সাগরের স্বপ্ন প্রেম

সাগরের স্বপ্ন প্রেম

কেনো যে আমার ফোনটা গাধাটা ধরছে না আল্লাহ ই জানে। সেই কখন থেকে ফোনে চেষ্টা করছি। গত তিনদিন ধরে ফোন দিচ্ছি। এতো এতো বকা দিয়ে মেসেজ দিচ্ছি ওর কোনো খবর নেই এগুলো বারান্দায় বেলকনিতে বসে ভাবছিলো নদী। সাগরকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে নদী ভাবনার এক জগতে হারিয়ে গেলো যেদিন সাগরের সাথে নদীর প্রথমবার কথা হয়েছিলো। ছেলেটা বড্ড পাগলাটে ধরনের মানুষ। সব সময় হাসি মজায় মাতিয়ে রাখে সবাইকে। সেদিন ছিলো এক মেঘলা দিন। হালকা বৃষ্টি হবে হবে এমন একটা ভাব। বাইরে মৃদু বাতাস বইছে। নদী ফেসবুকে তখন স্ক্রলিং করছিলো আর গল্প পড়ছিলো। হঠাৎ একটা গল্প পড়ে ভীষণ ভালো লাগে। সাধারণত নদী কারো পোস্টে লাইক বা কমেন্ট করে না নীরব পাঠক কিন্তু কেনো যেনো গল্পটা একটু বেশী ই ভালো লাগে ওর। তাই গল্পে লাইক ও কমেন্টস করে।

এভাবে সাগরের আরও কিছু গল্প পড়ে খুব ভালো লাগে নদীর। নদী লাইক কমেন্ট করে ভাবে ওকে কিছু মনে করবে না তো। আসলে যদি কখনও মাইন্ড করে বসে বা ভুল বোঝে। এসব ভেবে সাগরকে টেক্সট করার সাহস হয়না নদীর। একদিন এক পরন্ত বিকেলে নদী বসে বসে গল্পের বই পড়ছিলো এমন সময় তার ফোনে মেসেঞ্জারে টুং আওয়াজ হলো। মেসেজ ওপেন করেই নদী দেখে উপরে লিখা আছে Robiul Islam Sagor একটা স্টিকার হায় পাঠিয়েছে। নদী তো মেসেজটা দেখে চোখ পুরো ছানাবড়া। এই সেই লেখক যার লিখাকে ভালোবাসে। নদী তার গল্পের জন্য অপেক্ষায় বসে থাকে কখন সে গল্প লিখবে। নদী জবাবে আসসালামু আলাইকুম লিখে। সাগর সালামের জবাব দিয়ে বলে….

–“কেমন আছেন???

–“আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন???

–“হুসসসস আমি আপনার ভাইয়া হতে যাবো কেনো??? আমি যদি আপনার ভাইয়ার হই তবে আপনার বাবার সম্পত্তির ভাগ দিতে হবে। সাগরের কথা শুনে নুরাইয়া হেসে দেয়।

–“তাহলে আপনাকে কি বলে ডাকবো জনাব???

–“আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকতে পারেন না আমি কিছু মনে করবো না।

–“আচ্ছা আমি আপনাকে সাগর বলেই ডাকবো।

এভাবেই সাগর আর নদীর বন্ধুত্ব হয়েছিলো। কত হাসি মজায় দেখতে দেখতে ওদের বন্ধুক্তের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু কেউ কাউকে দেখেনি। কেউ কাউকে দেখতেও চায়নি। মাঝে মাঝে ফোনেও কথা হয় দুজনের।

গত চারদিন আগে সাগর অনলাইনে একটা পোস্ট করেছিলো বিদায় প্রিয় পাঠকবাসী প্রিয় বন্ধুগন। আমি আর এই সবুজ বাতির রঙীন জগতে আসবো না। পোস্ট টা দিয়েই সারগ অফলাইনে চলে গেছে। নদী পোস্ট দেখে প্রথমে ভাবে হয়তো ফান করছে ধরে নিলেও ব্যাপারটা আসলেও মজার ছিলো না সেটা এখন বুঝতে পারছে। পোস্ট টা দেখে তৎক্ষনাৎ মেসেজ করেছিলো কিন্তু জবাব মিলেনি। গত তিনদিনে সাগরের কোনো খবর নেই। নদী সারগের থেকে ফোন নাম্বার নিয়েছিলো অনেক ফোন দিয়েছে এই চারদিনে কিন্তু বার বার কেউ একজন মহিলার কন্ঠ ভেসে আসছে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে…….

–“আপনার কাঙ্খিত নাম্বারটিতে এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। সরি দা নাম্বার ইউ আর ডায়েলিং ইটস আনরিচেবল। প্লিজ ট্রাই এগেইন লেটার থেংক ইউ।

সাগরের বাড়ি কুড়িগ্রামে আর নদী থাকে ঢাকায়। যদি ধারে কাছে থাকতো তাহলে এতোক্ষনে ওর খবর করে দিতো মেয়েটা। নদীকে টেনশন দেয়া। ভেবেছিলো আগামীকাল ওর বার্থডে কই ওকে কোনো উইস করা তো দূরে থাক সে তো মিসিং। আবার নদী ভাবলো অনলাইনে রঙিন জগতে কেউ আপন হয় না। তখন ঘড়িতে প্রায় ১২.০১ বাজে। নদী ভাবনায় ডুবে আছে। চোখেমুখে বিরক্তিকর ভাব। নদী ভাবনায় ছেদ পড়ে একটা টেক্সট আসে। মেসেজটা অপেন করতেই দেখে ব্লাঙ্ক মেসেজ। মেজাজটাই বিগড়ে যায়। এমন ফাইজলামি কে করে ধূররর। নদী মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরেরদিন নদীর ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। কলে প্রথমে কেউ কথা বলে না।পরে মনে হয় একটা রেকর্ডিং এর মতো কথা আসলো। কন্ঠটা নুরাইয়ার খুব চেনা।

–“শুভ জন্মদিন ম্যাডাম। আপনি যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে আপনার জন্য ক্যাফেতে অপেক্ষা করছেন। আপনি যদি ১০.০০ টার মধ্যে ওখানে আসেন তাহলে তার দেখা পেতে পারেন। তার পড়নে ব্লাক শার্ট ব্লু জিনস। অনুগ্রহ করে তাড়াতাড়ি আসার জন্য বিশেষ অনুরোধ রইলো। কথাটা বলেই ফোনটা কুট করে কেটে দিলো। নদীকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না। নদী ফোনে দেওয়া ঠিকনা অনুযায়ী ক্যাফেতে পৌঁছে গেলো। কিন্তু আশেপাশে তো কাউকেই দেখলো না। তখনি হঠাৎ করে ক্যাফেতে লাইট অফ হয়ে গেলো আর সামনে একটা বড় স্ক্রীনে লিখা উঠলো……..

–“শুভ জন্মদিন প্রিয় বান্ধবী আর চারদিকে করতালি আর হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…হ্যাপি বার্থডে ডিয়ার নদী। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ। কিছুক্ষণ পর ক্যাফের লাইট জ্বলে উঠলো আর নদীর সামনে ব্লু জিন্স এন্ড ব্লাক শার্ট পড়া একটা ছেলে এসে বলল,……..

–“শুভ জন্মদিবস বান্ধবী কেমন দিলাম সারপ্রাইজ। কথাটা বলতেই নদী সাগরের সামনে এসে ওর বাহুতে মেরে বললো খুব বাজে ফাজিল কোথাকার। এমন কেউ করে???

–“জ্বি ম্যাডাম এমন আমি-ই করি। তোমাকে চমকে দেয়ার জন্য পোস্ট করা। ফোন অফ রাখা তারপর কল দেয়া পুরোটা প্লান ছিলো তোমার জন্মদিন এ সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য। কতো দূর থেকে জার্নি করে এসেছি জানো। এবার তো কেক টা কাটো।

নদী মোমবাতি নিভিয়ে কেক কাটলো আর সবাই ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো।কিছু কিছু বন্ধুত্ব আজীবন অটুট থাকে।ভালো থাকুক বন্ধুরা ভালো থাকুক বন্ধুত্ব। শুভ জন্মদিন প্রিয় বন্ধু। অনেক শুভকামনা তোমার জন্য। সাগর নদী জরিয়ে ধরল, আবেগে কেঁদেই দিলো। এটা ভালোবাসার কান্না হুট কর সাগরের গালে কে যেন কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিলো। শীতের সকালের ঘুমটা ভেঙে গেলো। ঘুম থেকে উঠে দেখল, এতক্ষণ, এতকিছু স্বপ্নে দেখছিলো। আর দাদুকে জরিয়ে ধরে কিস করার জন্য থাপ্পড় খেলো। সাগরে বলে উঠল শালার এ জন্মে আর প্রেম ভালোবাসা কপালে নাই…..

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত