সেলিব্রিটি প্রাক্তন

সেলিব্রিটি প্রাক্তন

ব্রেকাপ হওয়ার একমাস পর আজ আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড ম্যাসেজ দিলো, ” মিস ইউ সজু।” আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। রিপ্লাই দিলাম, “কিরে! তুই ছাড়া পাইলি কীভাবে? ” প্রেমিকা থুক্কু প্রাক্তন আমার কিছু না বুঝতে পেরে বলল, ” মানে? ” আমি বললাম, ” এই রমজান মাসে তো সব শয়তান বন্দী হয়ে আছে, তা তুই ছাড়া পাইলি কীভাবে? ” এক্স গার্লফ্রেন্ড কয়েকটা রাগের ইমুজি দিলো৷ তারপর বলল, “সত্যি, আই মিস ইউ৷ ” আগ্রহ জন্মালো, আমায় মিস করে কেন? তাই রিপ্লাই দিলাম, “ইহা কি’বা করে সম্ভব? ” “জানো? তোমার প্রতিরাতে সেহেরি খাওয়ার জন্য কল দেয়াটা খুব মিস করি। ”

সাথেসাথে মনে পড়ে গেল সেই একবছর আগের কথা। এই শালি থুক্কু প্রাক্তনকে ডেকে দেয়ার জন্য আমি রাতে ঘুমাতাম না। সবসময় রাত তিনটা বাজতেই আমাকে কল দিতে হত। রাতে ঘুমালে তো কোনোরকমে সাড়ে তিনটায় উঠে আমি সেহেরি খেতাম। আর প্রাক্তনে একগাদা গালাগাল শুনতে হত আমায়। তার জন্য আমাকে রাত জাগতে হত। এই ভুল আর করা যাবেনা৷ চোখের নিচে কালি জমাতে চাইনা আর৷ বললাম, ” আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, আমার ঘুম নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছি। ” তারপর সে কান্নার ইমুজি দিয়ে বলল, ” আমি ব্যাক করতে চাই আবার। ” মাথায় বাজতে লাগল গত রমজানের প্রতিরাতে তার ঘ্যানঘ্যান’র বিরক্তিকর আওয়াজ৷ ম্যাসেজ দিলাম, “শালি শাকচুন্নি, খাচ্চুন্নি, ছ্যাঁচড়া! তোর জন্য আমার নাদুসনুদুস চেহারা ঘোলাটে হয়ে গেছে। তোর জন্য আব্বার পকেট থেকে টাকা হাতাতে গিয়ে আম্মার ঝাড়ুর পিটানি খাইছিলাম। তোরে আমি টুট টুট টুট…। ” ব্লক দিয়ে দিলাম। তারপর তারই বান্ধবী ইতুর সাথে চ্যাট করতে লাগলাম।

আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড এর নাম হিয়া৷ সে একজন ফেসবুক সেলিব্রিটি৷ তার হাজার হাজার ফ্যান দেখে খুব হিংসে হত আমার৷ ভাবলাম আমাকে সেলিব্রিটি হতে হলে তার সাথে যে করেই হোক প্রেম করতে হবে। সেদিন থেকে শুরু করলাম মেয়ে পটানোর বই পড়া। তার বিড়ালের মত খাচ্চুন্নি মার্কা চোখ গুলোকে হরিণীর চোখ বলে প্রশংসা করে পটানোর প্রথম ধাপে পা রেখেছিলাম৷ নুডুলসের মতো পেঁচানো চুলগুলো দেখে বলেছিলাম, “আমার নুডুলস খুব পছন্দ৷ তবে তোমার চুলগুলো এত সিল্কি কেন হুম?” সে রিপ্লাই হিসেবে লজ্জার ইমুজি দিয়েছিল। যেহেতু মেয়ে পটানোর বই পড়ে তাকে পটাচ্ছিলাম সেহেতু বেশিদিন লাগেনি পটাতে।

তারপর থেকে শুরু হলো তার ফেসবুকে আমাকে নিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া৷ ” মি উইথ জান্টুস, মি উইথ মন্টুস অ্যাট আজাইরা পাড়া। ” প্রতিটা পোষ্টেই আমাকে ট্যাগ করছিল বিধায় তার লিষ্টের সকল সুন্দরী বান্ধবী আমাকে রিকুয়েষ্ট পাঠাতে লাগল। আমিও ভাব নিলাম, এক্সেপ্ট করলাম না কাউকে৷ তারপর শুরু হলো ম্যাসেজ রিকুয়েষ্ট দেয়া, ধীরেধীরে সবাইকে এক্সেপ্ট করলাম৷ তারপর মেয়েরা আমাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ ও দিতে লাগল। এখন আমিও সেলিব্রিটি। কিন্তু হিয়ার জ্বালা আর সহ্য করতে পারছিনা। দিনরাত শুধু ফোনে বকবক করতে থাকে। তাই একদিন রাগের চোটে তাকে যা তা গালাগাল করে ব্রেকাপ করে দেই।

এখন হাজারো প্রেমিকা নিয়ে বেশ সুখেই আছি৷ সেহেরি খাওয়ার জন্য ডেকে দেয় ইতু, তারপর গান গাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নিশি, সকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয় তিরা। তারপর সারাদিন রুটিন করে তামান্না, আফসানা, আদ্রিজা, ফারহানা, মিনহা সহ আমার সকল প্রেমিকা আমাকে কল দিয়ে কাজের কথা মনে করিয়ে দেয়। হঠাত এক ম্যাসেজ দেখে অবাক হলাম, “কিরে! সব শয়তান বন্দী, আর তুই এখানে কী করিস? ” ম্যাসেজটা আমার বন্ধু শাওন দিলো৷ বললাম, ” তোর জন্য একটা মেয়ে পটাই। ”

বর্তমানে আমার সকল প্রেমিকাকে নিয়ে বেশ সুখেই আছি। আর আমি সেলিব্রিটি বিধায় কেউ আমার সাথে নিজ থেকে ব্রেকাপ করতে চাচ্ছে না। তবে একটা সত্যি কথা আমি না মেনে পারিনা, আজ আমি সেলিব্রিটি হয়েছি আমারই প্রাক্তন হিয়ার মাধ্যমে৷ আর আমার সকল বর্তমান গার্লগার্লফ্রেন্ড ই হিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা সব সুন্দরী ললনারা। সো, আই’ম ইন লাভ উইথ ইতু, নিশি, তিরা, তামান্না, আফসানা, আদ্রিজা, ফারহানা, মিনহা ইত্যাদি।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত