বিলাসিতা

বিলাসিতা

আমার বউয়ের একটা বদভ্যাস আছে ৷ আমার উপর রেগে গেলে শালা বলে গালি দেয় ৷ আজ বাজার থেকে ছোট মাছ কিনে এনেছি দেখে সে রাগের চরম পর্যায়ে পৌঁছে আমার উপর লাফিয়ে উঠে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর মত রুপ নিয়ে হুংকার মেরে বলল,

—-শালা, এই কনকনে শীতের মধ্যে তাও রাতের বেলায় পুঁটিমাছ কিনে আনছো কোন সাহসে? আমার সাথে নাটক করো? তুমি ভাবো তোমার সাথে একটু ভালবাসা দেখাই বলে যা করতে বলবে তাই করবো? উহু, মোটেও না ৷ তোমার সব কথা মানতে রাজি না ৷ তোমার বউ আমি, চাকরাণী না ৷ আজকে মাছও কাটবোনা, রান্নাও করবোনা ৷ না খেয়ে থাকবো ৷

কথাটা বলেই বউ থমথমে পায়ে আমার সামনে থেকে চলে গেল ৷ মাছ পঁচতে লাগলো আর আমি ক্ষুধা জরানো পেট নিয়ে বিছানায় চলে গেলাম ৷ আজকে আমার কপালটাই খারাপ ৷ বড় মাছ কিনতে চেয়ে পুঁটি মাছ কেন যে কিনে আনলাম? বউ তিন তিনটা কম্বল মুড়ি দিয়ে নির্বিগ্নে ঘুমিয়ে রইলো ৷ কম্বল সরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম ৷ কিন্তু বউয়ের গায়ের সাথে আমার কাঁধের ছোঁয়া লাগতেই সে হুড়মুড় করে উঠলো ৷ চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,

—-খবরদার! তুমি আমার গা ঘেঁষবেনা ৷ দূরত্ব বজায় রাখো বলছি! প্রতিত্তরে কিছুই বললাম না ৷ একটু সরে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম ৷ বউয়ের রাগ কেমনে ভাঙ্গাবো সেই চিন্তা করতে লাগলাম ৷ চিন্তা করতে করতে গেলাম ঘুমিয়ে!

অকস্মাৎ, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ৷ ঘুম ভেঙ্গে গেলে বউকে স্পর্শ করার চিন্তা মাথায় এলো ৷ হাত দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম সে এখনো জেগে আছে কিনা? কিন্তু তাকে বিছানাতে পেলাম না ৷ মোবাইলের ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত ১১টা বাজে ৷ এতরাতে এরকম হাড়কাঁপা শীতের মধ্যে বউ কই গেল? ভাবলাম ওয়াশরুমে গেছে ৷ কিন্তু পনের মিনিট পার হয়ে গেল তার আসার খবর নাই ৷ সাধের কম্বল ছেড়ে উঠতে মন চাচ্ছিল না ৷ কিন্তু বউকে তো খুঁজতে হবে ৷ রাগ করে আবার বাড়ি চলে গেল কি না! রুম থেকে বের হতেই নাকে তরকারির ঝাঝালো গন্ধ আসলো ৷ বুঝতে বাকি রইলোনা যে বউ রান্না করছে ৷ কিচেনে গিয়ে দেখি বউ রান্না করছে ৷ তরকারি রান্না প্রায় শেষের দিকে ৷ ভাতটাও রেঁধেছে ৷ এমন দৃশ্য দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠলো ৷ প্রশান্তিময় এক অপূর্ব ভাললাগার ছোঁয়া হ্নদয়ে দোলা দিচ্ছিল ৷ হঠাৎ করে বউ এরকম বদলে গেল? বাহ! কত লক্ষ্মী বউ আমার ৷ খুশির আতিসাহ্যে আদুরে গলায় বউকে বললাম,

—-জান, সরি পুঁটিমাছ কিনে আনার জন্য ৷ এই যে প্রমিজ করলাম আর কখনো পুঁটি মাছ কিনে আনবোনা ৷ এখন তাড়াতাড়ি খেতে দাও ৷ ক্ষুধায় যেন মরে যাচ্ছি! বউ মুখটা পোড়া ভাতের মত করে চোখ দুটো মরা গরুর মত গোলগোল বানিয়ে বিদ্রুপের স্বরে বলল,

—শখ কত! আমি নাকি ওনাকে দিবো খেতে! শখ দেখে বাঁচিনা ৷ কষ্ট করে রান্না করছি আমার নিজের জন্য ৷ ক্ষুধার জ্বালা সহ্য হয়না তাই শীতকে উপেক্ষা করে রান্না করতে হলো ৷ ১২ মিনিট ধরে প্রায় পঁচে যাওয়া মাছগুলো কেটেছি ৷ এসব আপনার জন্য না!

বউয়ের কথা শুনে ধাক্কা খেলাম ৷ বুকে হাতুড়ির পিটুনিতে আঘাতপ্রাপ্ত হলাম ৷ মুহূর্তে মুখ থেকে তৃপ্তির হাসি হারিয়ে গেল ৷ মুখটা এতটুকু হয়ে গেল ৷ হতাশাগ্রস্ত চেহারা নিয়ে কিচেন রুম থেকে বের হয়ে এলাম ৷ বউকে মনে মনে বিশুদ্ধ ব্যাকরণের গালিগালাজ করতে করতে কম্বলের নিচের ঢুকে উষ্মতা নিয়ে শুয়ে রইলাম ৷ কিছুক্ষণ পর বউ আমাকে ধাক্কাতে লাগলো কেন যেন! তার মতিগতি বুঝতে পারছিলাম না ৷ ঈষৎ রাগান্বিত স্বরে বউকে বললাম,

—-কি হয়েছে ধাক্কাধাক্কি করছো কেন? বউ মোলায়েম কন্ঠে একদম হ্নদয়ের ভেতর থেকে কন্ঠস্বর বের করে এনে বলল,
—-ওঠো, তোমার জন্য খাবার এনেছি ৷ আসো একসাথে খাই!

তব্দা খেয়ে গেলাম বউয়ের কথা শুনে ৷ কম্বল থেকে মাথা বের করে হতভম্ব হয়ে বউয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ বউ কি আমার সাথে মশকরা করছে ফের? তার কথা বলার ধরণও দেখি পাল্টে গেছে ৷ তাকে কিছু না বলে শুধু তাকিয়েই রইলাম ৷ সে মিষ্টি হাসি দিয়ে কিচেন রুমে চলে গেল ৷ কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে এক হাতে ভাতের প্লেট আরেক হাতে তরকারির বাটি আনলো ৷ কম্বল সরিয়ে বসে আছি আমি ৷ বউ বিছানার উপর খাবার ও তরকারি রাখলো ৷ অতঃপর সে ভাতের সাথে তরকারি মাখিয়ে এক লোকমা ভাত আমার মুখের দিকে ধরলো ৷ হা করতে বললো আমাকে ৷ আমি বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে হা করে রইলাম ৷ বউ মুখের ভেতর খাবার প্রবেশ করিয়ে দিলো ৷ খেয়ে নিলাম ৷ আনন্দে চোখে পানি চলে এলো ৷ স্বপ্নের মত লাগছিল ৷ আমার বউ তুলে খাওয়াচ্ছে এটা তো বিশ্বাসই করতে পারছিনা ৷ আমি চোখের জল মুছতেছি ৷ বউ নিজেও খেতে লাগলো ৷ অামার চোখে পানি দেখে সে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,

—-আরে বোকা, কাঁদছো কিসের জন্য? ঈষৎ কান্নামাখা স্বরে বললাম,

—আবেগে আবেগে ৷ আবেগে কাঁদতেছি!
—-মোশারফ করিম হবার চেষ্টা করছো? তারমানে নাটক করছো? বুঝতে পারছি ৷ যাও তোমার খাবার তুমি নিজে কষ্ট করে খাও, আমি গেলাম ৷ কথাটা বলেই বউ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ কিছু মুহূর্ত পর হাতে এক প্লেট ভাত আনলো ৷ সেও আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে লাগলো ৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পড়লাম ৷ এবার আমি আগের চেয়ে দুরত্ব বজায় রাখলাম ৷ আচমকা বউ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আদরমাখা কন্ঠে বলল,

—-এই, আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরো না ৷ আমার খুব শীত লাগছে! প্লিজ, ধরো! বউয়ের এই আবদার শুনে বুকটা চিনচিন করতে লাগলো ৷ হঠাৎ, এত ভালবাসা দেখাচ্ছে কেন সে? বেশিকিছু না ভেবে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম ৷ বউও আমাকে আরো আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে নিলো ৷ যেন আমি তার বুকের ভেতর বরফ গলে পানি হয়ে স্থির হয়ে অবস্থান করছি ৷ এরপর বউ জগতের সমস্ত মায়া তার কন্ঠস্বরে মিশিয়ে দরদমাখা কন্ঠে বলল,

—-প্লিজ, কাল আমাকে ১ ভরি স্বর্ণের গহনা কিনে দিবা জান?

এবার বুঝতে পারলাম সে কেন এমন আদুরে গলায় কথা বলছে আর ভালবাসা দেখাচ্ছিল ৷ আসল রহস্য তো গহনাতে ৷ এরপরও বউকে বললাম পেয়ে যাবে গহণা! সন্ধ্যার আগে স্বর্ণের দোকানে গিয়ে পছন্দমত গহণা কিনে বাড়ির দিকে ফিরছিলাম ৷ তখন বউকে ফোন দিয়ে বললাম বাড়ি ফিরছি গহণা নিয়ে ৷৷ এতে সে আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলো! বাড়ি পৌঁছে দেখি আমার জন্য বিরিয়ানি রান্না করেছে ৷ বউয়ের এত আয়োজনের কারণ আমি জানি ৷ তাকে গহনার ব্যাগ হাতে দিলাম ৷ বউ একনজর দেখার পর বলল, “রোজার ঈদ আসলে তবেই এগুলো পড়বো আপাতত এগুলো তুলে রাখলাম ৷”

আমি ভাল করে জানি সে এখনোই গহনা পড়বেনা ৷ সাজিয়ে রাখা তার স্বভাব ৷ ১ মাস আগে তাকে দুটা শাড়ি কিনে দিয়েছি এবং দুটাই আলমারিতে তুলে রেখেছে ৷ একারণে বুদ্ধি খাটিয়ে ১ ভরি স্বর্ণের পরিমাপের ইমিটেশনের গহনা কিনে এনেছি ৷ তবে দেখতে স্বর্ণের মতই ৷ বউয়ের মন জয় করতে স্বর্ণের দরকার কিন্তু ১ভরি স্বর্ণের গহনা কেনার মত টাকা আমার নিকট নাই ৷ বউ তো জানে আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করি ৷ কিন্তু সত্যটা হলো আমি ছোটখাটো কোম্পানির চাকুরিজীবি মাত্র ৷ যাইহোক, গহনা কিনে দেবার পর বউয়ের ব্যবহার পাল্টে গেল ৷ সে উত্তেজিত হয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিলো ৷ তার কন্ঠস্বর দিয়ে এখন মধুর রস ঝরতে থাকে ৷ সুমিষ্ট মোলায়েম কন্ঠে প্রতিনিয়ত কথা বলে যাচ্ছিল সে ৷

রাত করে পুঁটি মাছ কিনে আনলেও ক্ষেপে যাচ্ছে না ৷ তবে ভাল করে জানি তার এমন আচরণ দীর্ঘস্থায়ী নয় ৷ মাসখানেক পর সে আবারো বদলে যাবে ৷ ২ মাস আগেও সে বাঘিনীর রুপ নিয়ে ধারালো চাকুর মত তীর্যক কন্ঠে কথা বলতো ৷ কিন্তু যখন ৫ হাজার টাকা দামের দুটা শাড়ি কিনে দিতে বললো তখন অনলাইন থেকে দুটা শাড়ির পিকচার দেখিয়ে তাকে বলেছিলাম এই দুটা শাড়ির প্রতি পিসের দাম ৫ হাজার টাকা ৷ সে শাড়ি দেখেই বিশ্বাস করেছিল ঐরকম দামই হবে ৷ অবশেষে শাড়ি দুটা অর্ডার দিয়েছিলাম ৷ শাড়ি পেয়ে বউ বদলে গিয়েছিল ৷ আমার সাথে মধুর আচরণ শুরু করে দিয়েছিল ৷ মাত্র ১৫০০ টাকা দামের শাড়ি কিনে দিয়ে তার মন জয় করেছিলাম ৷ কিন্তু সে দেড়মাস পর আবারো বদলে গেলো ৷ কিন্তু আবারো তার আবদার পূরণ করলে সে ফের আমার অনুকূলে চলে আসলো ৷ জানিনা সে কতদিন আমার অনুগত থাকবে!

বউয়ের মন কেমনে জয় করা যায় এই ব্যাপারে আমার বন্ধুকে টিপস দিচ্ছিলাম ৷ রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে ফোনে বন্ধুকে কথাগুলো বলছিলাম ৷ হঠাৎ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার বউ দাঁড়িয়ে আছে ৷ তাকে দেখে আমার অন্তাত্মা কেঁপে উঠলো ৷ মনে হলো শরীরের রক্ত বউয়ের ভয়ে পানি হয়ে গেছে ৷ আঁতকে ওঠা ভাব নিয়ে বউয়ের মুখ বরাবর তাকিয়ে রইলাম ৷ বউ ক্ষ্যাপাটে অভিব্যক্তি নিয়ে গোলগোল চোখে তাকিয়ে দেখছে ৷ নিশ্চয় সে তাকে বোকা বানানোর কথাগুলো শুনে ফেলেছে ৷ সে আমাকে কিমা বানিয়ে মশলা ছাড়াই গিলে খাবে! কিন্তু না, সে আমাকে অবাক করে দিয়ে নরম গলায় বলল,

— খেতে আসো, খাবার রেডি! খাবার টেবিলে বসে আছি ৷ বউ আমার প্লেটে ভাত ও গরুর গোশতের টুকরো তুলে দিলো ৷ খাচ্ছিলাম ৷ বউও খাচ্ছিল ৷ হঠাৎ সে তীক্ষ্ণকন্ঠে বলল,

—-কাল যে করে হোক আমাকে একটা ডায়মন্ডের নেকলেস কিনে দিতে হবে ৷ যদি না দাও তাহলে মনে করবো আমাকে ভালবাসো না! সহজকন্ঠে বললাম,

—-সমস্যা নাই, কালই কিনে দিবো ৷
—-আমি নিজে এবার মার্কেটে গিয়ে পছন্দমত কিনবো ৷

এরপূর্বে যা কিছু কিনে দিয়েছো সেসব তোমার পছন্দমত ৷ এবার আমার পছন্দমত নেকলেসটা কিনবো ৷ মিনিমাম ১ লক্ষ টাকা লাগবে ৷ তুমি দেড়লাখ নিয়ে যাবে ৷ যদি ১লক্ষ টাকায় না হয় তাহলে ঝামেলায় পড়তে হবে! এবার পড়ে গেলাম জটিল সমস্যায় ৷ আমার সাথে বউও নেকলেস কিনতে যাবে কথাটি শুনে গলা যেন শুকে গেল ৷ একগ্লাস পানি খেয়ে থতমত খেয়ে বললাম,

—-তুমি যাবে কেন? আমি গেলেই তো যথেষ্ঠ ৷
—-আমাকে যেতেই হবে ৷ এত দামী জিনিস, অথচ আমি যাবোনা কেমন দেখায়না? আর কিছু বলার সাহস পেলাম না ৷ চুপ করে খাবার খেয়ে নিলাম ৷ দুশ্চিন্তায় মাথা ঘুরছিল ৷ গেলাম বিছানাতে ৷ বউও এলো ৷ সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো ৷ অথচ আমার গা জ্বলছিল ৷ সারারাত নির্ঘম কাটালাম দুশ্চিন্তায়!

শুক্রবার হওয়ায় সকাল সকাল বউকে নিয়ে চললাম মার্কেটে ৷ অথচ আমার মানিব্যাগে টাকা আছে মাত্র ৪ হাজার ৷ আর পকেটে আছে ৬ হাজার ৷ এই মোট ১০ হাজার ৷ এই টাকা দিয়ে কি ডায়মন্ডের নেকলেস হবে? গলা ছেড়ে হো হো করে কাঁদতে মন চাচ্ছিল ৷ কপালে এমন একটা বউ জুটলো যার আবদার না মিটালে ভালবাসা মিলেনা ৷ অবশেষে, নেকলেসের দোকানে গেলাম ৷ দোকানদারকে বউই বললো নেকলেস বের করতে ৷ আমার যেন আত্মা বের হয়ে যাচ্ছিল ৷ কপাল ঘামছিল ৷ শীতের মধ্যে কপাল ঘামা যেনতেন ব্যাপার না, কতটা দুঃচিন্তা হচ্ছিল সেটা আমিই জানি! আমার মুখটা রক্তবর্ণ হয়ে গেছে ৷ বউ ডায়মন্ডের নেকলেস নেড়েচেড়ে দেখছিল ৷ ১৫ মিনিট ধরে নেকলেস দেখার পর বউ দোকানদারকে মিষ্টি হেসে বলল,

—-সরি, আমি যে সাইজের নেকলেস চাচ্ছিলাম সেরকম নেকলেস পেলাম না এখানে!

কথাটা বলেই বউ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল ৷ আমার আত্মায় প্রাণ ফিরে এলো ৷ এখন বউ যদি বলে সে আর নেকলেস কিনবেনা তবে কতই না ভাল হতো ৷ কিন্তু না, বউ আরেকটা দোকানের ভেতর ঢুকলো ৷ এবার আমি আবারো আধমরা হয়ে মৃর্গী রোগির মত কাঁপতে লাগলাম ৷ বউ আমার দিকে তাকিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে এলো ৷ আমার হাতটা খপ করে ধরে মার্কেটের প্লাজা থেকে বের হয়ে এলো ৷ ফাঁকা একটা জায়গায় নিয়ে গিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল,

—তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার চালাকি ধরতে পারিনি? আমাকে কি এতটাই বোকা মেয়ে মনে হয়? আরে তুমি যে স্বল্প টাকা স্যালারির চাকরি করো সেটা ভাল করে জানি ৷ তুমি আমাকে দুটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলে, বলেছিলে ৫ হাজার টাকা দাম, মোট দুটার দাম ১০ হাজার টাকা ৷ অথচ দুটার মোট দাম ছিল ৩ হাজার টাকা ৷ আমি নিজে অনলাইনে দাম দেখেছিলাম ৷ জানো এজন্য কষ্ট লাগেনি ৷

বরং খুশি হয়েছিলাম ৷ আমি তো দেখতে চেয়েছিলাম তুমি আমার আবদার মেনে নাও কিনা ৷ দামটা ঐ পরিমাণ বলেছিলাম একারণেই যে তুমি নিজেকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির অফিসার ভাবো ৷ তো ঐ দামের শাড়ি কেনা তো কোনো ব্যাপারই না ৷ ভাল করে জানতাম তুমি কি অ্যামাউন্টে শাড়ি কিনে দিতে পারবে ৷ কিনে দিয়েছিলে আর এতেই আমি খুশি হয়েছিলাম ৷ অনেক খুশি ৷ এরপর বলেছিলাম স্বর্ণের গহনা কিনে দিতে অথচ তুমি কিনে দিয়েছিলে ইমিটিশনের ৷ এতেও কষ্ট পাইনি ৷ কষ্ট পেয়েছিলাম তখন যখন তুমি এসব বিষয় নিয়ে তোমার বন্ধুদের নিকট শেয়ার করেছিলে ৷ সত্যি বলছি অনেক কষ্ট দিয়েছো তুমি ৷ রাফাত আমাদের সংসারের এই বিষয়গুলো কেন তুমি বাইরের লোকদের বলে বেড়াবে? এসবের কোনো মানে হয়? তুমি তোমার স্ত্রীকে অপমানিত করে কি মজা পেয়েছো?

আজকে তোমাকে নিয়ে নেকলেস কিনতে মার্কেটে আসিনি এসেছি একটু লজ্জা দিতে ৷ তুমি তোমার বউকে লজ্জা দাও বন্ধুদের নিকট পারসোনাল বিষয় শেয়ার করে ৷ আসল লজ্জা কাকে বলে একটু অনুভব করো এখন ৷ আশা করি এমনটা কখনো করবেনা ৷ স্ত্রীকে ঠকিয়ে স্বামী কিংবা স্বামীকে ঠকিয়ে স্ত্রী কখনো বড় হতে পারেনা ৷ তুমি পারোনি আমাকে ঠকিয়ে বড় হতে ৷ আর আমি তোমাকে যে লজ্জাটা দিলাম এজন্য আমি মজা পাইনি কিংবা বড় হইনি বরং আমি কষ্ট পেয়েছি!

প্লিজ, আমাদের পারসোনাল বিষয় অন্য কারো নিকট শেয়ার করোনা ৷ আর যদি কিছু কিনে দেবার সামর্থ না থাকে তবে সহজভাবে বলে দিও, আমি তো তোমার স্ত্রী হই; পরমানুষ তো নই ৷ মাঝেমধ্যে তোমার সাথে রেগে কথা বলি এটা জানার জন্য যে তুমি আমাকে কতটা গুরুত্ব দাও ৷ সত্যি বলছি প্রতিবারই তুমি আমাকে মুগ্ধ করেছো ৷ আমি জেনেছি তুমি আমাকে অনেক বেশি গুরুত্ব দাও ৷ তবে কিছু কিছু কাজ বোকার মত করো ৷ যদি বোকামী কাজগুলো বাদ দাও তাহলে অনেক খুশি হবো, বুঝলে? আবেগপ্রবণ হয়ে গেছি আমি তবে অপরাধবোধ কাজ করছে ৷ ছলছল চোখ নিয়ে বউকে জড়িয়ে ধরলাম ৷ কথা বলার মত শক্তি হারিয়ে গেছে ৷ বউ আমাকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করতে লাগলো এবং তোরজোর কন্ঠে বলল,

—-আরে কি করছো? লোকে দেখবে তো! নরম কোমল মোলায়েম কন্ঠে জবাব দিলাম,
—-দেখুক, তাতে কি! আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি, মাইনসের বউকে না! আমার পিঠে বউয়ের নরম হাতের মৃদ্যু থাবর অনুভব করলাম ৷ মনে হলো পিঠে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত