আমার মা কোন এক বিচিত্র কারণে সন্দেহ করছেন আমি গোপনে বিয়ে করেছি।টিউশন করে বউয়ের শাড়ি,ব্লাউজ,টিপটাপ, মেকাপের খরচ যোগাচ্ছি।এই সন্দেহ তিনি কেন করছেন সেটার কারণ হাজারবার খুঁজেও বের করতে পারছিনা।মা ভাবেন তিনি ঘুমিয়ে গেলে আমি গভীর রাতে ফিসফিসিয়ে আমার বউয়ের সাথে কথা বলি। সেদিন সকালে ডেকে বললেন,তুই রাতে কারো সাথে কথা বলিস?
আমি চায়ের কাপে পড়ে যাওয়া বিস্কুটটা উঠানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে ব্যস্ত তখন।মাথা উঁচু না করেই বললাম,আজ থেকে তোমার সাথেই ঘুমাব,আর আমি যে এগারোটার আগে পরে ঘুমিয়ে যায় সেটা তো তুমি জানোই।মা আমার উত্তরে সন্তুষ্ট হলেন না সেটা বেশ বুঝতে পারলাম।মা পালটা প্রশ্ন করে বললেন,তুই কাউকে গোপনে বিয়ে টিয়ে করেছিস? চায়ের কাপের গলগল বিস্কুটটা রেখে চোখমুখ শক্ত করে বললাম,কি আবোলতাবোল বলছ এসব! মা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,এমন ভাব ধরে লাভ নেই এখনকার ছেলেপেলে বাচ্চাকাচ্চা ফুটিয়ে ফেলে গোপনে বিয়ে তো ডালভাত ব্যাপার। আমি কিছু বললাম না,মায়ের মাথাটা যে কেউ খুব ভালোভাবেই ওয়াশ করেছে সেটা বেশ বুঝতে পারলাম।খামাখা কথা বাড়ালেই মা ভাববেন ছেলে অবাধ্য আর বেয়াড়া হয়ে যাচ্ছে গোপন বউয়ের কু মন্ত্রনায়।
দিন ভালোই চলছিল। কিছুদিন আগে কেনা রবি সিমটাতে প্রায় আননোন নম্বর থেকে ফোন আসা শুরু করেছে।ফোন রিসিভ করতেই একজন ব্লাউজের মাপ দিতে চায়,অন্য একজন আমের কেজি কত করে তা জানতে চায়,ডিশের বিল দিতে ফোন করল সেদিন একজন।রঙ নম্বর বলে ব্যাপারটা উড়িয়ে দিচ্ছিলাম।মুসিব্বতের গেরো জায়গামতোই লাগল দুপুরে ভাত খেতে বসে।ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে একজন বলল,জামাই রাতে কিন্তু আমাদের এখানে তোমার দাওয়াত। না আসলে কিন্তু বিয়াইনের কাছে বিচার দিব।আমি রঙ নম্বর বলে যথারীতি ফোনটা কেটে দিলাম।
মা কেমন করে যেন আমার দিকে তাকালেন।আমি পাত্তা না দিয়ে মাছের কাঁটা বাছতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।কিছুক্ষণ বাদে আবার সেই নম্বর থেকে ফোন এলো।মা ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,লাউড স্পীকার অন করে কল রিসিভ কর।আমার গড়িমসি দেখে মা চিলের মতো ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ফোন কলটা রিসিভ করে লাউড স্পীকার অন করতে ফোনের ওপাশ থেকে ভদ্র মহিলা বেশ অভিমানী গলায় বললেন,জামাই তোমার পছন্দের কালা ভূনা রান্না করবো,আমার মেয়েটা একটু রাগী কিন্তু লক্ষী আছে।
তোমাদের মান অভিমান আজ রাতেই মিটিয়ে নেবে।আর হ্যাঁ রাতে কিন্তু দাওয়াত, না আসলে মা কিন্তু রাগ করব। আমার গলা দিয়ে আর ভাত নামল না।এক বন্ধুর বাড়িতে আজ রাতেই দাওয়াত ছিল।মাকে বলার পর সে সন্দেহর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন,সত্যিই কি বন্ধুর বাসায় দাওয়াত? মা ফোন কলটা কেটে দিয়েই গুঙিয়ে কেঁদে উঠলেন।সঙ্গে সঙ্গে ছোট বোনটা লাফিয়ে উঠে বলল,দেখেছ মা আমি বলেছিলাম না তোমার ছেলে গোপনে বিয়ে করেছে।তবে আফসোসের কথা হলো মেয়ের ওজন তোমার ছেলের চেয়েও আরো পাঁচ কেজি বেশি।
ছোট বোনের কথা শেষ না হতেই মা আরো জোরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন।ঘটনার আকস্মিকতায় আমি বোবা বনে গেলাম। ছোট বোনটা মায়ের রুমে ছুটে গেল। বুঝতে পারলাম মাকে কান পড়াটা সে ই দিয়েছে।মিনিট দুয়েক পর আব্বার নম্বর থেকে ফোন আসল।আব্বাও ঘটনার আকস্মিকতায় থ মেরে গেছেন, আব্বা গম্ভীর গলায় বললেন,তোমার কাছ থেকে এমন উপহার পাবো সেটা কল্পনাও করিনি।আজ থেকে জেনো তোমার আব্বা নাই।
পাশের রুম থেকে মা ছুটে এসে আমার কাছ থেকে ফোন কেড়ে কাঁদতে কাঁদতে আব্বাকে বললেন,আজ থেকে আমার কোন ছেলে নেই।ঐ ডাইনীকেই ও মা ডাকুক।আমি ভাববো আমার ছেলে মারা গেছে।মা আবার কাঁদতে শুরু করলেন। ঐ নম্বরটায় আমি লাগাতার ফোন দিয়েও পাচ্ছি না।সারাক্ষণই ব্যস্ত বলছে।বাড়ি জুড়ে কান্নার রোনাজারি, চাচি,ফুপু,পাশের বাড়ির বিশেষ আন্টি সমাজ এসে জড়ো হয়েছে।মা গুঙিয়ে কাঁদছেন আর আন্টিরা মাকে স্বান্তনা দিচ্ছেন।মা একটু পরপর চিৎকার করে বলছেন,ঐ ডাইনী মহিলা আমারে না জানিয়েই গোপনে আমার ছেলের গলায় ওর মেয়েকে ঝুলিয়ে দিয়েছে,আল্লাহ ই ওর বিচার করবে।
ছোটবোনের বুদ্ধি মত মা আমার ফোন কেড়ে নিলেন যাতে আমি আমার শাশুড়ি আর বউয়ের সাথে যোগাযোগ না করতে পারি।আমি অনেক বোঝাতে গিয়েও বোঝাতে পারিনি।এলাকায় খবর রটে গেছে আমি বিয়ে করেছি,কেউ দু লাইন বাড়িয়েছে আমার বউ নাকি প্রেগন্যান্ট। মা এসব শোনেন আর কাঁদেন।
পরদিন বন্ধুদের সাথে বান্দরবান যাবার কথা ছিল।মা এসে বললেন, তুই আমারে বান্দরবান দেখাস? তোর পেটে আমি হইছি নাকি আমার পেটে তুই? বউ নিয়ে হানিমুনে যাবি তাই না? তোর হানিমুনে আমি যাওয়াচ্ছি।আমি হাজারবার মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও পারিনি।বাসায় বন্ধুরা এসে উলটো অপমান হয়ে গেছে,মায়ের ধারণা বন্ধুরাই আমাকে গোপনে বিয়ে করিয়েছে। দিন তিনেক পেরিয়ে গেছে আমি গৃহবন্দী। শুয়ে টিভি দেখছিলাম এমন সময় মা এসে খানিক্ষন কেঁদে বললেন,আমার সোনা জাদু তুই আমারে মাফ করে দে।মার ভুল হয়ে গেছে।আমি খানিক আশার আলো দেখলাম।মা বললেন,ঐ মহিলা আজ ফোন করে সব পরিচয় দিল। সে রঙ নম্বরে ফোন করেছিল।তার বাড়ি নাটোরে।মার উপর রাগ রাখিস না বাবা।এই বলে শোয়া অবস্থাতে মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।
মনে মনে বেশ শান্তি পেলাম।অন্ততপক্ষে মার ভুল তো ভাঙল। পরদিন সকালে সিদ্ধান্ত হলো এলাকা জুড়ে মাইকিং হবে আমার বিয়ের নিউজ সম্পূর্ণ ভুয়া।একটি বিশেষ মহল মা ছেলের সম্পর্কে ফাটল ধরাতে এমন গুজব রটিয়েছিল।যথারীতি মাইকিংও হলো। সপ্তাহ খানেক পর ছোট বোনটা মাকে বলল,সে ট্যুরে যাবে কলেজ থেকে।আমি না করে দিলাম, মাও না করে দিল দূরত্বের কথা ভেবে। ছোট বোনটা ছাদে আমাকে ডেকে নিয়ে বলল,তুই বুঝে শুনে না করছিস তো? আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,বোঝা শুনার কি আছে?
ও পৈশাচিক হাসি হেসে বলল,তুই কিন্তু লাস্ট ট্যুরে বান্দরবান যেতে পারিস নি।এমন ঘটনা আর যে ঘটবে না তার গ্যারান্টি কে দিতে পারে? আমি স্টাচুর মতো ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম।তার মানে পুরোটাই প্রতিশোধ নিতে ও করেছে,এর আগে ও ট্যুরে যেতে চেয়েছিল আমি না করে দেয়ায় ও যেতে পারেনি।তাই প্রতিশোধ নিতে পুরো নাটকটা ও করালো যাতে আমিও ট্যুরে না যেতে পারি।
মাথা ভনভন করতে শুরু করেছে।ছাদ থেকে নামার আগে ওকে পারমিশন দিয়ে আসলাম ও ট্যুরে যেতে পারবে।ছাদের সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে বুকে থুতু ছিটিয়ে মনে মনে বললাম,যাক বাবা আমি যে সত্যি বিয়ে করেছি সেটা তো ধরতে পারেনি।