রিভেঞ্জ

রিভেঞ্জ

প্রায় মধ্যরাত্রি। বাজারের দোকানপাট সব বন্ধ।এদিকে সিগারেটের প্যারায় ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। ওয়াকিল দেড় কিলোমিটার হেঁটে অবশেষে একটা দোকান খুঁজে পেলো।দোকানের পরিধি খুব বড় নয়।চার দেয়ালের মাঝে অল্প কয়েকটা মাল-সামানা রাখা।দোকানদারের সাথেও জান নেই বললে চলে।বয়স সত্তুর ছুই ছুই। শরীরে হাড্ডির ওপরে ভাজ পড়া চামড়ার প্রলেপ। ওয়াকিল দোকানদানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “সিগারেট আছে চাচা?” দোকানদার সাধারণ ভাবে বললেন “কি সিগারেট লাগবো?”

“মালব্রু এডভান্স?”
“কয়টা দিমু?”

ওয়াকিল হাতের ইশারায় তিনটা দেখিয়ে সিগারেট নিয়ে দাম দিয়ে চলে এলো। পুরো রাস্তা ফাঁকা।আশেপাশে কয়েক  দল কুকুর ছাড়া কিছু নেই। চারিদিকে ঘন কুয়াশা।এই সময়টায় খুব কম মানুষ জেগে থাকে। পরিবেশটার সাথে গান খুব মানানসই।ওয়াকিল ফোন বের করে গান চালাতে গিয়ে দেখে ২৬ টা মিস কল। ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে রিংটোন কানে আসেনি। কিন্তু এত রাতে কে হতে পারে? বাসার কেউ বিপদে পড়েনি তো? ওয়াকিল আতংকের সাথে কল ব্যাক করলো। পরক্ষণে রিসিভ। “কোথায় আপনি?ফোন রিসিভ করছিলেন না কেন?” চিরচেনা কণ্ঠ।চার বছরেও বিন্দুমাত্র বদল হয়নি।তবু ওয়াকিল না চেনার ভান করে বললো “কে আপনি?ফোন দিয়েছিলেন কেন?” ওপাশের মানুষটা হালকা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে বললো “নীরা।ভয়েস শুনে চিনতে পারছেন না?”

“ওহ্!কেমন আছেন?”
“ভালো।আপনি?”
“বিন্দাস।”
“কি করেন?”
“হাঁটি আর ধুমপান করি।”
“ছিঃ।সিগারেট ছাড়া কি চলতে পারেন না?”

ওয়াকিল মনে মনে হাসলো।মাঝ পথে ছেড়ে দিয়ে এখন চলার কথা বলছে।

“সিগারেট ছাড়া আবার চলা যায় নাকি?”
“যায়।আগে চলতেন না?”
“তখনকার আমি আর এখনকার আমি অনেক পার্থক্য।”
“সবকিছু আবার আগের মতন করা যায় না?”
“সবকিছু বলতে?আপনি কি আগের মতন করার কথা বলতে চাচ্ছেন?”
“না কিছুনা।”
“ওকে।”
“বিরক্ত হচ্ছে।”

“তা তো হচ্ছি।কথা ছিলো সিগারেটের সাথে গান শুনে একলা পথিকের মতন সময় কাটাবো।কিন্তু মাঝখানে আপনি চলে আসলেন।” নীরা চুপ হয়ে গেলো।কিছু বলছে না। তারপর ভেসে এলো ফুপিয়ে কান্নার আওয়াজ। ওয়াকিল ফুরিয়ে যাওয়া সিগারেটের আগুন দিয়ে দ্বিতীয় সিগারেট জ্বালালো। প্রিয় মানুষটার কান্নার সাথে সিগারেট অসাধারণ অনুভূতি জোগাচ্ছে।

“আমায় মাফ করে দেন।আমি ভুল করে ফেলেছি।প্লিজ….”
“হুম।”
“আমার কোন পথ খোলা ছিলো না।আই এম সরি।”
“সরি বলার কি আছে?আর মাফ চাচ্ছেন কেন?যা করছেন ঠিকই করছেন।পাপীদের সাথে এরকমই হওয়া উচিত।”
“এভাবে কথা বলছেন কেন?আগের মতন ভালভাবে কথা বলেন না প্লিজ।”
“আপনি কি চাচ্ছেন এখন?”
“আমার আগের ওয়াকিলকে চাই।ব্যস…..”

ওয়াকিল জোরে হেসে ফেললো।চার বছর আগে সেও এভাবে কাকুতিমিনতি করে আগের নীরাকে চেয়েছিলো।কিন্তু বিনীময়? হাজারো অপমান এবং হতাশা ছাড়া কিছু মিলেনি। আচ্ছা ওয়াকিল যদি নীরার মতন করে তাহলে কি কোন পাপ হবে?থাকবে কি দুজনের মাঝে বিন্দু পরিমাণ তফাৎ।
যাইহোক না কেন।দেখাযাবে শেষটায় কি হয়।

“অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
“কোন দেরি হয়নি।আমি জানি আপনি আমাকে এখনও ভালবাসেন।”
“হা হা হা।আজ হোক বা কাল।সত্যিকারের ভালবাসা ফুরায় না।শুধু সময়ের বিবর্তনে নিয়ম বদলে যায়।”
“জানিনা।কিচ্ছু জানিনা।আমাকে আগের মতন ভালবাসবেন ব্যস।”
“চেষ্টা করবো।”
“আই লাভ্ ইউ।”
“আই লাভ্ ইউ টু।”
“আমাকে তুমি করে বলবে না?”
“হুম।”

“খুব কষ্ট দিয়েছি তাইনা?”
“হুম।”
“সরি।সত্যি আমি বুঝতে পারিনি।”
“হুম।”
“আমাকে বিয়ে করবে ওয়াকিল?”
“হঠাৎ?”
“তোমাকে আর হারাতে চাই না।” ওয়াকিল তৃতীয় সিগারেট জ্বালিয়ে বললো “তোমার বাসা থেকে মানবে?”
“তুমি এখন এস্টাবলিশ।আমারও বিয়ের বয়স পাড় হয়ে যাচ্ছে।বাকিটা ম্যানেজ করে ফেলবো।”
“ওকে।”
“কাল বাবাকে আংকেলের সাথে দেখা করতে পাঠাবো?”
“ইচ্ছা।”
“তোমার কোন ইচ্ছা নেই?”

ওয়াকিল মৃদু হেসে বললো “আছে।” নীরা কিছুতে কিছু মিলাতে পারছে না।ছেলেটা এত সহজে মেনে যাবে ভাবনার বাইরে। যাইহোক, হতে পারে এটা অধিক ভালবাসার ফল। ওয়াকিল রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে নীরার মাঝে হারিয়ে গেলো।সেই পুরনো অভ্যাস। মেয়েটার অদ্ভুত ক্ষমতা।ওয়াকিল মনে করে নীরার সাথে কথা বলে সে অনায়াসে ৫-৭ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দিতে পারবে।না হবে শরীর ক্লান্ত না হবে মন। দুপুর হয়ে এসেছে। শোভন সাহেব ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখেন কয়েকজন মেহমান বসে।যদিও তাদের তিনি চিনেন না। ফাতেমা বেগম দৌড়ে এসে বললেন “এই শুনো না।ওয়াকিলের জন্য বিয়ের প্রস্তাব এসেছে।”

শোভন সাহেব বিরক্ত হয়ে বললেন “তো কি?তোমার ছেলে এখন দুইটা ইন্ডাস্ট্রির মালিক।এরকম বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকবে।সামনে সপ্তাহেও শাখাওয়াত বাবু বাজার থেকে ওয়াকিলের কথা বলছিলো।আমি সরাসরি মানা করে দিয়েছি।আমার ছেলের বিয়ের জন্য এখনও অনেক সময় বাকি আছে।” ফাতেমা বেগম মন খারাপ করে বললেন “ওনারা নীরার বাড়ির লোক।” শোভন সাহেব ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলেন “কোন নীরা?” “ওয়াকিল যাকে পছন্দ করতো।” “ওহ্।আগে বলবা না?তুমি ওনাদের নাস্তাপানির ব্যবস্থা করো।আমি বসে কথা বলি।” ফাতেমা বেগম হাসি মুখে কিচেনে চলে গেলেন।মনে উৎফুল্লতার ছোয়া।ছেলে এবং পরিবারের স্বপ্ন একসাথে পূর্ণ হতে চললে সবচেয়ে খুশি হয়তো মায়েরা হয়।

শোভন সাহেব নীরার পরিবারের সবার সামনে এসে দাঁড়াতে নীরা উঠে এসে সালাম করলো।পাশ থেকে শফিক চাচা বললেন “অনেক আদর্শবান মেয়ে।আমাদের এলাকায় এরকম মেয়ে দ্বিতীয়টা আছে বলে মনে হয় না।” নীরা কিছুটা লজ্জা পেলো।শোভন সাহেব নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন “তুমি কিচেনে যাওয়া মা।ওখানে তোমার আন্টি আছে।আমরা মুরব্বিরা মিলা একটু আড্ডা দেই।” নীরা কিচেনে যাওয়ার ভান করে ওয়াকিলের রুমে চলে গেলো। ওয়াকিল ল্যাপটপের সামনে বসে।কার সাথে যেন কথা বলছে।কথা গুলো কিছুটা এমন-

“এই সপ্তাহের অর্ডার ডেলিভারি হয়েছে?”
“না স্যার।”
“ডেলিভারি লাস্ট ডেট কবে?”
“১৪ বা ১৫ তারিখ।”
“তাহলে হাতে দশ দিন সময় আছে।আমাদের কর্মীরা কি এই দশ দিনে কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবে?”
“ডে-নাইট কাজ করলে পারবে।”
“নো।আমি চাইনা এই সময় ফিক্সড কোন কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ুক।তুমি এক কাজ করো, আরও সত্তর জন কর্মী নিয়োগ দাও।”
“ওকে স্যার।”
“বাই।”
“বাই স্যার।”

ওয়াকিল ল্যাপটপ অফ করে শরীর মোচড় দিয়ে সামনে তাকালো। ব্যস! চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার উপক্রম।হলুদ শাড়িতে নীরা দাঁড়িয়ে।মেয়েটা হয়তো আজ অনেক সময় নিয়ে সেজেছে। নীরা রাগি রাগি ভাব নিয়ে রুমে প্রবেশ করে বললো “একদম শুকিয়ে গেছো।”

“সারাদিনে খাওয়ার সময় পাই কোথায়?”
“বাব্বাহ্, অনেক বড় বিজনেসম্যান হলে যা হয়।”
“এখনও অনেক বড় হতে পারিনি।তবে ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবো।”

নীরা ওয়াকিলের পাশে বসে বললো “আচ্ছা এগুলো কথা বাদ দাও।তুমি চুপচাপ বসো আমি তোমাকে মন ভরে দেখি।”

“পরে।এখন একটা মিটিং আছে।অফিসে যেতে হবে।”
“মিটিং ক্যান্সেল।”

বাক্যটা ওয়াকিলের বুকে আঘাত করলো।চার বছর আগের ওয়াকিল হলে হয়তো নীরার দেখা পেয়ে মিটিংয়ের কথাই ভুলে যেতো। আচ্ছা নিয়তি এমন কেন? যখন মন ভালবাসা খোঁজে তখন একা করে দেয়।আর যখন মন ভেঙে যায় তখন ভালবাসার পাহাড় গড়ে দেয়। “সরি বেবি।খুব ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং।” নীরা মন খারাপ করে বললো “হোক।না গেলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না।” ওয়াকিল নীরার হাত চেপে ধরে বললো “আর গেলে বিশাল একটা ডিল হবে।” “প্লিজ, থেকে যাওনা।” ওয়াকিল নীরার সাথে পেরে উঠলো না।সে থেকে গেলো। কিন্তু তাকে এভাবে হলে চলবে না।হৃদয়কে শক্ত করতে হবে।কঠিনতম শক্ত।

গভীর রাত। অথচ ওয়াকিল দুচোখের পাতা এক করতে পারছে না।মন খারাপের রাজ্য ক্রমশ তাকে ঘিরে ধরছে।বিলীন করে নিচ্ছে হাসিখুশি মুখটাকে। যার পুরো কারণ নীরা। ইদানীং মেয়েটা ফোনে কম কথা বলে।কোন কিছু জিজ্ঞাসা করলে ইগনোর করে যায়।ওয়াকিলের যা যা অপছন্দ নীরা সেই কাজ গুলো বেশি করে। আচ্ছা মেয়েরা এমনটা কখন করে? যখন সে প্রিয় মানুষটার থেকে মুক্তি পেতে চায়? মুক্তি শব্দটা ভাবতে ওয়াকিলের হৃস্পন্দন কেঁপে উঠলো। সে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেলে নীরার ফোনে মেসেজ করলো।

“তুমি আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো কেন?আগের মতন ভালোবাস প্লিজ।তোমার অবহেলা আমি আর নিতে পারছি না।আগে এক মিনিট ফ্রি থাকলে আমায় মেসেজ করতে।এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফ্রি থেকেও ব্যস্ততা দেখাও।জানিনা কি ভুলের কারণে এভাবে শাস্তি দিচ্ছো।যদি ভুল করে থাকি তাহলে ক্ষমা করে দাও।আমি আমার আগের নীরাকে চাই।প্লিজ..প্লিজ..প্লিজ।” আশ্চর্য ভাবে কিছুক্ষণ বাদে ওপাশ থেকে রিপ্লে এলো “ভুল তুই না আমি করছিলাম।না হলে জেনেশুনে তোর মতন ছেলের সাথে রিলেশনে জড়াই।” ওয়াকিল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রাত তিনটা।

“তুমি এমন বিহেভ করছো কেন?” “তুই এরই যোগ্য।আমার জুতার সমান মূল্য আছে তোর?শুরু থেকে মাথায় তুলছিলাম, এখন মাথায় উঠে নাচতেছিস।” বাক্য গুলো সজোরে বুকে বিধতে লাগলো।চোখ চিরে বেড়িয়ে এলো লোনা জল।ওয়াকিল কাঁপা কাঁপা হাতে লিখলো “এরকম ব্যবহার কেন করছো নীরা?দূরে থাকার কারণে আমাদের এত ঝগড়া হচ্ছে।চলো না বিয়ে করে ফেলি।দেখবা সব ঠিক হয়ে গেছে।”

“বিয়ে আর তোকে?তোর সাথে রিলেশন করে অর্ধেক জীবন নষ্ট করছি।বিয়ে করে বাকি জীবন নষ্ট করতে চাই না।আমাকে মাফ কর।এবার একটু শান্তিতে বাঁচতে দে।” ওয়াকিল নিজের ভুল খুঁজছে।কোন ভুলে তাকে নীরা এসব কথা বলছে। অবশেষে খোঁজের অন্তঃ ঘটলো। টাকা! অদ্ভুত এক সমীকরণ। অথচ রিলেশনের শুরুতে নীরা বলেছিলো অল্প কিছু টাকায় সে এডজাস্ট করে নিতে পারবে।তাহলে এখন কেন? তবে নীরার বা কি দোষ? হয়তো তখন বয়সের কারণে আবেগ বেশি ছিলো।এখন বাস্তবতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে ফুরিয়ে গেছে। যার সম্পূর্ণ শিকার হচ্ছে ওয়াকিল। পথে-ঘাটে খুঁজলে ফুরিয়ে যাওয়া আবেগে শিকার হওয়া এমন ওয়াকিল লক্ষ লক্ষ পাওয়া যাবে।

“আমার ভুলটা বলে দাও।আমি চলে যাচ্ছি।”
“কয়টা ভুল শুনবি?তোর কোন ক্যারিয়ার আছে?সমাজে চলতে পাড়িস?আফটার অল তুই তো ম্যাচিউড’ই না।যা এখন ভাগ।হুদাই মেসেজ দিয়ে ডিস্টার্ব করলি।” ওয়াকিল এলোমেলো হয়ে গেলো।সবকিছু কেমন আচমকা ঘটে যাচ্ছে।যা ঘটছে তা ওয়াকিল কল্পনাও করেনি।

“আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।প্লিজ আমায় ছেড়ে যেও না।আমার আগের নীরাকে ফিরিয়ে দাও।”
“ওই কুত্তারবাচ্চা কি বলছি তোর কানে যায় না?”
“তুমি আমাকে গালি দিলা?”
“হুম দিলাম।”
“ছিঃ তোমার কাছে এটা আশা করি নাই।”
“আবার ছিঃ চুদাস কেন?ভালভাবে অনেক বলছি।তুই শুনিস নাই।”
“ভার্সিটিতে গিয়ে তোমার মুখের ভাষা খারাপ হয়ে গেছে নীরা।”
“তুই..তুই আসলে একটা কুত্তার বাচ্চা।আর মেসেজ দিবি না।যা ফোট।”

ওয়াকিল এরপর আর কখনো নাম্বারটায় কল বা মেসেজ দেয়নি।ফেভারিট লিস্টে থাকা নাম্বারটা ডিলিট করে দেয়।
অতীত ভাবতে ভাবতে ওয়াকিল পাশে তাকিয়ে দেখে সিগারেটের প্যাকেট খালি হয়ে গেছে।সামনে গোটা বিশেক ফিল্টার পড়ে। এখন কি হবে?দশ মিনিট পরে তো আবার সিগারেট পান করতে ইচ্ছা করবে। এর মধ্যে নীরা ফোন করলো। ওয়াকিল বিরক্তির সাথে ফোন তুলে বললো “এত রাতে কেউ ফোন দেয়?”

“সরি, আমার ঘুম আসছে না।একটু কথা বলবা?”
“কি কথা বলবো?ঘুম আসছে না কেন?”
“আমাদের বিয়ের খুশিতে।”
“ভালো।”
“এই কাল আমি কি রঙের শাড়ি পড়বো।”
“তোমার ইচ্ছা।”
“উঁহু।বিয়ের পর নিজের ইচ্ছার চেয়ে স্বামীর ইচ্ছাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়।”
“ওহ্।”
“জানো একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন কি থাকে?”
“কি থাকে?”
“তাঁর বিয়ে।আমি কালকের জন্য খুব খুব খুব এক্সাইটেড।উফফ ভাবতে কেমন যেন লাগছে।”
“ওকে।এখন রাখলাম।আমার ঘুম পাচ্ছে।হুদাই ফালতু প্যাচাল শুনতে ভাললাগছে না।”

নীরা কান্নার সুরে বললো “তুমি বদলে গেছো ওয়াকিল।” ওয়াকিল হাসি আটকাতে পারলো না।কল কেটে জোরে জোরে হাসতে লাগলো। সারা বাড়ি সাজানো হয়েছে।সৌন্দর্যের কোথাও কোন কমতি নেই। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা। ফাহাদ সাহেব রিক্সা চালক থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পর্যন্ত দাওয়াত করেছেন।বন্ধু-বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, আন্তীয়-স্বজন মিলিয়ে পুরো বাড়ি পূর্ণ হয়ে আছে। অপেক্ষা শুধু বরের। নীরা কণের ফিরিতে বসে মৃদু মৃদু হাসছে। অল্প কিছুক্ষণে সে কারো স্ত্রী হবে।তাঁর নিজের সংসার থাকবে।স্বামীর আদর-সোহাগ। আহ্! ভাবতে কেমন যেন লাগছে। আচ্ছা ও কখন আসবে?এত দেরি করছে কেন? কল দিয়ে দেখবো?না থাক। উমমম একটা কল দিলে বা কি?এই সুযোগে ওর ভয়েসটাও শোনা হয়ে যাবে। নীরা খুশি মনে ওয়াকিলের নম্বরে কল করলো।পরক্ষণে রিসিভ।

“হ্যালো।”
“এই কোথায় তুমি?”
“বাসায়।”
“বাসায় মানে?এখনও রওনা দাওনি?”
“না।কোথায় রওনা দিবো?”
“ফাজলামো করো না।আজ আমাদের বিয়ে।কতদূর আসছো তাই বলো।আমি গাড়ির শব্দ শুনতে পাচ্ছি।”
“আমি ছাদে।এর জন্য গাড়ির শব্দ পাচ্ছো।যাইহোক, কার বিয়ে যেন বললা?”
“আমাদের।”
“হা হা হা।বিয়ে করতে লেভেল লাগে।তুমি কি আমার লেভেলের?”
“Are you Drank?”
“ইয়েস।খাবা?ঢেলে দেই?”
“এটা মজার সময় না।”
“ওই মাগী তোর সাথে মজা করা মানায়?আগে লেভেলে আয়।শালী থার্ড ক্লাস ম্যাইয়া।তুই আমারে পল্টি মারছিলি।

আমি তোরে মেরে দিলাম।রিভেঞ্জ ডান।” নীরা কান্না করে ফেললো।সে কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। “ওয়াকিল আমার বাবার সম্মানের ব্যপার।প্লিজ “তুই মরে যা।তাহলে সব খতম।যা ফোট।” ওয়াকিল ফোন কেটে সিম বের করে ভেঙে ফেললো।মন শান্ত হচ্ছে।চার বছর ধরে জমে থাকা জেদ আজ মুক্তি পেয়েছে। অপর প্রান্তে নীরা কান্না করছে। সে তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছে।কিন্তু কিছু করার নেই।দেরি হয়ে গেছে।অনেক দেরি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত