আজ রাতুলের বিয়ে

আজ রাতুলের বিয়ে

জল কাঁদা ভেঙে বরযাত্রী এগিয়ে চলেছে। প্রায় সবাই কাঁদায় মাখামাখি। লাল মাটির রাস্তা হওয়াতে রাস্তা অনেক বেশি পিচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর পর কেউ না কেউ আছাড় খেয়ে পরছে। তাকে টেনে তুলতে গিয়ে অন্য জনও পরে যাচ্ছে। এনায়েত মোল্লা রেগে আছেন কিনা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কাঁদায় তার চোখ মুখ ঢেকে গেছে। তিনিই আছাড় খেয়েছেন সবচেয়ে বেশি। শিশুদের উত্তেজনার কোন কমতি নেই। তারা ইচ্ছে করেই কিছুক্ষণ পর পর পিছলে পরে যাচ্ছে। কেউ টেনে তোলার আগেই তারা বার কয়েক গড়াগড়ি দিয়ে নেয়।

পথের মাঝামাঝি গিয়ে এনায়েত মোল্লা থামলেন। তিনি ভালো করে সবার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করছেন। সবার জামা কাপড়ের অবস্থা তারচেয়ে ভাল। একমাত্র তিনিই পুরো মাটির মূর্তি হয়ে উঠেছেন। তিনি সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, “ আজকের এই ঘটনার জন্য কেউ দায়ী না। সব দোষ আমার কপালের।” এতটুকু বলে তিনি থামলেন। কেউ কোন কথা বলল না। তিনি বললেন, “ পথ আর বেশি বাকি নাই। আমরা এই খানে একটু অপেক্ষা করি। বৃষ্টি একটু বাড়লে প্যাক ধুয়া যাইবো।” সবাই দাঁড়িয়ে পরল। আশ্চর্যজনক ভাবে বৃষ্টি থেমে গেল সাথে সাথেই। এনায়েত মোল্লা আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, “ কারবারটা দেখলা তোমরা ! ”

তিনি সময় নিয়ে কি যেন চিন্তা করলেন। তারপর শান্ত গলায় বললেন, “ একটা জুরুরি কথা বলতেছি। সবাই কান খাড়া কইরা শুনবা।” সবাই চুপ করে আছে। যেন কান খাড়া করার চেষ্টা করছে সবাই। কিছুক্ষণ পর তিনি বলতে শুরু করলেন, “ এই বিয়ের উদ্যোগ নিছি আমি। আমি পোলার বড় মামা। আমার গুরুত্ব সব চাইতে বেশি। বেশি কিনা?”
সবাই সমস্বরে বলল, “ জী মামা। কথা ঠিক।”

“ আমি বাড়ির মুরুব্বি। এখন আমি যদি শইল্যে ( শরীরে) প্যাক মাইখা বিয়া বাড়ি হাজির হই , আর তোমরা সবাই সাহেব সাইজা যাও এটা বেমানান দেখায়।” সবাই শুধু শুনছে । কেউ কোন কথা বলল না।

তিনি এবারে ভয়াবহ একটা ঘোষণা দিলেন, “ যেহেতু আমার শইল্যে প্যাক লাগছে, পুরুষ মানুষ যারা আছে সবার শইল্যেই প্যাক থাকন চাই। যেইসব পুরুষ মানুষের শইল্যে প্যাক লাগে নাই তারা শইল্যে প্যাক মাখো। যদি না মাখো তারা বিয়া বাড়ি যাইতে পারবা না।” এর সাথে তিনি যোগ করলেন, “ একটু বৃষ্টি হইলেই রাস্তা এমন খাল হইয়া যায় এইডা মাইয়া বাড়ির কেউ আমাগো বলে নাই। এই কাজটা উনারা ঠিক করে নাই। কাজেই আমরা শইল্যে প্যাক মাইখা হাজির হুব, গিয়া বলবো সবার প্যাক ধুয়ার পানি দেউ। এতে ঐ বাড়ির মানুষের একটা শিক্ষা হইবো।” সবাই হতবম্ব হয়ে গেল। উনার সামনে কিছু বলার সাহস কারও নেই।

ব্যান্ড দলের প্রধান সাহসি মানুষ। সে আবারও সাহসের পরিচয় দিয়ে বলল, “ শইল্যে প্যাক মাখতে পারুম না। লাখ টাকা দিলেও নিজের শইল্যে প্যাক মাখার মধ্যে আমরা নাই।” কথা শেষ করে সে এনায়েত মোল্লার দিকে তাকাল। এনায়েত মোল্লা তার দিকে এগিয়ে গেলেন। মনে হচ্ছে এখনই লাখ টাকা দেয়া হবে। তিনি কাছে এগিয়ে গেলে, ব্যান্ড দলের লোকটি বলল, “ জনাব আমাগো হাতে বাদ্য যন্ত্র। হাত বন্দি। নিজের শইল্যে প্যাক মাখার উপায় নাই। কাউরে বলেন আমাগো শইল্যে প্যাক লাগায়া দিতে।” এনায়েত মোল্লা বললেন, “ কেউ এরার শইল্যে প্যাক লাগায়া দেউ।” তারপর দলের প্রধানকে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বললেন, “ এরে বেশি করে মাখবা।”

রাতুলের দুলাভাই পুরা শহুরে বাবু সেজে এসেছে। তার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে এখনই কান্না করে ফেলবে। কিন্তু এনায়েত মোল্লার সামনে কিছু বলা যাচ্ছে না। রাতুলের বড় বোন নুপুরের মায়া লাগল স্বামীর করুণ চাহনি দেখে। সে আমতা আমতা করে বলে ফেলল, “ মামা, সবাইরে প্যাক ক্যান মাখতে হইবো? এইখানে মোল্লা বাড়ির জামাই জন আছে। তাগো তো একটা ইজ্জত আছে। ” কথা শেষ করে সে সমর্থনের আশায় অন্যদের মুখের দিকে তাকাল। কেউ কোন শব্দ করল না।

এনায়েত মোল্লা সাথে সাথে গলা খাকারি দিলেন। উচ্চস্বরে বললেন, “ আমার মুখের উপর কথা। আমি গ্রামের মাতবর। দূর গ্রাম থেকে আমার কাছে আসে মানুষ বিচারের লেইগ্যা। আমার চোখে সবাই এক। সবাইরে প্যাক মাখন লাগবো।” নুপুর আর কথা বলার সাহস পেল না। আড়চোখে স্বামীর দিকে তাকালো। ততক্ষণে রাতুলের দুলাভাই গায়ে কাঁদা মাখতে শুরু করেছে। রাতুলের ইউনিভার্সিটির কিছু ফ্রেন্ড এসেছে বরযাত্রীতে। তারা পুরো থ মেরে গেল। ঘটনা কোন দিকে যাচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। একজন গিয়ে রাতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, “ দোস্ত ঘটনা তো বুঝলাম না। সবাইকে কাঁদা মাখতে হবে কেন? ” রাতুল ফিসফিস করে বলল, “ ঘটনা বুঝা লাগবে না। মামার চড় না খাইতে চাইলে গায়ে কাঁদা মাখ।”

“ উনি কি সিরিয়াসলি বলছেন কথাগুলি?”
“ হ্যা, মামা অলওয়েজ সিরিয়াস।”
“স্ট্রেঞ্জ! তোর চাচা কিছু বলছে না কেন?আঙ্কেলকে দেখছি না কেন? সে কোথায়? ”
“ চাচারে খুঁজে পাবি না। সে নিজেও কাঁদা মেখে ফেলছে। তুইও মাখ দেরি করে লাভ নাই।” এনায়েত মোল্লা বললেন, “তোমরা ফিসফিয়া কইরা কি কউ। প্যাক মাখো সবাই। কাজে দেরি আমার পছন্দ না।”

সবার গায়ে কাঁদা লাগানো হল। মায়েরা বাচ্চাদেরকে এতক্ষণ আটকে রেখেছিল। এনায়েত মোল্লার এই ঘোষণার পর বাচ্চাগুলো মনের আনন্দে কাঁদায় গড়াগড়ি খেল। সবাই কাঁদা মাখলেও রাতুলকে মাখতে হলো না। কারণ তার শেরওয়ানি এনায়েত মোল্লা নিজে ঢাকা থেকে কিনে এনেছেন। এই শেরওয়ানি নষ্ট করা যাবে না। তাছাড়া জামাইয়ের গায়ে কাঁদা -বেপারটা ভালো দেখায় না। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল বিশাল বরযাত্রী দল কাঁদায় মাখামাখি হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই যেন এক একজন লাল মাটির জীবন্ত মূর্তি। এই অবস্থাতেই ব্যান্ড দলকে মালেকা বানু বাজাতে হচ্ছে।

কনের বাড়িতে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি থেমে গেছে। আকাশে যদিও কিছু খন্ড মেঘ ভাসছে তবে মনে হচ্ছে না আর বৃষ্টি হবে। কনে পক্ষের মেয়ে-ছেলেরা বাড়ির সামনের গেইটে টেবিল ফেলে বসে রইল। তারা ঠিক করে রেখেছে দুই হাজার টাকার নিচে গেইট ছাড়বে না। জামাইকে বোকা বানানোর জন্য কয়েকটা গ্লাসে লবন দিয়ে সরবত বানানো হয়েছে। জামাইকে বলা হবে যে কোন একটা গ্লাসে চিনির সরবত আছে। কিন্তু সবগুলোতেই লবণ সরবত। কাজেই জামাই যেই গ্লাসই মুখে নেবে মুখ বাকা করে ফেলবে এটা নিশ্চিত। সবাই আগ্রহ নিয়ে গেইটে বসে আছে। আজ নতুন জামাইকে ভালোই বোকা বানানো যাবে। এমন সময় দেখা গেল লাল মাটির মূর্তি গুলো এগিয়ে আসছে। মূর্তি গুলো দ্রুত এগিয়ে আসছে দেখেই মেয়েগুলা গেইট ছেড়ে দিল। হঠাৎ এতগুলো মানুষকে কাঁদা মাখা অবস্থায় দেখলে যে কেউ বিস্মিত হবে।

হইচই শুনে ছোটন বেপারি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। দেখলেন উঠোন জুড়ে একদল মানুষ যাদের কাউকেই তিনি চিনতে পারছেন না। সবার সামনে যিনি দাঁড়িয়ে তার চোখ-মুখ কাঁদায় ঢেকে আছে। রাতুল পেছনে থাকায় কনে পক্ষের অনেকেই বুঝতে পারেনি এরাই বরযাত্রী। ছোটন বেপারি কাছে গিয়ে বললেন, “ আপনারা বরযাত্রীর লোক? রাতুল বাবাজি কই তারে দেখি না ক্যান? আর ব্যান্ড পার্টি গান থামায় না ক্যান? ” রাতুল পেছনে ছিল। সে পেছন থেকে জুতা সহ হাত তুলল। ছোটন বেপারি বললেন, “ একি অবস্থা আপনাগো? এই যে আপনি কে? ” এনায়েত মোল্লা বললেন, “ পানি আনেন। হাত মুখ ধুইলেই চিনতে পারবেন।” কন্ঠ শুনে বোঝা গেল ইনি বরের মামা। তাকে দশ গ্রামের মানুষ চেনে। ছোটন বেপারি বললেন, “ বেয়াই আপনে বসেন। চেয়ারে বসেন। আর এরা বাজনা থামাচ্ছে না ক্যান? ”

এনায়েত মোল্লা হাতের ইশারা করতে ব্যান্ড দল বাজানো বন্ধ করল। এনায়েত মোল্লা বললেন, “ চেয়ারে বইল্যে চেয়ারেও প্যাক লাগবো। আপনি পানির ব্যাবস্থা করেন। সবার হাত মুখ ধোয়ার ব্যাবস্থা করেন। নতুন গামছা দেন।”
এত মানুষের হাত-মুখ ধোয়ানো সহজ কাজ না। ছোটন বেপারি বুদ্ধিমান লোক। সে এনায়েত মোল্লা সহ মুরুব্বী গোছের লোকদের জন্য বালতিতে করে পানি আনলেন। সাবান, নতুন গামছার ব্যাবস্থাও করা হল। আর বাকি সবাইকে নিয়ে গেলেন বাড়ির পেছনের পুকুরে। মুহুর্তের মধ্যেই পুকুর ঘোলা হতে শুরু করল। যে যার মতো পুকুরে লাফিয়ে পরছে সে এক দেখার মতো দৃশ্য। কনে বাড়ির সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগল। কানে কানে ফিসফিসানি শুরু হয়ে গেল, “ প্যাক জামাই আইছে। প্যাক জামাই! ”

বরপক্ষের খাওয়া পর্ব শেষ হতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামলেও সন্ধ্যা হতেই আবারও আকাশ কালো হয়ে গেল।এবারে বৃষ্টির সাথে শিল পরছে। বেপারি বাড়ির উঠোনটা অনেক বড়। উঠোনের এক পাশ খালি। বাকি তিন দিকে চৌচালা টিনের ঘর। বৃষ্টির জন্য কাজী এখনও আসেনি তাই বিয়ে পড়াতে দেরি হচ্ছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। কারেন্ট চলে যাওয়াতে অনেক গুলো হাড়িকেন জ্বালানো হয়েছে। সবাই বারান্দায় বসে বৃষ্টি দেখছে। ছোটন বেপারি কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন।

অনেক ঝামেলা হলেও সব কিছু তিনি সামলে উঠেছেন। তার পাশের চেয়ারে এনায়েত মোল্লা চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছেন। তিনি বিরক্ত কারণ সবাই দল বেধে শিল কুড়াচ্ছে। অথচ তিনি ধমক দিতে পারছেন না। বিয়ে বাড়ি বলে কথা। কিছুক্ষণ পর তিনি বললেন, “ শিল টুকায়া লাভ কি? একটু পরই পানি হইয়া যাইবো। উঠো তোমরা। অনেক হইছে।” যারা শিল কুড়াচ্ছিল কারো মধ্যেই উঠার তাগিদ দেখা গেল না। পাশের চেয়ারে বসে থাকা ছোটন বেপারিকে উদ্দেশ্য এনায়েত মোল্লা বললেন, “ বুঝলেন ভাইসাব। পোলাপানগুলি বেয়াদপ হইয়া গেছে কারণ একটাই। দেশ থেকে চড় থাপ্পর উঠে গেছে। চড় ছাড়া পোলাপান সোজা রাখার দ্বিতীয় কোন বুদ্ধি নাই।” বলেই তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। চড় দিতে পারছেন না বলে তিনি কষ্টে আছেন।

রাত সাতটার দিকে বৃষ্টি কিছুটা কমে এল। কাজীকে আনা হল তার কিছুক্ষণ পর। দেন মোহর আগে থেকেই ঠিক করা ছিল তাই দ্রুতই বিয়ে পড়ানো হয়ে গেল। বিপত্তিটা বাঁধলো বিয়ের পর। মেয়ে বাড়ির সবাই জোর গলায় বলল, বাসর হবে মেয়ে বাড়িতেই। এই ঝড় বৃষ্টির রাতে তারা মেয়েকে ছাড়বে না।” রাতুলের বাবা-চাচা সবাই রাজি হয়ে গেলেও বেকে বসলেন এনায়েত মোল্লা। তিনি হুংকার দিয়ে বললেন, “ অসম্ভব। আমার ভাগিনার বাসর হইবো মেয়ের বাড়িতে? আমি থাকতে তা হইবো না।” এটা নিয়ে বাক বিতন্ডা শুরু হয়ে গেল। হইচই। কে কথা বলছে কে শুনছে বোঝার উপায় রইল না। ছোটন বেপারির মাথা ধরে গেল। বিরক্তি নিয়ে তিনি বাইরে এসে দাঁড়ালেন।

বাইরে এসে একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন। উঠোনের কোনে অন্ধকারে দুইজন বসে আছে। তিনি এগিয়ে গিয়ে দেখলেন মারুফ আর রাজু নির্বিকার ভাবে খাচ্ছে। বাড়ির ভেতর হইচই হচ্ছে সেদিকে ওদের খেয়াল নেই। তিনি বিস্মিত কন্ঠে বললেন, “ বাবা তোমরা এই সময়ে খাইতে বসছো? এখনও তো সন্ধ্যা। রাতের খানা আরও পরে দিবো।” মারুফ বলল, “ চাচাজি, বরপক্ষরে খাওয়াইতে গিয়া খিদা লাইগা গেল। “ তো এইখানে ক্যান? ঘরে চল। অন্ধকারে ক্যামনে খাইতাছো? “ চাচাজি, সমস্যা নাই। আমাগো অন্ধকারেও খাওয়ার অভ্যাস আছে। কিরে রাজু অভ্যাস আছে না?” রাজু এই প্রথম বার কথা বলল। সে ছোটন বেপারির দিকে তাকাল না। মারুফকে বলল, “ গোশতের বাটিটা এইদিকে দে।”

এনায়েত মোল্লাকে অবশেষে হার মানতে হল। কারণ তুমুল বেগে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কাজেই বউ নিয়ে রওনা দেয়া সম্ভব না। মেয়ে বাড়ি যদিও যথেষ্ট বড় কিন্তু এত লোকের ঘুমানোর জায়গা করা সহজ কাজ না। সিদ্ধান্ত হল- বর পক্ষের লোকজনকে একজন দুজন করে কনে পক্ষের আত্মীয়,প্রতিবেশীরা তাদের বাসায় নিয়ে যাবে। কে কোন বাসায় যাচ্ছে কিছু বোঝার উপায় নেই। এটা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যাথাও দেখা গেল না। সবাই এক ধরনের আনন্দ নিয়েই অচেনা বাড়িতে ঘুমুতে গেল। শুধু ছোটন বেপারি ভয়ে আছেন। কারণ এনায়েত মোল্লা নামের মানুষটা রাতে তার সাথে ঘুমাবে।

গভীর রাত। ঘরে অল্প আলোতে হাড়িকেন জ্বলছে। সেই অল্প আলোতে রহস্যময় লাগছে চারদিক। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। টিনের চালে বৃষ্টির গান বাজছে। গাছের পাতা গুলো নিশুতি স্নান সেড়ে নেয়ায় ব্যাস্ত। রাতুল ঘুমানোর আয়োজন করছিল এমন সময় নতুন বউ বলল, “ সন্ধ্যায় সবাই যখন দল বেধে বৃষ্টিতে নামল, আমারও খুব ইচ্ছা করছিল বৃষ্টিতে ভিজতে।” রাতুল বলল, “ এখন ভিজতে ইচ্ছা করছে?”

মেয়েটা কিছু বলল না। চুপ করে রইল। আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল রাতুলের চোখের দিকে। সারা দিনের ধকলে ক্লান্তিতে রাতুলের চোখ বুজে আসছিল। কিন্তু যেই চোখ দিয়ে রাতুলকে আহবান করা হচ্ছে, সেই চোখের ভাষা অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা রাতুলের ছিল না। ওরা চুপি চুপি উঠোনে নেমে আসে। চারদিক নিস্তব্ধ তবুও ওদের বৃষ্টিতে ভেজার এই দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলেন শতবছর আগের একজন কবি। ওদের জন্যই রবি ঠাকুর লিখে গেছেন- “এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে এসো করো স্নান নবধারা জলে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত