-আপনার সাথে আমার এক্ষুণি দেখা করতে হবে। আমি আপনার জন্য লেকের ধারে অপেক্ষা করবো। আপনি চলে আসুন। পায়েলকে কেউ ফোন দিয়ে হরবর করে কথা গুলি বলে কল কেটে দিল। পায়েল কিছু বলার সুযোগ পেল না। অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল টা করা হয়েছে। পায়েল আবার কল ব্যাক করছে। বারবার কল কেটে দিচ্ছে। রাতে আবার সেই নাম্বার থেকে কল।
-হ্যালো
-হ্যালো ট্যালো বাদ দিন। তার আগে বলুন আপনি আজকে আসেন নি কেন? জানেন আমি আপনার জন্য পাক্কা ৫ ঘন্টা অপেক্ষা করেছি।
-আপনি কে? আর আপনাকে আমি চিনি না জানিনা আপনার সাথে আমি দেখা করতে কেন যাব?
ছেলেটা আবার কিছু না বলে ফোন কেটে দিল। পায়েলের অনেক রাগ হচ্ছে। এরকম হুটহাট কল কেটে দেয়ার কোনো মানে হয়?? ফোন রাখার আগে যে রাখছি বলতে হয় সেই ভদ্রতাটুকুও নেই। সে নাম্বার টাকে ব্লাকলিস্টে ফেলে দিল। পায়েলের নাম্বারে বারবার কল দেয়া সত্বেও সেটা ব্যস্ত দেখাচ্ছে। রিহান বুঝতে পারলো পায়েল তার নাম্বার ব্লাকলিস্টে দিয়ে রেখেছে। সে আরেকটি নাম্বার দিয়ে পায়েলকে কল দিল।
-মিস পায়েল, আপনি খুব বাজে একটা মানুষ।
-হোয়াট!! এসব কি বলছেন??
-যা বলছি ঠিক বলছি। আপনি আমার নাম্বার ব্লাকলিস্টে দিয়ে রেখেছেন কেন? আপনার তো খুব সাহস।
-ও আপনি সেই পাগল টা যে আমাকে লেকের ধারে যেতে বলেছিল। আর আপনার নাম্বার ব্লাকলিস্টে ফেলতে সাহসের কি আছে শুনি??
-জ্বি। তবে আমি পাগল নই। একদম সুস্থ মানুষ। আপনি আসলেন না কেন?
-আমি অচেনা কারোর সাথে মিট করতে যাব কেন? হতে পারে আপনি কোনো মেয়ে পাচারকারী। আমাকে অজ্ঞান করে নিয়ে বিদেশে পাচার করে দিলেন।
-শুনুন এসব বাজে কথা বাদ দিন। আপনার কাছে আর একদিন সময় আছে। কাল বিকেল ৫ টায় আপনি লেকের ধারে চলে আসবেন। ওই জায়গা টা আমার ভীষণ প্রিয়, বুঝলেন। পায়েল জানে সে আর কিছু বলার সুযোগ পাবে না। তার আগেই কল কেটে যাবে। ঠিক তাই হলো। ছেলেটা কল কেটে দিল। ছেলেটার নাম জানা হলো না। পায়েল লেকের ধারে এসে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়িতে সময় ৫ টা। কিন্তু কারোর আসার খবর নেই। প্রায় ১ ঘণ্টা হয়ে এসেছে। পায়েলের এখন নিজেরি রাগ হচ্ছে। অচেনা একটা কল পেয়ে এভাবে দেখা করতে চলে আসা টা একদম ঠিক হয় নি। বাসায় যেয়ে ওই নাম্বারে কল দিল পায়েল। রিহান কল রিসিভ করেই বলল
-হ্যালো কে বলছেন?
-জ্বি পায়েল বলছি। আপনি আসলেন না কেন?
-কোথায় আসবো?
-কোথায় আসবো মানে!! আপনি নিজেই আমাকে আসতে বলে নিজেই ভুলে গেলেন কোথায় আসবেন?!
