ফুচকা এবং বেনসন

ফুচকা এবং বেনসন

-আমার বাবুটা কি করে?
-কিছু না বেবি। তুমি?
-কুত্তার বাচ্চা তোরে কইছি না বেবি ডাকবি না। বেবি আমার মায়ের নাম।
-সরি সরি।
-তারপর কালকের প্ল্যান কি?
-কিসের প্ল্যান?
-কিসের প্ল্যান মানে সব কিছু ভুইলা গেছো। বাহ ভালো তো৷
-আরে বাবা বলবা তো কি হয়ছে।
-বুঝি তো। এখন তো আমি পুরান হয়ে গেছি৷ আমার কথা মনে থাকবেই না৷
-কুল, এখন বল কি হয়ছে?
-কালকে প্রিন্সের জন্মদিন।
-কোন প্রিন্স?

-তোমার মনে নাই, গত বছর ৪
-৪ কি?
-উফ, কিচ্ছু বুঝো না তুমি।
-৪সেপ্টেম্বর তুমি আর আমি শাহবাগ থেকে একটা প্রিন্স কিনি। ভুইলা গেছো।
-ও খরগোশের বাচ্চার কথা বলতেছো।
-খবরদার খরগোশের বাচ্চা বলবা না ও আমার প্রিন্স ।
-শালীর ঘরের শালী আমার কপালে ই ছিল?
-কি বললা।
-কিছু বলি নাই জানে-মন। তো কি করবা কালকে।
-আমরা কালকে বিকালে প্রিন্স এর জন্য একটা প্রিন্সেস কিনব আর ক্যান্ডেল নাইট ডিনার করব।
-আচ্ছা। done.

একটু পরিচয় পর্ব সাইরা নেই। পরিচয় আর কি দিমু? ভাই খরগোশের বাচ্চার নাম প্রিন্স আর আমি যে এডা মানুষ হেতীর বয়ফ্রেন্ড। কসম প্রয়োজন ছাড়া কোন দিন বাবু,সোনা,ময়না,টিয়া,টিকটিকি,তেলাপোকা কিচ্ছু ডাকে না। যাউগ্গা নিজের পরিচয় নিজেই দেয় আমি আকাশ। বেকার কল্যাণ লিমিটেড কোম্পানীর CEO।

আর আমার বেবি থুক্কু বেবির বেবি আমার গফ এর নাম তাস্ফিয়া। হেতী অনার্সে পড়ে ১ম বর্ষে। সাইজে ছোট খাোটো খরগোশোর বাচ্চা, শুকনা, ফর্সা, সুন্দর। কিউট যেইটারে বলে আর কি। কিন্তু খাইতে বসলে হাতির বাচ্চা হয়ে যায়৷ এইটুক দেড় ইঞ্চি বডি নিয়া এত ক্যামনে খায় মাথায় ধরে না৷ কালকে ক্যান্ডেল নাইট ডিনারে গেলে হাজার দুই টেহা নামায় ফেলব৷ পকেটে টাকা আছে ৪২০ টে যাউগ্গা আল্লাহ ভরসা এডা কিছু মিল হব৷ ঘুম থেকে উঠে দূপুরের খাওন খাইয়া। বন্ধুর টি-শার্ট আর ঘড়ি টা পড়ে ব্যাগ খোঁজতেছি। হালায় টের পাইয়া গেছে।

-কি খোঁজস?
-কিছু না।
-তোরে কিন্তু না করছি ব্যাগে হাত দিবি না।
-আরে ব্যাটা জুতা খোঁজতেছি৷
-ঐ তুই আমার টি-শার্ট পড়ছোস কেন? গত সপ্তাহে হেবী ম্যাটাল এর শো-রুম থেকে কিনছি। খোল ব্যাটা৷
-৩৫০ টাকার একটা গেন্জির লাইগা বন্ধুর লগে এমন ব্যবহার আল্লাহ সব না।
-ঘড়ি খোল, গফ গিফট করছে।
-আমি কি ঘড়ি বেঁইচা দিমু নাকি।
-যদি কোন ক্ষতি হয়। তোর রাতের খাবার বন্ধ।

বিজয়ের হাসি দিয়া বিদায় নিলাম। হাঁটা শুরু করলাম। টি-শার্ট এ ঘামের গন্ধ। তাস্ফিয়া আবার ঘামের গন্ধ সহ্য করবার পারে না৷ কি করি? পাশের মোড়ের জলিল মামার দোকান এ একটা বিড়ি চাইলাম।

-মামা একটা বিড়ি দাও।
-নেও।
-এ মামা এইডা কি দিলা।
-আকিজ বিড়ি। টানতে টানতে যাওগা টেকা লাগব না।
-মামা এবা করতে হয় না। একটা সিগারেট দাও।
-আগের টা ফেরত দাও।
-থাকনা মাগনায় তো দিছো।
-সিগারেট বেঁচি না।
-লক্ষী মামা নাও তোমার বিড়ি । এমন করে না।
-নাও সিগারেট৷

-মামা, কি দিলা হলিউড। তোমার মামির লগে দেহা করবার যামু। এডা বেনসন দাও।
-টেকা দাও আগে।
-টেকা কি দেই না নাকি তোমারে?
-৭৫৪ টাকা বাকী। টেকা দাও বেনসন তোমারে একটা না দুইটা ফ্রি দিমু।
-বেনসন কত ১০ টাকা না?
-যাও তো তোমার কাছে বেঁচমু না৷
-রাগ করো কেন। দাম কবা তো?
-১৩ টেকা।
-ঐদিন না ১২ টাকা দিয়া নিলাম।
-মাফ চাই তোমার কাছে যাও তো বেঁচমু না তোমার কাছে।

২০ টাকার একটা নোট দিলাম। ৫ টাকা আর ২ টাকার নোট ফেরত দিলো৷ ১ সিগারেট এর দাম ১৩ টাকা। ৩ হলিউড এর একটা ম্যাচ পাওয়া যেতো। আগেই ধরামু না। বেনসন হাতে থাকলে শরীরে এডা ভাব আইসে না বাজান ফিলিংস কাজ করে। এহন জায়গা মত আবেগ ঢাইলা দিয়ন যাইব। একটা কসমেটিকস এর দোকানে ঢুকলাম।

-এক্সকিউজ মি.
-জ্বী বলুন।
-ভাল পারফিউম আছে৷
-জ্বী দেখান তো৷
-স্মেইল টা দেখা যাবে ভাইয়া?
-জ্বী।
-নাইস স্মেইল। কয়টা ফ্লেভার আছে এইটার।
-স্যার তিনটা৷
-গুড। একটা বিষয় শেয়ার করি আপনার সাথে।যে গরম, এই গরমে কাপড়ে পারফিউম লাগালে কি শরীরের ঘামের গন্ধ যাবে? গরমে বডি স্প্রে ভাল হয় না?
-জ্বী স্যার৷
-তাহলে ভাল একটা বডি স্প্রে প্যাক করে রাখেন। আপনার টেস্ট অনেক ভাল হবে দেখেই বুঝছি। বাসায় যাওয়ার সময় নিয়ে যাব৷ এখন ষোলকলা পূর্ণ। সিগারেট টা ধরাবো না থাক পরে ধরাব। কল দিলাম তাস্ফিয়া কে।

-কোথায় তুমি?
-আমি তো শাহবাগ আমার কাজিনের সাথে আসছি।
-খোরগোশ কিনছো।
-কি বললা?
-প্রিন্সেস কিনছো।
-হ্যাঁ বাবু। কাজিন কিনে দিছে৷
-আলহামদুলিল্লাহ। কাজিন টা কি পোলা না মাইয়া?
-মেয়ে
-জানু তোমার বড় নাকি ছোট?
-সেইম ইয়ার ।
-ওলে আমার জানুরে আসতেছি আমি।

মনের মধ্যে লাড্ডু ফুটতেছে দুই দুইটা সুন্দরী কে সাথে নিয়া ঘুরব সবাই তাকায় থাকবে আর হিংসায় জ্বলবে। কিন্তু মানিব্যাগ মাম্মিম্মিম্মি মাত্র ৪০৭ টাকা। শাহবাগ এর কাছাকাছি গিয়ে রিক্সা নিলাম ১০ টাকা ভাড়া দিলাম জোর করে। আমি আবার মানুষ রে ঠকায় না।

-হাই
-দুলাভাই
-হ্যা শালিকা। হাগ দিবার জন্য হাত বাড়ায় দিলাম।

কিন্তু আমার হেতী মাঝখানে চলে আসলো আর চোখ গরম করে আমার দিকে তাকায় আছে পারলে গিলে খেয়ে ফেলবে। যাই হোক বসলাম তিনজনে। ও খরখোশের বাচ্চাও আছে সাথে দুইটা৷

আমি-আচ্ছা খোরগোশের বাচ্চা সরি সরি প্রিন্স আর প্রিন্সেস কি আমাদের সাথে ডিনারে যাবে?

তাস্ফিয়া-হুম। ওদের কে কই রাখে যাব বল?

আমি-কেন শালিজান ওদের নিয়ে বাসায় চলে যাক।

শালিজান-দুলাভাই। আমি কি প্রবলেম হয়ে গেলাম?

আমি – আরে না। প্রবলেম নাই।

তাস্ফিয়া- ওদের জন্যই তো আজকের ডিনার৷

বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমার কলিজা টা ফেটে রক্ত পড়তেছে আর সে কি অসহ্য ব্যথা আপনারে বুঝাতে পারব না। তাস্ফিয়া কে ইশারা দিয়ে হিসু করার কথা বলে একটু বাইরে গেলাম। আড়ালে গিয়ে বেনসন টা বের করলাম। সবাই বলে “যদি থাকো টেনশনে, মারো টান বেনসনে। ” আরাম করে আয়েশী ভঙ্গীমায় সিগারেট শেষ করে। গেলাম ওদের কাছে। আমি-ফুচকার দোকান গুলোর সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে৷

শালিজান- আপনি ফুচকা খেতে পারেন।

আমি-আন্তঃস্কুল খাওয়া প্রতিযোগীতায় আমি ফুচকা খাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন ছিলাম ৪০-৫০ পিস ফুচকা সাবাড় করে দিতাম ১০-১৫ মিনিটেই।

তাস্ফিয়া-মিথ্যুক। ১০ টা ফুচকা খাইতে পারবে না। সে নাকি আবার ৪০-৫০ টা ফুচকা খাবে।

আমি-তেমাদের দুই জনের থেকে বেশি খাব, চ্যালেন্জ।

তাস্ফিয়া -রাগ করেই বললো চল হয়ে যাক। আমার বউ রাগ করে, জেদ করে ৪১ পিস, শালি ৩১ পিস। আমি ২৯ পিস। ১০১ পিস ফুচকা ২০২ টাকা বিল দিলাম। হেরে গেলাম ওরা দুইজন আমাকে ট্রল করা শুরু করলো মেয়েদের সাথে ফুচকা নিয়ে বাজি ধরা নিষেধ। বুঝলেন মিষ্টার। তারপর বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমিও বিজয়ের হাসি দিয়ে ১৯৫ টাকা থেকে ১৩ টাকায় আর একটা বেনসন টানতে টানতে ভাবলাম সব কিছু বেনসন এর ক্যালমা। অবশেষে ১৮২ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত