কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

~ কিছুদিন ধরে এই ছেলেটা আমায় মোবাইলে বিরক্ত করছে। গতকাল রাতে ও আমায় বলেছিলো আমি আজ ওকে ভালোবাসি না বললে সে আমার সামনে এসে এসিড মেরে আমার মুখ ঝলসে দিবে। এই যে দেখুন আজ এই ছেলেটা সত্যি সত্যি এসিড এনেছে আমার মুখ ঝলসে দেওয়ার জন্য সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটলো যে আমি কিছু বলার সুযোগই পেলাম না। তার আগেই একজন আমার হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিলো আর গণধোলাই শুরু হয়ে গেলো। আমি এখন বসে আছি ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানায়। আর আমার সামনে বসে আছেন ওসি আরিফ রহমান। এত পরিমাণে মার খেয়েছি যে এখনও আমার মাথা ঝিমঝিম করছে। ওসি সাহেব আমার গালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বললো,

~ তোর এত বড় সাহস তুই দিনে দুপুরে একটা মেয়েকে এসিড মারতে এসেছিলি আমি ওসি সাহেবকে বললাম,
— স্যার আগে আমার পুরো কথাটা শুনোন

কিন্তু ওসি সাহেব আমার কোন কথায় শুনলো না তার আগেই আমাকে এক রাউন্ড উত্তম মাধ্যম দেওয়া হলো সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার কারণে মুমিনুননিসা কলেজের সকল ছাত্রীরা টাউনহলের মোর অবরোধ করেছে আর নজরুল ইসলাম কলেজের ছাত্ররা গাড়ি ভাংচুর করছে৷ তাদের একটাই দাবী তারা সন্ত্রাসী আবুল বাশার পিয়াসের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই আর ওসি আরিফ সাহবের সামনে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকরা বসে আছেন। ওসি সাহেব খুব ভাব নিয়ে বলছেন,

~আমরা সবকিছু তদন্ত করে দেখছি আর বোতলে যে এসিড ছিলো সেটা পরীক্ষার জন্য কিছুক্ষণ আগে কেমেষ্ট্রি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। যতদূর ধারণা করছি এই ছেলে এর আগেও এমন ভয়াবহ কাজ করেছে আমি যখনি পুলিশকে কিছু বলতে চাই তখনি পুলিশ আমার কথা না শুনে আমাকে উত্তম মাধ্যম দেয়। তাই মার খাওয়ার ভয়ে চুপ হয়ে গেলাম। আর মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কি জন্য যে পীর বাবার তেল পড়া আনতে গিয়েছিলাম রাত ১১ টা বাজে ওসি সাহেব আমার সামনে বসে আছেন। আমি ওসি সাহেবকে বললাম,

— স্যার আরেক রাউন্ড চলবে না কি? ওসি সাহেব মাথাটা নিচু করে বললেন,
~ সরি, আসলে আমাদের বুঝতে ভুল হয়েছিলো। বোতলে এসিড ছিল না সরিষার তেল ছিলো আমি তখন ওসি সাহেবের চোখে চোখ রেখে বললাম,

— স্যার ঠিক এই কথাটাই আমি বারবার বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনারা আমার কথা শুনে বারবার ননস্টপ মেরে গেলেন সেদিনের ঘটনার পর আমি আর রাতে ঘুমাতে পারি না। ঘুমালেই সেদিনের সেই মারের কথা শুধু চোখের সামনে ভাসে। তাই মা আবার কাচের বোতলে তেল ভরে এনে আমায় বললো,

~ত্রিশালে একজন ঘুম পাড়ানি বাবা আছে। তুই তার থেকে এই তেলটা ফুঁ দিয়ে আন দেখবি সেই তেল মাথায় দিলে তুই শান্তিতে ঘুমাতে পারবি আমি মার দিকে তাকিয়ে দুই হাত করজোড়ে বললাম,

— মা গো, এই তেল যদি আমি ঘুম পাড়ানি বাবার থেকে ফুঁ দিয়ে আনতে যায় তাহলে তোমার ছেলে সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে যাবে….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত