জাতীয় ভাইয়া

জাতীয় ভাইয়া

“ছুটির দিন।ভাবলাম বেশ বেলা পর্যন্ত আজ ঘুমাবো।কিন্তু তা আর হলো কই?সকাল ৮ টার সময় থেকেই মা শুরু করলো,”এই হৃদয় ঘরে লবণ নাই,চিনি নাই,কোন শাকসবজি নাই তাড়াতাড়ি বাজারে গিয়ে নিয়ে আয়।”

মার প্যানপ্যানানিতেও আমি ঘুম থেকে উঠলাম না।কিন্তু এবার আমার বদ ছোটবোন এসে আমার গায়ে পানি ঢেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গেলো।ও ড্যাঞ্জারাস মেয়ে।এটা ও করতেই পারে।এই শীতের দিনে শরীরে পানি ঢেলে দিলে সেটা হবে ভয়াবহ বিষয়।তাই আমি আর রিক্স নিলাম না।তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে সেখান থেকে ফ্রেশ হয়ে জিনিসপত্র আনার জন্য ব্যাগ নিয়ে বাজারের দিকে রওনা দিলাম।বাজার করে এনে বাসার সিড়ি দিয়ে ওঠার সময় সিড়িতে তিশার সাথে আমার দেখা।” তিশা আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে।আর তার থেকে বড়ো কথা হলো সে আমার ক্রাশ।আগের যে কয়টা ক্রাশ ছিলো সবাই আমাকে ভাইয়া বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে।কিন্তু তিশার থেকে বর্তমানে বেশ খানিকটা গ্রিন সিগনাল পাচ্ছি।মানে কিছু হলেও হতে পারে।তা ও আমাকে দেখেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো,

-আরে হৃদয় সাহেব!বাজার করতে গিয়েছিলেন দেখছি।
-এই আর কি!কিছু টুকিটাকি জিনিস কিনলাম।আপনি কোথায় যান?
-আমার একটু শপিং এ যেতে হবে।কিছু টুকটাক জিনিস কিনবো।
-ও আচ্ছা যান তাহলে।বিকেলে কথা হবে।
-আচ্ছা।ঠিক আছে।

না এখন আর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার জন্য আর খারাপ লাগছে না।তিশার সাথে কথা বলে মনটা বেশ ভালো হয়ে গেলো।তাই আমি খুশিমনেই আমাদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে ফ্ল্যাটের বেল বাজাতে লাগলাম। ফ্ল্যাটের দরজা খুললো আমার বোন নিতু।নিতু বাজারের ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,

-কি ব্যাপার?এতো খুশি খুশি লাগছে কেন?তিশা আপুকে প্রপোজ করে দিয়েছিস নাকি? আমার এই বোনটা আমার সব হিস্টোরি জানে।আমি কয়টা ছ্যাঁকা খেয়েছি?কয়টা মেয়ে আমাকে রিজেক্ট করেছে ও সব হিসেব করে রেখে দেয়।আমি বললাম,

-আরে না।কয়দিন যাক।
-এই কয়দিনের চক্করেই থাক তুই?এর আগেও এই ঠিক সময়ে প্রপোজ না করার কারণে কয়টা মেয়ে তোকে ভাইয়া বানিয়ে চলে গেছে সেটা কি তোর খেয়াল নাই?

-আরে সময় হোক প্রপোজ করবো।
-তুই এই আশাতেই থাক।এই কারণেই তুই জীবনে প্রেম করতে পারিস নাই।সব মেয়ে তোকে ভাইয়া বানিয়ে দিয়ে চলে গেছে। এবার ওর কথাটা আমার ইগোকে আঘাত করলো।আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম,

-বেশি পাকনামি করিস না।থাপ্পড় খাবি বলে দিলাম। ওকে ঝাড়ি দিয়েই আমি আমার রুমে চলে এলাম। নিতু কথাটা অবশ্য ভুল বলেনাই।আমি আমার জীবনের ২৫ টা বসন্ত পার করে দিলাম একটা প্রেমের আশায়।কিন্তু এই প্রেমটাই আমার জীবনে এখন পর্যন্ত এলো না।এই কারণে আমার বন্ধু মহলেও আমাকে নিয়ে ট্রল হয়। একদিন পাড়ার মোরে কয়েকটা ছোট ভাইকে প্রেম বিষয়ে টিপস দিচ্ছিলাম।এমন সময় আমার বন্ধু নয়ন আমাকে কটাক্ষ করে বলল,

-কিরে ছোটদের তুই কি টিপস দিচ্ছিস।তুই নিজেই তো জীবনে প্রেম করতে পারলি না। আমিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না।বললাম,

-কোচ কখনো খেলায় অংশগ্রহণ করে না।সে খেলা শেখায়। আমার এই কথাটা বদ নয়ন সারা এলাকায় ছড়িয়ে দিলো।এরপরে থেকে এলাকায় আমার নাম হয়ে জাতীয় ভাইয়ার পাশাপাশি লাভকোচও হয়ে গেছে।অবশ্য সেটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নাই।কিন্তু লাভকোচ হয়েও আমার লাইফে প্রেমটাই যে আসছে না।যেই মেয়েকেই পছন্দ করি সেই আমাকে ভাইয়া বানায়।একদিন তো একটা মেয়েকে জিজ্ঞাসাই করে ফেলেছিলাম যে,

-আচ্ছা।আমার চেহারা কি এতোই খারাপ যে আমাকে খালি ভাইয়া বানাতে ইচ্ছা করে? মেয়েটা উত্তর দিয়েছিলো,
-আরে না তোমার চেহারা অনেক ইনোসেন্ট।তাই তোমাকে দেখলেই আমার ভাইয়া ডাকতে ইচ্ছা করে।তোমার ভেতরেই একটা ভাইয়া ভাইয়া ভাব আছে।

তো এই ইনোসেন্ট ভাবটা চেহারা থেকে সরাতে আমি তামিল মুভির ভিলেইনদের মতো মুচও রেখেছিলাম।কিন্তু তাতে লস বইকি লাভ হয় নাই।এই মুচের কারণে একটা মেয়ে আমাকে কাকুই বানিয়ে ফেলেছিলো।কাকুর থেকে ভাইয়াই ভালো।তাই মুচটাও কেটে ফেললাম। এতো কয়টা ছ্যাঁকা খাওয়ার পরে অনুধাবন করলাম প্রেম আমার লাইফে হওয়ার নয়।তাই ভাবলাম আর এসব বিষয়ে চিন্তা না করি।বেশ কিছুদিন এসব প্রেমটেম থেকে দূরেও ছিলাম।কিন্তু তিশারা যেদিন আমাদের পাশের ফ্লাটে ভাড়া থাকতে এলো সেইদিন থেকে সবকিছু বদলে গেলো।

আমি তিশাকে দেখার পর ভেবেছিলাম,”যাক!এটাই শেষ চান্স।যদি এর সাথে প্রেম হয় তাহলে হবে আর না হলে আমি চিরকুমার হবো।দেখি ইনিংসের লাস্ট বলে ছক্কা হাকাতে পারি কি না! তিশার সাথে কয়দিনের ভেতরেই আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেলো।আমার কেন যেন মনে হতে লাগলো তিশাও আমাকে পছন্দ করলেও করতে পারে।তাই আমি ভাবলাম এই কিছুদিনের ভেতরেই তিশাকে প্রপোজ করে দেবো।প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছি ঠিক তখনোই ঘটলো এক বিপত্তি। তিশা নিজেই আমাকে একদিন বিকেলে ওর সাথে আমাকে শপিংয়ে যাওয়ার জন্য ডাকলো।আমার বোন বললো,

-ভাইয়া এটাই সুযোগ।এই সুযোগেই কিন্তু প্রপোজ করে দিতে হবে। আমিও ভাবলাম এটাই সুযোগ।প্রতিবারের মতো এবারে আর ভুল করবো না।এবার ওকে প্রপোজ করে দেবো।তো বেশ মাঞ্জা মেরে ওর সাথে শপিং করতে যাওয়ার জন্য বের হলাম।তিশাও দেখলাম বেশ সেজেগুজে আসছে।অসাধারণ লাগছে ওকে।আমার কাছে এসে আমাকে পা থেকে মাথা দেখে নিয়ে বললো,

-বাহ!বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে তো আপনাকে।যেকোন মেয়ে আপনার ওপর ক্রাশ খাবে। ওর কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম,অন্য মেয়ে কেন তুমি ক্রাশ খেয়ে পটে যাও সুন্দরী।কিন্তু মুখে বললাম,
-তোমাকেও। ও চোখ কপালে তুলে বললো,
-আমাকে হ্যান্ডসাম লাগছে?
-আরে না না।বিউটিফুল লাগছে।

ও আমার কথা শুনে একটু মুচকি হাসলো। একটা রিকশা ঠিক করে নিয়ে আমরা শপিং মলের দিকে রওনা দিলাম।শপিং মলে পৌঁছে ও দেখি জেন্টস শপিং মলের দিকে যাচ্ছে।আমি ওকে বললাম,

-আরে ওটাতো জেন্টস শপিং মল।ওদিকে কোথায় যাচ্ছো?
-একটু কাজ আছে।আসুন তো।

তো ওখানে গিয়ে ও আমার মাপের ঘড়ি কিনলো,শার্ট কিনলো,প্যান্ট কিনলো,জুতা কিনলো।আমি বললাম আরে এতোসব জিনিস কার জন্য কিনছো?তাও আবার আমার মাপের!ও বললো,

-আসলে কাল আমাদের রিলেশনের ২ বছর পূর্ণ হচ্ছে।তাই আমার বয়ফ্রেন্ডের জন্য এগুলা কিনলাম।ওর হাইট,ওয়েট একদম আপনার মতোই।তাই আপনাকে একটু জ্বালালাম ভাইয়া।আপনি কিছু মনে করেন নাইতো ভাইয়া? ওর কথা শুনে আমি একদম বজ্রাহত হয়ে গেলাম।আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো।আমি কোন মতে বললাম,

-না। তারপর ওকে বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশায় তুলে দিলাম।ও আমাকেও ওর সাথে যেতে বললো।কিন্তু ওর সাথে যাওয়ার মতো ইচ্ছা আর আমার ছিলোনা।তাই ওকে বললাম,

-আমার এই সাইডে একটু কাজ আছে।তুমি চলে যাও।

ততোক্ষণে রাত হয়ে গেছে।আমি রাস্তার নিয়ন আলোতে ফুটপাতের ওপর দিয়ে উদাসীন হয়ে হাঁটতে লাগলাম।নাহ!শেষ পর্যন্ত তিশাও আমাকে ভাইয়া বানিয়ে দিলো।আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে পছন্দ করে।আহ! “আমি হতে চেয়েছিলাম ওর ছাইয়্যা, আর ও আমাকে বানিয়ে দিলো ভাইয়া।” লাইফের ইনিংসের লাস্ট বলেও একদম ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলাম।নাহ!আমার নামের আগে থেকে জাতীয় ভাইয়া ট্যাগটা আর গেলো না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত