উপহার

উপহার

দাঁড়াও এক পাও নড়বে না বলে দিচ্ছি।কথাটা আদিবকে বলেই রাগে ফুসতে শুরু করলাম। আমার কথা শুনে আদিব ভয় পাওয়ার ভঙ্গিতে বললো, দুই পা নড়ানো যাবে তো নাকি? তোমার হেয়ালিপনামার্কা কথা এখন বলবা না বলে দিচ্ছি? মেজাজ বিগড়ে আছে হাতের কাছে যা আছে সব কিন্তু তোমার নাক মুখের উপরই ছুড়ে মারব বলে দিচ্ছি। আমার দিকে এগিয়ে এসে আদিব বললো,ও রে বাবা ভয় পাইছি।আচ্ছা মহারানী কাহিনি কি সেটা তো বলুন মেজাজ বিগড়ে গেছে ক্যানো শুনি সেটা? ও তুমি জানো না, না?আর হ্যাঁ জানবাই বা ক্যাম্নে নিজের খোঁজ ছাড়া অন্য কারো খোঁজ রাখার কিসের বা প্রয়োজন পড়বে তোমার? আচ্ছা বাবা বল তো কি হয়ছে?আদিব আমার কাধে হাত রেখে শান্ত গলায় বললো কথাটা।আমি আদিবের হাতটা কাধ থেকে ফেলে দিয়ে বললাম,তুই কাল রাতে বাড়ি কখন আইছিলি শুনি?

আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে আদিব চোখ লুকিয়ে ইয়ে মানে মানে করতে লাগলো। আদিবের তোতলানো দেখে বললাম,কিসের ইয়ে মানে? আজ তোর একটা দফারফা না করে আমি থামব না। এই মরছি রে,কথাটা বলেই আদিব আশপাশ করতে লাগলো।আমি থামার নাম না নিয়ে বলতেই থাকলাম আমি ঠান্ডা থাকলে,ঝগড়া না করলে তোর গায়ের মধ্যি চুল্কায় তাই না? ইস ঝগড়া করে না ক্যা আমার তো চুল্কানি বেড়েই যাচ্ছে চুল্কানি থামানোর মতলবে তুই রাত বেড়াতে বাড়ি ফিরিস তাই না? যাতে আমি ক্ষেপি আর তুই মজা নিতে পারিস? ও বাবা আমার বউ টা দেখি মেলা বুঝা শিখে গেছে আজকাল,এত বুঝো ক্যা গো?বলেই আদিব আমাকে জড়িয়ে নিতে এগিয়ে আসলো।

আদিব কে ধাক্কা মেরে বললাম ঐ তুই কি আমাকে বোকা ভাবিস নাকি?আদিব ধাক্কা সামলে বললো নাতো বুড়ি ভাবি,বুড়ি! আমি আদিবের দিকে চেয়ে চেচিয়ে বললাম ভাল করে জানিস মেজাজ এর দফারফা করে রাখছিস এখন যদি আমার হাত চলে রে তাইলে কিন্তু দুই একদিনের মধ্যে জেলে থাকবোনে গিয়ে সাবধানে কথা বল। ও খোদা কার কাছে ফেললা আমারে, বন্ধু দোস্ত হ্যালো হ্যালো শোন কাল যদি আমার খোজ না পাইস তাইলে বুঝিস আমি গেছি গা! আমার বউ আমারে মারার হুমকি দিচ্ছে ভয় লাগছে প্রসুর! আমারে শান্তনা দে জলদি?আদিব কথাগুলো এক দমে বলে হাসতে শুরু করলো।

আমি গায়ের শক্তি দিয়ে চিল্লানোর শুরু করলাম রাগের চোটে।আদিব হাসতে হাসতে বললো ও বউ চিল্লাইয়ো না , আর হবেনা এমন তুমি যখন বলবা তখনই বাড়ি ফিরব কাল থেকে অকে?এখন শান্ত হও প্লীজ। আমি আরো রেগে গিয়ে বললাম তোর শান্ত হওয়ার ঘুষটি কিলাই, কতদিন বলছিস তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবি? আচ্ছা ফিরবোনে কাল থেকে।আমি কি আর এত বুঝি বলো আমার বউ এত ফ্রেশ মুডে থাকে সন্ধ্যা নামার পর।কথাটা বলেই আদিব মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। আমি আর রাগ সামলাতে না পেরে আদিবের কান টেনে ধরলাম।আদিব আমার হাত ধরে বললো ওরে, ওরে ছাড় ছাড় কান ছিড়ে গেল আমার।

আমি রাগে শুধু চিল্লাচিল্লি করতেই থাকলাম,আদিব আমার মুখ আটকে বললো আসতে চিল্লা পাশের বাসার লোকজন পুলিশে কল দিলে কিন্তু আমার সাথে তোকেও জেলে থাকা লাগবেনে, ভেবে দ্যাখ আমার সাথে জেলে কিন্তু! মুখ থেকে আদিবের হাত সরিয়ে বললাম জেলে আমি যাব তুই তো যাবি গোরস্থানে রেডি হ তার জন্য। আবার ভয় দ্যাখায়, তোমার আগে আমি কোথাও যাবনা তুমি আগে আমি পরে ওদিকে যাব অকে?এই কথা বলেই আদিব আবার হাসতে লাগলো।

আমি নাক শিটকে বললাম,হ ওই আশাই কর মরবি তুই আমার হাতেই যে ভাবে চলাফেরা করছিস, তোর মরনের চুল্কানি উঠছে বুঝতে পারছি ভাল করেই! এসব বলে না গো আপু! আমি মরলে তুমি তো বিধবা হইবানে তখন?আদিব হাসছে আর কথাটা বলছে।আমি আসতে আসতে বললাম  আমার চিন্তা তোর থাকলে তাইলে আমি তোর মাথায় তেল মাখাতাম এতক্ষনে। ও মা তাই নাকি আগে বলবা না? দাও দেখি চিল্লায়ে মাথা ধরিয়ে দিছো এখন একটু মাথা টা টিপে দাও দেখি কাল থেকে তুমি যেমন বলবা তেমন হবে ঠিক আছে! তোর মাথা টিপে দিবো আমি ওয়াক থু রুচি এত খারাপ নাকি আমার, আর এখন এমন আল্লাদিপনা একদম দেখাবি না শরীল জলে যাচ্ছে।কথাগুলো বলেই বিছানায় গিয়ে বসলাম।আদিব আমাকে আরো ক্ষেপানোর জন্য বললো,হ্যালো হ্যালো এটা কি ফায়ারব্রিগেড এর অফিস আমার বউ এর রাগে শরিল জলে যাচ্ছে বলে, এখন আমি কিতা করতাম?

নিজের প্রশ্নের উত্তর নিজেই নিজেকে দিয়ে আদিব বললো,ওনারে পুকুরে চুবানো লাগবে। আদিব আমার দিকে এগিয়ে এসে বললো,এই চলো জলদি চলো তোমারে নাকি পুকুরে চুবানি খাওয়ানো লাগবে? কুত্তা রে! তুই কি ঠিক করেই নিছিস আমার হাতেই মরবি?দাঁতের উপর দাঁত রেখে রেগে কথাটা বললাম আদিবকে। তোমার হাতে মরলে আমার মরন সার্থক। দাও তোমার ভালবাসার ছুরি বুকে বিধিয়ে, আমি তোমার ও ভালবাসায় হয়ে যাব বিলিন।এ কথা বলেই আদিব খিলখিল করে হাসতে লাগলো। আদিবের হাসি থামানোর জন্য বললাম, জন্মানোর সময় মনে হয় শাশুড়ী আমার লজ্জার পানি খাওয়াতে ভুলে গেছিল তোমাকে।

আম্মা তুমি যে আমার কি উপকার করে গেছো তুমি নিজেও জানো না, আজ পানি খাইনি বলে বউয়ের সাথে ঝগড়ায় বিজয়ী হতে পারি। একথা বলে আদিব আরো জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আমি আদিবের সাথে না পেরে বললাম,বেহায়া কোথাকার।আদিব হাসি আটকিয়ে বললো,হ্যাঁ তবে তোমার মত আর হতে পারলাম কই? আদিবের হাসি দেখে বললাম রাগ কমেনি কিন্তু? ওহ হ্যাঁ তাই তো আমার বউ না রাগ করছে ভুলে গেছিলাম! আমি আর কিছু বললাম না আদিব কে।আমাকে চুপ থাকতে দেখে আদিব বললো সিচুয়েশন নরমাল মনে হচ্ছে? আমি আসতে করে বললাম তোমার মাথা, আমাকে তুমি একটুও ভালবাসো না? কাল কি ছিল ভুলে তো বসে ছিলা!

আমার ভালবাসার নামে এমন অপবাদ দিয়ো না সেনোরিটা, আকাশ বাতাস কেপে উঠবে। কাল কি কিছু ছিল আসলেই? তাইতো বলি হঠাৎ হিরোসিমা নাগাসিকার মত যুদ্ধ একবারে লাগল ক্যাম্নে? কি যেন ছিল কাল আর এই জন্যিতো কাল সারাদিন আমার মাথা চুল্কাছিল মনে হয় নেটওয়ার্ক প্রবলেমের কারনে মাথায় কালকের ঘটনাটা ডাউনলোড হবে হবে করে ক্যান্সেল হয়ে গেছিল বলে মাথা চুলকাচ্ছিল। আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম কথার বাহানা পেটে সাজানোই থাকে না? ইয়ে মানে! হুহ যাও তোমার আড্ডার সময় হয়ে গেছে বন্ধুরা ডাকে।আজ রাতেও দেরি করে ফিরো কেমন? আচ্ছা! তবে কালকের দিন টা কি যেন ছিল বললে না তো? আমার মাথা ছিল! তোমার মাথা তো আজো আছে দেখছি তাইলে কি রোজ তোমার মাথা ডে? বানর এর সাথে কথায় পারলাম না এ জন্মে? হি হি আমার মত হতে চাও?

রুচি এত খারাপ না যে আমি তোমার মত হতে চাইব? বুঝি তো, আচ্ছা বলো এখন আর কোনদিন ভুলব না?  ঘোড়ার ডিম ছিল, জন্মদিন ছিল আমার? কেন যে জন্মাইছিলা, আমাকে ফাসাতে? যাও সরো কথা নাই তোমার সাথে সরো সামনে থেকে? হা হা চলো? কোথায়? চলোতো জানা লাগবে না তোমার, আমার হাত ধরে চোখ বন্ধ করে আসবা! আগে বলো তো আমি ছাদ থেকে পড়ে মরতে চাইনা। তোমাকে দেখে বিশ্বাস নাই গিফট দেয়ার ভয়ে যদি মেরে দাও! কুত্তি চল হাট,আমার মাথায় চড় মেরে আদিব চোখ বড় করে বললো কথাটা। চড় খেয়ে খিলখিল করে হেসে বললাম হি হি চলেন।

ছাদে গিয়ে চোখ খোলার পর সমস্ত ছাদ সাজানো দেখে খুশিতে লাফাতে লাগলাম। আমার খুশি দেখে আদিব কাধে হাত রেখে বললো কি পছন্দ হয়ছে মহারানী? আদিব কে জড়িয়ে ধরে বললাম খুব পছন্দ হয়েছে। কখন করছো এসব? কুত্তা আগে দেখালে তো কাহিনি করতাম না। আগে দেখালে কি আর আমার জল্লাদীর রাগ টা দেখতে পারতাম!আদিব বুকের সাথে শক্ত করে ধরে আমায় বললো কথাটা।

আমি বুক থেকে সরে এসে বললাম তোমাকে পেটানো উচিত, মানুষ হবা না, না? আর কখন করছো এসব?
রাতে, তুমি যখন নাক ডেকে গাল ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছিলা? ঘুমাচ্ছিলা বলে আর ডেকে তুলিনাই সকাল বেলা তোমার বছরের প্রথম দিন টা চমকে দিয়ে শুরু করব বলে তোমার পছন্দের ছাদ আর বেলকুনি টা তোমার ভাল লাগার ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখছিলাম। আদিবের এমন ভালোবাসা দেখে হেসে বললাম,এই না হলে আমার বর।আদিব আমার কথা শুনে বললো এখন তো পিরিত উতলাবেই। কি যে বলো ওতো সব সময় উতলায়।কথাটা বলেই আদিবের কাধে ঢলে পড়লাম।আদিব আমার মাথাটা তুলে বললো হয়ছে থামেন ভুতের মুখে রাম নাম।

আমি চোখ বাকা করে বললাম বানর।আমার কথার সাথে সাথেই আদিব বললো হ্যাঁ বানরের বউ বলো?আমি লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে বললাম ভাল্লাগছে।আদিব আমার দিকে কৌতুহলের চোখে তাকিয়ে বললো কি?আদিবের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বললাম তোমার ভালবাসার উপহার টুকু।আদিব খুশি হয়ে বললো যাক প্রানে বাচালেন মহারানী আপনাকে খুশি করতে পেরে আমিও ধন্য হলাম।আদিবের কথা শুনে বললাম মানুষ হবে না বলে ঠিক করেই নিছো?
হ্যাঁ ! এ জন্মে তোমার পাগল হয়েই কাটিয়ে দেই পরের বার চেষ্টা করবনে অকে?কথাটা বলেই আদিব আবারো হাসতে শুরু করলো।আমি আদিবকে জড়িয়ে ধরে বললাম পাগল কোথাকার। আদিব হাসতে লাগলো আমার পাগল ডাক শুনে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত