আজ পর্যন্ত যতগুলা ছাত্রী পড়িয়েছি সব গুলা মেয়েই আমার প্রেমে হাবুডুবু খায়। এজন্য এক প্রকার বিরক্ত হয়েই মেয়ে পড়ানো ছেড়ে দিছি। আসলে মেয়েদের দোষ দিয়ে কি লাভ? আমি নিজেই তো একজন প্রেমিক পুরুষ। তারউপর সুদর্শন, নম্র,ভদ্র ও শৈল্পিক ভাবে কথা বলার স্টাইল খুব সহজে মেয়েদের কাবু করে ফেলে।
২০১৩ সালের ঘটনা। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট করেছি। লং টাইম ছুটি অন্যদিকে পকেটের অবস্থা সদটঘাট। বাবা মায়ের কাছে টাকা চাওয়ার কোনো মুরোদ নেই। সিগারেট এর টাকা জোগাড় না হলে আমি ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। পরবর্তীতে আবুল বিড়ি টেনে ডিপ্রেশন দূর করি। এছাড়া কোনো উপায় নেই। বাবা মা তো প্রতিদিন বাড়ি বের হয়ে যাওয়ার আল্টিমেটাম দেয়। আজ বেকার বলে এসব কূট্টক্তি মুখ বুঝে সহ্য করতে হয়। উপায়ান্তর না পেয়ে হন্য হয়ে টিউশনি খুঁজতে লাগলাম।
অতঃপর ক্লাস এইটে পড়ুয়া একটা মেয়েকে পড়ানোর সুযোগ হয়। যদিও মেয়েদের প্রতি আমার এলার্জি তারপরেও বাধ্য হয়ে টিউশনিটা করাতে হচ্ছে। বেসিক স্যালারী 3k. দিব্যি একটা মাস অনায়াসে কেটে যাবে। কিন্তু ঝামেলা হলো কিছুদিন পর। নিয়ম মাফিক পড়িয়ে চলে আসি। প্রথম কয়েকদিন পড়িয়ে বুঝলাম আনিকা মেয়েটা একেবারে ফাযিলের ডিব্বা। কি বিশ্বাস হচ্ছে না, আচ্ছা তাহলে তার পরিচয় সম্পর্কে একটু বলি;
পুরো নাম রাশনুর বিনতে আনিকা। নামের মধ্যেই একটা ফাযিল ফাযিল গন্ধ পাওয়া যায়। সৌন্দর্য সাদাকালোর মাঝামাঝি মানে শ্যাম বর্ণের। নাকটা বাঁশের কঞ্চির মতো, দাঁতগুলো ইঁদুদের মতো,হাসলে যেন তার হাসিতে মুক্তা ঝরে। চোখ গুলো হরিণের মতো, রেশমি কালো চুল, শ্রবণ শক্তি প্রখর, মাত্রাতিরিক্ত বাঁচাল। ক্লাসের গ্যাংস্টার, অজুহাতে কিংস্টার, চাপাবাজিতে সুপার স্টার। এবার বুঝতেই পারছেন, আমি কেমন প্যারা নিয়ে হোম টিউটর পদে জব করছি। আমার যদি বাংলাদেশে জম্ম না হয়ে usn জম্ম হতো, তাহলে আমি এতোদিনে একজন ধৈর্যশীল হোম টিউটর হিসাবে গিনেসরেকর্ড করতাম।
৭ই সেপ্টেম্বর। রোজ শনিবার। আনিকা আজ পরপর তিনদিন পড়া শিখছে না। হোম ওয়ার্কও করছে না। আর এখন বসে বসে নিজের রূপের প্রশংসা করছে। তার চুলের প্রতি ছেলেরা নাকি ফিদা। প্রতিদিন ১০-১২ টা প্রপোজাল পায়। এই বয়সে তার ফেসবুক ফলোয়ার 15k ছাড়িয়ে গেছে। অথচ অষ্টম শ্রেণীতে থাকতে ফেসবুক কি আমি সেটাই চিনতাম না। তার কথায় আমি বারংবার জেলাস ফিল করছি। কেন জানি তার প্রতি আমার ভীষন রাগ হচ্ছে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে আনিকার ডান গালে ঠাশশ করে চড় বসিয়ে দিলাম। মূহুর্তেই রুমজুড়ে নিরবতা। আনিকার ফর্সা নরম তুলতুলে গালে চারটা আঙুলের দাগ বসে গেছে। এই প্রথম আমি তার গায়ে হাত তুলতাম। বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এভাবে থাপ্পড় মারাটা আমার উচিৎ হয়নি। এখন নিজের প্রতিই খারাপ লাগছে। সেদিন পড়ানো তো দূরে থাক তার দিকে দ্বিতীয়বার তাকানোর সাহস পায়নি। সরি বলে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে চলে এলাম।
এই সংবাদ টা যদি তার আব্বু আম্মু জানে তাহলে আমার চাকরী নট থুক্কু টিউশনি নট করে দিবে। মন খারাপ নিয়ে ফেসবুকে ডুকলাম। দেখি আনিকা তার গালের একটা ফটো আপলোড করে একটা স্যাড ক্যাপশন দিলো- বন্ধুরা আমার মন্টা ভীষন খারাপ। পড়া না পারার কারণে স্যার আমাকে মেরে গাল ফাঠিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশে কি নারী ও শিশু নির্যাতনের কোনো আইন নেই। আমি এর বিচার চাই মাননীয় স্পিকার। এদিকে পাবলিক আমার ১৪ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে। পোষ্টটি ফেসবুকে রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলো। এ খবর তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে যেতে বেশী দেরী হলো না। তার বাবা আজম খান একজন অবসর প্রাপ্ত ল্যান্সনায়েক। ভাবতেছি এখন আমার কি হবে। মেয়েটা আমাকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে ছাড়লো।
বাংলাদেশের কিছু উগ্রপন্থী জঙ্গি আনিকার গালের ফটো এডিটিং করে পোষ্ট করছে- “বাসায় কেউ না থাকায় ছাত্রীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করলো গৃহশিক্ষক”। এই নিয়ে ফেসবুকে অনেকে লেখালেখি শুরু করছে। আমাকে নিয়ে মানুষের বাজে মন্তব্যের ছড়াছড়ি। এই পোষ্ট দেখার পর আমার অবস্থা শোচনীয়। বাংলাদেশে ভাইরাল টপিকস এর শীর্ষে রয়েছে এই পোষ্টটি। ভয়ে আতংকে আজ তিনদিন আমি বাসা থেকে বের হই না। এদিকে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ৫০ সদস্যের ততন্ত কমিটি গঠন করেছে স্ব-রাষ্ট্র মন্ত্রনালয়। ইনকিলাবের প্রথম পাতায় মোটা কালি দিয়ে লেখা হয়েছে- “আমরা ধর্ষক মিরাজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই”।
ফটো: জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভারসিটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আমার আর শেষ রক্ষা হলো না। সামান্য একটা চড় দেওয়ার কারণে আমার জীবনটা এভাবে জলাঞ্জলী দিতে হলো। সেদিন রাতে এক ফোর্স র্যার এসে আমাকে তুলে নিয়ে গেলো। উচ্চ আদালতে আমার বিচার হলো। আজ ৭বছর জেলের গ্লানি টানছি। আমার বুঝা উচিৎ ছিলো বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা কতো ভহাবহ। মাঝে মাঝে মধ্যেরাতে চিৎকার দিয়ে বলি- টিউশনি কেমন প্যারা আগে যদি জানতাম। তওবা কইরা, কানে ধইরা টিউশনি না করতাম।