দোকানদারের কাছ থেকে ‘আন্টি’ ডাক শুনায় আমিও কিছু হতভম্ভ হয়ে গেলাম। সাথে থাকা আমার কাজিনরা হো হো করে হেসে উঠল। ওদের হাসি দেখে দোকানদার অনেকটা ঘাবড়ে গেল।
কাজিনদের মধ্যে একজন বলে উঠল, দেখলি রিমি এজন্য ই বলি এসব একটু ছাড়। দেখলি তো তোকে আন্টি বানিয়ে দিল। আমি কোনোকিছু জবাব না দিয়ে ড্রেসের কাপড় দেখতে লাগলাম। আমাদের সাথে এসেছেন মামা।মামা কিছুদিন আগে ই দেশের বাইরে থেকে এসেছেন। যেহেতু ইউরোপ কান্ট্রি তে ছিলেন তাই সেখানকার একদম টিপটপ বেশভূষার তিনি। প্রথমে কিছু না বুঝলে পরে কেমন জানি বাঁকা চোখে তাকালেন আমার দিকে। উনি উনার পক্ষ থেকে আমাদের সব কাজিনদের শপিং করাতে নিয়ে এসেছেন। আমি খেয়াল করেছি সবাই মিলে কোনো জায়গায় যেতে হলেও কেন জানি কয়েকজন কাজিন আমাকে এভয়েড করে। নিতে চায় না। এ নিয়ে ২ টা পক্ষের সৃষ্টি হয়।
আজ শপিং করতে এসে আমাকে নিয়ে হাসাহাসির মধ্যে তার কারণটা স্পষ্ট দেখতে পারছি। ড্রেস দেখার মধ্যে আমাদের সবার ই কিছু না কিছু পছন্দ হল। আমি একটু কনফিউশনে ছিলাম আমার টা নিয়ে বেশি মোটা হয়ে যায় নাকি এসব দেখে মামা বললেন, ট্রায়াল রুমে গিয়ে ট্রাই করে আয় তাহলে হয়ে যাবে। আমার আবার এটা পছন্দ না। শপিং মলে ট্রায়াল করা তো আরো না! আমি গেলাম না ট্রায়াল রুমে। না গিয়ে ই ড্রেসটা সাথে করে নিয়ে আসলাম। আমার বাকি সব কাজিনরা ই নিজেদের পছন্দ মত দেখে দেখে ট্রায়াল করে নিয়ে নিলো। আমি বাসায় গিয়ে দেখি আমার থেকে দ্বিগুণ হবে ড্রেসটা। বদলানোর চিন্তা করলে সব কাজিনরা ই বলল, ওখানে দেখে ই নিয়ে আসতি। না তোর যত আদিখ্যেতা…! আবার গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে নিয়ে আসলাম।
দোকানটা বেশ বড়সড় তবে কেন জানি জায়গা টা আমার ভালো লাগছিল না। বাসায় চলে আসলাম। দুদিন পর রাতে খেয়ে একটু বই নিয়ে বসেছি। হঠাৎ কারো কান্নার আওয়াজ পেলাম। বেলকনিতে গিয়ে দেখি নিশা কাঁদছে..! কান্নার কারণ জানতে চাইলে যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ কপালে। ছবি গুলো যে নিশার তা সন্দেহ নেই স্পষ্ট। ছবি দিয়ে হুমকিও দিয়েছে একা দেখা করার। নিশা সবাইকে জানাতে না চাইলেও আমি জানালাম নিশার কথা দেখা করলে ই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে বুঝতে পারছপ না তা কত ভয়ংকর। কিন্তু ছবি গুলো কোথা থেকে পেল সেটা নিয়ে অনেক ভাবনা। সবাইকে জানানো হলে সেটা নিয়ে চিন্তা সাথে ছবির জন্য টাকা দিতে হবে।
ছবি গুলো ভালো করে দেখে বুঝা গেল এই শপিং মলের দোকানের ট্রায়াল রুমটা। সবাই একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার ভিতরে ই এখন ভয় কাজ করছে কারণ সবাই ট্রায়াল রুমটা ব্যবহার করেছে। বাবা আর মামারা মিলে দোকানে কমপ্ল্যান করলে কতৃপক্ষ তা মানতে নারাজ। অবশেষে সাইবার ক্রাইমের সহযোগিতা নিয়ে দোকানে মামলা করা হল। সাথে সিকিউরিটির জন্য যে এমন করেছে তাকে টাকা দিতেও বাধ্য হল। কারণ সে ছিল ধরা ছোয়ার বাইরে। এবং এর ব্যবস্থা আস্তে আস্তে করা হবে বলে আপাতত টাকা দিয়ে সমাধান থাক। এরপর থেকে ই সবার মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেল। দুদিন পর ই কলেজ যাওয়ার পথে নিশা আর সীমা কে বোরখা পড়া অবস্থায় দেখে বাসার সবাই ই একটু অবাক হলেন।
নিশা বলল, একটু বাড়তি কাপড় দিয়ে একটু নিয়ম অনুশাসন মেনে যদি নিজেকে রক্ষা করতে পারি তাহলে ক্ষতি কি তাতে..! নিজের সম্মানের চাইতে তো আর বড় কিছু নয়। নিশার কথা শুনে কেমন জানি ভালো লাগল মনের মধ্যে। নিশা হাত ধরে বলল, চল আপ্পি আজ তোমার সাথে ই যাব। কলেজ যাওয়ার পথে নিশা কাকে দেখে যেন থেমে গেল। আমাকে একটু আসছি বলে রাস্তা পার হল। দেখলাম একটা ছেলের সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর না আসায় আমিও গেলাম। যেতে ই শুনতে পেলাম, আরে এসব কি পড়ে রেখেছো আন্টি আন্টি লাগে। বাদ দাও তো আগে ই ঠিক ছিলে দারুণ আকর্ষনীয় লাগত তোমাকে। আমি সব শুনেও অন্যদিকে তাকিয়ে আছি।
হঠাৎ আবার নিশা আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল, যে জিনিষ আমার সম্মানে আঘাত হানে সেখানে আমার সুখ কখনো থাকতে পারে না। বলে ই সে ফিরে আসল। প্রচন্ড কান্না করছিল মেয়েটি হয়ত অনেক দিনের সম্পর্ক মায়ায় আটকা ছিল। তারপরও আমার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। আমিও বললাম আল্লাহেরর দেখানো পথে চলার জন্য তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে তা থেকে উত্তম কিছু ই তুমি পাবে। ভরসা শুধু ঐ উপরওয়ালার উপর।