একটা ছেলে একটার পর একটা বই আমার হাতে তুলে ই দিচ্ছে আর আমি তা অবাক হয়ে দেখছি। সবগুলো ই আমার পছন্দের লেখকদের বই। লাইব্রেরিতে এসেছি কয়েকটা একাডেমিক বই কিনতে কিন্তু না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাশে থেকে আওয়াজ আসল বইগুলো ধরুণ তো। অবশ্য ছেলেটা অন্যদিকে মুখ করে ছিলো। আমার সব পছন্দের লেখকদের বই একটার পর একটা হাতে তুলে দিচ্ছেন। আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। বইগুলো দেখে খুব খুশি লাগছিল। কিন্তু পরক্ষণে মনে পড়ল এগুলো কার..! লাস্ট তারাশঙ্কের ‘ সপ্তপদী’ বইটা হাতে দিয়ে বিল পে করছিল ছেলেটি।
আমি এতক্ষণ যাবত বইগুলো নিয়ে দাড়িয়ে আছি।বিল পে করে ই তাকাতেই ছেলেটা বলে উঠল এই আপনি কে..? আপনার হাতে বইগুলো কেন? কথায় মনে হচ্ছিল যেন আমি বইগুলো চুরি করে নিয়ে যেতে এসেছি। প্রচন্ড রাগ হল। বললাম, আপনি ই তো আমাকে ডেকে বইগুলো হাতে দিচ্ছিলেন। ছেলেটি বিরক্তি ভাব নিয়ে বলল, আপনি ডেকে দিলে ই পারতেন। শুধু শুধু কষ্ট করতে হত না। আমিও বইগুলো উনার কাছে হস্তান্তর করে বিদায় নিলাম। কিরকম রুক্ষ ব্যবহার। সরি তো দূর উল্টো ভাব দেখানো স্বভাব। অনেকটা রাগ হচ্ছিল। রাগ করে টেক্সিতে উঠলাম। হঠাৎ বড় আপু মেসেজ দিল খালার বাসায় যাওয়া লাগবে না। বাসায় চলে যেতে। ততক্ষণে আমি খালার বাসায় যাওয়ার জন্য টেক্সিতে বসা। এটা দেখার পর আমার রাগের মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাটা ধরলাম অর্পার বাড়িতে অর্পা আমার বান্ধবী। আমার যখন ই মন খারাপ কিংবা রাগ হয় তখন ই অর্পার কাছে চলে যাই। গিয়ে কলিংবেল টিপতে ই দরজা খুললে আমি আবার অবাক হয়ে আছি। সেই ছেলেটা আমার সামনে দাড়িয়ে..! আমি বাসার নাম্বার চেক করলাম নাহ ঠিক ই তো আছে তাহলে ইনি কে! আমাকে দেখে ই জিজ্ঞেস করল আরে আপনি এখানে..! এখানে কি করছেন? আমি আবারো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি উনার কথায় মনে হচ্ছে যেন আমি উনাকে ফলো করে এখানে এসেছি। আমি রাগ যথেষ্ট সংযত করে বললাম, এটা তো অর্পাদের বাসা আপনি কে? কিছুটা ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল অর্পা ঘরে আর আমি ওর বড় ভাই।
আমি তো ভুলে ই গেছিলাম অর্পার যে বড় ভাই আছেন। অবশ্য তিনি ফোর্সের কাজ করেন তাই বাসায় থাকেন না। দেখিনি কোনোদিন আর ছুটিতেও কম আসেন। যখন আসেন তখন আমার আসাও হয় না। আমি সালাম দিলাম।
হ্যা, অর্পার বড় ভাই শুনে এখন সালাম দিতেছেন। আর এতক্ষণ যে ভিলেনের মত ঐ বড় বড় চোখ গুলো নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন..! কিছু না বলে চুপ করে আছি একে তো নিজে বিহেভ এর চিন্তা নেই তার উপর আবার অন্যজনের সাথে বড় গলা। ফোর্সের লোকের প্রমাণ রসকষ হীন কাঠখুট্টা। আর কিছু না বলে ভিতরে ঢুকলাম।
অর্পা ওয়াশরুমে। আমি বসে আছি। হঠাৎ ড্রয়িংরুমের পাশে ই একটা টেবিলে সেই বইগুলো দেখে আবার ভালো লাগল। ততক্ষণে আন্টি আমার জন্য চা বানাচ্ছেন আন্টির হাতের চা টা স্প্যাশাল আর অন্যদিকে অর্পার খাটাশ টাইপ ভাইটা কি জন্য জানি আবার বাইরে গেছেন।বইগুলোর সামনে গেলাম। আর কিছু চিন্তা ভাবনা না করে পছন্দের খুব প্রিয় পাঁচটা বই ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে নিলাম। জীবনের ১ম কিছু চুরি করছি তাও আবার বই আসলে বই বলেও নেওয়া যায় কিন্তু অর্পার ভাইয়ের উপর রাগ করে বইগুলো নিলাম একে তো এতগুলা বই হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম কোথায় ধন্যবাদ দিবে তা না করে কঠিন ভাষায় ধমক দিল।
আমার প্রাপ্তি সরুপ এই বই। বইগুলো নিয়ে ই অর্পার কাছ থেকে বাইরে থেকে বিদায় নিয়ে নিলাম। সাথে আন্টিকেও বললাম ফোন এসেছে যেতে হবে তাড়াতারি বলে বেড়িয়ে পড়লাম। বইগুলা নিয়ে এখন রাগটা বেশ কমেছে। যাক দুটো দিন খুব ভালো কাটবে বইগুলার সাথে। ৪/৫ দিনের মধ্যে আর অর্পার সাথে দেখা করিনি একটু একটু ভয়ও লাগছিল। অর্পা সকাল থেকে বলে যাচ্ছে বিকেলে ক্যাম্পাসে যেতে এসাইনমেন্টের কাজ আছে। ক্যাম্পাসে যেতে ই অর্পা কে দেখলাম বেশ সাঁজুগুজু বেশে দাড়িয়ে আছে। আমি যেতে হাত ধরে টেনে বলল, আরে তাড়াতারি চলে তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাব রেডি হওও। আরে, এক জায়গায় যাব মানে..? আম্মুকে বলে আসিনি কিভাবে যাব।
— আমি আন্টিকে ফোন করে সব বলেছি কিচ্ছু হবে বাকিটা অন্যরা সামলাবে।
এসব বলে আমাকে একটা পার্লারে নিয়ে গেল। সেখান থেকে শাড়ি পড়ে হালকা সাঁজে বেড়িয়ে আসলাম। বাইরে আসতে ই আবার আমি হা করে তাকিয়ে আছি। বাহ, বইচোর কে তো শাড়িতে দারুণ লাগছে। অর্পা আমার পছন্দ ঠিক আছে না..!
— একদম ভাইয়া।
তাহলে তুই সবাইকে নিয়ে কাজী অফিস পৌছে যা আমি এই বইচোরকে নিয়ে আসছি। লজ্জায় কিছু বলতে পারছি কিন্তু এসব কি হচ্ছে.! অর্পার ভাই আদিব রিকশা ডেকে আমাকে নিয়ে উঠলেন। জানো তো, আমি বেশি রোমান্টিক টোমান্টিক না তবে বই পড়তে ভীষণ ভালোবাসি তাই বাসায় আসলে ই যাওয়ার সময় বই কিনে নিয়ে যাই। গত দিন বইগুলা না পাওয়ায় অনেক তথ্য নিয়ে তোমাকে খোঁজে বের করেছি। যাই হোক নিজের মত একজন পেয়েছি তাই এরকম করলাম আগামীকাল বিকেলে ই আমাকে ফিরতে হবে। অনেক দিন ধরে মা আমার উপর বিরক্ত এসব বলতে বলতে তাই মা কে বলতে ই মা দুপায়ে খাড়া। বাকিটা মা মেনেজ করবে। হঠাৎ পকেট থেকে কি যেন বের করল আদিব। একগুচ্ছ বেলীফুলের মালা। আমি আবারো কিছু না বলে হাসছি।
— দেখো হেসো না। আমি এত গুছিয়ে কবিদের মত বলতে পারিনা। তবে হ্যা খুব ইচ্ছে শেষ বিকেলে কারো হাত ধরে হাটার..
— চলবে আমার। এইটুকু বলে তাকিয়ে আছি ঐ খাটাশ টাইপ চেহারায় যেন কোথায় মায়া লুকিয়ে ছিল আজ তা দেখতে পারছি। পৌছে গেলাম গন্তব্যে। শাড়ি পড়ে হাটতে পারছি না ঠিকমত। সামনে যেতে আদিব বলল, নাও তোমার বইচোর বউমাকে নিয়ে এসেছি। আমি আবার চেয়ে আছি ওর দিকে।
— শোন এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকাবা না আমারো প্রবলেম হয় বই কিনে দেব না কিন্তু..!!