উপলব্ধি

উপলব্ধি

বর ফোন দিয়ে বলল ইফতারির জন্য কি কি আনবো? আমি বললাম সব তো আছেই তুমি বরং ডাব নিয়ে এসো আব্বা খাইতে চেয়েছিলো।

__আর কিছু…?
__আম্মার ঔষধ..?
__নিয়েছি।
__ওহ তাইলে আর কিছু লাগবে না তুমি তাড়াতাড়ি এসো,এক সাথে ইফতারি করব।

ইফতারের আগেই আহান এসে যাবে। কিন্তু হাতের কাজ গুলো এখন ও সেরে তুলতে পারিনি।একা হাতে আর কত. শাশুড়ি অসুস্থতার নাম করে শুয়ে থাকেন দিন রাত আর ননদ সারাদিন ঔ যে এক মোবাইল পাইছে।

আজ থেকে এক বছর আগে ঠিক এই সময় আমি ছিলাম নিজের বাড়ি উমম ভুল বললাম মেয়েদের নিজের বাড়ি বলতে কিছু আছে নাকি প্রথমে বাবার বাড়ি তারপর স্বামীর বাড়ি তারপর ছেলের বাড়ি কি অদ্ভুত জীবন মেয়েদের,সারাজিবন স্বামী,সন্তান,পরিবারের জন্য কত কিছু করেও শেষবেলা নিজের বলে কিছুই থাকে না। যা বলছিলাম এক বছর আগে আমি ছিলাম বাবার বাড়িতে,তখন ও বিয়ে হয়নি।

প্রতিটি মেয়েই বাবার বাড়িতে রাজকন্যা বেনে থাকে আমিও তার ব্যাতিক্রম ছিলাম না। সারাদিন শুয়ে,বসে,ফেসবুকে গল্প লিখে সময় কাটাতাম। এক গ্লাস পানি অবদি ঢেলে খেতাম না। ইফতারির আগে সামান্য আয়োজন করে ইফতারি নিয়ে ই বসে যেতাম ডাইনিং রোমে। ছোট বোনটাও টুকিটাকি কাজ করতো মার হাতে হাতে। কিন্তু আমি ভুলেও তাকাতাম না। সেই দুপুর থেকে মা রান্না বসাতো,সারাদিন অভুক্ত থেকে সবার জন্য আলাদা আলাদা বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরী করে দিত। দাদু বলতো বউ মা আমি আজ রুটি খাব রুটি বানিয়ে দিও সাথে লাল শাক ভাজি।

_আচ্ছা বাবা (মা) দিদা বলতো আজকে একটু ঝোল করো তো বউ মা।মাছ ভেজে কসা কসা করে।

__আচ্ছা আম্মা

ফুপি,ছোট চাচু,আমি,বাবাও মাঝে মাঝে বলতাম মা এক হাতে সব করে দিতো।কেমনে পারতো এখনও মাথায় আসে না।কখনও ক্লান্ত হতে দেখি নি,বা হয়তো সে চোখে কখনও দেখি ই নি। কখনও উপলব্ধি করে দেখা হয়নি আম্মু এই কাজ গুলো কেমনে করে,বাবাকেও কখনও পাশে পায়নি। আর আমাদের তো কখনও চুলার পাশে ঘেঁসতেই দেয়নি।ঘেঁসতে দেয় নি বলে আমিও যাইনি।

আজ মাকে দাঁড় করালাম আমার ব্যাক্তিগত কাঠগড়ায়। আজ যে আমাকেও সবার জন্য রান্না করতে হচ্ছে,ননদ,শাশুড়ী,শ্বশুড় সবার জন্য এক একটা আইটেম,হাতের সাইডে একটু আগুনের সেক লেগেছে তবুও কান্না করছি না,কেন যেন কান্না আসছে না,সবজি কাটতে হাত একটু কেটে গেছে তারপরও মরিচ বেটে নিলাম,উফফ কি জ্বলছে…

বড্ড ক্লান্ত লাগছে মা,আর পারছি না,বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে কিন্তু এখন কান্না যে বেমানান।আজ তোমাকে ভিষন মনে পড়ছে। তোমার মায়া ভরা চাহনী,শুধু একবার তাকালেই বুঝতে পারো কি চাই আমার।কস্ট করে আনতে হয়নি। এবার গেলে তোমাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেদে দিয়ে বলব স্যরি মা,আমি খুব করে স্যরি। ক্রমস ঘনিয়ে আসছে ইফতারের সময়।চারদিকে শান্ত হয়ে আসছে পরিবেশ। অনাহারে খিটখিটে মেজাসটাও তখন কেমন যেন পবিত্রতায় ছেয়ে যায়।দূর কোন মসজিদে আজানের সুর ভেসে আসছে…

আল্লাহু আকবার…..
আল্লাহু আকবার…
আমার যে এখন ও অনেক কাজ বাকি অনেক….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত