ভাগ্য

ভাগ্য

ধর্ষনের শিকার নারী শুনে আমার পরপর তিনবার বিয়ে ভেঙে গেছে। পাত্র পক্ষ যখনই শুনে আমাকে ধর্ষন করেছে কেউ, তখন বিয়ে ভেঙে চলে যায়। নিজের রুমে বসে নিজেকে সাজানোর জন্য ব্যাস্ত আমি। বাবা এসেই বললো, “মা’রে এবার মতো বিয়েটা হয়ে যেতে দে। কিছু বলিস না” আমি বাবাকে বললাম, ” আমি কাউকে ঠকিয়ে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। আমি কাউকে ঠকিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো না।” বাবা আমার কথা শুনে চুপ করে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। বাবা আসার আগে মাও অনেক বুঝিয়ে গেলো, তারপরই বাবা আসলো।

আজকে যে ছেলেটা আসছে তাকে আমি আগে থেকেই চিনি। আমাদের বাসা থেকে খানিকটা দূরেই তাদের বাসা। আমাদের এই বাসার আসা হলো ১বছর হবে। আসার পর থেকেই কোথাও বের হলে ছেলেটা তাকিয়ে থাকতো ফ্যালফ্যাল করে। একদিন আমাকে প্রেমের কথা বলেই বসলো তখনই বললাম, আমার প্রেমের বয়স নাই। ওই সবে আমার ইচ্ছেও নাই। ছেলে ঠিকই বুঝতে পারছে কি বুঝাতে চাইছি। আজকে তার পরিবার নিয়ে আসছে। কিছুক্ষণ পরই আমি তাদের সামনে, চা নিয়ে তাদের সামনে গেলাম।

ছেলের পরিবার আমাকে দেখেই বলে, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। তখনই আমি বললাম আমি কিছু কথা বলতে চাই ছেলের সাথে। তখন ছেলে মহাখুশি আগে কখনো আমার সাথে কথা বলতে পারে নি। মা-বাবার মুখ কালো হয়ে গেলো জানে ছেলের সাথে কি নিয়ে কথা হবে। ছেলেটার নাম আবির। আবিরকে নিয়ে আমার রুমে গেলাম।

_কিছু বলতে চান?(আবির)
_কিছু অপ্রিয় সত্য, যা না বললেই নয়!
_বলেন!

_আমি একজন ধর্ষিতা মেয়ে এই কথাটা এখানের কেউ জানে না। আমরা এখানে আসার কারন এটাই। গত ৩বছর আগে আমাকে একজন গৃহশিক্ষক জোর করে ধর্ষন করে। আর এই কথাটা সেই শিক্ষক আর আমার পরিবার ছাড়া কেউ জানে না। সেই শিক্ষক আমাকে ধর্ষন করে চলে যায়। আমাকে আমার পরিবারই হাসপাতালে নেয় আর এই কথা কাউকে বলে নি। আমি পুরোপুরি ভেঙে পড়ি। দুটা বছর চার দেয়ালে বন্ধী করে রাখি নিজেকে। তারপর বাবা আমার কথা চিন্তা করে। সেই শহর ছেড়ে চলে আসে। আমাকে নতুন পরিবেশে রাখার চেষ্টা করে। চাইলে সবার থেকে লুকিয়ে বিয়েটা করতে পারতাম। নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। তাই এটা আপনার পরিবারকে জানিয়ে স্বীদ্ধান্ত আপনার।

_আচ্ছা,ঠিক আছে। (আবির)

আবির রুম থেকে বের হয়ে তার মা-বাবাকে কানে কানে বললো। আবিরের বাবা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,এই নষ্ট মেয়ে আমাদেরকে দিতে চান। লজ্জা করে নাই। আগে বললেন না কেন? বাবা মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আবিরের পরিবার চলে গেলো ।

বাবা আমার গালে একটা জোরে থাপ্পড় দিয়ে, ইরা! তোকে কতবার বললাম আমার মান সম্মান শেষ কবরি না।
বাবা! আমার কি দোষ? মিথ্যা বলে আমি কাউকে ঠকাতে পারবো না। আজ থেকে আমাকে বিয়ে নিয়ে কিছুই বলবে না। যদি কাউকে পেয়ে যান যে এই জেনে বিয়ে করবে তার পরই আমি রাজি হবো।

এই গুলো বলেই নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার কি দোষ এই পুরুষ নামের কাপুরুষের কারণে আমার জীবনটাই নরক হয়ে গেলো। আমার কি দোষ ছিলো? আমাকে পড়াতে এসে একা পেয়ে কাপুরুষ আমাকে ধর্ষন করলো।

শুয়ে শুয়ে ভাবছি প্রকৃতির বিচার হয়। আমার সেই গৃহশিক্ষকের স্ত্রীকেও ধর্ষন করেছিলো অন্য কেউ। আমাকে ধর্ষন করার কিছুদিন পরই সেই শিক্ষকের স্ত্রীকে রাস্তায় কিছু লোক ধর্ষন করে মেরে ফেলে। লজ্জায় সেই শিক্ষক আত্মহত্যা করে।

নিজের রুম থেকে বের হয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে। বসে বসে গল্পের বই পড়ছি। মা অনেক বুঝায় আমাকে যেনো কাউকে না বলে বিয়ে করে নেই। তা না হলে কেউ বিয়ে করবে না আমায়! আমি এটাই বলি, যে ছেলে আমাকে এইসব জেনে বিয়ে করবে সেখানেই বিয়ে বসবো!

মা আরো কত কিছু বুঝানোর চেষ্টা করে।

কয়েকদিন কেটে গেলো, আবির ছেলেটা পুরো মহল্লায় সবাইকে ততদিনে বলে বেড়ায় আমি যে ধর্ষিতা। এই ছেলেই কয়েকদিন আগে বললো আমায় ভালবাসে। আমার রুপ আর যৌবন দেখে তাকিয়ে থাকতো। আসলে এরাই সমাজের কাপুরুষ।

পুরো মহল্লায় হয়ে গেছে। আমি লজ্জায় বাসা থেকে বের হতে পারি না। কিছুদিন পরই আস্তে আস্তে মানুষ ভূলে গেছেই।

এক আত্মীয় আমার জন্য বিয়ে নিয়ে আসলো। বাবাও মনে মনে চাইছে বিয়ে হয়ে যাক। আগের মতো আমি ছেলের সাথে আলাদা কথা বলতে চাইলাম। বাবা, আমাকে ইশারায় না বললো। তারপরও আমি তাকে আলাদা নিয়ে বললাম আমার সেই ঘটনা।

_আপনি কি নিজের ইচ্ছেয় ধর্ষিত হয়েছেন?(ছেলে)

_না! ( আমি)

_আমার একটা কথা বলার আছে। আমার প্রথম স্ত্রী মারা গেছে প্রথম বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে। আপনি যদি সব জেনে রাজি হন বলবেন!

_আপনি আমার কথা জেনে আপনার মতামত বলবেন।

_আপনি নিজের ইচ্ছেয় এমন হননি। আমার মতো কোন পুরুষই এমন করছে, আপনি ইচ্ছে করে করেন নি। তাই বিয়ে করতে অমত নাই। যদি ভাবেন আমার দূর্বলতা বাচ্চার কথা ভেবে রাজি তাহলে ভূল ভাববেন। আপনি চাইলে লুকাতে পারতেন আপনি করেন নি। তার মানে আপনাকে বিয়ে করলে আল্লাহ আমাকে নিশ্চয় সুখ দিবে।

আমি তার কথা গুলো শুনে তাকিয়ে রইছি। আল্লাহ কি তাহলে আমার মনের মতোই কাউকে দিলো। যা ভাগ্য আছে হবে তার বাচ্চা নিয়ে সুখে থাকবো। আমি রাজি হয়ে গেলাম বিয়েতে।

লোকটা চায় নি আয়োজন করে টাকা খরচ করে বিয়ে হউক। বাবাকে বললো সেই টাকা এতিমখানায় দান করে দিতে। কোন রকম ভাবে বিয়ে হয়ে গেলো।

স্বামীর বাড়িতে গিয়ে বুঝলাম তার এত ভালো হওয়ার কারন, শ্বাশুড়িও স্বামীর থেকে আরো অনেক ভালো। শ্বশুর নাই ওনি মারা গেছেন অনেক আগেই। মেয়েটাও একদম দেখতে পুতুলের মতো। বয়স ৪-৫মাস হবে। তার মা মারা যাওয়ার পর থেকেই শ্বাশুড়ি দেখতো।

আজ থেকে আমার মেয়ে। আমার স্বামী আমাকে এটাই বলে ছিলো তুমি কষ্ট করে জন্ম দেও নি ঠিকই তবে। এটা তোমার স্বামীর শরীরেরই রক্তই। আজ থেকে এটা তোমারই বাচ্চা।

আমিও মেয়েটাকে নিজের মেয়ের মতো পালন করতে থাকি। সবাইকে নিয়ে সুখে আছি। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করি। আমার ভাগ্যে এত সুখ লিখে দেওয়ায়।

কয়েক মাস কেটে গেলো। একদিন ইন্টারনেটে দেখি সেই আবিরের স্ত্রীর নগ্ন ছবি যা। বিয়ের আগে প্রেমিকের সাথে করছে। সে প্রেমিকই এই গুলো ভাইরাল করে দিছে। সেই সুন্দরী বউয়ের এমন ছবি দেখে না জানি, তখন কত খুশী আবিরের বাপ।

কথায় আছে না! ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। আমার জীবনে কখনো স্বামী অতীত নিয়ে বলে নি। সবাইকে নিয়ে এত ভালো আছি বলে বুঝানো যাবে না।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত