সব দেখা সত্যি নয়

সব দেখা সত্যি নয়

বউয়ের ম্যাসেজ দেখে সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। হাত পা থরথর করে কাঁপছে। মোবাইলটা হাতের মুঠোয় ধরে আছি। ঘন্টাখানেক আগেই ম্যাসেজটা করেছিলো। ভাবতেই অবাক লাগছে এটা কী করে সম্ভব..? শরীরের সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

কোন কিছুই মাথায় আসছেনা। ফেইজবুক থেকে বেড়িয়ে রিমার নাম্বারে কল করলাম। রিং বাজছে কিন্তু রিসিভ করছেনা। ভয়ে সমস্ত শরীর শিউরে উঠলো। পুলিশে কল করবো নাকি নিজে গিয়ে দেখবো। না,,,যদি সত্যি হয়ে যায় তাহলে তো আসামি পালিয়ে যাবে। আর যদি মজা হয়ে থাকে তাহলে তো মানসম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এমন মজা করার মত মেয়ে নয় রিমা। আমাকে গিয়েই নিজের চোখে ঘটনাটা দেখতে হবে। কিন্তু মাথায় কাজ করছেনা। তাহলে এটা কি করে সম্ভব। রিমার ম্যাসেজে লেখা ছিলো,,, রাহুল আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি আজ তোমাকে নিজের মুখে সুখবর দিতে যাচ্ছিলাম কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস নিজের মুখে আর খবরটা দেয়া হলোনা।

খুব কষ্ট হচ্ছে তোমায় ম্যাসেজ টাইপ করতে। তবুও বলছি তুমি বাবা হতে যাচ্ছিলে। কিন্তু সেটা এখন শুধু স্বপ্নই রয়ে যাবে কখনো সত্যি হবেনা। তুমি সেদিন রাতে বলেছিলে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি একটা সন্তান আসুক তাহলেই আমাদের আর কোন কিছু অপূর্ণ থাকবেনা। দেখোনা আল্লাহ আমাদের মনের আসা পূরণ করেছিলেন কিন্তু সেটা ক্ষণিকের জন্য। রাহুল তোমার মা আজকে দুধের সাথে বিষ মিশিয়েছিলো। আমি তো বুঝতে পারিনি। তারপর তিনি নিজের হাতে বিষ দেয়া দুধ আমাকে খাইয়ে গিয়েছে। আমার ফোনে টাকা ছিলোনা যে তোমায় কল করে জানাবো। খুব ইচ্ছা ছিলো তোমার সাথে সারাজীবনটা কাটাবো। কিন্তু সেই আসা এখন আসাই রয়ে গেলো। আমি মরে যাবো তার জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছেনা। কষ্ট হচ্ছে আমার পেটে থাকা তোমার সন্তানের জন্য। দুনিয়ার আলো বাচ্চাটাকে দেখাতে পারলাম না।

ম্যাসেজ পড়ে চোখ দিয়ে টলটল করে শুধু পানি পড়ছে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। রাত তখন ৮ টা বেজে ২৫ মিনিট। অফিস থেকে বেরিয়ে মোটরসাইকেল টা বের করে স্টার্ট দিলাম। ঝড়ের গতিতে বাসায় পৌঁছালাম। গেইট খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকতে যাবো তখন দেখি দরজাটা একটু ফাঁক করা। দরজাটা ঠেলে ভিতরে গেলাম। টেবিলের পাশে ফ্লোরে মা বসে আছে। আমি ধীরে ধীরে মায়ের কাছে গেলাম। মা রিমা কোথায়? নিশ্চুপ মা মা বলো রিমা কোথায়? মা কোন কথা বলছে না দেখে দৌঁড়ে রিমার ঘরে যাই। রিমা বিছানার উপরে শুয়ে আছে। সমস্ত শরীর কাঁপন দিয়ে উঠলো।

রিমা,,,,,রিমা রিমার কোন আওয়াজ না শুনে আস্তে আস্তে রিমার কাছে গেলাম। রিমার মুখের চারপাশে ফেনা লেগে আছে। দেখেই কয়েক ধাপ পিছিয়ে আসি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। তাহলে রিমার করা ম্যাসেজ সম্পূর্ণ সত্যি ছিলো। ভাবতেই অবাক লাগছে নিজের মা হয়ে কী করে পুত্রবধুকে এভাবে হত্যা করলো। বিছানার পাশেই দুধের গ্লাসটা পড়ে আছে। অর্ধেকের মত দুধ ছিলো গ্লাসে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে মায়ের কাছে গেলাম। মায়ের সামনেই গ্লাসের দুধটুকু টেনে খেয়ে নিলাম। রাহুল কী করলি এটা…? তুই দুধটুকু খেয়ে ফেললি কেন..? চল তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। না মা আমি কোথায় ও যাবোনা। আর গেলেও আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা। আমার রিমা আমাকে ডাকছে। রিমা তুমি কোন চিন্তা করোনা তোমার স্বামী তোমার কাছে আসছে।

তুমি এতবড় নিষ্ঠুর কী করে হলে মা..? কী করে? তুমি তো রিমাকে পছন্দ করে আমার বউ করে এনেছিলে তাহলে সেই মেয়েকে কী করে নিজের হাতে মেরে ফেললে? মা তুমি কী সত্যি আমার মা। বিশ্বাস হচ্ছেনা। ভাবতে পারছিনা। মা রিমা আমার সন্তানের মা হতে যাচ্ছিলো। আজকে আমাকে খুশির খবরটা দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু মা তুমি এটা কী করলে ? আমার সন্তান,,আমার রক্তকে সহ তুমি আমার স্ত্রীকে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় দিয়ে দিলে। মা জবাব দাও কেনো তুমি এমনটা করলে ? ভালো করেছি। কারণ,,,, রিমা তোকে ধোঁকা দিচ্ছিলো। পাশের বাড়ির সাগরের সাথে চক্কর চলছিলো। আমি অনেক দিন দেখেছি ছাদে উঠে দুজনকে হাসাহাসি করতে। পালিয়ে যাওয়ার ও চিন্তা ভাবনা করছিলো দুজনে। মান সম্মান যাওয়ার আগে মেরে ফেলাটাকেই সঠিক মনে করেছি।

ছিঃ মা ছিঃ তুমি রিমার নামে এত বড় একটা নোংরা বদনাম দিতে পারলে। মা তুমি কী এটা ভুলে গেছো চোখের সব দেখা সত্যি নয়। তোমার মেয়ে রোজার সাথে সাগরের রিলেশন ছিলো। আমি ও জানতাম। এর জন্যই রিমার সাথে সাগরের এত মিল ছিলো। ওরা পালিয়ে যাওয়ার প্লান করছিলো রিমাই ওদের বুঝিয়েছিলো যে পালিয়ে বিয়ে করলে কেউ সুখি হয়না। মা তুমি ভুল বুঝেই আমাদের তিনজনের জীবনটা শেষ করে দিলে। আমার কথা শুনে মায়ের দুচোখ জলে ভরে গেলো। রাহুল আল্লাহর দোহাই লাগে হসপিটালে চল।

-“না মা আমার সময় শেষ। এখন শুধু যাওয়ার পালা। রিমা আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। মা আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকবে নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবেনা। নিজের ভুলে নিজেই জ্বলবে। মা আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে শেষবারের মত তোমার কোলে ঘুমাতে চাই। রাহুল রাহুল বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো মা। রিমা আমি আসছি তুমি একটু দাঁড়াও। রাহুল মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়লো। চিরতরের জন্য দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিলো।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত