রাগে গজগজ করতে করতে ফেসবুকে পোষ্ট করলাম “কিছু মানুষের মাথায় এতটাই গোবরে পরিপূর্ণ যে তারা ভাবে তাদের ছাড়া হয়তো কারো জীবন থেমে যাবে” পোষ্টের শেষে কয়েকটা হাসতে হাসতে চোখ থেকে উপচে পড়া পানির ইমোজি দিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর নিউজফিডে খেয়াল করে দেখলাম রাহাতও একটা পোষ্ট করেছে। “কিছু মানুষের মাথায় গোবর থাকলেও কাজ হত, কিছু ফসল উৎপাদন হত কিন্তু তাদের ভাগ্য এতটাই খারাপ যে মাথায় গোবরও থাকেনা, পর্যাপ্ত পরিমাণে ছাই দিয়ে ভরা থাকে” লেখার শেষে অনেক গুলো স্মাইল ইমোজি দেওয়া।
পোস্টটা দেখে আমার রাগ আরও বেড়ে গেল। আরও একটা পোস্ট করলাম “কেউ যদি আপনাকে বাজে মন্তব্য করে এটা নিয়ে উত্তেজিত হবেন না, কারন যে যেরকম সে অন্যকে ভাবেও তেমন।” লেখার সাথে আমিও এবার স্মাইল ইমোজি যোগ করে দিলাম। পোস্টটা দিয়ে কিছুটা শান্তি অনুভব করছি। মনে মনে ভাবছি “বাছা! বুঝবি এবার ঠ্যালা।” কিছুক্ষণ পরে নিউজফিডে আবার ওর একটা পোস্ট চোখে পড়লো “ছাগলে কত কি খায়, পাগলে কত কি কয়, ভদ্র মানুষের তাতে কি এসে যায়। আমাকে নিয়ে পাগল/পাগলিতে কিছু বললে আমারও কিছু আসে যায় না।” পোষ্টের শেষে কতগুলো হাহা ইমোজি দিয়েছে।
নাহ্ এভাবে হজম করা সম্ভব নয়। এর প্রতিত্তোরে একটা পোস্ট না করলেই নয়। “পাগল অন্যসকল লোকজনকে পাগল ভাববে এটাই তো স্বাভাবিক বিষয়। আর এটা সকলেরই জানা। নতুন কোনো বিষয় নয়।” সাথে কিছু খুশি খুশি ইমোজি দিয়ে দিলাম। এবার মাথাটা একটু ঠান্ডা লাগছে। মেসেঞ্জারে ইতিমধ্যে বন্ধু বান্ধবীরা মেসেজ দিয়ে ভরে ফেলেছে। ইনবক্সে রিপ্লাই না পেয়ে কমেন্ট বক্সে সবাই জড়ো হয়েছে। আমি ওসবে পাত্তা না দিয়ে নিউজফিডে গেলাম রাহাতের পোস্ট দেখতে। সে লিখেছে এবার “পাগলের সুখ মনে মনে, সে সুখ নিয়ে মাথা না ঘামানোই বুদ্ধিমানের কাজ” সাথে স্মাইল ইমোজি।
কি সাহস ওর! ও আমাকে পাগল আর নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে। ওর বুদ্ধিজীবী হওয়া আমি ছাড়াচ্ছি। “কিছু কিছু মানুষের মধ্যে বুদ্ধির ‘ব’ ও নাই, তারা আবার নিজেকে বুদ্ধিমান ভাবে। হাহাহা” এবার আর ইমোজি দেই নি, কারন হাসির শব্দটা লিখে দিয়েছি। একটুপরেই রাহাতের পোস্ট “বোকারা যদি বুদ্ধিমানদের বুদ্ধি নিয়ে যাচাই করে, এর থেকে হাস্যকর আর কিছুই হয় না” (হাহা ইমোজি)
আসলেই আমি বোকা, না হলে কি ওর মত ছেলের সাথে প্রেম করি। পোস্ট করলাম “নিজের বাবার খেয়ে পরের পোলার পিছনে সময় নষ্ট করাটাই সবথেকে বড় বোকামি” এবারের ইমোজিগুলো হাস্যকর নয়, মন খারাপের। রাহাত এবার পোস্ট করেছে “মেয়েদের জীবনের থেকে রিলাক্সের আর কি হয় বলোতো! বিয়ের আগে বাবার পয়সা ধ্বংস করে আর বিয়ের পর স্বামীর পয়সা।” (হাহা ইমোজি)
এবার সত্যি খুব রাগ হলো। আমি কখনই বরের পয়সায় চলবো না বলেই চাকুরী না পেয়ে বিয়ে করবো না ভাবছি আর আমার সম্পর্কে ওর কিনা এই ধারনা। “যাহারা মনে করে মেয়েদের জীবন বাবা আর বরের টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাহাদের জন্য এক ট্যাংকি সমবেদনা, তাহারা বোধহয় জানেন না সময় বদলেছে, আজকাল কেউ কারোর উপর নির্ভরশীল নয়।”(স্মাইল ইমোজি) বেচারা এবার কি লিখবে ভেবে পাবে না। হাহা কি মজা। বুঝবে মজা। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতেই রাহাতের পোস্ট চোখের সামনে “বাবার আহ্লাদী মেয়েগুলোর জন্য ৬০% নারী কোটা খুব কাজে দিবে, বেচারিগুলোকে না হলে আজীবন বাবার ঘাড়ে বসেই খেতে হত।” (হাহা ইমোজি)
মেজাজ আমার বিগড়ে গেল এবার। কি ভাবছে ও! আমার বিয়ে হবে না! আমাকে কেউ বিয়ে করবে না! আমি কারো বউ হিসেবে যোগ্য নয়। এর মজা আমি ওকে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াবো। “লোকের কথায় নিজেকে পরিবর্তন করি না, কারো ফালতু কথা নিঃশব্দে হজম করি না, অন্যের পারসোনাল বিষয়ে নাক গলাই না, অপরের চিন্তা ভাবনায় বা হাত ঢুকাতে যাই না। হ্যাঁ এটাই আমি।” এবার চিনুক আমি কে। আমার সম্পর্কে জানুক। অনেকক্ষণ হলো রাহাতের পোস্ট নিউজফিডে নেই। ওর আইডিতে ঘুরে এলাম সেখানেও নতুন কোনো পোস্ট নেই। শয়তানটা এবার সত্যি সত্যি জব্দ হয়েছে। কি লিখবে খুঁজে পাচ্ছে না। হাহা কি মজা!
মিনিট পনেরো পরে দেখি রাহাতের পোস্ট “কিছু আবাল মার্কা পাব্লিক আছে, যারা বাল ছাল কতখানি লিখে তারপর লিখে হ্যাঁ এটাই আমি। আরে আপনাকে কি জিগাইছে কেউ যে আপনি কে? কেউ কি জানতে চাইছে যে আপনি কি? আর যদি কেউ জিজ্ঞেস করেও থাকে তাহলে ভাই তারে গিয়া বলেন যে আপনি অমুক ময়লা, তমুক আবর্জনা। সবাইরে আপনার ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিন ভাববেন না। আজাইরা পাব্লিক।”(রাগ ইমোজি) চোখ আমার মাথায় উঠে গেল। আমি ময়লা, আমি আবর্জনা।
ওর পোস্টের কমেন্ট বক্সের প্রথম কমেন্টটা ছিলো “একদম ঠিক বলছেন ভাই। জীবনে বহুত ভুল করেছি, আবাল মার্কা কাজ করেছি তবে হ্যাঁ এটাই আমি এ টাইপের কোনো পোস্ট করিনি।” নাহ্ আর এসব দেখে সহ্য করা সম্ভব নয়। ডাটা অফ করে দিলাম। রাত অনেক হয়েছে আমি এখন ডিনার শেষ করে “মাধবী লতা আমি, আমি কাননবালা এই গানটা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যাবো।