দীপান্বিতা

দীপান্বিতা

– আর কত কেজি ময়দা মাখলে তোর সাজগোজ করা শেষ হবে ? ( আমি )
— হিংসা হচ্ছে তোর ? ( শারমিন )
– তোর চেহারা শ্যামলা তাতেই তোর বয়ফ্রেন্ড সংখ্যা হচ্ছে চারজন । যদি সুন্দর হতো তবে কি হতো ?
— ছেলেরা প্রেম করতে চায়, আমি কি করবো ?

— না,আমার মনে হয় তোকে দেখে মেলার সব ছেলে আজকে বাসায় চলে আসবে ।

— দেখ পরি তুই নিজে তো ঐশরীয়া রায়ের মত সুন্দরী তাই সাজগোজ দরকার নেই । রাস্তায় গেলে ছেলেরা তোর দিকে তাকিয়ে গাড়ির নিচে পরে যায় কিন্তু আমার কথা আলাদা । আমার দিকে তো কেউ তাকায় না !

— কেউ তাকায় না তাই তো তোর বয়ফ্রেন্ড সংখ্যা বাড়তেই থাকে । আর যদি তাকাতে তবে আর কি বলবো ?

— আমি তো রিক্সা ওয়ালা ভ্যান ওয়ালা সবাই কে এক্সেপ্ট করি । আর তুই তো কাউকে পাত্তা দিসনা সেটা আমার দোষ নাকি ?

— যার সাথে প্রতিটি মুহূর্ত নিয়ে কথা বলবো তাকে যদি পছন্দ না হয় । তবে কি করে এত কিছু তার সাথে শেয়ার করবো বলতে পারিস ?

— ধুর তোর কথা তোর কাছে রাখ ।

— তুই তাড়াতাড়ি কর নাহলে ওরা সবাই অপেক্ষা করে আছে ।

— আচ্ছা ঠিক আছে চোখের কাজল টা দিয়ে দে তো পরি ।

— কাছে আয় তাহলে ।

আমি * শ্রীমতী দীপান্বিতা বিশ্বাস পরি * সবাই ডাক নাম পরি বলে ডাকে । আমি সিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ কম্পিউটার ডিপার্টমেন্টে ডিপ্লোমা পড়তেছি । গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা মোড়েলগঞ্জ। এখানে একটা মেসের মধ্যে চারটি রুমের মধ্যে আমরা ১০ জন থাকি । যার সাথে কথা হচ্ছিল সে আমার রুমমেট শারমিন আক্তার । ও যদি ৬০ বছর বেচে থাকে তবে হিসাব অনুযায়ী ও সম্পুর্ণ জীবন থেকে ১২ টা বছর শুধু সাজগোজ করতে ব্যায় করবে । কারণ ও সাজগোজ করতে গিয়ে প্রচুর সময় ব্যায় করে । সারারাত বয়ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলবে , আর রাত দুটো তিনটা বাজে ঘুমাবে । কলেজের ক্লাস বিকেলে তাই দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে ।

রাতে ওর জন্য আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি না । খুব চালাক আছে সে । যেমন :- ৪ টা বয়ফ্রেন্ড এর জন্য সে ৪ টা বাটন মোবাইল ব্যবহার করে । এর কারণ হচ্ছে কেউ যেন কখনো তার মোবাইলে কল দিয়ে ওয়েটিং না পায় । এক মোবাইলের সীমের নাম্বার অন্য মোবাইলের বয়ফ্রেন্ড জানে না । খুলনা শহরে আসার পরে অনেক গুলো বইমেলা পার হয়ে গেল। প্রায় প্রতিবছর দু তিনবার করে গেছি আমি । কিন্তু কখনো প্রথম দিন যাওয়া হয়নি । আজ ১লা ফেব্রুয়ারী, বইমেলার আরম্ভ হবে আজ । তাই এবছর সিদ্ধান্ত ছিল যে প্রথম দিন আমরা কিছু বন্ধবী মিলে মেলায় যাব । যেহেতু আমি বাদে সবাই মুসলমান তাই সবাই এখন মাগরিবের নামাজ পড়ে তৈরি হচ্ছে । আর মেলার আয়োজন হচ্ছে খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার বয়রা । আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে পায়ে হেঁটে গেলে সময় লাগবে ২০ মিনিট ।

মেয়ে মানুষ হিসেবে এতদূর হেঁটে যেতে পারবো না । তাই বাসার সামনে হতে একটা ইজি বাইক রিজার্ভ করে নিলাম। ফেব্রুয়ারী মাসে শীত তেমন থাকে না, কিন্তু গাড়ির ভিতর বসে আছি তাই তিরতির করে বাতাস বইছে আরো বেশি শীত লাগে । আমার গায়ের উপর একটা চাদর জড়ানো আছে তবুও শীত শরীরে ঢোকার চেষ্টা করে যাচ্ছে । খুলনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম এর সামনে দিয়ে আমরা বৈকালি বাজার হয়ে বয়রা বই মেলায় গিয়ে নামলাম । প্রথম দিন তাই হয়তো তেমনটা এখনো ভালো করে জমে ওঠে নাই । অনেক বুকিং করা দোকানদার এখনো সম্পুর্ণ ভাবে বই নিয়ে বসতে পারে নাই । তবে দর্শনার্থী মানুষ আছে মোটামুটি ।

— কিরে তোরা কি কেউ বই কিনবি ? (আমি)

— না বাবা , বই কিনে কি হবে ? ক্লাসের বই পড়ার সময় পাই না আবার গল্প উপন্যাস । ( নিধি )

— এটা কেমন কথা ? (আমি)

— যা সত্যি তাই । আমি তোর মত অত ধৈর্য্য ধরে উপন্যাস পড়তে পারি না । (নিধি)

— আচ্ছা তাহলে আগে চল কিছু খাওয়া দাওয়া করি, ফুসকা বা চটপটি । (শারমিন)

— চল তাহলে । (নিধি)

যে সব দৃশ আমরা খুব মন লাগিয়ে দেখতে চাই সে সব দৃশ্য কখনো ভালভাবে দেখতে পারি না সেই সব দৃশ্য অতি দ্রুত চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় । বেঁচে থাকার মত আনন্দ আর কিছুই নেই । কত অপূর্ব দৃশ্য চারিদিকে । মন দিয়ে আমরা কখনো তা দেখি না । যখন সময় শেষ হয়ে যায়, তখনি শুধু হাহাকারে হৃদয় পূর্ণ হয় ।” যখন একা থাকার অভ্যাস হয়ে যায় ঠিক তখনি সৃষ্টিকর্তা কিছু মানুষের সন্ধান দেন । যখন তাদেরকে নিয়ে ভালো থাকার অভ্যাস হয়ে যায়, ঠিক তখনি আবার একা হয়ে যেতে হয় ।- কিছুটা সামনে এগোলাম তারপরেই একটা ১১/১২ বছরের ছেলে আমার সামনে এসে একটা কাগজ ও একটা কলম দিয়ে বললো ;-

— আপা এই চিঠি টা আপনার জন্য । (ছেলে)

— আমি অবাক হলাম কারণ আমাকে এখানে চিঠি দেবার কে আছে ? বললাম :- কার চিঠি ?

— একটা ভাইয়া দিয়েছে ।

— তোমার সেই ভাইয়া কোথায় ?

— ওইদিকে আড়ালে আছে ।

— সে সামনে আসে না কেন ?

— আপনি নাকি খুব রাগী তাই !

— হাহাহা তো রাগী তো কি হইছে ?

— ভাইয়া বলছে , সে যদি চিঠি নিয়ে আসে তাহলে আপনি নাকি তাকে মারবেন ।

— আর কি বলছে ?

— বলছে চিঠিতে যা যা লেখা আছে সেটা পালন করলে সে খুব খুশি হবে । আর এই কলম দিয়ে চিঠির অপর পাতায় কিছু একটা লিখে দিতে হবে ।

— তোমার ভাইয়া কতবড় ?

— ইয়া… বড় একদম নাটকের নায়ক অপূর্বর মত ।

— তুমি অপূর্বকে চেনো ?

— কি কন আপা ? অবশ্যই চিনি আমি ।

— তোমার ভাইয়া কি করেন ?

— এখন দাঁড়িয়ে আছে ।

— বলছি পড়াশোনা করে নাকি চাকরি করে নাকি অপূর্বর মত নাটক করে ?

— তা তো জানিনা আমি ।

— আচ্ছা ঠিক আছে ।

অনেকটা কৌতূহল বোধ থেকে চিঠি টা খুলে পড়ার চেষ্টা করলাম । রঙিন খামের লেখা নিপুণ কৌশলে প্রতিটি শব্দ সাজানো হয়েছে ।

আমি পড়া শুরু করলাম :- হাসনাহেনার শুভেচ্ছা রইল, আপনাকে এত সুন্দর করে পৃথিবীতে জন্ম নিতে অনুমতি দিয়েছে কে ? এ দুনিয়ায় আসছেন ভালো কথা বাংলাদেশের মধ্যে আসলেন কেন ? বাংলাদেশের মধ্যে আসলেন ভালো কথা কিন্তু খুলনা শহরে কেন আসছেন ? খুলনা তে আসছেন সেটাও সমস্যা নেই কিন্তু এই বই মেলায় কেন ? এসেই যখন পরেছেন তাহলে একটু ভালো করে থাকা যায় না ? আপনি সুন্দর ঠিক আছে কিন্তু চুল গুলো বেধে রাখছেন কেন ? এখনই চুল গুলো ছেড়ে দিবেন আর অর্ধেক চুল বাম দিক হতে সামনে এন রাখবেন । ছেলেটার হাতে একটা ছোট গোলাপ ফুলের বাড়ন্ত কলি পাঠালাম । ওটাকে বাম কানের উপর গুঁজে দিবেন তাহলে অন্য কারো কথা জানিনা । তবে আমার খুব ভালো লাগবে ।

ইতি,
কাব্য সজীব ।

চিঠি শেষ করে আমি হা করে তাকিয়ে আছি । পাশে বান্ধবীরা কেউ কিছু বলছে না । আমি ভাবছি কে এই সজীব ? কিন্তু চিঠির অপর পাতায় কিছু একটা লিখে দিতে হবে তাই কলম হাতে নিয়ে লিখলাম । আমি শুধু লিখলাম :- ( কে আপনি ? ) তারপর ছেলেটার হাতে দিয়ে তাকে বললাম :-

— গোলাপ ফুল কোই ? (আমি)

— সে তার সুয়েটারের আস্তিনা হতে বের করে বললো :- এই-যে নিন ।

— এতক্ষণ দাওনি কেন ?

— ভাই বলেছে আপনি চাইলে তারপর দিতে হবে ।

— তোমার ভাই কোন যায়গা আছে ?

— এখানেই আছে দেখি কোই সে ।

— তাকে বলো আমার সামনে আসতে ।

— আচ্ছা ঠিক আছে ।

হয়তো ছেলেটার যোগাযোগের মাধ্যম টা ভালো লেগেছিল তাই উত্তর দিলাম । * কাব্য সজীব * নাম এর মধ্যেই কেমন একটা ভালো লাগা কাজ করে । যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হঠাৎ করে মানুষের ভালো লাগে । হোক সেটা অদৃশ্য কিংবা অবহেলিত কোন জঞ্জালকণা সুবিশাল হ্রদ পর্যন্ত । আমি মাথার চুলের খোপা সত্যি সত্যি ছেড়ে দিছি আর গোলাপ ফুল গুঁজে দিলাম কাণে । নিজেকে সত্যি সত্যি সুন্দর লাগছে কিনা দেখার জন্য ব্যাগ হতে মোবাইল বের করলাম । এতক্ষণে বান্ধবী নিধি বললো :-

— ছেলেটা কে ? (নিধি)

— জানিনা আমি তবে নাম মনে হয় সজীব ।

— কি লেখা ছিল ?

— যা যা করলাম ।

— মানে ?

— আমি অনেক সুন্দর, চুল গুলো ছেড়ে দিতে হবে, গোলাপ ফুল গুঁজে দিতে হবে ইত্যাদি ।

— সে কে ? যে, তার কথা মানতে হবে ? (শারমিন)

— দেখ শারমিন ! সে যেই হোক কিন্তু অন্যায় তো কিছু বলে নাই । সামান্য করে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য বলছে এটা আমি সমস্যা মনে করি না ।

— আচ্ছা বাবা দেখ তোর যদি এবার একটা উপায় হয়ে যায় !

— ধুর হারামি, তোর মাথায় সবসময় এগুলো চলে ।

— হইছে বাদ দে এবার চল কিছু খাই । (নিধি)

— আচ্ছা ঠিক আছে চল ।

এক কর্নারে গিয়ে একটা চটপটি দোকানে বসলাম আমরা , সাধারণত এসকল ক্যাফে তে দাম একটু বেশি নেয় । চটপটির জন্য অর্ডার করে সবাই বসে আছি এমন সময় আবারও সেই ছেলেটা আসলো ।

— আপা এই যে চিঠি, তাড়াতাড়ি উত্তর দিবেন ।

— তোমার ভাই কোই ? (আমি)

— ভাই আসবে না ।

— আমিও চিঠি নেব না ।

— আপা প্লিজ, ভাই তো একসময় সামনে আসবেই তার আগে এভাবে একটু চিঠি আদান-প্রদান করে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ।

— তাই নাকি ? তো দাও তো তোমার ভাইয়ের চিঠি, পড়ে দেখি আবারও উত্তর দিতে হবে কিনা !

— এই নিন , এবার আমি, নিধি, শারমিন, ফাহমিদা সবাই মিলে চিঠি পড়লাম ।

চিঠি,” এত ছোট করে কেউ চিঠির উত্তর দেয় ? আপনি এত অলস কেন হুম ? তবুও অনেক খুশি হলাম অন্তত জবাব করার জন্য । আরো বেশি খুশী হয়েছি আমার কথাটা রাখার জন্য । সত্যি বলছি যে, এখন এই মেলার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী রূপবতী মেয়েটা হচ্ছে আপনি । এত সুন্দর করে হাসি দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ মেডাম । আমি কাব্য সজীব ”

ইতি,
কাব্য সজীব ।

আমি আবারও অপর পাতায় ছোট করে লিখে দিলাম :- ” আপনি আমার কাছে কি চান ? ”

ইতি
পরি ।

ছেলেটার হাতে দিয়ে তাকে বললাম :-

— খুব তাড়াতাড়ি উত্তর টা নিয়ে আসবে ।

— আচ্ছা আপা ঠিক আছে ।

— কিছু খাবে তুমি ?

— না ।

— কেন কেন ?

— ভাই বলছে মেলা থেকে বের হয়ে আমার ইচ্ছেমত গরুর মাংস দিয়ে খিচুড়ি খাওয়াবেন । তাই পেটে ক্ষুধা রাখতে হবে ।

— হাহাহা তাই না ?

— জ্বি , আচ্ছা আমি যাই ।

— ছেলেটা কে হতে পারে ? (নিধি)

— কি করে বলবো ? (আমি)

— আমার মনে হয় পুরনো কোন ক্রাশ খাওয়া ছেলে তাই সামনে আসছে না । (শারমিন)

— আমার সেটা মনে হচ্ছে না । (নিধি)

— কেন ? (আমি)

— ছেলেটার বুদ্ধিমত্তা চমৎকার । (নিধি)

— হুম মোটামুটি । (আমি)

— মোটামুটি না পুরোটাই । (নিধি)

— নায়ক অপূর্বর মত বলে আবার যেন পরে মিঃ বিন এর মত না হয় । (শারমিন)

— তুই চুপ কর তো । (নিধি)

— আচ্ছা চুপ করলাম । (শারমিন)

— আচ্ছা পরি, যদি ছেলেটা দেখতে শুনতে ভালো হয় আর মোটামুটি ঠিক থাকে । তবে কি তুই তার প্রেমে পড়বি ?

— ধুর গাছে কাঠাল গোঁফে তেল । আগে সম্পুর্ন গল্প টা বুঝতে হবে না ? (আমি)

— তা অবশ্য ঠিক । (নিধি)

— এখনো ছেলেটা আসে না কেন ? (আমি)

— অপেক্ষা করতে কষ্ট হচ্ছে ? (নিধি)

— চুপ কর তো, খালি খোঁচা মারিস । (আমি)

— ওরে বাবা এ দেখি লজ্জা পাচ্ছে । (নিধি)

মনে মনে বলছি, সত্যি সত্যি আমি চিঠির অপেক্ষায় আছি কিন্তু সেটা কি কারনে জানিনা । বারবার ঘড়ি দেখি কিন্তু সময় যাচ্ছে না । হঠাৎ করে বিদ্যুৎ বেগে ছেলেটা এসে হাজির ।

— এত দেরি হল কেন ? (আমি)

— ভাই তো আপনার মত কিপ্টে না । (ছেলে)

— মানে ?

— আপনি তো এক লাইনে শেষ করে দেন কিন্তু ভাই তো বেশি করে লেখে তাই সময় লাগে ।

— ওহহহ, আচ্ছা তোমার নাম কি ছোট ?

— আমার না “সাগর” ।

— বাহহহ খুব সুন্দর নাম ।

— সবাই এই কথা বলে ।

— তাই ?

— হুম । আপা তাড়াতাড়ি জবাব দিতে হবে, ভাইও আপনার মত অপেক্ষা করে আছে ।

— আচ্ছা দাড়াও ।

চিঠি, আপনার কাছে আমার চাওয়া :- মোবাইলে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে শুভ সকাল বলার মত কেউ কি আছে আপনার ? যদি না থাকে তবে সেই দায়িত্বটা চাই । ভবিষ্যতে আপনার সাথে শিশির ভেজা সকালে মেঠো পথে ঘাসের উপর হাঁটতে চাই । সেই পাশের যায়গা টা কি খালি আছে ? বাসের ভিতরে বসে আপনার ঘুমন্ত মাথাটা রাখার জন্য একটা কাঁধ দরকার । সেই যায়গা টা কি এখনো খালি আছে ? তাহলে আমি সেই যায়গা টা চাই । রাতের বিছানায় আপনার পাশে কি এখনো কোল বালিশ এর স্থান ? যদি তাই হয় তবে আমি সেই কোলবালিশ সরিয়ে যায়গা টা দখল করতে চাই । পড়ন্ত বিকেলে ছাদের কিনারে দাড়িয়ে সবচেয়ে সুন্দর একটা ফুল আপনার খোঁপায় পরানোর কেউ কি আছে ? যদি না থাকে তবে আমি সেই দায়িত্ব টা চাই । আপনি কি কারো রান্না ঘরের permanent রাধুনি হয়েছেন ? যদি না হয়ে থাকেন তবে আমার রান্না ঘরের দায়িত্ব টা দিতে চাই ।

 

আপনার ঐ মায়াবী মুখের পানে তাকিয়ে কপালের বাঁকা টিপ টা সোজা করার কেউ যদি না থাকে । তবে আমি সেই বাঁকা টিপ টা সঠিক স্থানে বসানোর দায়িত্ব টা চাই । দেরি করে বাসায় আসলে বকা দেয়ার জন্য আমি আপনাকে চাই । আপনি কি কারো কথা কল্পনা করতে করতে রাতে ঘুমিয়ে পরেন ? নাকি সেটা এখনো হয়নি ? যদি না হয়ে থাকে তবে আমি সেই কল্পনা হতে চাই । রান্না করতে গিয়ে হাতে ছেঁকা লেগে ফোস্কা পরলে আপনাকে মুখে তুলে খাওয়ানোর কেউ আছে ? যদি না থাকে তবে আমি সেই দায়িত্ব টা চাই । সুযোগ পেয়ে বলে দিলাম কারন মনের কথা গোপন রাখতে নেই । আজ না বললে কাল হয়তো উল্লেখ্য যায়গা গুলো ভরাট হয়ে যাবে । তবে যদি খালি থাকে তাহলে সেই সুযোগ টা যেন পাই আমি । কথা দিচ্ছি আপনার চোখের পানি কখনো মাটিতে পরতে দেব না ।

ইতি
কাব্য সজীব ।

সমস্যা শরীরে অদ্ভুত শীতলতা রাঙ্গাইয়া গেল । এমন করে কেউ কাউকে প্রপোজ করে ? মানুষটাকে এখন দেখার জন্য চোখ ছলছল করছে কিন্তু নিজের সেই অনুভূতি বান্ধবীদের সামনে প্রকাশ করা যাবে না । তবে মনের কথা মনে চেপে রেখে চিঠির অপর পাতায় লিখলাম :- কাব্য, উল্লেখিত সকল পোস্ট আজও খালি আছে । সেই বিষয় আপনি নিশ্চিত থাকুন । কিন্তু আপনি আমার কি পূর্ব পরিচিত ? নাহলে হঠাৎ দেখায় নিশ্চয়ই কারো সাথে এই জীবনের শেষ দিনের স্বপ্ন গুলো দেখবেন না তাই না ? ভালবাসা ভাললাগা এক না সেটা সবাই জানে, আর আমি সেই কথাগুলো বিশ্বাস করি । আর আজও সে জন্য ১৮ বছরের জীবনে কারো ছায়া পরে নি । সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আপনি । অতএব আপনি সামনে আসুন ।

ইতি
পরি ।

চিঠি টা ছেলেটার হাতে দিয়ে আবারও বললাম :- ” তাড়াতাড়ি করে উত্তর টা নিয়ে আসবে । আর তাকে বলবে যে আমরা এখনই বাসায় চলে যাব তাই এটাই যেন শেষ চিঠি হয় । ” আমার বান্ধবী শারমিন পাশ থেকে বললো :-

— দেখলি তো পরি ? তিন ঘন্টা বসে মেকাপ করে চেহারা সুন্দর করলাম । আর রোমান্টিক একটা ছেলে তোর জন্য পাগল হয়ে গেছে । (শারমিন)

— আচ্ছা তাহলে এটাকেও তোর গলায় ঝুলিয়ে দেব সমস্যা নেই । (আমি)

— দরকার নেই ভাই , আমি যেগুলো আছে সেগুলো নিয়ে হিমসিম খাচ্ছি । (শারমিন)

— তোর আবার বিরক্ত আছে নাকি ? (নিধি)

— আচ্ছা চুপ কর, চল বের হই চিঠি ওয়ালা এমনিই আমাদের খুঁজে নেবে । (আমি)

— কিন্তু আমি খুব রোমাঞ্চ অনুভব করছি । (নিধি)

— রাত বেশি হলে ঠান্ডা বেশি লাগবে । (আমি)

— আচ্ছা চল তাহলে । (নিধি)

ভালবাসা সপ্নের এক ঠিকানা যার খোজ পাওয়া সহজ । কিন্তু সঠিক মনের মানুষ পাওয়া কঠিন । ভাল তো সবাই বাসতে পারে কিন্তু ভালবাসা কি সবাই বুঝতে পারে ? রেস্তোরাঁর বিল পরিশোধ করে বের হওয়ার সাথে সাথে সাগর নামে ছেলেটি এসে দাড়ালো ।

— আপা এই যে আপনার চিঠি । (সাগর)

— তোমার ভাই কোই ? (আমি)

— চিঠিতে লেখা আছে ।

— সে আসবে না ?

— হ্যা ।

— কখন ?

— জানিনা ।

— তাকে গিয়ে বলো যে আমি কিন্তু সত্যি সত্যি রাগ করেছি এবং আর কোন রিপ্লাই করবো না ।

— আপা ধৈর্য্য ধরেন এত তাড়াতাড়ি কিসের ? কিন্তু একটা সত্যি কথা বলি আপু, আপনার কেমন লাগে জানিনা । তবে আমি খুব খুশি হলাম জানেন ?

— কেন ?

— সিনেমার নায়ক নায়িকার মাঝে সম্পর্ক স্থাপন করে দিচ্ছি । আপু প্লিজ আপনি এত তাড়াতাড়ি দেখা করবেন না ।

— কেন কেন ?

— তাহলে তো আর আমার প্রয়োজন হবে না ।

— আচ্ছা ঠিক আছে একটা কাজ করতে হবে তাহলে ।

— কি কাজ ?

— তোমার ঐ ভাইয়াকে চুপিচুপি দেখাতে হবে ।

— সেটা সম্ভব না ।

— কেন ?

— ভাই কে তো আমিই খুঁজে পাই না ।

— মানে কি ? মিথ্যা বলো কেন ?

— সত্যি বলছি আমি, আপনার কাছ থেকে চিঠি নিয়ে গেলে ভাইকে আমার খোঁজার দরকার নেই সে আমার উপর নজর রাখে ।

— তাই নাকি ?

— হ্যা আপা , এইযে আপনার সামনে দাড়িয়ে আছি এবং কথা বলি । সেটাও ভাই যেকোনো যায়গায় দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছে । আমি জবাব নিয়ে মেলার মধ্যে হাটতে থাকবো আর ভাই ফোস করে আমাকে পিছন থেকে ধরে । খুব চালাক ।

— তোমার ভাই শুধু চালাক না বদের হাড্ডি । দাও তাড়াতাড়ি চিঠি পড়ে দেখি ।

— আচ্ছা নেন ।

পরি, আমি আপনাকে এর আগে কখনো দেখিনি, এটাই প্রথম । পৃথিবীতে কেউ কেউ সারাজীবন একসাথে থেকেও একজন অন্য জনকে চিনতে পারে না । কিন্তু আবার পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুটো মানুষ প্রথম দেখা হয়ে গেলে একে অন্য কে চিনে ফেলে । সেই কেউ একজন টা খুব স্পেশাল একজন মানুষ হয়। যাকে শুধু ভালোবাসাই যায় । চোখ বন্ধ করে যার উপর নির্ভর করা যায় । অথবা কোন ছেলে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে , কিংবা গিটার বাজিয়ে , গান শুনিয়ে কোন মেয়েকে মুগ্ধ করে দিতে পারে । ভালোবাসার জন্য কালের প্রয়োজন নেই, একটি মুহুর্তই যথেষ্ট । স্তব্দ রাতগুলো একসময় হাসিতে পূর্ণ থাকতো, আজ নীরবতায় পূর্ণ থাকে । কারণ সে আজ ভালবাসা ছোয়া পেয়েছে।

ইতি,
কাব্য সজীব ।

মনে মনে বললাম, যাহহহ এমন করে চিঠি শেষ করে যে বারবার উত্তর দিতে মন চায় । কিন্তু এখন কি লেখা যায় সেটাই চিন্তা করছি আমি ।

ঘড়িতে রাত প্রায় ৯ টা বাজে , মেলার আয়োজন প্রায় শেষ । কিন্তু মনের ভিতর একরাশ কৌতূহল যে পাহাড় সমান হয়ে গেছে । সেটা আমি কাকে বোঝাব জানিনা । জীবনের প্রথম প্রেম কি এভাবেই আসে ? কলম হাতে নিয়ে লেখা শুরু করলাম :- কাব্য, এ জীবনে ১৮ টা বসন্ত পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনো কোকিলের ডাক আসেনি । আমার মনে হয় এবার আমি সেই মনের বাগানে মুক্ত কোকিলের ডানা ঝাপটানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি । আপনার কথাটাই সত্যি যে, ভালবাসা সৃষ্টির জন্য অনেক বছর দরকার পরে না । হঠাৎ করে হয়তো একটা মানুষের মন চোখের পলকে চুরি হয়ে যায় ।

আজকে আমি এই মেলার মধ্যে এসে, আমার এত দিনের সাজানো মনটা হারিয়ে ফেলেছি । আপনি যদি সেটা খুঁজে পান তবে আপনার কাছে যত্ন করে রেখে দিবেন । বিনিময়ে আপনার কাব্যিক ভাষার ঐ মনটা আমাকে দিয়ে দিবেন । আমি জানিনা এত অল্প সময়ের মধ্যে না দেখে কেউ কাউকে ভালবাসে কিনা ? যদি ইতিহাসে এমনটা না হয়ে থাকে তবে আমার নাম টা যেন প্রথম লেখা হয় ।

সন্ধ্যা বেলা আসার পূর্বে কল্পনা করতে পারি নাই যে আমি আমার মনটাকে হারিয়ে ফেলবো । সারারাত চোখে ঘুম আসবে কিনা জানিনা আমি । তবে কোন এক অপরিচিত কাব্যের জন্য নির্ঘুম জাগ্রত হয়ে যে ছন্দ মিলাতে হবে । সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছি আমি কিন্তু কিছুই করার নেই ।

যদি আমার রাতের সুন্দর স্বপ্নটাকে রাঙ্গিয়ে দিতে চান তবে আমার ফোন নাম্বার দিয়ে দিলাম । রাত ঠিক ১১ঃ৩০ মিনিটে আমি আপনার মেসেজ এর অপেক্ষায় থাকবো । কল দেয়ার দরকার নেই আমি চাই শুধু ( SMS ) এর মাধ্যমে কথা বলতে চাই । কারণ চিঠির এই সুন্দর মুহূর্ত টা আমি নষ্ট করতে চাই না । বাসায় গিয়ে অপেক্ষায় থাকবো।

শুভ রাত্রি । ( 01 – – – – – – – – -)

ইতি,
পরি ।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত