আত্মসম্মান

আত্মসম্মান

জ নিজেকে বিক্রি করলাম, মনের কাছে বিবেকের কাছে হেরে গেলাম।
ছোট বেলায় একবার বাড়ীর ছাগল বিক্রি করতে গেছিলাম, পুরো রাস্তা ছাগলটা চিল্লাছিল, আজ বুঝতে পেরেছি তার কষ্টটা।
তবে হয়তো এটায় জীবন।
এই চাকুরীটা হলে বাবা-মা একটু হাপ ছেড়ে বাঁচে। কাল থেকে আমিও একটু হাপ ছেড়ে বাঁচি।
আর কতো দিন সবাইকে বলবো? আমি বেকার। অভিশাপের থেকে খুব বেশি মনে হয় ভালো না এই বেকার শব্দটা, কিন্তু তারপর ও আমি যেন আর ৪ বছর থেকে সেই অভিশাপ নিজের ঘাড়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি।
।।
বিসিএস এর ভাইবা ছিল গত কাল।
সব কিছুই ভালো ছিল, কিন্তু তারপর ও জানতে পারলাম হবে না।
গত বার ও এই ঘটনা ঘটেছে।
ভাইবা ভালো দেবার পর ও হয় নি।

এবার অফিসের একজন বলল, ভাই এভাবে হবে না, খরচ করতে হবে। খুব কম করে হলেও ২০ লক্ষ, পারলে বলেন ৩ দিনের মধ্যে দিতে হবে। তাহলে আপনার চাকুরী হয়ে যাবে। আপনার রেজাল্ট ভালো আছে।
।।
আমি কি যেন মনে করে রাজী হয়ে গেলাম।
কিন্তু আমার পেনশান ভুগী বাবার কাছে তো এতো টাকা নাই। তারপর ও ৩ দিন সময় নিলাম।
।।
রাতে আমার এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালাম, উনি বলল, দেখি কি ব্যাবস্থা করতে পারে।
সকালে আমি বাড়ী পোঁছালাম।
সকালে সে ভাইয়ের দোকানে গিয়ে আবার বিস্তারিত আলাপ আলোচনা করলাম।
কিন্তু এতো টাকা কয় পাবো। আমার বাবার পেনশানের প্রায় ১২ লক্ষ টাকা আছে, তাহলে আমার প্রয়োজন এখন ও ৮ লক্ষ টাকা।
।।
দুপুরে খেয়ে শুয়ে আছি। ভাইয়া ফোন করলো। বলল, বিকেলে দোকানে দেখা করতে, মনে হয় একটা পথ হয়ে গেছে।
বিকেলে আমি দোকানে গেলাম। উনি বলল, একজন আমাকে টাকা দিতে রাজী আছে, কিন্তু ওনার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিবে, মেয়েও নাকি অনেক সুন্দর, একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ে।
মনে মনে ভাবলাম, কিছু পেতে হলে কিছু ত্যাগ করতে হবে, কেউ স্বার্থ ছাড়া এতো টাকা দিবে না, হয়তো আমিও না। তাই আমি ওনার সাথে দেখা করতে গেলাম।
।।
আমাকে ফোন নাম্বার আর ঠিকানা দেওয়া হলো। আমি ওনাকে ফোন করতেই উনি বলল, উনি আমাকে এক যায়গায় ডাকল, আমি হাঁটা শুরু করলাম, বেশি দূর না ১০-১২ মিনিট লাগবে। আমি সাথে সাথেই একজন কে ফোন করলাম, তারপর ঐ পরিবারের ব্যাপারে খোঁজ নিতে শুরু করলাম , তারপর আরও ২ জন কে ফোন করলাম, মেয়ে ভালো কিন্তু বাবা “আঙুল ফুলে কলা গাছ” কারণ বাব-দাদার কিছু ছিল না তাহলে উনি এতো টাকার মালিক হলেন কীভাবে? এখানে ১ টা বাড়ী শহরে একটা, বাগান, পুকুর, মার্কেট সব আছে, এতো টাকা কোথায় পেলেন?
।।
ভাবতে ভাবতে আমি চলে গেলাম, আমার হবু শ্বশুরের কাছে।
আমি- আসসালামুআলাইকুম।
হবু শ্বশুর- আরে ইমন বাবা! আসো।
আমি- জি
হবু শ্বশুর- রফিক আমাকে ফোন করে সব বলল, আমি রাজী আছি, তুমি চিন্তা করো না। ১০ লক্ষ না আমি পুরো ২০ লক্ষ টাকা দিবো। টাকা টা আমার কাছে কিছু না, তোমার মতো একটা ভালো ছেলে আমার জামাই হবে এর থেকে আর কি চাই।
।।
আমি- আপনি জানেন আমার কিসের মধ্যে চাকুরী হচ্ছে?
হবু শ্বশুর- হ্যাঁ! মনে হয় পুলিশের মধ্যে।
আমি- আপনি কি করেন?
হবু শ্বশুর- আমি?
আমি- হ্যাঁ, আপনি কি করেন?
হবু শ্বশুর- এই তো আমার পুকুর আছে, দোকান আছে, দুইটা বাগান আছে, শহরে একটা বাড়ী আছে, আরও অনেক জমি জায়গা আছে।
আমি- এগুলো নিজে কিনেছেন নাকি আপনার বাবা দিয়েছে?
হবু শ্বশুর- আমি নিজে কিনেছি।
।।
আমি- আপনার বিয়ের পর কি থেকে শুরু করেন?
হবু শ্বশুর- এসব আবার কি ধরণের প্রশ্ন?
আমি- আমি কি খারাপ কিছু জিজ্ঞেস করেছি?
হবু শ্বশুর- না তা না, আমার বাবা অনেক গরীব ছিল, আমারাও পড়াশুনা করতে পারিনি, একটা ছোট্ট দোকান দিয়ে আমার জীবন শুরু। এখন আমার দোকানে মাসে ৮০ হাজার টাকা ইনকাম হয়।
।।
আমি- ৮০ হাজার?
হবু শ্বশুর- হ্যাঁ। আর বাগান পুকুর আর শহরের বাড়ী থেকে মাসে আরও ১ লক্ষ টাকা ইনকাম আসে।
আমি- আমি যতো দূর ধারণা ১০ বছর আগেও আপনার এই দোকান আর গ্রামের বাড়িটা ছিল না।
হবু শ্বশুর- হ্যাঁ তুমি ঠিক বলেছো।
আমি- ২৫ বছর দোকানদারী করে আপনি এক টুকরো জমি কিনতে পারেনি, তাহলে এই ১০ বছরে কীভাবে শহরে একটা বাড়ী, বাগান, পুকুর কিনলেন? একটু বলবেন প্লিজ।
।।
হবু শ্বশুর- মানে কি বলতে চাও তুমি?
আমি- আমি যেটা বলতে চাই আপনি সেটা ভালো করেই বুঝচ্ছেন। ক্ষমা করবেন চাচা! এই শরীর সৎ রক্ত দিয়ে তৈরি, হয়তো আজ ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিতে হচ্ছে, এজন্য টাকার প্রয়োজন, তাই বলে বাবার সৎ টাকার সাথে আপনার এই হারামের টাকা মিশাবো না।
হবু শ্বশুর- বাস্তব অনেক কঠিন, কেউ ইচ্ছা করে খারাপ পথে যায় না বাবা!
।।
আমি- আমার গরুর মাংস খুব প্রিয়! কিন্তু গত ঈদের পর মনে হয় না নিজেদের বাড়ীতে গরুর মাংস হয়েছে। কাল রাতে যখন ঢাকা থেকে বাড়ী আসি। তখন আমার পকেটে ১৫৬ টাকা ছিল। আমি সারা রাত ট্রেনে দাঁড়িয়ে বাড়ী এসেছি। রাতে শুধু ১০ টাকা দিয়ে ২ টা রুটি খেয়েছিলাম।

কিন্তু না কারো থেকে কিছু চেয়েছি না চুরি করেছি। আল্লাহ্‌ তার প্রিয় বান্দাদের-কেই পরীক্ষা করে। ঘুষ দিয়ে ঢুকছি বলেই যে আমি ঘুষ খাবো, এটা যদি ভাবেন তবে ভুল ভাব্বেন, মনে রাখবেন ড্রেন পরিষ্কার করতে হলে ড্রেনে নামতেই হবে। আল্লাহ্‌ আপনাকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেছিলো, আপনি ধৈর্য ধরেন নি, কিন্তু আমি হার মানবো না।
।।
হবু শ্বশুর- কিন্তু?
আমি- আমাকে মাফ করবেন, আপনি আপনার মেয়ের জন্য অন্য ছেলে খুঁজে নিবেন। আর এই চায়ের জন্য অন্য মুখ।
।।
এরপর ওখান থেকে চলে আসলাম।
আসতে আসতে ভাবলাম, অনেক বড় বড় হাদিস তো ঝাড়লাম, কিন্তু আর আমার সময় ২ দিন। এতো টাকা কই পাবো?

রাস্তায় হাঁটছি। হটাৎ একজন ডাক দিলো, পিছনে ঘুরে দেখলাম স্যার একটা দোকানে বসে আছে। যদিও উনি আমার শিক্ষক না। কিন্তু শিক্ষক তো।
আমি- স্যার! আসসালামু……
স্যার- অলাইকুমআসসালাম… কি খবর তোমাকে তো দেখা যায় না, চাকুরী পেয়েছো নাকি?
আমি- জি না স্যার। তবে চেষ্টায় আছি।
স্যার- চা খাবা?
আমি- জি।
স্যার- আচ্ছা বলছি। তো কি খবর।
।।
চা খেতে খেতে একটা কথা মনে পড়লো, স্যারের তো খুব সম্ভবত ২ টা মেয়ে আছে, মনে হয় এখন ও কারো বিয়ে হয় নি। মেয়ে গুলো তো অনেক ভালো, যদিও কোনটার সাথে যেন আমার একবার ফোনে ঝগড়া হয়, যায় হোক সেটা অতীত।
।।
আমি- স্যার একটা কথা বলতাম।
স্যার- হ্যাঁ বলো।
আমি- এখানে না এখানে অনেক মানুষ। মাগরিবের সময় প্রায় হয়েই আসছে, চলেন যায় মসজিদে।
স্যার- ঠিক আছে চলো যায়।
।।
আমি সবার সামনে বলতে ভয় পাচ্ছিলাম, কারণ স্যার অনেক সৎ আর খুব কড়া স্বভাবের মানুষ, সবাই তাকে নাকি অনেক ভয় করে। যদিও আমি করি না, তারপর ও… ওনার সম্মানের ব্যাপার।
স্যার- কি বলবা বলো।
আমি- ভাবছি কোথায় থেকে শুরু করবো।
স্যার- যা বলতে চাও বলে দাও। তুমি আমার ছেলের মতো।
।।
আমি- স্যার গত কালকে আমার যে চাকুরীর ভাইবা ছিল, ওখানে টাকা না দিলে আমার চাকুরী হবে না। পুলিশ হয়ে দেশের জন্য কিছু করবো এটা আমার ছোট বেলা থেকে ইচ্ছা, এবার শেষ সুযোগ। কারণ আর ৬ মাস পর সময় শেষ। ওনারা ২০ লক্ষ টাকা নিবে। কিন্তু আমার আব্বুর মাত্র ১২ লক্ষ টাকা আছে। আপনার তো ২ টা মেয়ে আছে, আপনি আপনার যে কোন মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিয়েন, কিন্তু আমাকে ৮ লক্ষ টাকা দেন। প্রয়োজনে এই ৮ লক্ষ টাকা ভবিষ্যতে আমাদের আপনার অন্য মেয়ের থেকে কম দিয়েন।
।।
স্যার- তুমি টাকার জন্য আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও? নাকি আমার মেয়েকে বিয়ে করবা তাই টাকা চাচ্ছো?
আমি- স্যার অবশ্যই আমার টাকার প্রয়োজন, তবে আমি যতদূর শুনেছি আপনার মেয়েরা অনেক ভালো, অনেক পর্দাশীল, এজন্য আমি তাকে বউ বানাতে চাই। এখন অবশ্যই আমার টাকার প্রয়োজন বেশি, তবে এই মসজিদে বসে আপনাকে বলছি, আপনার মেয়েকে সুখে রাখার জন্য সম্ভাব্য যা যা করা যায় একজন স্বামী হিসাবে সব করবো।
স্যার- ঠিক আছে আমি তোমাকে কাল সকালে জানাবো।
আমি- জি আচ্ছা ধন্যবাদ। তবে এটা মনে রাখবেন, এখন আপনি শেষ ভরসা, আপনি পারেন এই ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে।
।।
পরের দিন সকালে স্যার ফোন করে টাকা দিয়ে দিলো।
আমি তারপরের দিন যথারীতি ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলাম। ৩ দিন পর আমার চাকুরীর কাগজ চলে আসলো। ১ মাস পর ট্রেনিং শুরু।
।।
সে দিন ছিল রবিবার!
বিকেলে আমরা পরিবার স্যারের বাড়ী গেলাম।
আজ আমাদের বিয়ে ঠিক হবে, হয়তো বিয়ে হয়েও যেতে পারে। ওনারা যা চাই আমি সেটা করবো। আমি এখন ও মেয়েটাকে দেখিনি।
স্যার আব্বুর সাথে কথা বলতে শুরু করলো। আমি ঘরের বাইরে একটা শিউলি ফুলের গাছ দেখলাম, কেন জানি শিউলি ফুলের প্রতি আমার একটা অদ্ভুত টান আছে। যেহেতু শীতের শুরু তাই ফুল ফুটবে ফুটবে ভাব তাই আমি বাইরে গেলাম। ফুল গাছে হাত দিবো ঠিক তখন ই একজন বলল, ঐ হাত দিবেন না।
আমি কিছুটা চমকে পিছনে ফিরে তাকালাম।
।।
মেয়েটা- আপনার সাথে আমার কি শত্রুতা আছে? বেছে বেছে সব সময় আমার ভালোবাসার জিনিস গুলোতে হাত দেন কেন?
আমি- আমি আবার আপনার কি ক্ষতি করলাম?
মেয়েটা- কয়েক বছর আগে আপনার জন্য আব্বু আমাকে প্রথমবার বকেছিল, এমন কি মারতেও হাত উঠিয়ে ছিল। আমি রাগ করে ২ দিন খায় নি, শেষে আমাকে স্যালাইন করতে হয়েছিলো।
আর কাল আমাকে হটাৎ বাড়ী ডাকলো।
।।
এসে জানতে পারলাম আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে, তাও আপনার সাথে। পৃথিবীতে কি আমার বাপ আর ছেলে খুঁজে পেলো না। দুইটা জিনিস আমার শত্রু, যাকে দেখলেই আমার পিটাইতে ইচ্ছা করে।
এক আপনি আর দ্বিতীয় পুলিশ
আমি- বিয়ের পর বউয়ের হাতে মার খাবো এটা কখনও আশা করিনি।
মেয়েটা- ঐ কিসের বউ? আমি কেন আপনাকে বিয়ে করবো?
।।
আমি- আপনাকে আপনার আব্বু কিছু বলেনি?
মেয়েটা- না কি বলবে? বলল, আপনার নাকি কিসের তাড়াতাড়ি চাকুরী হবে, আপনি নাকি অনেক ভালো ছেলে তাই আপনার সাথে আব্বু বিয়ে দিবে। আচ্ছা আপনি কোন দিক দিয়ে ভালো, আমি তো সেটায় বুঝিনা।
দেখলে তো ভয় লাগে, আপনার সাথে ১ মিনিট কাটাতে আমার কষ্ট হয় আর আপনার সাথে সারা জীবন থাকতে হবে। ভাবতেই ভয় লাগে।
।।
আমি- আপনি কি অন্য কাউকে পছন্দ করেন?
মেয়েটা- না, আমি এসব পছন্দ করি না। তবে আমি পড়া শেষ হবার আগে বিয়ে করতে চাই না। আর আপনাকে তো আরও না।
আমি- আমি কি উপকার করতে পারি?
মেয়েটা- জীবন তো শেষ হয়েই গেছে তারপর ও যদি উপকার করতে চান তবে দুই বছর পর বিয়ের ব্যাবস্থা করেন। অন্তত এই দুই বছর একটু মন খুলে অক্সিজেন গ্রহণ করি। কারণ মনে হয় না যে বিয়ের পর আপনি আমার ইচ্ছা মতো অক্সিজেন নিতে দিবেন।
।।
আমি- আমাকে এতোটা খারাপ মনে হয়?
মেয়েটা- কি জানি আমার তো এটায় মনে হয়।
আমি- ঠিক আছে, বিয়ে ২ বছর পর। তাও আপনার ইচ্ছা হবার পর।
মেয়েটা- আমার ইচ্ছা?
আমি- হ্যাঁ আপনি যখন রাজী হবেন।
মেয়েটা- তাহলে বুড়া হয়ে যাবেন।
আমি- দেখি না কি হয়। আচ্ছা আপনি কোথায় পড়েন? আর আপনার নাম কি?
মেয়েটা- আমার নাম অনন্যা। আর আমি ডাক্তারি পড়ি, ২য় বর্ষ।
।।
আমি- আপনারা কয় ভাই বোন।
মেয়েটা- আমার একটা আপু আছে, এবার অনার্স শেষ বর্ষ। আর একটা ছোট ভাই আছে।
আমি- আপনার বড় বোনের বিয়ে হয়েছে?
মেয়েটা- না। আমার ও তো ওটায় কথা, আপুর বাদ দিয়ে আমার বিয়ে কেন?
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম।
মেয়েটা- কি বুঝলেন।
আমি- বিয়ে দুই বছর পর। তবে আজ নাক-ফুল নিয়ে এসেছি, ওটা পড়বেন তো?
মেয়েটা- ইচ্ছা তো নাই তবে বাবার সম্মান নিয়ে কথা তাই পড়তে হবে।

আমাদের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। অনন্যা হাঁসার চেষ্টা করছে আর আমিও। এমন সময় স্যার মানে আমার হবু শ্বশুর ডাক দিলো।
স্যার- বাবা, একটা কথা ছিল।
আমি- জি বলেন।
স্যার- আমি তো ভাবছিলাম যে বিয়েটা আজাকেই দিয়ে দিবো। তোমার কি কোন সমস্যা?
আমি- না আমার সমস্যা নাই, আপনার মেয়ে আমাকে পছন্দ করে না, তার ওপর নাকি সে পুলিশকেও পছন্দ করে না, এখন সে যদি জানতে পারে আমি যে চাকুরীটা পাবো সেটা পুলিশের, তাহলে সে খারাপ ভাব্বে, আর এটা আমাদের সম্পর্কের জন্য ভবিষ্যতে অনেক সমস্যা করবে। তাই আগে আমি এটা প্রমাণ করি যে আমি খারাপ ছেলে না বা আমার চাকুরী খারাপ না। আমাকে ১ বছর সময় দেন। আমিও ট্রেনিং শেষ করে আসি তারপর বিয়ে করবো।
স্যার- ঠিক আছে বাবা।
।।
আমি- স্যার! একটা কথা বলতাম,
স্যার- কি বলো।
আমি- অনন্যা আপনার ছোট মেয়ে, বড় মেয়ে থাকতে ছোট মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিচ্ছেন কেন? অনন্যা তো ডাক্তারি পড়ে, যে কোন ভালো যায়গায় তার বিয়ে হয়ে যেতো।
স্যার- তুমি সে দিন আমাকে কি বলেছিলা মনে আছে? তুমি বলেছিলা যে আমার যে কোন মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে রাজী আছো। মানে কোনটার সাথে বিয়ে দিবো তুমি সেই সির্ধান্ত আমার ওপর রেখেছিলা। দুই মেয়ের মধ্যে আমার কাছে যে মেয়ে তোমার বউ হিসাবে যোগ্য মনে হয়েছে আমি সেই মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।
।।
আমার ছোট মেয়েটা কখনও কারো কাছ থেকে কিছু চাই না, বেশি কথাও বলে না। ওর জন্য আমার অনেক বেশি চিন্তা হতো বিয়ের পর ওর স্বামী ওকে কীভাবে মেনে নিবে। কিন্তু তোমার ওপর অনেক ভরসা আছে, আর সেই ভরসা যে মিথ্যা না আজকেই তার প্রমাণ করে দিলা। স্বামী-স্ত্রী যদি একটা ভালো বন্ধু হতে পারে তবে এই পৃথিবীতে এর থেকে ভালো সম্পর্ক আর দ্বিতীয়টা হবে না।
।।
আমি- দুয়া করবেন স্যার!
স্যার- অবশ্যই! বাবা-মায়ের সপ্নই তো হচ্ছে ছেলে মেয়ে একটু সুখে থাকবে।
আমি- আমার মা কি বলে জানেন স্যার? একটা মানুষের ২ টা পক্ষ থাকে যা তাকে নানা বিপদ থেকে রক্ষা করে, এক তার মা-বাবা দ্বিতীয় তার শ্বশুর শাশুড়ি। যদিও খুব কম মানুষ এই দ্বিতীয় সুযোগ টা পায়। আমি খুব ভাগ্যবান যে আপনার মতো একজন মানুষ আমার শ্বশুর হয়েছে। ঠিক আছে স্যার আজ আসি।
স্যার- কবে থেকে ট্রেনিং?
আমি- আর ২২ দিন পর।
স্যার- আচ্ছা ঠিক আছে যাও।
।।
সে দিন অনন্যাদের বাড়ী থেকে চলে আসলাম! কিন্তু অনেক কিছু শিখলাম, পরের দিন আমার সাথে বাজারে স্যারের সাথে দেখা হলো।
আমি- আসসালামু…।
স্যার- অনন্যার আম্মু একবার তোমাকে ডেকেছে, দুপুরে পারলে একবার এসো।
আমি- জি স্যার আসবো।
।।
দুপুরে আমি অনন্যাদের বাড়ী গেলাম! শাশুড়ি আমার অনেক সেবা যত্ন করলো, বলল, অনন্যার ব্যাবহারে যেন রাগ না করি।
আমি- যখন ভরসা করে আমার ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন তখন চিন্তা করবেন না।
।।
অনন্যা বাড়িতেই ছিল, কিন্তু আমাকে দেখে যে খুব খুশী হয় নি সেটা বুঝতে পারলাম।
আমি আসার সময় অনন্যার ঘরে গেলাম।
আমি- আসসালামু…।
অনন্যা- কি ব্যাপার! আপনার হাব-ভাব তো ভালো লাগছে না, আজ এই বাড়ীতে কেন আবার? ঘর জামাই হবার পরিকল্পনা আছে নাকি?
আমি- আমিও মাঝে মাঝে ভাবি, একটা মেয়ে যদি তার শ্বশুর বাড়ীতে থাকতে পারে তাহলে ছেলে কেন পারবে না?
অনন্যা- আমার বাপের এতো বেশি ভাত হয় নি যে এই রকম একটা গাধাকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে।
আমি- আচ্ছা বসে খাবো না, কাজ করেই খাবো।
অনন্যা- কি কাজ আছে শুনি?
।।
আমি- এতো একটা দামী হীরার টুকরো কে আমার হাতে দিয়েছে, এটা আগলে রাখা কি কম বড় কাজ?
অনন্যা- আহারে…। এখন ও বিয়ে হয় নি। নিরাপত্তা দূরত্ব বজায় রাখেন।
আমি- আমিও ওটায় ভাবছি! কীভাবে দূরত্ব বজায় রাখবো, চলেন একটু সামনে নদীর পাড় থেকে ঘুরে আসি?
অনন্যা- মাথা খারাপ?
আমি- কেন আপনি নদী পছন্দ করেন না?
অনন্যা- আপনাকে পছন্দ করি না।
আমি- আচ্ছা আমাকে বেশি অপছন্দ করেন নাকি নদী বেশি পছন্দ করেন?
অনন্যা- কি প্যাচিয়ে প্রশ্ন করেন? যাবো না আপনার সাথে।
আমি- আচ্ছা দেখছি।
।।
আমি স্যারকে গিয়ে বললাম, একটু অনন্যাকে নিয়ে ঘুরতে চাই। ১ ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসবো। স্যার আমার কথা শুনে অনন্যাকে ডাক দিলো।
।।
অনন্যা- এভাবে ব্ল্যাক মিল করে নিয়ে আসা ঠিক না।
আমি-কেন অন্য কারো বউকে নিয়ে এসেছি নাকি? নিজের বউ…
অনন্যা- ওখানেই থামেন।
আমি- কেন?
অনন্যা- বিয়ে এখন ও হয় নি।
আমি- আপনার নাক ফুল টা কিন্তু অনেক সুন্দর মানিয়েছে। চয়েস আছে আমার বলতে হবে।
অনন্যা- আল্লাহ্‌! কি আজব মানুষ! নিজের সুনাম কীভাবে পেঁচিয়ে নিজেই করছে। আগেই তো বুঝেছি আপনাকে বিয়ে করলে আমার সব শেষ।
।।
আমি- আচ্ছা আপনার কোন রং পছন্দ?
অনন্যা- কেন?
আমি- না বলেন শুনি।
অনন্যা- লাল আর হলুদ
আমি মনে মনে বললাম, এইগুলো আবার রং নাকি?
অনন্যা- কিছু বলছেন নাকি?
আমি- না! খুব সুন্দর চয়েস। লাল আপনাকে ভালো মানাই।
অনন্যা- আর আপনাকে যে রং দেওয়া যাবে সেটায় বে রং হয়ে যাবে।
আমি- এভাবে অপমান করলেন? ঠিক আছে মেনে নিলাম।
।।
অনন্যা- কেন ঝগড়া করবেন নাকি?
আমি- না স্যার বলছিল যে আপনি নাকি কোন কথা বলেন না, এদিকে যে ৫ মিনিটেই এক খতম হয়ে গেলো।
অনন্যা- আমি আরও অনেক কিছু পারি। এক বার আমাকে কলেজে বিরক্ত করছিলো, দুই দিন মানা করা সত্তেও শুনে নি। আরেক দিন যখন বিরক্ত করতে এসেছিলো, লোহার ইস্কেল দিয়ে হাত কেটে দিয়েছিলাম। পরে আর কোন দিন আমার সামনে আসে নি।
।।
আমি- আমাকে ভয় দেখাছেন নাকি?
অনন্যা- আগে থেকে সতর্ক করছি।
আমি- আমি ভিতু না।
অনন্যা- আমি জানি, দুই বছর আগে একদিন দেখেছিলাম, আপনি মারা মারি দেখে কেমন পালিয়ে যাচ্ছিলেন।
।।
আমি- না মানে সেটা আলাদা কথা ছিল।
অনন্যা- বুঝি বুঝি।
আমি- চলেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
অনন্যা- হা হা হা ।
আমি- হাসছেন কেন?
অনন্যা- আপনার ভয় পাওয়া দেখে। আমার বাবাকে কতো ভয় পান?
আমি- ভয় না সম্মান করি, একবার বলা মাত্রই আপনাকে আসার অনুমতি দিয়েছে, সেটার মান রাখতে হবে না।

অনন্যা- আপনি এতো ভালো ছেলে সাজেন কেন?
আমি- সাজবো কেন? আমি সব সময় ভালো।
অনন্যা- অহ রে ভালো ছেলে। আমি সব জানি, আপনি কতো খারাপ। কিন্তু আমার কপাল খারাপ না হলে আপনার মতো খারাপ মানুষ আমার ভাগ্যে জোটে?
আমি- আমি ভাগ্যে না থাকলে আরও খারাপ জুটতো। এখন বাড়ী চলেন।

কয়েকদিন থেকে অনন্যাদের বাড়ী থেকে আসার পর আর তার সাথে কথা হয় নি, অবশ্য প্রতিদিন আমার হবু শ্বশুরের সাথে দেখা হয়, মাঝে মাঝে আমার জন্য আমার শাশুড়ি রান্না করে পাঠায়। ভালোই লাগে শাশুড়ির হাতের রান্না খেতে, আমার শাশুড়ি নাকি আমার আম্মু আর আব্বু কে অনেক আগে থেকেই চিনে তাই একটু বেশি আদর যত্ন ।
।।
আজ পিয়ন চিঠি দিয়ে গেলো। সামনে মাসের ৩ তারিখে ঢাকায় যেতে হবে মানে আর মাত্র ৪ দিন পর ট্রেনিং শুরু।
বিকেলে শ্বশুরের সাথে দেখা হলো। উনি কিছু ভালো উপদেশ দিলেন, আর পরের দিন ওনাদের বাড়ীতে ডাকলেন, আমি ভাবলাম হয়তো অনন্যা বাড়ী এসেছে।
।।
পরের দিন ওনাদের বাড়ী গেলাম। কিন্তু অনন্যাকে দেখতে পেলাম না, খারাপ লাগলো, সে যায় ভাবুক যতোই খারাপ ভাবে কথা বলুক, তাও ভালো লাগে।
আসার সময় শাশুড়ি আমাকে ৫০০০ টাকা হাতে দিলো, সাথে বলল, বাবা! ইচ্ছা ছিল আরও বেশি দেবার কিন্তু গত মাসে অনন্যার জন্য অনেক টাকা লেগেছে তাই একটু সমস্যা।
আমি- এখন আমাকে টাকা না দিলেও হতো।
শাশুড়ি- না বাবা, নতুন এক যায়গায় যাচ্ছো টাকা তো লাগবেই, এখন এটা নিয়ে যাও। টাকা লাগলে ফোন দিবা লজ্জা পাবা না, আমি তোমার মায়ের মতো। আর কাল একবার মেয়ের সাথে দেখা করে যেও।
।।
পরের দিন আমি বিকেলে অননার সাথে দেখা করতে গেলাম।
আমি ফোন দিলাম।
অনন্যা- আসসালামু…। কে বলছেন?
আমি- নীরব।
অনন্যা- হ্যাঁ বলেন।
আমি- আপনাদের হাঁসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
অনন্যা- আমি এখন আসতে পারবো না অনেক কাজ আছে।
আমি- ঠিক আছে আমি শ্বশুর কে ফোন করছি।
অনন্যা- এই না। আসছি।
।।
১০ মিনিট পর অনন্যা এসে আমাকে বলল,
অনন্যা- আপনি এতো খারাপ কেন? সব সময় আমাকে ব্ল্যাক মিল করেন কেন?
আমি- প্রথমে তো ভালো ভাবেই আসতে বললাম। আসলেন না।
অনন্যা- কেন আসবো ? এখন ও আমাদের বিয়ে হয় নি। আর বিয়ের আগে এভাবে ঘুরে বেড়ানো আমি পছন্দ করি না।
।।
আমি- কাল আমি ঢাকা চলে যাবো। আমার ট্রেনিং শুরু হবে।
অনন্যা- ওহ।
আমি- আজকে অনন্ত আমাকে ২-৩ ঘণ্টা সময় দেন।
অনন্যা- আচ্ছা ঠিক আছে চলেন।
।।
এরপর আমি অনন্যাকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম, তারপর অনেক যায়গায় ঘুরলাম। ওকে মার্কেটে নিয়ে গেলাম। তারপর একটা নতুন বোরখা কিনে দিলাম, যদিও সে নিতে চাচ্ছিল না।
তারপর আমরা ঘুরতে ঘুরতে নদীর পাড়ে আসলাম। তারপর দু-জন চুপ করে কিছুক্ষন সময় পার করছিলাম।
।।
কিন্তু এই সময় বাধ সাধলো পুলিশ।
দারোগা- এই বেটা এখানে কি করিস?
আমি- জি এই তো বসে আছি।
দারোগা- অন্ধকারে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করছো?
আমি- ইনি আমার হবু বউ। আর রাত ৮ টার সময় এখানে বসা যাবে না, এটা তো কোথাও উল্লেখ করা নাই।
দারোগা- তুই বেশি কথা বলিস, একবার থানায় নিয়ে গেলে সব বুঝবি।
আমি- আপনি কি দোষে থানা নিয়ে যাবেন?
।।
এরপর এক কনস্টেবল এসে আমাকে বলল, ভেজাল করিয়েন না ভাই, ৫০০ টাকা দিয়ে দিন, আমি স্যার কে বুঝিয়ে মানিয়ে নিবো।
আমি ভাবলাম, কাল ট্রেনিং! এখন ভেজাল করাটা ঠিক হবে না। আমি টাকা দিয়ে দিলাম।
দারোগা- আজ মন ভালো আছে তাই তোকে ছেড়ে দিলাম।
।।
অনন্যার দিকে তাকালাম, দেখলাম সে কাঁদছে।
আমি- এই পাগলী কাঁদছো কেন?
অনন্যা- এজন্য আমি পুলিশকে ঘৃণা করি। আজ থেকে আরও বেশি করবো। আর আপনিও ভয়ে টাকা দিয়ে দিলেন, এর মানে আমরা কি এখানে অবৈধ কোন কাজ করছিলাম যে ওনাকে টাকা দিতে হবে।
আমি- আচ্ছা ঐ পুলিশ যদি এসে ক্ষমা চাই তবে আপনি খুশী হবেন?
অনন্যা- সেটা কি সম্ভব? ওরা মানুষ না।
আমি-একটু অপেক্ষা করেন।
।।
আমি এগিয়ে গেলাম, একটু যেতেই দেখালাম, এখানে আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে।
দারোগা- কিরে তুই আবার এই দিকে কেন?
আমি- কতো ইনকাম হলো?
দারোগা- হারামির বাচ্চা কয় কি?
আমি- আচ্ছা আপনার চাকুরী কয় দিন হলো?
দারোগা- ৮ বছর! কেন?
আমি- সামনে চাকুরী করার ইচ্ছা আছে তো?
দারোগা- কেন তোর বাপ-দাদা অনেক বড় নেতা নাকি?

আমি- এখন যদি আপনি সবার টাকা ঘুরিয়ে দিয়ে, সবার কাছ থেকে মাফ না চান, তবে আপনার ভবিষ্যৎ কি হবে একটু শুনে নেন।
এক বছর পর আপনার একটা এএসপির টিমের মধ্যে বদলী হবে যেখানে আপনি সব সময় ডিউটি করবেন, আর সাসপেন্ড হবেন, তারপর আপনাকে একটা নেতার সাথে ভেজাল লাগিয়ে দিবে তারপর আপনার বউ কিডন্যাপ হয়ে যাবে, আপনি কাঁদবেন, তারপর আপনাকে বাধ্য করা হবে আপনার চাকুরী ছাড়তে। কারণ আপনার মতো মানুষ পুলিশের যোগ্য না।
দারোগা- হা হা হা! হাঁসি পেলো, সাব্বির কিছু শুনলি। এএসপি স্যার কি তোমার দুলাভাই?
।।
আমি তখন আমার ট্রেনিং এর কাগজটা বের করে দেখলাম। উনি দেখেই চোখ বড় বড় করে দিয়েছে।
দারোগা- ভাই! আগে আপনার পরিচয় দেন নি কেন? আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
আমি- ওখানে যে মেয়েটা আছে না? ওকে সম্মানের সহিত মাফ চেয়ে আসেন।
দারোগা- জি স্যার! এখুনি যাচ্ছি।
।।
দারোগা- ম্যাডাম! আমাকে মাফ করে দিবেন। আমার ভুল হয়ে গেছে। পুলিশ হিসাবে আমার দায়িত্ব আপনাদের সাহায্য করা। সেটা না করে আমি উল্টো আপনাদের কষ্ট দিয়েছি। আমাকে মাফ করেন ম্যাডাম। স্যার, এই নেন টাকা। এবার তো আমাকে মাফ করেন।
অনন্যা- না ঠিক আছে।
অনন্যা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, চলেন।
দারোগা- স্যার কোথায় যাবেন? আমার গাড়ীতে চলেন।
আমি- না থাক! আমরা চলে যেতে পারবো।
দারোগা- এই সাব্বির! স্যারের জন্য একটা রিক্সা করে দে।
।।
এতএব আমরা রিক্সাতে করে হাঁসপাতালের সামনে চলে আসলাম।
অনন্যা- ওনাকে কি বললেন যে উনি এই রকম স্যার আর ম্যাডাম করতে শুরু করলো।
আমি- সবাই আমাকে চিনতে পারলো শুধু আপনি একটু চেষ্টা করলেন না।
অনন্যা- আসল কথা বলেন। ঢং করেন না।
আমি- আমি কাল কি চাকুরীর জন্য যাবো জানেন?
অনন্যা- জানি না।
আমি- পুলিশ! এএসপি। আর একটা কথা! সব পুলিশ খারাপ না।

পরের দিন ঢাকা চলে গেলাম। ৪ মাস পর আমি ছুটিতে বাড়ী আসলাম।
অনন্যাকে দেখার খুব ইচ্ছা হলো, তাই পরের দিন সকালেই আমি হাসপাতাল চলে গেলাম। তখন অনন্যার ডিউটি ছিল তাই সে বের হতে পারবে না, তাই আমি ঢুকে গেলাম। আমি একটা ঘরে গেলাম, ওখানে অনেক রুগী, ওখানে অনন্যা সহ আর ২ জন ডাক্তার ছিল।
।।
আমি এক নজরে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছি। একজন এসে বলল,
একজন ডাক্তার- সমস্যা কি আপনার? এখানে আপনার কোন রুগী আছে?
আমি- আমি রুগী।
একজন ডাক্তার- কি হয়েছে?
আমি- আপনি পারবেন না। ঐ যে অনন্যা ম্যাডাম আছে না, ওনাকে পাঠান।
একজন ডাক্তার- বেশি হয়ে যাচ্ছে, ইভটিজিং কেসে ভিতরে দিয়ে দিবো ।
অনন্যা- আপনি যান(ডাক্তার কে বলল) আমি দেখছি।
।।
একজন ডাক্তার- কিন্তু এই ছেলের এতো সাহস, হাঁসপাতালের ভিতরে এসে, তাও আবার ডাক্তারের পিছনে লেগেছে। ওকে পুলিশে দিতে হবে। এদের মতো ছেলেদের জন্য আজ দেশের এই অবস্থা।
অনন্যা- আরে ভাই যাও না। এই ছেলে আমার হবু বর। আর একে পুলিশে কি দিবেন, সে নিজেই পুলিশ।
আপনি কিছু মনে করবেন না, আপনি এখন চলে যান আমি বিকেলে বাড়ী যাবো।
।।
আর কিছু বললাম না, চলে আসলাম।
দুই দিন থাকার পর আমি আবার ঢাকা চলে গেলাম।
এবার একবারেই ট্রেনিং শেষ করে বদলী হয়ে এই শহরেই আসলাম।
নতুন নতুন দায়িত্ব পেয়েছি তাই একটু নিজেকে সামলে নেবার সময় দিচ্ছি, আর এখন ও অনন্যা আমাকে ভালো ভাবে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি হয়তো।
।।
এক বছর হয়ে গেলো। অনন্যার পড়াশুনা ও এখন ও প্রায় ২ বছর। দেখা যাক কি হয়। চাকুরী জয়েন্ট করে বুঝতে পারলাম, চাকুরীটা যতটা সহজ ভাবা যায় ঠিক অতটা সোজা না। প্রাথমিক পর্যায়ে আমি আসলে চাকুরীটা সম্বন্ধে বুঝতে থাকলাম।
।।
সে দিন ছিল সোমবার! দিন টির কথা আমি ভুলবো না। সে দিন আমার জন্য অনেক বড় শিক্ষা।
তখন রাত ৮ টা আমি এমনি হাঁটছি, সিভিল ড্রেসে আছি, সাথে অবশ্য পিস্তল টা আছে। রাতে এক পুলিশ পার্টি টহল দিচ্ছে। সামনে চেকপোস্ট গাড়ী সমানে চেক হচ্ছে। ভালো লাগছে এই ঠাণ্ডাতেও সবাই কি নিষ্ঠার সাথে চাকুরী করছে।
দ্রুত বেগে একটা মাইক্রবাস আসলো। আমি তখন প্রায় পাশে গেলাম। পাশের চায়ের দোকানে বসলাম।
যথারীতি একজন পুলিশ কনস্টেবল থামিয়ে ডাইভারকে বলল গাড়ী থেকে নামতে, মাইক্রো চেক করা হবে।
।।
ডাইভার ঝামেলা শুরু করলো। শেষে ডাইভার কাকে যেন ফোন করলো, ঐ ফোন দারোগা কে দেওয়াতে দারোগা বলল, গাড়ী যেতে দিতে।
ডাইভার গাড়ীতে বসবে ঠিক এই সময় আমি গেলাম। আমাকে দেখে দারোগা সালাম দিলো।
আমি- গাড়ী চেক করেন।
দারোগা- স্যার! এমপি স্যার ফোন করেছিলো।
আমি- কথা তো আমার ওটায়, মাইক্রো চেক করার জন্য এমপি কেন লাগবে। আপনি চেক করেন।
দারোগা- স্যার! বাদ দেন। এদের হাত অনেক লম্বা, যেতে দিন।
আমি- আমি চেক করেন। বাকিটা আমি দেখে নিবো।
।।
গাড়ী চেক করা হলো। প্রায় অনেক গুলো ইয়াবা পাওয়া গেলো।
আমি- বিষয়টা ভিডিও করেন। তারপর ওনাকে থানায় নিয়ে যান। আমিও আসছি যান।
।।
ঘণ্টা খানিকের মধ্যে আমি পোশাক পরে অফিসিয়াল ভাবে থানার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
ততক্ষণে এমপি স্যার এসে উপস্থিত সাথে আমাদের এসপি সাহেব ও বিষয়টা এখানেই শেষ করতে বলল। দরকার হলে যা টাকা লাগবে সব দিবে।
।।
বিষয়টা এতো দ্রুত হবে বুঝিনি, ভেবেছিলাম। সালাকে রাতে আচ্ছা করে দিবো। পরে দেখবো। কিন্তু বাপ যদি বিক্রি হয়ে যায় তখন আমি তিন দিনের ছেলে আমি কি করবো? এখানে এসপি স্যার আমার বাপ ছিল।
।।
রাত ১ টা! টাকা দিয়ে ওনারা চলে গেলো। আমি ভাগে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা পেলাম।
আমি সামনের চায়ের দোকানে গেলাম।
দারোগা- শুনেছিলাম স্যার আপনার বাবা নাকি একজন সৎ পুলিশ ছিলেন। একজন সিপাহী হয়েও উনি কোন দিন নিজের ঈমান বিক্রি করে নি। আর আপনি ওনার ছেলে হয়ে প্রথম মাসেই ৭ লাখ টাকা ইনকাম করে নিলেন?
।।
আমি- চা খান!
দারোগা- মাফ করবেন স্যার! কিন্তু এই ঘুষের টাকায় আমি কিছু খাবো না।
আমি- আমাকে এভাবে কথা বলার জন্য আপনার কি হতে পারে আপনি জানেন?
দারোগা- জানি স্যার! আপনি আমাকে সাসপেন্ড করতে পারেন।
আমি- আপনি আমার বাবার বয়সি। বসেন চা খান। আর এই চায়ের টাকা আমার শ্বশুরের, এখন ও আমি বেতন পাইনি। আচ্ছা বলেন এখানে আমি কি করবো?
।।
আপনি জানেন? আমি ২ বার পরীক্ষায় পাশ করা সত্তেও আমার চাকুরী হয়নি কারণ আমার টাকা নাই। ২০ লক্ষ টাকা দিয়ে আমি চাকুরীতে এসেছি, আমার বাবার সব পেনশানের টাকা আর আমার বউয়ের পড়ার টাকা দিয়ে আমি এসেছি।
দারোগা- এখন আপনি সেই টাকা তুলছেন?
।।
আমি- আরে বাপ! পুরো কথা তো শুনো। এখন যদি রাতে বেশি ভেজাল করতাম, আমার বদলী অন্য যায়গায় করে দিতো, সব যায়গায় একি সমস্যা। আগে শত্রু সম্বন্ধে জানি, আমি কি ওকে ছেড়ে দিবো? কিন্তু এসপি স্যার পর্যন্ত বিক্রি হয়ে গেছে, আমি এখানে একা কি করবো? আগে এমপির দুর্বল জায়গা জানতে দেন। কাল থেকে আপনি আর একটা বিশ্বস্ত টিম গঠন করেন। ৭ দিনের মধ্যে সব খবর আমার বের করে দেন। আর এই টাকা? কাল একটা সেবা নামে স্বেচ্ছা সংস্থা খুলেন, এই নামে ব্যাংকে একটা আইডি খুলে ওখানে টাকা জমা করে দিন। প্রয়োজন মতো গরীব মানুষদের সেই টাকা দেওয়া হবে।
।।
দারোগা- স্যার! আমাকে মাফ করবেন। আমি আপনাকে ভুল বুঝেছিলাম।
আমি- না ঠিক আছে। আমাদের চাকুরীটায় হচ্ছে মানুষকে সন্দেহ করা।
দারোগা- স্যার আমি কালকেই আপনাকে একটা টিম দিবো।
আমি-ঠিক আছে, এখন চলেন। অনেক রাত হয়েছে।
দারোগা-জি স্যার।
।।
পরের দিন সকালে আমি থানা গেলাম। আমাকে ৫ জন দেওয়া হলো। আমি এসপি স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিলাম এই বলে যে,কিছু পুরাতন কেস নিয়ে সময় লাগবে, তাছাড়া আমি নতুন তাই শিখার অনেক বাকী তাই আমার লোক লাগবে, আমি যেহেতু প্রথম দিন স্যারের কথা শুনে টাকা নিয়েছি, তাই স্যার বিশ্বাস করে অনুমতি দিয়ে দিলো।
।।
ওনারা সে দিন থেকে সব সময় এমপির সব তথ্য অনুসন্ধান করতে শুরু করলো, কোথায় কি আছে, কি করেছে, বাবার কি ছিল, ভাইয়েরা কি করে? সব…
প্রায় খুঁজে ২২ টা কেস হাতে পেলাম। যেগুলো রিপোর্ট করার পর আর এগিয়ে যায় নি।
।।
টিমের সাথে মিটিং করতে করতে কখন যে দপুর পার হয়ে বিকেল হয়ে গেছে আমি খেয়াল করিনি, আজ অনন্যাকে দুপুরের পর নিয়ে বাড়ী যাবার কথা ছিল। আমি তাকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আর আমি ভুলে গেছি।
আমি দ্রুত মিটিং শেষ করে গাড়ী নিয়ে দৌড় দিলাম। কিন্তু ততক্ষনে অনন্যা বাসে চলে গেছে। বুঝলাম আমি ভুলটা বড় করে ফেলেছি, ডিউটির পাশাপাশি আমাকে অনন্যার ও খেয়াল রাখতে হবে। সে আমার পরিবারের ও একটা অংশ।
।।
আমি গাড়ীর মাস্টার কে জিজ্ঞেস করলাম। বলল, ৩০ মিনিট আগে বাস ছেড়ে দিয়েছে। আমি মাস্টারকে আমার কথা বললাম, যেহেতু আমি পোশাকে ছিলাম, উনি বলল, স্যার আপনি বললে আমি বাস দাঁড় করিয়ে দিচ্ছি।
আমি- না থাক। এতে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হবে। আপনি ডাইভারকে ফোন করে বলেন একটু আস্তে চালাতে। আমারা জোরে গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছি।
।।
শুরু হলো চোর পুলিশের খেলা। আমার ডাইভার কে বললাম। শুরু হয়ে যান।
সাইরন বাজিয়ে ১০০ কিমি গতিতে ছুটতে শুরু করলো। ২০ মিনিটে আমারা গাড়ী ধরে ফেললাম। আমি বাসে উঠে দেখলাম অনন্যা চুপ করে বসে আছে। আমি ডাইভারকে ইশারা করলাম গাড়ী ছাড়তে।
আমি অনন্যার পাশে দাঁড়ালাম। পোশাক পরা একজন পুলিশের এএসপি বাসে দাঁড়িয়ে, বিষয়টা মনে হয় বড্ড বে মানান।
হেলপার এসে অনন্যার পাশের সিটে থাকা মহিলাকে বলল, চাচী আপনি এখানে এসে বসেন। ঐ সিটটা স্যারকে দেন।
মহিলা টা উঠে গেলো, কিন্তু আমি বসলাম না। অনন্যা চুপ করে আছে। আর আমিও।
।।
অনন্যা- বসেন না কেন?
আমি- তুমি তো কিছু বলছো না তাই।
অনন্যা- সব কথা বুঝি আমার কথা শুনে করেন।
আমি- না সেটা না।
অনন্যা- জানেন? ২ ঘণ্টা থেকে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম।
আমি- সরি। মিটিং এ ছিলাম।
অনন্যা- আজ ১৫ দিন থেকে আপনি এতো ব্যাস্ত যে আমাকে একবার ফোন ও করেন নি।
।।
আমি- সরি।
অনন্যা- এই শব্দ টা আমি পছন্দ করি না।
এই সময় হেলপার ভাড়া নিতে আসলো।
আমি মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিতে চাইলাম।
হেলপার- আপনাদের ভাড়া লাগবে না স্যার!
আমি- কেন?
হেলপার- আপনি এই শহরের বাবা! আপনার কাছ থেকে ভাড়া নিতে পারি?
আমি- এমনি ১ বছর থেকে বিয়ে হয় না। আবার এই পোশাকের জন্য যদি ভাড়া না নাও, তাহলে এই ম্যাডাম আর এই জীবনে আর আমাকে বিয়ে করবে না।
হেলপার- কি বলেন স্যার! আপনার মতো মানুষকে না বলবে, এই রকম পাগল এই পৃথিবীতে আছে?
আমি- কি জানি, আচ্ছা ভাড়া নেন
হেলপার- ঠিক আছে স্যার দেন। তবে স্যার মাফ করবেন।
আমি- না ঠিক আছে। সবাই সবার ঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করলেই তো হয়।

অনন্যাকে নিয়ে আমি বাস থেকে নামলাম!
আমি- এবার আমাকে তো মাফ করো।
অনন্যা- আমি মাফ করার কে।
আমি- আমার বউ।
অনন্যা- এখন ও বিয়ে হয় নি। একটু দূরে থাকেন।
।।
ঠিক এই সময় আমাকে এসপি স্যার ফোন করলো।
আমি- আসালামুআলাইকুম…
স্যার- অলাইকুম-আসসালাম। শোন একটা কথা, আমার মেয়েটা হটাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেছে, আমার তোমার এলাকাতে আজ যাবার কথা ছিল, কিন্তু এখন যেতে পারবো না, তুমি একটু ম্যানেজ করে নিবা?
আমি- স্যার আপনি কি আমাকে যেতে বলছেন?
।।
স্যার- আমি তোমাকে অনেক ভরসা করি, আমি যাওয়া আর তুমি যাওয়া এক কথা। তুমি থানা থেকে ঘুরে আসো। আচ্ছা আজকে আর আসতে হবে না তুমি কালকে বিকেলে না হয় অফিস এসো।
আমি- ঠিক আছে স্যার! আমি আমার এলাকাতেই এসেছি, এখুনি বাস থেকে নামলাম।
স্যার- তাহলে তো আরও ভালো হলো। আমি ওসিকে ফোন করে দিচ্ছি।
আমি- ঠিক আছে স্যার।
।।
অনন্যা- আপনার কি এখন ও কাজ শেষ হয় নি?
আমি- কাজ শেষ তবে দায়িত্ব শেষ না। হোটেলে চলো। দুই দিন থেকে বেতনের টাকা পকেটে নিয়ে ঘুরছি।
অনন্যা- যাবো না।
আমি- পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিবো।
অনন্যা- ভয় পাই নাকি?
।।
আমি অনন্যা কে ছাড়ায় একা একা হাঁটতে শুরু করলাম।
অনন্যা- আল্লাহ্ এতো খারাপ ছেলে তুমি আমার কপালেই ছিল?
আমি- বেশি কথা বলো না শেষে ভাত পাবো না।
অনন্যা- কেন আপনি খান নি?
আমি- কাউকে বলছিলাম দুপুরে দেখা করতে আর দুপুরে দেখা করা মানে দুপুরে ভাত খাওয়া, অফিসের কাজে কোন টায় সময় হয় নি। তুমি খেয়েছো মনে হয়?
অনন্যা- ডিউটি শেষ করে কেক খেয়েছিলাম।
আমি- জানি তুমি ও খাবা না। যায় হোক চলো।
।।
আমি অনন্যা কে নিয়ে হোটেলে গেলাম।
একটা রুমে আমি বসলাম! তারপর তারা খাবার দিলো। দুই প্লেট ভাত আর কোন রকমে এক বাটি মাংস। সব শেষ।
অনন্যা- আচ্ছা হোটেলের ঐ পাশে বসার জায়গা নাই দেখেন সবাই দাঁড়িয়ে আছে, আর এই ঘরে কেউ নাই কেন?
।।
আমি- এই পোশাকের জন্য। তুমি বুঝছো না এই পোশাকের ক্ষমতা। আমি এই শহরের প্রধান, সাধারণ ভাবে চলি বলেই কিন্তু আমি সাধারণ না। তবে আমি কিন্তু মানা করিনি।
অনন্যা- আপনি ম্যানেজার কে ডেকে বলেন যে ভিতরে যেন মানুষ আসতে দেয়।
আমি- আচ্ছা।
।।
আমি ম্যানেজারকে ডেকে বলে দিলাম। সাথে সাথেই সবাই আসতে শুরু করলো।
আমি- বিল কতো ভাই!
ম্যানেজার- স্যার! আপনি আমাদের হোটেলে এসেছেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য। টাকা লাগবে না স্যার।
আমি- আরে পাগল নাকি? আমার বাড়ী এখানেই। আজ অফিসার হয়েছিতো কি হয়েছে। আপনি ভালো খাবার আর ভালো ব্যাবহার করেছেন এটায় আপনার দায়িত্ব। এখন এই বিল দেওয়া আমার দায়িত্ব।
।।
ম্যানেজার- কিন্তু স্যার।
আমি- কোন কিন্তু না। এই নেন বিল।
।।
এই সময় ওসি ফোন করলো।
ওসি- স্যার! শুনলাম, আপনি গাড়ী আনেন নি, আমারা থানার গাড়িটা পাঠাবো স্যার?
আমি- না লাগবে না। আমি চলে আসতে পারবো।
।।
আমি একটা রিক্সা ডেকে অনন্যা কে নিয়ে থানায় গেলাম।
অনন্যা- এখন কোথায়?
আমি- থানায়।
অনন্যা- আরে বাড়ী কখন যাবো? আব্বু চিন্তা করবে না?
আমি- ফোন করে বলে দাও আমার সাথে আছো।
অনন্যা- ইস! শক কতো।
।।
থানায় নেমে ভাড়া বের করতে যাবো কি, এক দারোগা এসে বলল, স্যার ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।
আমি- না থাক। ওনারা কারা? এখানে কান্না করছে কেন?
দারোগা- একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা।
আমি- ওদের এখানে ডাকেন।
দারোগা- জি স্যার!
।।
ওদের ডেকে আমি সব কথা ওদের শুনলাম। বাপ ভানে করে সবজি বিক্রি করে, আজ এক মোটর সাইকেল এসে ওনাকে মেরে দিয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি।
আমি থানায় ঢুকলাম। দারোগা আমাকে ছেলেটাকে দেখিয়ে দিলো।
আমাকে দেখে ওসি সালাম দিলো।
।।

আমি- কতো চুক্তি হলো?
ওসি- কি স্যার?
আমি- এই ছেলের কেস?
ওসি- কি বলেন স্যার!
আমি- আসামী কে থানায় নিয়ে এসে নিজের ঘরে বসিয়ে চা খাওয়াচ্ছেন, আর বাইরে মানুষ কাঁদছে। ফাইজলামি করেন?
ওসি- স্যার আমাকে মাফ করেন দিবেন। আমার ভুল হয়ে গেছে।
আমি- কততে হয়েছে সেটা বলেন।
ওসি- স্যার ২ লক্ষ
আমি- এই ছেলেকে ডাকেন।
।।
আমি- তোমার বাপ কি করে?
ছেলে-স্যার! আমার আব্বু ডিলারশিপ আছে।
আমি- তারমানে ভালোই টাকা আছে। তুমি যে এটা ভুল করেছো, জানো এর জন্য তোমার কতো বছর জেল হবে?
ছেলে- স্যার আমাকে বাঁচান!
আমি- ১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে তোমার আব্বুকে এখন আসতে বলো। পারবে?
ছেলে- জি স্যার পারবে।
আমি- তাহলে তোমার নামে আর কেস হবে না।
।।
ওসি- স্যার! আপনি যে আমার বাপ, সেটা প্রমাণ করে দিলেন। সত্যি স্যার ২০ বছর চাকুরী করেও এতো কিছু শিখতে পারিনি, যতটুকু এই ২০ মিনিটে শিখলাম।
আমি- পুরোটা দেখেন তারপর বুঝবেন। এখন সবাইকে ডাকেন।
।।
অনন্যা- এসব কি? আপনি ঘুষ নিচ্ছেন? আমি আপনাকে বিয়ে করবো না।
আমি- আর ১ ঘণ্টা চুপ থাকো, নিজেই উত্তর পেয়ে যাবা।
আধা ঘণ্টা মিটিং শেষ করে আসলাম! অনন্যা আর আমাকে চা দিলো।
অনন্যা- আমি বাড়ী যাবো। আর হ্যাঁ বিয়ের ব্যাপারটা একটু ভাবতে হবে।
আমি- আরে এতো রাগ করো কেন?
অনন্যা- রাগ করবো না? এজন্য তো পুলিশকে আমি ঘৃণা করি, সে দিন ঐ পুলিশ ৫০০ টাকা নিয়েছিলো তো ওর মধ্যে আর আপনার মধ্যে পার্থক্য কি?
আমি- পার্থক্য একটু পর বুঝতে পারবেন।
।।

কিছুক্ষণ পর ছেলেটার বাপ এসে আমাকে ১৫ লক্ষ টাকা দিলো, আমি ছেলেটাকে ছেড়ে দিলাম, আর ওসিকে বললাম, ঐ পরিবারকে ডাকেন।
ওনারা আসলো,
একজন আমাকে বলল- স্যার! আপনি ঐ ছেলেকে ছেড়ে দিলেন? আপনিও ঘুষখোর পুলিশ। আপনি যখন প্রথম ডেকে আমাদের কথা শুনলেন, তারপর একজন পুলিশ এসে আমাদের খাবারের কথা বলল, তারপর আমাদের জন্য দোকান থেকে কলা, আর পাউরুটি কিনে দিলো, আমি বললাম, আমাদের কাছে টাকা নাই, উনি বলল, আপনি নাকি সেই বিল দিয়ে দিবেন বলেছেন। তখন মনে হলো, আপনি শুধু একজন ভালো পুলিশ না একজন ভালো মানুষ ও আর এখন তো দেখছি আপনি সব থেকে বড় খারাপ।
।।
আমি- আপনি একটু আগে বললেন, আপনার কাছে খাবারের টাকা নাই, আপনার বাবার চিকিৎসা করার টাকা আছে? নাই, তাহলে কেস লড়বেন কীভাবে? আচ্ছা ওনার ১-২ বছর জেল হয়েও গেলো, কিন্তু এতে আপনার লাভ কি? কাল থেকে এই সংসার কীভাবে চলবে বলেন। আমি ওদের থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছি, এই টাকা আপনাদের জন্য নিয়েছি, এই টাকা কিছু ব্যাংকে রাখবেন কিছু নিয়ে ব্যাবসা করবেন আর আপনার আব্বুর চিকিৎসা করবেন। আবেগ নিয়ে না বাস্তব চিন্তা করেন।
।।
এরপর তারা টাকা নিয়ে চলে গেলো।
ওসি- সরি স্যার! আমি বুঝতে ভুল করেছি।
আমি- আপনার নামে আমার কাছে ৫-৬ টা অভিযোগ আছে, আর নিজের চোখেই তো দেখলাম, বলেন এখন কি করবো?
ওসি- স্যার! আমাকে একটা সুযোগ দিন!
আমি- দিলাম। কিন্তু ভুলে যাবেন না এটা আমার এলাকা, শেষ সুযোগ, আমি কিন্তু বদলী করবো না, এমন কাজ করবো যেন আপনার চাকুরী তো থাকবেই না বরং ১০-১৫ বছরের জেল হয়ে যাবে। আর আমি যে নিয়ম মানি না এটা আপনি নিজ চোখেই দেখলেন। আর চায়ের বিলটা বেতনের টাকা দিয়ে দিবেন।
।।
অনন্যা- সরি!
আমি- কি জন্য।
অনন্যা- আপনাকে না বুঝে আপনার সাথে খারাপ আচারণ করার জন্য।
অনন্যা- একটা কথা বলবো? আচ্ছা ওসি সাহেবের বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ আপনার কাছে আপনি কিছু করেন না কেন?
।।
আমি- আমার কাছে ওর কোন অভিযোগ নাই, এটা ঝড়ে তীর মারলাম, এখন থেকে সে খারাপ কিছু করার আগে ৩ বার ভাব্বে।
অনন্যা- আপনি সত্যি অদ্ভুত মানুষ।
আমি- কি রকম?
অনন্যা- অনেক ভালো আর অনেক খারাপের একটা মিশ্রণ।
আমি- ঠিক বুঝেছো। সংকর ধাতু।
অনন্যা- হা হা হা। পাগল।
।।
আমি- আচ্ছা এখন তো বিয়ে করতে রাজী আছো?
অনন্যা- আজ রাতেই করবো।
আমি- তাই এতো তাড়াতাড়ি?
অনন্যা- হম! পুলিশের বউ হতে খুব ইচ্ছা করছে।
আমি- আচ্ছা বাড়ী যাও। আমি আব্বুর সাথে কথা বলছি।

আমি আব্বুর সাথে কথা বললাম, আব্বু বলল, আমার শ্বশুরের সাথে কথা বলে দেখছে দেখা যাক কি করা যায়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমার শ্বশুর ফোন করে বলল, অনন্যা কই?
আমি- মানে? আমি তো অনন্যাকে প্রায় ১ ঘণ্টা আগে রিক্সাতে তুলে দিয়েছিলাম।
শ্বশুর- কিন্তু সে তো বাড়ী আসেনি, আর ওর ফোন ও বন্ধ ।
আমি- আচ্ছা আমি দেখছি।
।।
আমি বাড়ী থেকে বের হয়ে এক ভাইয়ের মোটর সাইকেল নিয়ে ঐ রাস্তাতে গেলাম। আমি আমার টিমকে ফোন করলাম।
আমি- সজিব! আমি বলছি, তোমাদের ম্যাডামকে মনে হয় কেউ তুলে নিয়ে গেছে।
সজিব- স্যার! কি বলেন, কার এতো বড় সাহস।
আমি- আমার মনে হয় এর পিছনে এমপির হাত আছে। তোমাকে ওর মেয়ের খোঁজ নিতে বলেছিলাম। সে এখন কোথায়?
সজিব- স্যার আমি এখন ও ঐ মেয়ের পিছনে, সে এখন বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে।
আমি-তুমি একটা টিম নিয়ে ঐ বাড়ীর সামনে থাকো, আমি বললে মেয়েকে তুলে নিবে।
সজিব- কি বলেন স্যার?
আমি- যেটা বলছি সেটা শুনো। মেয়েকে বলবা, ওনার জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমারা এই কাজ করছি।
সজিব- ঠিক আছে স্যার!
।।
ততক্ষনে থানা থেকে একটা গাড়ী চলে এসেছে।
আমি- এই রাস্তায় ১ ঘণ্টার মধ্যে কি কোন গাড়ী এসেছে সেটা খুঁজে বের করেন।
ওসি- জি স্যার!
।।
আমিও খোঁজ নিতে শুরু করলাম, এক দোকানে জানতে পারলাম ঘণ্টা খানিক আগে একটা সাদা রঙের মাইক্রো বাস এসেছিলো।
আমি- এখানে কোন সি সি টিভি ক্যামেরা আছে?
ওসি- এখানে তো নাই স্যার তবে রাস্তার মোড়ে যে ব্যাংক আছে ওখানে আছে। কিন্তু এখন তো মনে হয় ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে।
আমি- দ্রুত বাংকের ম্যানেজারের সাথে কথা বলেন।
।।
সিটি টিভি তে সেই সাদা মাইক্রো বাস দেখালাম তারপর ওর নাম্বার নিয়ে কন্ট্রোল অফিসে ফোন দিলাম।
ওসি- স্যার আপনি চিন্তা করবেন না। ম্যাডামের কিছু হবে না।
।।
৫ মিনিট পর কন্ট্রোল অফিস থেকে ফ্যাক্স আসলো। কিন্তু এটা তো এমপির নাম না। তাহলে কি অনন্যাকে অন্য কেউ ধরে নিয়ে গেলো? ঠিক তখন ই এক দারোগা বলল, এই লোক কে আমি চিনি, এই মানুষ মাইক্রো বাস ভাড়া দেয়।
আমি- ওনাকে ফোন দিয়ে বলেন, এই নাম্বারের গাড়ী এখন কে ভাড়া নিয়েছে?
দারোগা- স্যার! এমপি সাহেবের শালা।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে।
।।
আমি- সজিব! এমপির মেয়েকে নিয়ে আমার অফিসে চলে আসো। আমি আধা ঘণ্টার মধ্যে অফিস আসছি।
সজিব- জি স্যার!
আমি- ওসি সাহেব! গাড়ী দরকার, খুব দ্রুত শহর যেতে হবে।
ওসি- স্যার! আমার গাড়ী আছে তো। আমিও যাবো চলেন স্যার।
আমি- ঠিক আছে চলেন।
।।
আমি অফিসে গেলাম। দেখলাম সজিব আর মেয়েটা আমার সামনে।
সজিব- স্যার! এনি এমপি সাহেবের মেয়ে। মিস ফারিয়া।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে।
ফারিয়া- আমি কি জানতে পারি যে আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে?
আমি- একটু অপেক্ষা করেন সব জানতে পারবেন। ম্যাডামের জন্য খাবার নিয়ে আসেন। আর সজিব আমার নাম্বারের সব কল রেকডিং করতে শুরু করো। সাথে কে কোথায় থেকে ফোন দিচ্ছে সব। কন্ট্রোল রুমের সবাইকে জানিয়ে দাও, কেউ যেন মিসিং না হয় তাহলে কাল আমি তাকে চাকুরী থেকে মিসিং করে দিবো।
।।
সজিব- জি স্যার!
কিছুক্ষণ পর আমার নাম্বারে ফোন আসলো। আমি নাম্বারটা ফারিয়াকে দেখিয়ে বললাম নাম্বার চিনে নাকি?
ফারিয়া- হ্যাঁ আমার আব্বুর নাম্বার, উনি মনে হয় জেনে গেছে আমি এখানে।
আমি- আমি লাউড, দিয়েই কথা বলবো, আপনি শুনবেন কিন্তু চুপ থাকবেন।
।।
আমি কল ধরলাম
এমপি- আমি এমপি
আমি- জি বলেন।
এমপি- খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। কেউ হারিয়ে গেছে নাকি?
আমি- যা বলবেন সরাসরি বলেন।
।।
এমপি- আমি তো আগেই বলেছিলাম আমার পিছনে লাগিস না। তুই কথা শুনিসনি, তিন দিন চাকুরীতে আসা হয় না তুই আমার পিছনে পুলিশ লাগিয়ে দিয়েছিস, আবার সেটা নাকি ডিআইজির হাতে জমা দিবি? ৩০ বছর কতো মানুষের লাশের ওপর হেঁটে আজ আমি এই অবস্থাতে আর তুই তিন দিনেই আমার সব শেষ করে দিবি? তোর হবু বউ আমার কাছে, আজ না তোর বিয়ে ছিল? তুই চাইলে তোর বউ এখানেও বাসর রাত করতে পারবে, আমার অনেক ছেলে পেলে আছে। এখন কি বলিস? তুই তোর সব প্রমাণ আমাকে দিবি? নাকি তোর বউয়ের বাসর রাত করাবো। ভেবে দেখ। ৫ মিনিট পর ফোন দিচ্ছি।
।।
ফারিয়া- এটা আমার বাবা না! আমার বাবা এতো খারাপ হতে পারে না।
আমি- পৃথিবীর কোন বাবাই খারাপ না। খারাপ তো তাদের কাজ, আপনার বাবা ক্ষমতার লোভে একের পর এক খারাপ কাজ করে গেছে, কিডনাপিং, মাদক, চাঁদাবাজি এমন কোন খারাপ কাজ নাই যে উনি করে না। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আমার একটা উপকার করবেন?
ফারিয়া- জি বলেন!
আমি- আপনি এবার বলবেন, আমরা আপনাকে কিডন্যাপ করে আপনার হাত পা বেঁধে রেখেছি। তাহলে আপনার বাবা অনন্যা মানে আমার বউকে ছেড়ে দিবে।
ফারিয়া- আচ্ছা করবো।
।।
এবার আমি এমপিকে ফোন করলাম।

এমপি- কিরে কি ভাবলি?
আমি- আচ্ছা আমারই কি পরিবার আছে?
এমপি-মানে?
আমি- আপনার মেয়ে কে আমি কিডন্যাপ করে নিয়েছি।
এমপি- কি বলিস?
আমি- বিশ্বাস না হলে কথা বলেন।
।।
ফারিয়া- বাবা, আমি এরা কারা বাবা! আমাকে কেন ধরে নিয়ে এসেছে, এখানে অনেক অন্ধকার, প্লিজ বাবা আমাকে বাঁচাও।
এমপি- হারামির বাচ্চা আমার সাথে ডাবল ক্রস! পুলিশ হয়ে গুণ্ডার কাজ করছিস।
আমি- আমি বই পড়ে পুলিশের চাকুরী পাই নি, ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিয়েছি, কারণ কেন জানিস? আমার রক্তেই পুলিশের গন্ধ! শয়তানের বাপ আমি, ওরাও এসে আমাকে সালাম দেয় আর তুই তো তুই। আমি জানি তোদের মতো কাপুরুষ আর কি করতে পারে, আর তুই যাকে ধরেছিস সে আমার বউ না, আর এইরকম মেয়ে একটা গেলে আরেকটা আসবে, কিন্তু তোর তো একটায় মেয়ে, তুই এই বুড়ো বয়সে আরেকটা মেয়ের জন্ম দিতে পারবি তো? নাকি ডাইভারের সাহায্য লাগবে।
।।
এমপি- তুই কি চাস?
আমি- আমার বউকে সিটি বাইপাশে রেখে যা!
এমপি- ঠিক আছে।
আমি- আর হ্যাঁ! আরেকটা কথা সাথে ১ কোটি টাকা রেখে যাস, তোর জরিমানা স্বরূপ।
এমপি- কি?
আমি- বেশি কথা বাড়াস না। আমার এখানেও কিন্তু ১০-১২ জন ছেলে আছে যারা তোর মেয়ের সাথে বাসররাত করতে ইচ্ছুক। ১ ঘণ্টার বেশি সময় নিলে বাসর রাত হয়ে যাবে। আর তোর মেয়ের কেস কিন্তু আমি হ্যান্ডেল করবো, বাকিটা তুই বুঝতেই পারছিস।
।।
আমি- সরি ম্যাডাম! এভাবে আপনাকে অপমান করার জন্য। ভরসা রাখেন, কারো ছায়াও আপনার শরীরের ওপর পড়বে না, আমি তো শুধু আপনার বাবাকে ভয় খাওয়া নোর জন্য বলেছি, সত্যি বলতে কি জানেন, অনন্যাকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি, ওকে কখনও হারাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবতে পারি না।
।।
ফারিয়া- সত্যি বলতে আমি আপনার কথা শুনে ভয় খেয়ে গেছিলাম, আমি বুঝতে পারছি অনন্যার ওপর কি হচ্ছে, আমিও তো একজন মেয়ে।
।।
আমি- ম্যাডাম আপনি আর কিছু খাবেন?
ফারিয়া- না আগে আপনার বউ আসুক।
আমি-সজিব। ২ টা গাড়ী নিয় যাও। পুরো নিরাপত্তার সাথে আমার বউকে নিয়ে আসো।
সজিব- স্যার, ওদের ধরবো না?
আমি- না।
সজিব- ওকে স্যার!
।।
কিছুক্ষন পর সজিব ফোন করে বলল, স্যার ম্যাডাম আর টাকা দুটোই পেয়ে গেছি।
ফারিয়া- অনন্যাকে পেয়েছেন?
আমি- হ্যাঁ! আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম, আপনি এখন যেতে পারেন। লিমন ম্যাডাম কে একটা গাড়ীতে উঠিয়ে দিয়ে আসো।
ফারিয়া- না না এখন যাবো না, আগে অনন্যা আসুক।
।।
অনন্যা আসলো! আমাকে দেখেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরে নিলো। এই প্রথম সে আমাকে জড়িয়ে ধরলো, সে কাঁদছে, সে যে অনেক ভয় পেয়েছে সেটা বুঝায় যাচ্ছে।
আমি- অনন্যা! কেঁদো না পাগলী। আমি আছি না আমি বেঁচে থাকতে তোমার কিছু হবে না।
।।
আমি শ্বশুরকে ফোন করে বলে দিলাম, অনন্যা আমার সাথেই আছে। আপনি বিয়ের আয়োজন করেন।
অনন্যা- এতো রাতে বিয়ে?
আমি- আমার পাগলী এই প্রথম একটা আবদার করেছে আর আমি সেটা পূরণ করবো না? বিয়ে আজকেই হবে।
আমি- সজিব! গাড়ী রেডি করো। বাড়ী যেতে হবে।
।।
ফারিয়া- আমি কি বলবো বুঝছি না, সত্যি অনন্যা তুমি অনেক সুখী মানুষ! আল্লাহ্‌ তোমাকে অনেক সুখে রাখুক।
আমি- অনেক রাত হয়েছে আপনি চলে যান।
অনন্যা- মেয়েটা কে?
আমি- এমপি সাহেবের মেয়ে! যে তোমাকে তুলে নিয়েছিলো। ওর জন্যই আজ তুমি এতো বিপদের মুখ থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারলে।
।।
সজিব- স্যার! গাড়ী রেডি। সাথে আমাদের টিম ও
আমি- চলেন।

যখন আমাদের বিয়ে শেষ হলো তখন রাত ১টা!
তারপর আমাদের বাড়ী আসলাম, অনন্যাদের বাড়ী থেকে আমাদের বাড়ীর দূরত্ব খুব বেশি দূরে না হাঁটলে ১৫ মিনিট লাগে, তাই গাড়ীতে ৫ মিনিটের মধ্যেই চলে আসলাম। অনন্যা এখন ও বিশ্বাস করতে পারছে না যে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে।
।।
আমি- সজিব! তুমি এখন টিম নিয়ে চলে যাও। আমি কালকে নাও আসতে পারি, তুমি এমপির ওপর নজর রাখো, ওর সময় শেষের পথে।
সজিব- কিন্তু স্যার আপনাকে একা কীভাবে রেখে যায়।
আমি- দেখো তোমরা অনেক কষ্ট করেছো। আমি চাই না যে আমার জন্য এতো গুলো মানুষ রাত জেগে থাক। আমার কিছু হবে না।
সজিব- স্যার আপনার গাড়ী আর আমারা ৩-৪ জন থাকি। বাকিরা চলে যাক।
আমি- না, ঘরে তোমার ও বউ আছে সে চিন্তা করবে। তুমি যাও।
।।
ওসি- স্যার আমি একটা কথা বলি?
আমি- জি বলেন।
ওসি- স্যার ওনারা চলে যাক। আমার টিম আপনার নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট।
আমি- আপনার থানায় আজ রাতে কে কে ডিউটি করছে?
ওসি- স্যার! ২ দারোগার টিমে ১২ জন হবে, আমি সবাইকে বলে দিচ্ছি।
আমি- না না এতো জন লাগবে না। আর তাছাড়া সবাই এখানে থাকলে থানায় কে থাকবে, বিপদের কথা বলা যায়? আপনি ৪ জন ডাকেন। তবে বেকার গুলোকে ডাকবেন না।
ওসি- জি স্যার!
আমি- ঠিক আছে সজিব তুমি যাও। আমার গাড়ী রেখে যাও।
।।
আমি ভিতরে যেতেই আম্মু বলল,
আম্মু- তুই এতো বিপদ কেন ঘাড়ে নিচ্ছিস? তুই কি এক মাত্র পুলিশ? তোর বাপ ৪০ বছর চাকুরী করলেও এতো চিন্তা হয় না যতো চিন্তা এখন এই ১ মাস থেকে তোর চাকুরী থেকে হচ্ছে।
আমি- তুমি মনে করো, বাপের ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়েই আমি মাঠে নেমেছি, তুমি এতো ভেবো না। তোমার ছেলের কিছু হবে না।
।।
আম্মু- ঘরে তোর নতুন বউ। আমি তোকে যতটা কষ্ট করে মানুষ করেছি, তোর শ্বশুর বাড়ীর মানুষরাও অনেক ভরসা করে তোকে এই রকম মেয়ে দিয়েছে, আমি তো মাঝে মাঝে অবাক হয় তুই এই মেয়ের যোগ্য কীভাবে হলি?
আমি- তোমার ছেলেকে সবাই চিনলো শুধু তুমি চিনলা না।
আম্মু- হয়েছে হয়েছে! এখন ঘরে যা। অনেক রাত হয়েছে।
।।
আমি ঘরে গিয়ে দেখি, অনন্যা চুপ করে বসে আছে।
আমি- কি ব্যাপার? এতো ভদ্র মেয়ের মতো চুপ করে বসে আছেন।
অনন্যা- আমার না অনেক ভয় করছে।
আমি- কেন?
অনন্যা- আজ আমার সাথে কি ঘটে গেলো। ওরা কি বাজে বাজে কথা বলছিল আপনি জানেন?
।।
আমি- পুলিশের বউ হওয়া ওতো সোজা মনে করছো? তুমি জানো ছোট বেলায় আমারা যখন দিনাজপুরে ছিলাম, আমরা পুলিশ লাইনের মাঠ ছাড়া কোথায় যেতে পারতাম না, কারণ আমাদের কেউ ধরে নিয়ে যাবার ভয় ছিল, আমারাদের সব সময় খুব হিসাব করে চলতে হতো, ঐ ছোট বেলা থেকেই আমি এই পোশাকের মূল্য বুঝতাম! আমি এই বছর পিএইচডি করার জন্য স্কলারশিপ পেয়েছিলাম, কিন্তু যায় নি কারণ আমার যে করেই হোক এই চাকুরী লাগবে।
।।
স্যার বলতো ইমন বিদেশে চলে যাও তুমি যে কাজ জানো অনেক টাকা বেতন পাবা, ১ বছরের মধ্যেই গাড়ী বাড়ী সব হয়ে যাবে।
কিন্তু আমি যায় নি। কারণ আমই বিদেশে গেলে আমার উপকার হবে কিন্তু দেশের কি হবে? আমার মনে হয় আমার জন্মই হয়েছে এই চাকুরী করার জন্য। তোমাকেও একটু কষ্ট করতে হবে, আমার পাশে থাকতে হবে।
।।
অনন্যা- কিন্তু আমি তো এভাবে বড় হয় নি, ছোট বেলা থেকে আমি পুলিশকে খুব ঘৃণা করতাম, এমন কি জানেন? যে মেয়ের বাবা পুলিশ আমি তার সাথে বন্ধুত্ব করতাম না।
আমি- আর ছেলে?
অনন্যা- আমার কোন ছেলে বন্ধু নাই।
আমি- তাহলে রাব্বি কে ছিল?
অনন্যা- আপনি ওর খোঁজ কীভাবে জানলেন?
আমি- পুলিশ! আর পুলিশের নাক ২২ কিমি দূর থেকেও গন্ধ পায়।
।।
অনন্যা- আপনার বেশি বেশি। রাব্বি আমার আত্মীয় হয়।
আমি- এজন্য ওর মোটর সাইকেলে উঠে কলেজে যায়টা?
অনন্যা- আরে না! আপনি ও না… মাঝে মাঝে যেতাম পরীক্ষার সময়।
আমি- আচ্ছা বন্ধু হলেই কি হলো? আমি কি বলেছি যে বন্ধু থাকা যাবে না?
অনন্যা- চোরের মন পুলিশ পুলিশ!
আমি- মানে?
অনন্যা- আপনার আছে তাই আমার নাম দিয়ে বলছেন। আপনার কয়টা বান্ধবী আছে?
আমি- হিসাব করতে হবে।
অনন্যা- ওহ আল্লাহ্‌! কি বলেন?
আমি- আরে প্রাইমারি স্কুল থেকে ভার্সিটি লেভেল পর্যন্ত পড়েছি তার ওপর ফেসবুক, টুঁইটার, ইন্সট্রাগ্রাম আছে, এছাড়া কতো রং নাম্বার আছে।
অনন্যা- তো এতো বান্ধবী থাকলে আমার দরকার কি ছিল?
আমি- ১০ লক্ষ টাকা এতো মানুষের কাছে চাইলে ওরা যদি দিতে রাজিও হতো তাহলে অনেক সময় লাগতো তাই কাছেই কাজ টা সেরে নিলাম।
।।
অনন্যা- আমি জানতাম আপনি খারাপ তবে এতো খারাপ এটা কল্পনাও করিনি। তার মানে আপনি শুধু টাকার জন্য আমাকে বিয়ে করেছেন?
আমি- তো বিয়ের আগে তোমাকে দেখেছি নাকি যে তোমার প্রেমে পড়বো? আর ৩ বছর আগে ফোনে কথা যেভাবে বলছিলা মনে হয়েছিলো কোন হতো ভাগা ছেলে তোমার স্বামী হবে আল্লাহ্‌ ভালো জানে, তবে এই দুর্ভাগা ছেলে যে আমি হবো বুঝতে পারি নি।
।।
অনন্যা আর কিছু বলল মেয়েটা মুখ গোমড়া করে বসে থাকলো।
অনন্যা- তো যখন দেখলেন তখন আমাকে বিয়ে করলেন কেন?

।।

আমি- এখন আর কি করবা বলো। সব ওপর ওয়ালার ইচ্ছা, নাতো কতো মিষ্টি মিষ্টি বান্ধবী থেকে তোমার মতো কাঁচামরিচের সাথেই আমার বিয়ে হলো।
অনন্যা- আমাকে কাঁচামরিচ বলবেন না না হলে…
আমি- না হলে কি?
অনন্যা- সামনে বারান্দা দিয়ে লাফ দিয়ে দিবো।
আমি- যাও।
।।
অনন্যা সামনে বারান্দায় গেলো। আমি ভাবলাম মেয়ে আবার লাফ না দিয়ে দেয়। কিন্তু যেতে না যেতেই সে ফিরে আসলো।
আমি- কি হলো ম্যাডাম?
অনন্যা- বাইরে পুলিশের গাড়ী। আর সবাই হাঁটছে
আমি-হ্যাঁ তো।
অনন্যা- ওরা এতো রাতে এখানে কেন?
আমি- ম্যাডাম! আপনি মনে হয় আপনার স্বামীর কথা ভুলে যাচ্ছেন। এরা আমাদের নিরাপত্তার জন্য এখানে এসেছে, সারা রাত থাকবে।
অনন্যা-ওদের কতো কষ্ট।
আমি- কষ্ট আমাকেও লাগছে, কিন্তু এটা জরুরী।
।।
অনন্যা- এখানে তো দোকান ও নাই ওনারা রাতে কি খাবে?
আমি- আজ তো এটা পরিকল্পনা করি নি, এরপর থেকে একটা ব্যবস্থা করবো।
অনন্যা- আমি ওনাদের জন্য চা বানিয়ে দেয়?
আমি- কি?
।।
অনন্যার কথাটা শুনে আমি চমকেও গেলেও অনেক খুশী হলাম! অনেক সময় আব্বুর মুখে শুনেছি যে অনেক পুলিশ অফিসার অনেক ভালো হলেও ওনাদের বউ অনেক খারাপ আচারণ করে। এটা অত্যান্ত দুঃখ জনক, আমি নিজেও একজন সিপাহীর ছেলে আর এটা আমি ভুলি নি।
আমি- আচ্ছা তুমি ড্রেস পাল্টে নীচে আসো। আমি নীচে দাঁড়াচ্ছি।
।।
আমি- আস্তে আস্তে নামো। এই দিকে রান্না ঘর,
অনন্যা ১০ মিনিটে চা বানিয়ে সবার জন্য কাপে ঢেলে দিলো। সাথে পানি আর বিস্কুট নিয়ে আমি বের হলাম।
আমাকে দেখে সবাই যে যেভাবেই ছিল সবাই দাঁড়িয়ে গেলো।
একজন- স্যার কোন সমস্যা? আমি দারোগা হাসিব।
আমি- না না কোন সমস্যা না। আপনারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, এখানে কোন দোকান ও নাই যে কিছু খাবেন তাই আমাদের জন্য আমার বউ চা বানিয়ে নিয়ে আসলো।
দারোগা- স্যার কি বলেন! আজ কেয় তো আপনাদের বিয়ে হলো আর ম্যাডাম শুধু শুধু আমাদের জন্য কষ্ট করলো।
আমি- না সেটা না। আপনারাও তো আমাদের জন্য কষ্ট করছেন।
দারোগা- স্যার সেটা তো আমাদের দায়িত্ব।
আমি- বয়সে আপনি আমার প্রায় বাবার বয়সের কিন্তু চাকুরীতে আমি আপনার বাবা! আর ছেলেরা কষ্ট করবে সেটা বাবা কি মেনে নিতে পারে?
।।
দেখালাম দারোগা সাহেব, চোখ মুছছে
আমি- কি হলো আপনার? শরীর খারাপ নাকি?
দারোগা-না স্যার! ২৭ বছর থেকে চাকুরী করছি জীবনে অনেক অফিসার দেখেছি যারা শুধু গালি দিয়েছি, বাড়ীতে গিয়ে বউকে বলার মতো কোন গল্প পায় নি। আজ পেলাম! জানেন স্যার এখানে আসার আগে ভাবলাম কাল হয়তো আমি সাসপেন্ড হয়ে যাবো,
।।
কারণ বয়সের ভারে আর আগের মতো সারা রাত দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না, সেটা দেখে হয়তো আপনার মতো অফিসার আমাকে অযোগ্য ভাব্বেন, কিন্তু আজ আপনি যে ব্যাবহার আমাদের সাথে করলেন আমারা গর্বিত যে আমার পুলিশ আর আপনার মতো একজন অফিসারের নিজে কাজ করার সুযোগ পেয়ে।
।।
আমি- সেটা কোন কথা না! আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করছেন আমিও আমার পালন করলাম, পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আপনি সরকারী দায়িত্ব পালন করছেন আর আমি মানবতার দায়িত্ব। আমিও একজন সিপাহীর ছেলের ছিলাম, আমি আপনাদের কষ্টটা বুঝি। আমার একটু হাতে বাড়াতে যদি আপনাদের কষ্ট দূর হয় তবে কেন করবো না।
।।
দারোগা- দুয়া করি স্যার, আপনি আর আপনার বউ অনেক সুখী হোক! আল্লাহ্‌ আপনাকে হায়াত দান করুক। আজ স্যার বাড়ী গিয়ে আমার বউকে গল্প শুনাতে পারবো।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে থাকেন, আর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না বসেই থাকেন। আর আমি ওসিকে বলে দিবো কাল আপনাদের যেন কোন ডিউটি না দেয়। অনেক রাত হয়েছে, আমাকে একটু ঘুমাতে হবে।

সকালে ফোনে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো!
দেখলাম পাগলী টা কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে! আমি বাইরে বারান্দা গেলাম! দেখলাম আরেক টিম এসে বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘড়ি দেখলাম ৭ টা বেজে গেছে। ছাদের এক কোণে শিউলি ফুলগুলো ঝরে পড়ে আছে। আমি ফুল গুলো কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম, তারপর অনন্যা খাট থেকে নেমে পা দেওয়া থেকে দরজা পর্যন্ত শিউলি ফুলগুলো ছড়িয়ে দিলাম!
।।
রাতে মেয়েটাকে বড্ড জ্বালানো হয়েছে, আমি জানি সে খুব শিউলি ফুল পছন্দ করে। গাছ থেকে ২টা গোলাপ, আর ২ টা রজনীগন্ধা আর কয়েকটা গাদা সহ, আরও কিছুর ফুলের সংমিশ্রণে একটা গোছা করলাম, সেগুলো আবার একটা লতা জাতীয় গাছ দিয়ে বেঁধে তার বালিশের পাশে রেখে দিলাম।
।।
তারপর নীচে আসলাম।
আম্মু- কিরে অনন্যা কই?
আমি- ঘুমাচ্ছে।
আম্মু- তুই এখন চা খাবি?
আমি- হ্যাঁ দাও! আর বাইরে ওদের কেউ দাও।
আম্মু- রাতে রান্না ঘরে চা করছিলি নাকি?
আমি- তুমি কীভাবে জানলা?
আম্মু- পাতিল রাখাছিল তাই।
।।
আমি- হ্যাঁ।
আম্মু- তুই চা নিয়ে নে।
।।
আমি চা নিয়ে বাড়ী থেকে বের হলাম।
আমাকে দেখে একজন আসলো।
স্যার আমি দাউদ! দুপুর পর্যন্ত আমার টিম আপনার দেখাশুনা করবে।
আমি- সেটা ঠিক আছে খেয়েছেন?
দাউদ- চা বিস্কিট খেয়েছি।
আমি-কতো জন আছেন?
দাউদ- স্যারর ৬ জন।
আমি- ৩ জন খেয়ে আসেন। বাকী ৩ জন ওনারা আসার পর খাবেন।
দাউদ- জি স্যার!
।।
বাড়ীর কাজের মেয়েটা চা নিয়ে আসলো।
আমি- আপনারা চা খেয়ে তারপর যাইয়েন।
।।
আমি বাড়ী গিয়ে দেখলাম, অনন্যা আম্মুর সাথে কি যেন কথা বলছে।
আম্মু- অনন্যা নদী দেখতে চাচ্ছে, একটু নিয়ে যা। আর নাস্তা এখন ও বানায় নি। নাস্তা হলে ফোন করে ডেকে নিবো।
।।
ঠিক আছে।
অনন্যা কে নিয়ে নদীর নীচে নামলাম। আমার সাথে ২ জন পুলিশ আসলো।
আমি- আপনারা ওপরেই বসেন। সমস্যা নাই!
।।
আমি- কার যেন আমার সাথে নদীতে আসতে ভালো লাগছিলো না, আজ সেই রাজী।
অনন্যা- তখন বিয়ে করিনি। আজ আমার স্বামীর সাথে এসেছি।
আমি- বাহ! এক রাতের মধ্যেই সব পাল্টে গেলো।
অনন্যা- শুধু কি আমার একার বদলে গেছে নাকি সাথে আপনার ও?
আমি- মানে?
।।
অনন্যা- কাল রাতে আপনি কি বললেন, টাকার জন্য নাকি আমাকে বিয়ে করেছেন, অনেক মেয়ে ছিল আপনার জীবনে, আর সকালে সেই মেয়ের জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ, গাদা রজনীগন্ধা সব ফুল পেড়ে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছিলেন কেন?
।।
আর শিউলি ফুল গুলো? এতো সুন্দর করে ছড়িয়ে রেখেছিলেন কেন?
আমি- আরে তুমি আমাকে তোমার গাছ ছুঁতে দাও নি মনে আছে, তাই তোমাকে আমার গাছের ফুল পেড়ে দেখালাম।
অনন্যা- শুধু এতটুকু?
আমি- তা নয় তো আর কি?
অনন্যা- আম্মু বলল, আপনি নাকি কাউকে ফুল পাড়তে দেন না। আর নিজে এতো গুলো ফুল পেড়ে নিলেন আমার জন্য?
আমি- স্বামীর দায়িত্ব পালন করেছি।
অনন্যা- শুধুই কি দায়িত্ব।
আমি-হ্যাঁ শুধুই দায়িত্ব।
।।
অনন্যা- কখন ও শুনিনি যে কোন স্বামী দায়িত্ব পালনের জন্য বউয়ের পায়ের কাছে ফুলের গালিজা বানিয়ে দেয়। ঘুম থেকে না ডেকে বউয়ের পাশে ফুলের একটা গোছা রেখে যায়, তাও আবার নিজে বানিয়ে।
আমি- এগুলো কি বলার কথা নাকি? কি সব শুরু করেছো বলো তো? চলো বাড়ী যায়।
অনন্যা- যাবো না!
আমি- থাকো, আমি গেলাম।
।।
বাড়ী গিয়ে নাস্তা করতে শুরু করলাম! নাস্তা শেষ করতেই সজিব আসলো।
সজিব-স্যার এমপির বিরুদ্ধে সব প্রমাণ এখন আমাদের হাতে! ম্যাডামকে কিডন্যাপ করা থেকে শুরু করে সব প্রমাণ আছে আমাদের কাছে। এখন কি ওনাকে গ্রেফতার করা যাবে?
আমি- না এতো তাড়া তারি না। সময় নিতে হবে, না হলে উনি সহজেই ছাড়া পেয়ে যাবে! ইনি কে?
সজিব- ইনি স্যার আমাদের নতুন সহকর্মী লিমন। এসপি সাহেব আজকেই ওনাকে আমাদের সাথে দিয়েছেন। এখন থেকে উনি আমাদের সাথে থাকবে।
।।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে। তবে আজ এমপির যে হোটেল টা আছে ওখানে তল্লাশি করতে হবে।
সজিব- স্যার! ওখানে মেয়েদের নিয়ে ব্যাবসা করা হয়।
আমি- আমিও জানি। একবার খরিদ্দার হিসাবে আমি গেছিলাম, আমি পুরো কাহিনী জানি।
সজিব- তাহলে স্যার রেট কখন দিবো?
আমি- রাত ১০ টার সময়!
সজিব- জি আচ্ছা স্যার!
আমি- তোমারা এখন চলে যাও আমি আজ অফিস নাও যেতে পারি।
সজিব- স্যার আমি থাকি?
আমি- না। আমার ডাইভার আর দেহরক্ষী রেখে বাকী সবাই চলে যাও।
সজিব- জি স্যার!
।।
ওনারা চলে গেলো।
আমি দুপুরে সজিবকে ফোন করলাম।
আমি- সজিব কি করছো?
সজিব- এই তো স্যার খাচ্ছি, কেন কোন সমস্যা?
আমি- একা আছো?
সজিব- বাড়ীতে আছি স্যার! বউ আছে পাশে।
।।
আমি- আচ্ছা শোন, এসপি স্যার যে ছেলেকে আমাদের টিমে দিয়েছে আমার কেমন জানি সন্দেহ লাগছে, তুমি ওকে কিছু বলবে না, আর আজ রাতে গিয়ে দেখো, হোটেলে রেট দিয়ে কিছু পাও নাকি? যদি না পাও তবে বুঝে নিবা যে আমি সত্যি বলছি। আর যদি আমি সত্যি হয় তবে আমাদের আরও সাবধান থাকতে হবে। তুমি তোমার বউ নিয়ে একটু সাবধানে থেকো।
সজিব- জি স্যার!
।।
রাত ১০ টা!
আমি ঘরের মধ্যে বসে আছি।
অনন্যা- খেতে আসেন। আম্মু ডাকছে।
আমি- আমি ব্যাস্ত আছি, তুমি খেয়ে নাও।
।।
আমি- সজিব তুমি রেডি?
সজিব(ফোন ভয়েস)- জি স্যার! আপনার অনুমতির অপেক্ষা!
আমি- সাদা পোশাকে দুই জন যাও! তুমি যেও না নতুন দুই জন অল্প বয়সের ছেলে পাঠাও, ওরা হোটেলে গিয়ে মেয়ে কন্ট্যাক করুক। যদি তারা রাজী হয় তবে তুমি রেট মারতে যেও।
সজিব-জি স্যার!
।।
অনন্যাকে দেখলাম ভাত প্লেটে করে নিয়ে চলে এসেছে।
আমি- এসব কি দরকার, বললাম তো ব্যাস্ত আছি।
অনন্যা-কয় কি করছেন? বসে বসে ফ্লিম দেখছেন, আর এই বয়সে কার্টুন ফ্লিম দেখছেন?
আমি-মনের কখন ও বয়স হয় না। যাদের মনের বয়স হয়ে যায় তারা নিজেদের কাছেই বুড়ো হয়ে যায়।
অনন্যা- বাহ! কি জ্ঞানের কথা!
আমি-হ্যাঁ
।।
অনন্যা- হ্যাঁ কিন্তু খেয়ে…
আমি- একটু চুপ! হ্যাঁ সজিব বলো।
সজিব- আজ তো সুর পাল্টে ফেলেছে বলছে আজ হোটেল বন্ধ।
আমি- কাল তুমি যে গাড়ী ধরেছিলে ওর মধ্যে কতটা ফেন্সিডিল ছিল?
সজিব- স্যার ২০০ বোতল!
আমি- তোমারা যতটা পারো ব্যাগ আর পকেটে করে সে সব নিয়ে যাও। কিছু না পেলে ওসব দিয়ে ধরিয়ে দিবা! কিন্তু আজ হোটেল বন্ধ চাই আমার।
সজিব- জি স্যার!
।।
অনন্যা- কিন্তু এসব ঠিক না? একজন পুলিশ হয়ে আপনি এসব কি করছেন?
আমি- কি কি করছি?
অনন্যা-এই তো নিজেরা ফেন্সিডিল দিয়ে ওদের হোটেল বন্ধ করবেন। হোটেল বন্ধ হলে ঐ মালিক কি করে খাবে? অসহায় লোকটার কি হবে?
।।
আমি- তুমি জানো কে ঐ অসহায় লোক?
অনন্যা-কে?
আমি-এমপি! আর যে বোতল রাখবো ওর হোটেলে এগুলোও ওনার মাইক্রো থেকে আমারা ধরেছি। মাঝে মাঝে খারাপ কে ধ্বংস করতে হলে ভালো পথ দিয়ে চললে হয় না, ঐ হোটেলে মেয়েদের বিয়ে দেহ ব্যাবসা হয়, অনেককে কিডন্যাপ করে ওখানে রাখা হয়, আমার কাছে অনেক প্রমাণ আছে, তারপর ও সহজ পথ দিয়ে গেলে আমি কিছু করতে পারবো না, এজন্য কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়।
অনন্যা- আপনি ভাত খাবেন না?
আমি- তুমি খেয়ে নাও।
অনন্যা- ঠিক আছে।
।।
দুই ঘণ্টা পর! ব্রেকিং নিউজ
সিটি ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে ২০০ বোতল ফেন্সিডিল ও ১ টি দেশি অস্ত্র সহ ২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
সজিব- স্যার কাজ শেষ!
আমি- পিস্তুল কোথায় পেলা?
সজিব- নাজিম নাকি কাল জুয়ার আড্ডাতে সবাইকে ধরতে গিয়ে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে, আমাকে বলল, ঘরে রেখে দিবো নাকি? আমি বললাম, রেখে দে, কেস শক্তিশালী হবে।
আমি- তোমারাও তো দেখছি অনেক বুদ্ধিমান হয়ে গেছো।
।।
সজিব- সব স্যার আপনার অনুগ্রহ! আপনি চিন্তা ভাবনা করার স্বাধীনতা দিয়েছেন তাই এতো সাহস পেয়েছি।
আমি- আচ্ছা, এবার কিন্তু এমপি চুপ করে বসে থাকবে না, একটু সাবধানে থাকো।
সজিব- এখন কি করবো?
আমি- এখন এমপি চাল দিবে, আমারা চুপ থাকবো। ওর ওপর নির্ভর করে আমাদের শেষ চাল দিবো।
সজিব-ঠিক আছে স্যার!
।।
আমি- অনন্যা খেতে দাও। অনন্যা!
দেখি মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে! যাহ্‌ বাবা! কি ঘুম পাগল বউ আমার! যায় আমি একাই খেয়ে নেয়! খিদাও লেগেছে।

দুই দিন পর! অনন্যা হাসপাতালে চলে আসলো আর আমিও আমার কাজে ফিরে আসলাম! প্রমাণ সব কিছুই রেডি হয়ে গেছে। কাল ডিআইজি স্যারের কাছে সব প্রমাণ জমা দিবো তারপর তাকে গ্রেফতার।
।।
রাতে ঘুমাতে যাবো তখন বাজে রাত ১২ টা ! হটাৎ একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলো!
ফোন ভয়েস- তোর বউ আমাদের কাছে! সাথে তোর সব থেকে কাছের লোক দারোগা সজিব ও! ওদের যদি বাঁচাতে চাস তবে এমপি স্যারের সব কাগজ পত্র সব ১ ঘণ্টার মধ্যে হোটেলের পিছনের গলিতে আসবি! আর একটা কথা, তুই পুলিশ বলে আবার সবাইকে ডাকিস না, তিনটা জীবন তোর হাতে!
।।
আমি-কে আপনারা? আপনাদের কথা আমি কেন বিশ্বাস করবো?
ফোন ভয়েস- তোর বউয়ের সাথে কথা বলবি। (অনন্যা)- ইমন আমাকে বাঁচাও প্লিজ
আমি- তোমার কিছু হবে না, আমি আসছি।
ফোন ভয়েস- সেবার তো স্যারকে ফাঁসিয়ে নিজের বউকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছিলি, এবার দেখি কি করিস। আমার ওপর ৭ টা রেপ আর ৩ টা খুনের কেস চলছে।
আমি- ওদের কিছু করবেন না। আমি আসছি।
।।
পুরো হিসাবটা কেমন জানি গড়মিল হয়ে গেলো! বার বার সে আমার দুর্বল যায়গাতেই হাত দিচ্ছে। আমি তো সিনেমার হিরো না যে একাই মেরে সবাইকে বাঁচিয়ে নিয়ে আসবো। আর পিস্তুল নিয়ে গেলে আমাকে তো আগেই ধরে নিবে। তাই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করতে হবে।
।।
আমি আমার টিমের সবাইকে ডাকলাম, সবাইকে বুঝিয়ে দিলাম। আমি যাবার ঘণ্টা খানিক পর তারা যেন যায়, আর এর আগে যদি তারা গুলির শব্দ পায় তবে যেন চলে যায়।
।।
আমি জ্যাকেট পড়ে নিলাম। এক পকেটে কাঁচা মরিচ আর এক পকেটে মরিচের গুড়ো নিলাম, এটায় শেষ ভরসা, দুইটা ব্লেড জুতোর নীচে নিলাম! কাজে কখন কোনটা লাগবে বলা যায় না, তারপর আমি আগে গাড়ী নিয়ে চলে গেলাম!
।।
হোটেল পার হয়ে আমি গলির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গলির রাস্তা প্রায় ফাঁকা, এক জন আমার সামনে হাঁটতে শুরু করলো আর ৩ জন আমার পিছনে।
এক জন বলল, আমার পিছনে হাঁটেন।
অবশেষে একটা গোডাউন এ আসলাম। আমার পকেটে একটা ছোট্ট জিপিএস ছিল যাতে আমার টিম বুঝতে পারে আসল জায়গাটা কোথায়।
।।
আমাকে একটা চেয়ারে বসা হলো।
এমপি- কিরে তোর কি আমাকে একটুও ভয় করে না?
আমি-কিসের জন্য?
এমপি- তুই জানিস আমার কতো ক্ষমতা? আমি কম করে হলেও ৩০ জনকে নিজ হাতে খুন করে গুম করে দিয়েছি, তোর আগে এক ইঞ্জিনিয়ার বেশি নিয়ম দেখাচ্ছিল, নদীতে বালি তুলছিলাম তাই, শালাকে একটা খালে ফেলে বালি চাপা দিয়ে দিয়েছি, তুই এখন সেখানে দাঁড়িয়ে। আর তুই আমার বিরুদ্ধে যাচ্ছিস?
।।
আমি- এই ঘরের মধ্যেই তোর ক্ষমতা আর আমার ক্ষমতার কোন সীমা বদ্ধ নাই।
এমপি- ফাইল কই?
আমি-এই নে ফাইল, এখন আমার বউ আর সজিবের পরিবার ছেড়ে দে।
।।
এমপি-এতো তাড়াহুড়ো কিসের? যাবি তো। আচ্ছা আজ তোকে ছেড়ে দিলে তুই আবার আমাকে ধরার জন্য পাগলা কুত্তার মতো খুঁজে বেড়াবি, তোকে ছাড়লে আবার সেই ঝামেলা। এই সেলিম এই পুলিশের বাচ্চাকে ধরে বেঁধে ফেল, ওর লাশ কাল যেন কাকপক্ষী ও খুঁজে না পাই, আমারদের নতুন যেখানে বিল্ডিং হচ্ছে ওখানে শালাকে বউ সহ চাপা দিয়ে দে।
।।
আমি-(ভাবলাম এখন তো সত্যি অনেক বড় বিপদে পড়ে গেলাম বুদ্ধি দিয়েই কিছু করতে হবে)হ্যাঁ দিয়ে দে! আমি রাস্তার থেকে উঠে এসেছি তো। তুই যে স্কুল পাশ করতে পারিস নি তোর মাথায় যদি এতো বুদ্ধি থাকে তবে আমি একজন বিসিএস ক্যাডার হয়ে আমার মাথায় কতো বুদ্ধি থাকবে, একবার ভেবে দেখেছিস?
।।
এখানে আসার আগেই কীভাবে যাবো তার পরিকল্পনা আমি আগে করেছি। আমার শরীরে একটা জিপিএস লাগানো আছে এতে আমার টিম সবাই জানে আমি এখানে, এখান থেকে বের হবার ৪ টা পথ, সব বন্ধ করা আছে। ডিআইজি সাহেব তোর মোবাইলের লোকেশন আর আমার লোকেশন দেখছে মানে তারা জানে আমি তোর সাথেই আছি।
।।
আর একটা কথা! তুই কি বোকা নাকি এই ফাইলের কি আর কপি হতে পারে না?
এমপি- তুই কি চাস?
আমি- হ্যাঁ এবার হলো আসল কথা! এই তো ছেলে লাইনে এসেছে।
।।
আমি- আমার হাত টা আগে খুলে দে। আর তোর লোকজনকে বল, সজিবকে ছেড়ে দিতে।
এমপি- এই ওদেরকে ছেড়ে দে।
।।
এমপি এই কথা বলা মাত্রই আমি জুতার নীচ থেকে ব্লেডটা বের করেই এমপির গলা দিয়ে চালিয়ে দিলাম! তারপর ওনার হাতের পিস্তুলটা নিয়েই সাথে সাথে দুইটা গুলি!
।।
এই আকস্মিকতাতে সবাই ঘাবড়িয়ে গেছে।
আমি- তোদের বাপ তো চলে গেলো! এখন তোরা কি করবি বোল? যদি তোরা চুপ করে আত্মসমর্পণ করিস তবে তোদের বাঁচার কিছু সুযোগ আছে, না হলে তোদের ও এই অবস্থা করবো, বাইরে আমার টিম দাঁড়িয়ে আছে।
।।
কিন্তু তারা গুলি করা শুরু করলো! ততক্ষনে আমার টিমের সবাই চলে এসেছে, আমি সজিবকে বললাম আগে অনন্যা আর ওর বউকে এখান থেকে বের করে নিতে বাকিটা আমারা দেখে নিচ্ছি। এই প্রথম আমার এভাবে গুলির লড়ায়, তবে আমি জানি এটা ভিডিও গেম না যে আবার জীবন ফিরে পাবো।
।।
আমার টিমের সবাই স্পেশাল ভাবেই তৈরি করা। ২০ মিনিটের মধ্যে সব সাফ।
সজিব- স্যার! সব তো হয়ে গেলো, এখন কি করবেন?
আমি- তুমি সে দিন বলেছিলা না যে তুমি কারেন্ট সম্বন্ধে ভালো জানো?
সজিব- জি স্যার! আমি একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার!
আমি- কীভাবে এটাকে শট-সার্কিট বানানো যায়?
সজিব- এটা আমার ওপর ছেড়ে দেন।
।।
এরপর সজিব গাড়ী থেকে কি যেন বের করে ৩ জন মিলে আবার ভিতরে গেলো ৫ মিনিট পর যখন ওরা ফিরে আসলো, ধোঁয়া উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
আমি- কি হলো?
সজিব- স্যার এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা।
।।
আরও ৩-৪ মিনিট পর দুইটা বিস্ফোরণ হলো। সাথে সাথে পুরো গোডাউনে আগুন গেলে গেলো। ঘণ্টা খানিক পর আমি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী আসলো। তারপর আরও ৪-৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভানো গেলো।
।।
৭ দিন পর!
আজ আমাদের বাড়ীতে আমার আর অনন্যার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে।
দুইটা পুলিশের গাড়ী আসলো।
সাথে গোয়েন্দা সংস্থার পুলিশ!
একজন- স্যার! আমার নাম নুরুল! এমপি সাহেবের কেস আমার হাতে। আপনার সাথে কিছু কথা ছিল একটু সময় হবে?
আমি- জি বলেন!
নুরুল-স্যার! আপনার এই ব্লেডটা!
আমি-কিসের ব্লেড?
নুরুল-স্যার আপনিও ভালো করে জানেন এটা কিসের ব্লেড? এই ব্লেডেই ওনাকে প্রথমে মারা হয়েছিলো তারপর গুলি করে। পিস্তুল টা কোথায় স্যার?
আমি-আপনি কি আমাকে সন্দেহ করছেন?
নুরুল-সন্দেহ না, আমি জানি সেটা আপনি করেছেন। আমি সব তদন্ত করেছি, সে দিন রাতে আপনি আর আপনার টিম ঐ যায়গায় ছিলেন, আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। তবে বলতে হবে আপনার টিমের বুদ্ধি আছে, কীভাবে আপনি একজন নির্বাচিত এমপি কে সাফ করে দিলেন, ওকে গ্রেফতার করলেও মানুষ এতো শান্ত থাকতো না, একবারে নিজেই কাজ শেষ করে দিলেন?
।।
আমি- আজ আমার বাড়ীতে অনুষ্ঠান চলছে। আমার বাবার মান সম্মানের ব্যাপার। আমি কালকে এসে আপনার কাছে সব কবুল করে নিবো।
নুরুল- কিসের জন্য?
আমি- আমাকে গ্রেফতারের জন্য?
।।
নুরুল- এমপি সাহেবের মেয়েকে আমি আগে থেকেই চিনতাম, কাল রাতে আমি আপনার বিরুদ্ধে সব তথ্য নিয়ে ওনার সাথে দেখা করি, অনেক বলি যে ওনার বাবা আগুনে পুড়ে মারা যায় নি ওনাকে আপনি মেরেছেন। তখন শুনে উনি কি বলল জানেন?
।।
এমপি সাহেবের মেয়ে- আমি জানি যে আমার বাবা কে ইমন স্যার মেরে ফেলেছে, তবে এই জন্য মেয়ে হিসাবে খারাপ লাগলেও একজন মানুষ হিসাবে আমি অনেক খুশী,
তারপর উনি আমাকে ওনার বাবার বিরুদ্ধে অনেক প্রমাণ দেখালেন সাথে এটাও বললেন যে আপনার বউকে ওনারা কীভাবে কিডন্যাপ করে আপনাকে মারতে চেয়েছিল।
।।
আমি সকালেই ডিআইজি অফিসে রিপোর্ট জমা দিয়ে আসলাম! যে এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র! কিন্তু আপনাকে দেখতে অনেক ইচ্ছা করছিলো তাই চলে আসলাম স্যার!
।।
আমি- আসেন খেয়ে যান।
নুরুল- আমরা খেয়েই এসেছি স্যার!
আমি- আপনি আমার টিমে কাজ করবেন?
নুরুল- অবশ্যই স্যার!
আমি-কাল সকালে অফিসে দেখা করিয়েন।
।।
অনন্যা- এই যে স্যার! চলেন, আপনার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।
আমি- নুরুল সাহেব! ইনি আমার বউ।
নুরুল- আসসালামু… ম্যাম!
অনন্যা- তো আসেন খেয়ে যান।
নুরুল- আজ না ম্যাডাম। অন্য দিন। আসি স্যার! কালকে সকালে আসবো।
।।
অনন্যা- তোমাকে নিয়ে পারা যায় না! আজকে না তোমার ছুটি, তাও এতো ফোনে কি করো?
আমি- না কিছু না আসছি তো।
অনন্যা- ফোন কে ফেলে দিবো।
আমি- এই না। তখন ই একটা ফোন আসলো। অনন্যা রাগ করে চলে গেলো।
।।
আমি- আসসালামুআলাইকুম…
ডিআইজি সাহেব- ইমন! তাড়া তাড়ি শহরে আসো, ইউনিভার্সিটির ছেলেরা বাস স্রমিকের সাথে মারা মারি লাগিয়ে দিয়েছে, পুরো শহর জ্যাম, আমি জানি তোমার বিয়ের অনুষ্ঠান চলছে কিন্তু আমি নিরুপায়। কারণ তোমার টিমের ১২ জন মানুষ এখানকার ১২০ জনের সমান।
আমি-স্যার আমি এখুনি আসছি।
আমি- সজিব! ২ মিনিটে সবাই রেডি হয়ে যাও। শহর যেতে হবে।
সজিব- জি স্যার!
অনন্যা- আবার এখন শহরে কেন?
আমি-আরে শহরে ঝামেলা লেগে গেছে।
অনন্যা-তো কি তুমি একাই পুলিশ নাকি?
আমি-এটা সবার দায়িত্ব, আর আমার কাজ শেষ হতে পারে কিন্তু পুলিশের দায়িত্ব কখনও শেষ হয় না।
আমি- সবাই জ্যাকেট পরে নাও! দ্রুত গাড়ী চালান!
।।
তারপর সাইরন বাজতে শুরু করলো। আর গাড়ীর মধ্যে আমারা রেডি হতে শুরু করলাম।

……………………………………..সমাপ্ত …………………………………….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত