বিকেলে বাজার থেকে এসে দেখি আমার স্ত্রী নীলা ঘুমোচ্ছে। আমি ডাক না দিয়ে রান্নাঘরে যাই। আর বসে পড়ি বাজার থেকে নিয়ে আসা রুই মাছটিকে রান্নার উপযুক্ত করতে।মাছ কাটছি এই মুহুর্তে রান্নাঘরে মায়ের প্রবেশ। “কিরে হিমু তুই মাছ কাটছিস।বউমা কোথায়?
–মা নীলার শরীরটা বেশি ভালো না।ও ঘুমোচ্ছে, তাই ডাক দেই নি। ” তাই বলে তুই ছেলে হয়ে মাছ কাটবি,আর বউমা এই অসময়ে ঘুমাবে। চিৎকার চেচামেচি শুনে নীলা রান্নাঘরে আসলো।আমার হাত থেকে মাছ নিয়ে নিজেই কাটতে কাটতে আমাকে বললো-
~হিমু তুমিও না পারো জীবনে মাছ কেটেছিলে বলো? আমাকে ডাক দিলেই পারতে। এইসব শুনে মা, মায়ের রুমে চলে গেলেন।
-আচ্ছা নীলা তুমি তো সন্তান সম্ভাবা।তবু এখনো এতো কাজ করবে কেনো? আর তাছাড়া আমি যে মাছটা কাটতে পারবো না তা কিন্তু নয়। এটা আর এমন কি?
~আমি জানি পারবে।তবুও আমার কাজ আমাকেই করতে দাও।তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
মেয়েটার কাছে হার মেনেই রান্নাঘর ত্যাগ করলাম। ইফতারির আর পনেরো মিনিট বাকি আছে। আমি শরবত তৈরি করছিলাম। আর নীলা বেগুনি তৈরি করছে। বাবা খাবার টেবিল থেকে চিৎকার করছেন? সারাদিন কি কি করো বউমা? এতোক্ষন লাগে ইফতারি তৈরি করতে।এইদিকে ইফতারের সময় হয়ে যাচ্ছে। নীলা বেগুনি গুলো নিয়ে খাবার টেবিলে আসলো,আর মাথা নিচু করে বললো- বাবা বেশ কিছুক্ষণ গ্যাস ছিলো না।গ্যাস আসার পর রান্না শুরু করেছি,তাই একটু দেড়ি হয়েছে। আমি নিশ্চুপ ছিলাম। কিছু বলতে পারিনি। উনি যে আমার জন্মদাতা পিতা। সেহরির সময় তরকারি গুলো গরম করে নীলা তাহাজ্জুদ এর নামাজ পড়ছিলো। বাবা খাবার টেবিলে বসে চিৎকার চেচামেচি করছে কয়টা বাজে বউমা? এখনো খাবার টেবিলে খাবার দাও নি।আজান হওয়ার পর খাবো নাকি?
আমি আর চুপ থাকতে পারি নি আমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে মাথা নিচু করে ভদ্রতার সহিত বললাম – বাবা তোমার কি মনে আছে মা তখন অসুস্থ। রমজান মাস ছিলো।আপুর বিয়ে হয় নি তখন। আমি কলেজে পড়াশোনা করতাম। আপু একটু অলস টাইপের ছিলো।সেহরির সময় এলার্ম দিয়ে রাখার পরও তার ঘুম থেকে উঠতে ৩০ মিনিট পার হয়ে যেতো।এমনকি সেহরি খাওয়ার সময় অনেকদিন আজান দিয়ে দিতো।কই তখন তো তুমি আপুকে কিছু বলতে না। শুধু বলতে পরিস্থিতির স্বীকার। এখন নীলা সন্তান সম্ভাবা।এই সময়ে শরীর সবসময় ঠিক থাকে না।আর এই সময়ে একজন নারীর বেশি বেশি এবাদত করার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে আল্লাহ নেক সন্তান দান করেন। এইগুলো বলছিলাম,এই মুহুর্তে নীলা এসে বলতেছে- হিমু কি সব উল্টাপাল্টা বলে যাচ্ছো? বাবার সাথে এইভাবে বলছো কেনো? বাবার সাথে কেউ এইভাবে বলে? আমি তরকারি গরম করে রেখেছি।এখনি নিয়ে আসছি।এখনো ৪৫ মিনিট সময় বাকি আছে। খাওয়া হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
খাবার শেষ করে নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি।ঘুম থেকে উঠে দেখি ৮ টা বাজে।ওয়াশ রুমে যাই ফ্রেশ হওয়ার জন্য। অনেকগুলো কাপড় ভেজানো।হয়তো নীলার কাজ এটা।আমি ওয়াশ রুমে ঢুকে কাপড় গুলো ইচ্ছামতো পিটিয়ে নিলাম। ছাদে কাপড় শুকাতে দিতে যাবো দেখি মা সামনে দাড়িয়ে আছেন। আমি চলে যাচ্ছিলাম। মা ডাক দিয়ে বললেন – ছিঃ ছিঃ হিমু তর এই অবস্থা হয়েছে। এই লকডাউনে ছুটি পেয়েছিস বলে বউমার কাজগুলোও তকে করতে হবে।শেষ পর্যন্ত বউমার কাপড়চোপড় ও ধোঁয়া শুরু করেছিস।ভালোই বউ পাগল হয়েছিস।
শোনো মা- তুমি জানো নীলা সন্তান সম্ভাবা। এই সময়ে যত বিশ্রামে থাকা যায়,পরিশ্রম কম করা যায় ততই ভালো। আর এই সামান্যটুকু কাজ করায় আমি বউ পাগল হয়ে গেলাম কি করে? আমি তো ছুটির দিনে তোমার কাপড়চোপড় ও ধুয়ে দেই।আমার ভালোই লাগে। আর নীলা অন্য একটা ফ্যামিলি থেকে ভাইবোন, মা,বাবা,সবার মায়া ত্যাগ করে একটা নতুন ফ্যামিলিতে এসেছে। তোমাদের উচিত নীলাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখা।আপু ও তো আমাদের ফ্যামিলি ছেড়ে একটা নতুন ফ্যামিলিতে গিয়েছে। আপুর সাথে যদি আপুর শ্বশুর শ্বাশুড়ি এমন আচরণ করে তাহলে আপুর মনের অবস্থা কেমন হবে,একবার ভেবে দেখেছো? “দেখ বাবা আমি এইভাবে এতো কিছু ভাবিনি। তুই কিছু মনে করিস না।আমি তো তোর কথা ভেবেই এইগুলো বলেছি।
–আমি কাপড় গুলো নিয়ে ছাদে চলে যাই। আমাকে দেখে নীলা বলে উঠলো-
~কি ব্যাপার এতো সকালে উঠলে যে আর হাতে কি এইসব হুম? নিশ্চয়ই কাপড় গুলোর বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো,তাই না? আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম।কাপড়গুলো নাড়ছিলাম। পেছন থেকে দুটো কোমল হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে আমার বুকের পাজরকে।আর বলছে- হিমু তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেনো? আমি সব শুনেছি। কেউ পারে এতোটা ভালোবাসতে…! এই বলে কান্না করে দিলো বোকা মেয়েটা।
–শোনো নীলা -তুমি এই পরিবারে আসার পর অনেক কথা সহ্য করেছো, যেগুলো এখনকার মেয়েরা সহ্য করতে পারে না।লকডাউন থাকায়, অফিস না থাকায় আমি নিজ চোখে দেখেছি তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় গুলো।
আমি বাবা, মা কে বুঝিয়েছি।আশা করি এখন থেকে আর এমন হবে না।তোমাকেও উনাদের মেয়ের মতোই দেখবেন।
~হিমু তুমি বাবা মা কে এইসব বলতে গেলে কেনো? বাবা মা হয়তো শাসন করতেন আমাকে নিজের মেয়ের মতোই।
–বাদ দাও তো নীলা।এখন বলো আমাদের গুলুগুলু কেমন আছে?
~ও ভালো আছে।তোমার ভাবতে হবে না।
–এখন থেকে তোমার রান্নাঘরে যাওয়া বন্ধ। আর যাবে না কেমন।আমাদের গুলুগুলুর জন্য হলেও যাবে না প্লিজ।
আমার তো অফিস নেই।আমি রান্না করবো।হয়তো ঝাল, কম বেশি হবে।এইটুকুই তো।কিন্তু খেতে পারবে।
~হিমু বিয়ের আগে যখন আমরা দুই বছর চার মাস সতেরো দিন রিলেশনশিপ এ ছিলাম।তখন তুমি প্রতিটি মূহুর্ত খুব সুন্দর করে দিতে।আর অনুভব করেছিলাম প্রেমের শুদ্ধতা। আর বিয়ের পরে অনুভব করছি সংসার জীবনের শুদ্ধতা। প্রতিটি নারীর জীবনে যদি একজন শুদ্ধ পুরুষের দেখা পেতো, তাহলে গভীর রাত হলে নারীর চোখের জলে বালিশ ভিজত না।
–এইভাবে বলছো কেনো।আমিও তো আমার জীবনে একজন বিশুদ্ধ নারী পেয়েছি।যাকে ঘিরে স্বপ্নগুলো আরও রঙিন।