এখন তুমি রাত জেগে থাকো না আমার জন্য । একটা ফোন কলের অপেক্ষায় ছটফট করে না তোমার মন। বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করে না আমাকে সাথে নিয়ে।দেখতে ইচ্ছে হয় না বৃষ্টিতে ভিজে আমার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে লেপ্টে থাকা সালোয়ার কামিজের দিক হতে চোখ ফেরাতে না পারার মোহনীয় দৃশ্য। হাঁটার সময় নেই তোমার আমার হাতে হাত রেখে ।
আমাকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে বসে গরম কফির স্বাদ নেয়ার তোমার উদগ্র ইচ্ছেগুলো মরে গেছে চিরদিনের জন্য । বিকেলে অপেক্ষা করতে হয় না আমার জন্য জারুল গাছটার নিচে বসে।বলতে পারো না কত্তো ভালোবাসি তোমাকে। বলতে চাও না তোমাকে ছাড়া সত্যি বাঁচবো না আমি। একবারও বলতে পারো না, দেখো না সনালু গাছের ঝুমকো ফুলগুলো কেমন করে বাতাসে দুলে দুলে উঠছে। আমিও বলতে পারিনে বিয়ের পর তুমি কি আমাকে স্বর্ণের এমন ঝুমকো দুল বানিয়ে দেবে গো ? কিনে দেবে কি হলদে শাড়ি ? পয়লা ফাগুনে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সাজুগুজু করে তোমার সামনে গিয়ে বলবো, দেখোতো কেমন লাগছে আমাকে ? তুমি তখন কি বলবে গো আমাকে? কি করবে আমাকে নিয়ে ? বলো না প্লিজ। প্লিজ বলো না।
তুমি কি তখন সোহাগ করবে আমাকে না মুখ ফিরিয়ে নেবে ? নাকি বলবে এই যা পেত্নির মতো লাগছে আমাকে। হলুদ শাড়িটায় মোটেও মানায়নি আমাকে। তার চেয়ে নীল শাড়িতে বেশ মানাতো। আমি কি কালো বলে একথা বলছো ? আমাকে মানাবে না হলদে শাড়িতে ? কালোরা কি হলদে শাড়ি পড়ে না ? আমি শিকার করছি আমি কালো। তবুও তুমি আমাকে কেন পছন্দ করো ? কেন এতো ভালোবাসো আমাকে ? আমাকে ভালো না বেসে চাঁদের মতো ফুটফুটে একটা মেয়েকে ভালোবাসতে পারতে তবে তা করোনি কেন? আমি তোমার মাথার দিব্যি কেটে বলছি সাজুগুজু করার পর যদি অমন সাজগোজ তোমার পছন্দ না হয় সেদিন আমি আর কিচেনেই ঢুকবো না। উপোস রাখবো তোমাকে।
সত্যি করে বলতো তুমি রাতে কতোবার স্বপ্ন দেখো আমাকে নিয়ে ? আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে বেশি ভালো লাগে তোমার নাকি ফোনে আমার সাথে কথা বলতে বেশি ভালোলাগে ? আচ্ছা তোমার সাথে প্রায় রোজ রাতে তো ফোনে কথা হয় তারপরও আমার সাথে দেখা করার জন্য কেন ব্যস্ত হয়ে ওঠো তুমি ? আমাকে দুদিন না দেখে থাকতে পারো না বুঝি ? এই মনে করো আমি তোমার সাথে ঝগড়া ঝাটি করে কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে গেলাম। আমাকে দেখতে না পেয়ে একা একা কি করবে তখন ? ছুটে যাবে কি আমাকে ফিরিয়ে আনতে ? কিভাবে মান ভাঙাবে বলতো একটু করে। আমার চিবুক নেড়ে বলবে কি, বহুত হয়েছে এবার আমার সাথে চলো লক্ষীটি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো ঝগড়া করবো না তোমার সাথে। নাকি চুপচাপ থাকবে আমার প্রতীক্ষায় যতোক্ষণ না আমি নিজ থেকে তোমার কাছে ফোন করেছি, তুমি কেন আছো, কি করছো ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চেয়ে।
আচ্ছা আমি তোমার ছেলে মেয়েকে যদি তোমার কাছে রেখে চলে যাই তুমি সামলাতে পারবে তো ওদের ? তোমার রান্নাবাড়া কে করে দেবে ? নিজেই করবে নাকি কাজের বুয়া রাখবে ? রান্নাবান্না নিজে করে সময় মতো অফিসে যেতে পারবে তো ? আমি এসবের কিছু জানিনে বাপু। আমার সাথে যেমন ঝগড়া করেছো এখন বোঝো মজাটা কেমন লাগে বউ ছাড়া একা একা থাকতে। না, তুমি আমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত একা থাকতে চাওনি। এমন পরিস্থিতি নাকি কখনো হবার নয় । তুমি হতে দিতে চাও না। তুমি আজীবন পাশে পাশে রাখতে চেয়েছো আমাকে। ছায়া মিলিয়ে যেতে পারে আলোর অভাবে কিন্ত আমি কখনো মুছে যাবো না তোমার মন থেকে।
তাহলে বলো রাতুল এখন এতো রাত জেগে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে হয় কেন ? বাসায় ফিরতে এতো দেরি হবে তা ফোন করে জানিয়ে দিলে কি হয় ? তুমি আমার সাথে ডিনার না করে প্রায় রাতে কেন বলো বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো ? কেন বলো আজ ক্ষুধা নেই তাই খাবে না ?তুমি কি একবারও জানতে চেয়েছো তুমি বাসায় এসে ডিনার করলে আমিও আদৌ রাতে খেয়েছি কিনা ! নাকি না খেয়ে রাত কাটিয়েছি। কখনো একবারও কি খেয়াল করেছো আমার যন্ত্রের অশ্রুতে বালিশের কোন অংশটুকু রোজ রাতে ভিজে আছে ? খেয়াল করবে কেন ? এখন আমি তোমার কে ? আমার সাথে ফোনে কথা বলার সময় হয় না তোমার। অথচ ক্লান্ত হয়ে অফিস থেকে ফেরার পর এতো রাত জেগে ফোনে কথা বলার এতো সময় তোমার হয় কি করে ? কে সেই তোমার এতো প্রিয় মানুষটি যার সাথে রোজ কথা না বললেই নয় ? কথা বলছো ভালো কথা। কথা বলার সময় আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে কেন?
কল এলেও মোবাইলের ডিসপ্লেতে তাকিয়ে অমনি সরে যাও আমার কাছ থেকে। আমার সামনে কথা বলতে তোমার অসুবিধে কোথায় ? আমি তোমাদের গোপন সংলাপ শুনে ফেলবো বলে ? আমি তার নাম জেনে যাবো বলে নাকি ওর সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবো বলে মোবাইলের আনলক প্যাটার্ণ পাল্টে দিয়েছো ? আমি ভুলে যেতে বসেছি তুমি কখন আমাকে নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছো। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তুমি ভুলে গেছো আগের সেই দিনগুলো। যে মুহূর্তগুলো তোমাকে ডেকে আনতো আমার খুব কাছে সেই মুহূর্ত এতো সহজে হারিয়ে যাবে আমার জীবন থেকে। ভাবতেও অবাক লাগে এখন আমার জন্য রাত না জেগে অন্য কারো জন্য রাত জেগে থাকো। তোমার দেয়া হলদে শাড়িটা পড়ে সাজুগুজু করে আর হয়তো কোনোদিন এসে দাঁড়াতে পারবো না তোমার সামনে। বলতে পারবো না আজ পহেলা ফাগুন। দেখোতো কেমন লাগছে আমাকে ? মানিয়েছে কি আমাকে ?
নাকি কালো বলে পেত্নীর মতো দেখতে লাগছে আমাকে ? বিয়ের আগে তো আমি পেত্নি ছিলাম না তোমার চোখে। ছিলাম এক স্বপ্ন। যাকে তুমি দেখতে প্রতি রাতে। কতোভাবেই না দেখতে।এখন আর স্বপ্ন দেখো না কেন আমাকে নিয়ে ? তোমার আগে মনে হয়নি কেন আমি এতোটা কালো ? এখন যে তোমার জীবনে এসেছে সে হয়তো অনেক বেশি সুন্দর ! আমি তোমার কাছে মূল্যহীন হয়ে গেছি। তোমার আগের সেই মনও নেই দৃষ্টিও নেই । সব কেমন যেন পাল্টে গেছে । তুমি পাল্টালেও আমি কি করে পাল্টাবো নিজেকে ? আমি ইচ্ছে করলেই তো আমার গায়ের রঙ ফর্সা হয়ে যাবে না । তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। এটা রাগ বা মান অভিমান কিছু নয়। কার সাথে রাগ করবো ? রাগ অভিমান করা যায় আপন জনের সাথে। তুমি এখন আমার আপন কেউ নও ।
তোমার কাছে এই চিরকুট লিখার অর্থ হলো এক মুহূর্তের জন্য হলেও বিয়ের আগের আবেগঘন সোনালি প্রতিটি মুহূর্তের কথা একটু হলেও স্মরণ করিয়ে দেয়া। বলতে পারো এতো লম্বা চিঠিকে চিরকুট বলছি কেন ? বলবো না ? আমাদের পুরোনো দিনের সাগর পরিমাণ স্মৃতিগুলোর মধ্যে এখানে বর্ণিত কথাগুলো একটা ডোবার চেয়ে বড় কিছু নয়। তাই এটাকে চিরকুট বলছি। আজ থেকে ধরে নিও তোমার এক কালের প্রাণপ্রিয় নিশি আর বেঁচে নেই। বৃষ্টিকে আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি ও এক মুহূর্ত ওর মাকে ছাড়া থাকতে পারে না। আমিও বাঁচবো না আমার বৃষ্টিকে ছেড়ে। আমি কতোটা ভালো থাকবো জানিনে। তুমি তোমার নতুন সঙ্গীকে নিয়ে ভালো থেকো। সুখে থেকো।