-স্যরি। আমি কি আসলেই আপনাকে আসতে বলেছি? আপনি কে বলুনতো?
পায়েল ভাবছে নিশ্চয়ই তার সাথে কেউ practical joke করছে। কিন্তু কে হতে পারে সেটা বুঝতে পারছে না। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে দোতালার রুম থেকে নিচের বসার রুমে আসলো রিহান। সোফাতে একটা মেয়েকে বসে থাকতো সে ভাবলো হয়ত চোখে ভুল দেখছে। আবার চোখ ডলা দিয়ে সেদিকে তাকালো। নাহ, আসলেই সেখানে একটা মেয়ে বসে আছে। আর মেয়েটা আর কেউ না, পায়েল। রিহান তোতলাতে তোলতালে বলল
-তু…তু..মি!! পায়েল হেসে বলল
-মি: রিহান আপনার হাতে ১৫ মিনিট সময় আছে। আপনি রেডি হয়ে নিন। আমরা আজকে আপনার প্রিয় জায়গা সেই লেকের ধারে যাব।
-তুমি আমার নাম আর ঠিকানা জানলে কীভাবে!
-এখনকার যুগে ফোন নাম্বার দিয়েই অনেক কিছু করা যায় মি: রিহান। আর আমারো ভাগ্য ভালো আমার নিজের আংকেল পুলিশে চাকরী করে। তার কাছে আপনার নাম্নার দিয়ে আপনার নাম ঠিকানা সব বের করে ফেলেছি।
-হোয়াট! আপনি তো ভারী ডেঞ্জেরাস।
-হু। রিহানের মা ওর দিকে রাগী রাগী চোখে তাকিয়ে আছে।
-এই মেয়ে কে, রিহান?
-আমি চিনি না আম্মু। রিহানের এই উত্তর শুনে পায়েল বলে উঠলো
-ও মিথ্যা বলছে আন্টি। ও কয়েকদিন আগেই প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।
-এই তু.তু.মি এসব কি বলছো! আমি কবে তোমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি?? আমি তো শুধু তোমাকে একটু লেকের ধারে ওর আম্মু চোখ গোল করে তাকিয়ে বলল
-লেকের ধারে?? লেকের ধারে কি??
-না মা কিছু না। বিশ্বাস করো আমি এই মেয়েকে চিনি না। আমি আর আমার বন্ধু মজা করে আন্দাজে একটা নাম্বারে কল দিয়ে এরকম করেছি। রিহান আর পায়েল লেকের ধারে দাঁড়িয়ে আছে।
-তো মি: রিহান আপনি তো খুব ভালো মিথ্যে বলতে পারেন। তবে এরপর থেকে মিথ্যা বলতে হলে একটু আত্নবিশ্বাসের সাথে বলবেন। এরকম তোতলাতে তোতলাতে মিথ্যা বললে ধরা খেয়ে যাবেন।
-ইয়ে মানে…
-আচ্ছা থাক সেসব কথা।
-আপনি প্রথমদিন আসলেন না কেন?
-আমি এসেছিলাম। আমি দূর থেকে আপনাকে লক্ষ করেছিলাম। সেদিন আপনাকে চিনতে পারিনি। আর আপনিও আমাকে খেয়াল করেন নি। সেদিন আপনি সবুজ রঙের একটা শার্ট পড়ে এসেছিলেন। আর ছেঁড়া প্যান্ট।
-এক্সকিউজ মি!! ওইটা ছেঁড়া প্যান্ট না। ওইটা স্টাইল। আর তুমি আমার সামনে আসো নি কেন?
-এমনি। তার পরের দিন আপনি কেন আসেন নি?
-এসেছিলাম। আমিও সেদিন দূর থেকে তোমাকে লক্ষ করেছি। এক ঘন্টার মধ্যে প্রায় এক হাজার বার হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়েছো। হাহা। এই বলে ছেলেটি হাসতে লাগল। পায়েল মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো। ছেলেটিকে হাসলে তো ভারী সুন্দর দেখায়।