বাহানা

বাহানা

তিথির চলে যাওয়াটা দেখছিলাম!বেশ দু’টো কারণ দেখিয়ে মেয়েটা সম্পর্কটার ইতি টেনে দিল।ফোনটা হঠাৎ’ই পকেট থেকে কেঁপে উঠল।ইচ্ছে করছে না ফোনটা ধরতে।কেন জানি ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হচ্ছে।বুকের বাম পাশটাতে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।ফোনটা কেঁপে উঠে আবার পকেট থেকে।বিরক্তিকর একটা খারাপ লাগা নিয়ে ফোনটা বের করে দেখলাম আবির ফোন করেছে।রিসিভ করাতেই আবির বলল,

-“রক্ত দেওয়া লাগবে ইমারজেন্সী,মিরপুর চলে আয়।”

মাঝে মধ্যেই রক্ত দেই,সেই সুবাদে মাঝে মাঝেই রক্তের খোঁজে ফোন আসে।আবির রুম’মেট।ইচ্ছে করছিলো না রক্ত দিতে,তবুও জোর করাতে গেলাম মিরপুরে। হসপিটালে পৌঁছাতেই আবিরকে গেইটে দেখলাম।যাবার সাথে সাথে হাতটা টেনে ডক্টরের কাছে নিয়ে গেল।ডক্টরের কাছে যেতেই নার্স এসে একটা রুমে নিয়ে গেলো আমাকে। বেডে আমাকে শুইয়ে দিল নার্স;ভারি অবাক হলাম।এতো খাতিরযত্ন কেন?শুই ঢুকানোর দুই সেকেন্ড আগে নার্স বলল,

-“আপনার রক্তের গ্রুপ কি?”
-“এবি পজেটিভ।”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই শুই হাতটা ছেদ করল। দু’ব্যাগ রক্ত নেওয়া হলো।নার্স চলে যাবার পর আবির এসেই কাছে বসল;বসে বলল,

-“আর এক ঘন্টা দেড়ি হলে পায়েল’কে বাঁচানো যেতো না,থ্যাংস’রে।”
-“পায়েল কে?আর আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না,রক্ত যোদ্ধা আমি।তুইও ডোনার,আমিও।”
-“পায়েল আমার কাজিন,মনে নেই তোকে ওর কথা বলেছিলাম?”
-“ওসব তোর ছাইগুড়ো আমার মনে রেখে কি হবে?”
-“তা ঠিক,তোর’তো তিথি আছে।”

তিথির কথা শুনে চুপ করে রইলাম।আবিরকে জানতে দিলাম না ব্যাপারটা।আবির উঠে চলে গেল। রক্ত দিয়ে হসপিটাল থেকে আবির’কে না বলেই চলে আসলাম।বাসায় আর গেলাম না,হসপিটাল থেকে বের হয়েই একটা হোটেলে গেলাম।ড্রিংক অর্ডার করলাম দু’বোতল। রাত তখন দুইটা!বোতল শেষ,চোখ দু’টো ঝিম ঝিম করছে।শরীরে একটা ক্লান্তিকর ভাব কাজ করছে,ম্যাচ ম্যাচ করছে পুরো শরীর। ওয়েটার আমার অবস্থা দেখে লেবু এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“নিন,খেয়ে নিন।তাহলে কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারবেন।আর স্বাভাবিক মনে হলেই স্যার আপনার চলে যেতে হবে।বন্ধ করে দেওয়া হবে সকালের আগে।” কথাগুলো বলে ওয়েটার চলে গেলো।লেবু চিবুতে লাগলাম বেশ হাড়ে।আধা ঘন্টা যাবার পর কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠলাম।নিজেই বুঝলাম এখন আমার যেতে হবে।বিলটা দিয়ে হাল্কা ম্যাচ ম্যাচে শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলাম দেয়াল টপকিয়ে। আসলে মই থাকে বাসার এপাশে,কারণ মাঝে মধ্যেই আমরা এমন করি। বাসাতে ঢুকেই আবিরকে ফোন দিলাম।চার বার রিং হলো,ফোনটা রিসিভ হলো না।কলিং বেল বাঁজাতে যাব ঠিক ওই সময়ে আবির রুমটা খুলে দিল।রুম খুলেই প্রশ্ন করল,

-“কই ছিলি সারা রাত?হসপিটাল থেকে চলে আসলি বলবি না?” কথা বললে মুখ দিয়ে যে গন্ধটা বের হবে তা আবির বুঝলে বিপদ।তাই আবিরের কথার প্রত্যুত্তর দিলাম না।সোজা ওয়াস রুমে গিয়ে ব্রাশ মুখে গুঁজে নিলাম। ওয়াস রুম থেকে বের হয়েছি পাকা পুক্ত ভাবে!মুখে ফোটা পরিমাণ ড্রিংক করার গন্ধ নেই।তিন বার ব্রাশ করেছি গাদা গাদা পেশ নিয়ে।বের হতেই আবির আবার বলে উঠল,

-“তিথি ফোন করেছিলো,কি হয়েছে আবার?” তিথির কথা শুনেই আর কোন কিছু লুকাতে ইচ্ছে করল না।কারণ আবির এখন সবটা বুঝে ফেলেছে। তারপরও হাল্কা লুকানোর চেষ্টা করে বললাম,

-“তুই’তো জানিস’ই এমনটা আমাদের প্রায়ই হয়।তাছাড়া তেলে পানিতে জমে বল?তারপরও চেষ্টা করি আগিয়ে নিতে।এমনটা হবে তুই’ও জানিস আমিও।” আবির আর কিছু বলে না,চুপ থাকে।প্রায় আধা ঘন্টা বাকি,সকাল হবে তাহলেই।চোখটা বেশ লেগে আসছে।আবির ছাদে গেছে গাছগুলোতে পানি দিতে।বিছানায় গা’টা এলিয়ে দিতেই চোখটা জড়সড়ভাবে লেগে গেলো।

ঘুমটা ভাঙ্গল কথার শব্দে।চোখটা খুলেই চার পাঁচটা মানুষের কথা পাশের রুম থেকে ভেষে আসতে লাগল।হয়তো আবিরের কোন রিলেটিভ আসছে।যেই এপার্টমেন্টে থাকি সেখানে তিনটা রুম।দুটো বেডরুম,একটা কিচেন।আমি থাকি কর্নারের রুমটাতে,আবির থাকে মাঝ খানের রুমটাতে। এসব ভাবতে ভাবতে কলিং বেল বেঁজে উঠল আমার রুমের।বেশ অবাক হলাম,কারণ আবির কখনও কলিং বেল বাঁজায় না।তার মানে দ্বিতীয় কেউ। দুইবার কলিং বেল বাঁজল,ইচ্ছে করছিলা না উঠতে বিছানা থেকে,তারপরও কৌতূহল নিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।একটা ছোট্ট মেয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল,এই সাত বছর খানেক হবে। এসেই আমার বিছানায় বসে পড়ল।আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে মেয়েটা তাকিয়ে রইল,চোখে মনে হচ্ছে হাঁজারগুলো কথা,আর প্রশ্ন।দরজাটা খোলা রাখলাম। আমি ধিরে ধিরে বিছানায় গিয়ে বসে পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করলাম,

-“আমি আপনার নায়ক নিশ্চই?”
-“তোমার নাম তোরিও কি?”

মেয়েটা ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করল।আমি অবাক হলাম কিছুটা,আমার নামটা কি করে জানল।পরে ভাবলাম হয়ত আবির বলেছে।

-“হ্যাঁ আমার নাম তোরিও,কিন্তু আমাকে কি দরকার?”
-“তুমি আমার পায়েল আপুকে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছো?”
-“কাল’তো পায়েল নামের একটা মেয়েকেই রক্ত দিয়েছি!আপনার আপু হয়?”

মেয়েটা কথাগুলো শুনার পরপরই উঠে চলে গেল। আমি ভ্যাবাচ্যাকা মেরে বসে রইলাম। প্রায় পাঁচ মিনিট চলে গেল।গা’টা আবার বিছানায় এলিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর পিচ্চিটা আবির হাঁজির হলো।তারপর পিছনে আরেকটা রূপসি,হাতের দিকে খেয়াল করতেই বুঝলাম এটাই পায়েল!হাতে ব্যান্ডেজ।পিচ্চিটা রুমে ঢুকেই রূপসিটা দেখিয়ে বলল,

-“এইটা আমার পায়েল আপু!” কথাটা শেষ করে আমার দিকে তাক করে পায়েলকে বলল,
-“আপু এইটা তোরিও ভাইয়া।”

মেয়েটা কিছুটা অস্তিত্ব বোধ করল পিচ্চিটার এমন কথায়।মুখটা হাল্কা লাল বর্নে গেঁথে গেলো। কিছুক্ষণ দুজনই দাঁড়িয়ে রইল।আমি ততক্ষণে ফোন চাপতে মাথা দিলাম।বসতে বলার সাহসটাও যেন পেয়ে উঠলাম না।পিচ্চিটা বেলকনিতে চলে গেল,পায়েলও তাঁর সাথে সাথে। রুমটাতে থাকার মূল উদ্দেশ্য বেলকনিটা। বৃষ্টি হলে হাতে স্পর্শ করে বৃষ্টি দেখতে পাই।গভীর রাতে রাতের আকাশটা খুঁজে পাই। চেয়ার পেতে পিচ্চিটা আর পায়েল বসে।সূর্য অস্ত যাবে আর বেশিক্ষণ নেই।হঠাৎ ফোনটা বেঁজে উঠল।তড়িঘড়ি করলাম না।বালিশের নিচ থেকে ফোনটা হাতে নিতেই তিথির নামটা ভেষে উঠল স্ক্রিনে।পরপরই কেটে গেল।আবার আসল ফোন,রিসিভ করলাম।ওপাশ থেকে তিথি বলল,

-“একটা পাঞ্জাবি কিনব কাজিন এর জন্য,আসতে পারবে?”
-“কাজিন’কেই নিয়ে যাও,আমাকে টানছো কেন?”
-“রাগ দেখছি এখনও কমেনি,আমি নিচে ওয়েট করছি তুমি আসো।” ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও রেডি হয়ে নিচে গেলাম।তারপর সেখান থেকে রিক্সা করে মিরপুর দুই গেলাম। মিরপুর কমপ্লেক্স ঠুকেই একটা দোকানে ঢুকলাম।তিথি নীল রঙের পাঞ্জাবি হাতে নিয়ে বলল,

-“এটা কেমন হবে?” পছন্দের তালিকায় থাকলেও না করে দিলাম কেন জানি।তারপর চেক ডিজাইন করা একটা হাতে নিয়ে তিথি বলল,

-“এটাতে মানাবে না?”
-“হ্যাঁ বেশ মানাবে।”

পাঞ্জাবিটা প্যাক করে নিয়েই একটা রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম দুজন। অর্ডার করা হলো জুস,ওয়েটার দিয়ে গেল।নল দিয়ে একবার খেয়ে নিলাম।তিথি কিছু বলবে মনে হচ্ছে।কিন্তু কেন জানি ইতস্ত করছে।মুখটা ভারি দেখাচ্ছে। এসব হাবভাব দেখে নিজেই জিজ্ঞেস করলাম,

-“কিছু বলবে?”
-“বলবো তো অনেক কিছুই,কিন্তু তুমি কি ভাবে নিবে ব্যাপারটা কে জানে।” কেন জানি ভেতরে ভয় কাজ করছে না,করলেও মৃদু পরিমাণের।তাই বলার জন্য সায় দিলাম তিথিকে।তিথি বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শুরু করল,

-“দ্যাখো তোমার সাথে কেন জানি আমার সম্পর্ক’টা ঠিক লাগছে না।মানে বন্ডিং’ই হয় না।এর থেকে আমরা বন্ধু হয়ে থাকলে ভালো হয় না?” কথাগুলো শুনার জন্য নিজেও প্রস্তুত ছিলাম না।কিন্তু কথাগুলো শুনে ভেঙ্গে পড়ার মতো কষ্ট পেলাম না।হাল্কা বুক ব্যাথা করছিলো।জুসটা আরো একবার খেয়ে জবাব দিলাম,

-“ঠিক আছে।”

এই বলে চলে এলাম রেষ্টুরেন্ট থেকে।কেমন জানি তিথির সামনে থাকাটা বেহায়াপনা মনে হচ্ছিলো।এই প্রথম অস্বস্তি লাগছিলো।ঘেন্না হচ্ছিলো নিজের ওপরই।এই বাহানার কি দরকার?বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে কতো সহজ করে চলে যায় মানুষগুলো না?

রাস্তা দিয়ে হাঁটছি!শহরটা আধারে ততক্ষণে ছেয়ে গেছে।ল্যামপোষ্টের আলোগুলো শহরটাকে একটা বিষাদের রূপ দিয়েছে।আমার দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে,ভারি হচ্ছে শ্বাস!ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছি। প্রায় তিন দিন চলে গেছে।তিথির ফোনটা বন্ধ।মায়া’টা বেশ তারাতাড়ি কাটাতে পারব ভেবেছিলাম;কিন্তু মনে পড়ছে কি করে যেন।বাহানা’টা সাঁজিয়ে বেশ করে কেটে পড়ল।দরকার কি এতো আয়োজন?সোজাসাপ্টা বলে দিলেই পারতো আমাকে আর ভালো লাগে না। এসব ভাবতে ভাবতে ফোনটা বেঁজে উঠল!আবির ফোন করেছে।রিসিভ করলাম!ওপাশ থেকে আবির বলল,

-“দিয়া বাড়ি আসতে পারবি?”
-“না,ভালো লাগছে না।”
-“সালা আমার সাথে বর্ষা আছে,ঝামেলা হলে সামলাবো কি করে?”
-“বয় ফেন্ড হইছিস সামলাতে পারবি না?আর না পারলে নাই।”

এই বলে ফোনটা রেখে দিলাম!কিছুক্ষণ যাবার পর চিন্তা হচ্ছিলো আবিরকে নিয়ে।আমাকে ছাড়া কোথাও বর্ষাকে নিয়ে যায় না।কি ভেবে যেন রেডি হয়ে দিয়া বাড়ি গেলাম উবার নিয়ে।এই জায়গায়’টায় আসলে বেশ মুগ্ধকর লাগে!প্রকৃতির শীতল বাতাশ,বসন্তের কাঁশ ফুলে ঘেরা। আবিরকে গাড়ি থেকে নেমেই ফোন দিলাম।বেচারা চিপায় আছে বুঝলাম রিসিভ করল না।হাঁটতে শুরু করলাম কাঁশফুলের ওদিকটায়।পায়েলকে দেখতে পেলাম দূর থেকেই।ব্যান্ডেজ এখনও হাতে,বেশ খাদ করে ব্লেডের আঘাত করেছিলো।ভাগ্যিস রগের ওপর দিয়ে যায়নি। পায়েলের কাছে গিয়ে বসেই জিজ্ঞেস করলাম,

-“আপনার ভাই কই?” মেয়েটা আমাকে দেখে একটু চমকে উঠল।কিন্তু আমাকে না বুঝতে দিয়ে জবাব দিল,
-“চিপায় গেছে প্রেম করতে।”
-“আপনি যান’নি?”

কথাটা বলার সাথে সাথে পায়েল আমার চোখের দিকে তাকাল চোখ বড় বড় করে।আমি কথাটা উল্টিয়ে আবার বললাম,

-“না মানে কাউকে সঙ্গে করে আনা হয়’নি?”
-“হাত কাটছিলাম কেন জানেন?”
-“রক্ত দিয়েছিলাম শুধু আপনাকে,কারণটা শুনিনি।”
-“এক বছর প্রেম করার পর বলে,তুমি আমার থেকে ভালো ছেলে ডির্জাভ করো।”
-“বাহানা দিয়ে ভাগছে?”
-“কিছু নিয়ম ভাঙ্গতে বাহানা দিয়েই সেটা ভাঙ্গতে হয়।আবার কিছু গড়তে হলেও বাহানা লাগে।”

মেয়েটার কথায় চুপ করে রইলাম।মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি।পায়েল চুপ করে সোজা তাকিয়ে আছে কাঁশ ফুলে,পলক পড়ছে না।মুখটাতে যেন হাঁসিটা থাকলে বেশ লাগতো মেয়েটাকে।

-“আচ্ছা চলেন হাঁটি,বসে থাকলে বাহানা হবে কি করে?”
-“এটাও বাহানা ছিল?”

আমি আর পায়েলের কথার কোন প্রত্যুত্তর দেই না। দুজন কাঁশ ফুলের পথ ঘেষে হাঁটতে থাকি।মাঝে মধ্যে কথা বলি।তারপর আবার চুপ থাকি।মেয়েটা মাঝে মধ্যেই হাঁসে।হাঁসিটা কেন জানি চুরি করে,লুকিয়ে লুকিয়ে দেখি।নানা বাহানায় হাঁসাই মেয়েটাকে।

সত্যিই ধিরে ধিরে বাহানা নিয়ে কোন একটা সম্পর্কে আগাতে থাকে আমাদের মাঝে।কিন্তু আমি কেন জানি সম্পর্ক’টার নাম দিতে পারি না। প্রায় দুই সপ্তাহ চলে গেছে।তিথির ফোনটা বন্ধ।রাত করেই মেয়েটাকে ফোন করি মাঝে মধ্যেই।তিথির কথা মনে পড়লেই এখন আর বিশালতা নিয়ে বুকটা আর ব্যাথা করে না।মৃদু ব্যাথা হয়। রাত তিনটা বাজে ঘুমটা হঠাৎ করে ভেঙে গেল।ঘেমে যেন চুপসে গেছি এমন অবস্থা! বেলকনিতে গেলাম ফোনটা হাতে নিয়ে।হঠাৎ’ই একা লাগছে।পায়েলের কথা বড্ড মনে পড়ছে কেন জানি!যদিও সম্পর্ক’টার কোন নাম নেই।কেন জানি কথা বলতে মন চাইছে মেয়েটার সাথে। কোন কিছু যেন না ভেবেই পায়েল’কে ফোন দিলাম।প্রথমবার রিং হওয়াতেই রিসিভ হলো শেষ দিকটায়।ওপাশ থেকে তখন ঘুমো ঘুমো কন্ঠে পায়েল বলে উঠল,

-“ঘুমাও’নি?” ভেবেছিলাম বলবে,এতো রাতে কেন ফোন দিয়েছো?তখন আমি বলব,তোমার আমার সম্পর্কটা কি? আমার প্রত্যুত্তর না পেয়ে পায়েল আবার বলে উঠল,

-“চুপ করে আছো কেন?কি হয়েছে বলবে?”
-“না তোমার সাথে কথা বলতে মন চাইছিলো,তাই ফোন করেছি।”
-“এর জন্যই আমাকে ‘তুমি’ করে বলছো?”

পায়েল’কে তুমি করে বলি না।আপনি করে বলি।তুমি’টা কেন জানি ইতস্ত লাগে।পায়েল অবশ্য বলেছে অনেকবার কিন্তু তারপরও বলি না। খানিকটা লজ্জা লাগছে এখন কথা বলতে।চুপ করে আছি।কি বলব সবটা যেন হাঁড়িয়ে গেল।আমার চুপ থাকায় পায়েল আবার বলে উঠল,

-“কিছু বলার জন্য ফোন করেছো?তাহলে এখন বলো জলদি করে।” বুকে কতগুচ্ছ সাহস নিয়ে বলেই দিলাম!
-“আচ্ছা আপনার আমার সম্পর্ক কি?এই সম্পর্কের নাম নেই?” পায়েল কিছুক্ষণ চুপ রইল।কিছুক্ষণ পর মৃদু করে বলে উঠল,
-“বন্ধুত্ব।”

এই বলে ফোনটা কেটে দিল।আমিও আর কিছু বললাম না,ফোনও আর দিতে ইচ্ছে করলো না।শুধু শীতল একটা অনুভূতি ভেতরটা দিয়ে বয়ে গেল।

বিকেলে বের হলাম সিগারেট কিনতে।সেখান থেকে গেলাম মিরপুরে।আবিরের জন্য শার্ট কিনতে।কাল আবিরে’র একটা ইন্টারভিউ আছে। শার্ট কিনে আসছিলাম হঠাৎ মনে হলো ফোনটা রেখে আসছি শপিংমলে।পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ফোন নেই।তড়িঘড়ি করে রাস্তা পার হবার সময় লোকাল বাসের সাথে বেশ জোরে ধাক্কা খেলাম।বাস’টা ব্রেক জোরে কসাতে আঘাতটা মাথায় আর পায়ে গিয়ে লাগল।হাল্কা জ্ঞান ছিল তখনও।চোখটা ঝিমঝিমে করে হাল্কা খোলা ছিল।চারিদিকে লোক জড়সড়ভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।মাথার যন্ত্রণায় যেন চোখটা বন্ধ হয়ে আসছে।তারপর আর খুব একটা মনে নেই। চোখটা খুলে দেখলাম আবির পাশে বসে আছে। আমার চোখ খোলাতেই আবির বলল,

-“রাস্তা দেখে পার হবি না?”
-“আমার ফোন কোথায়?”
-“শপিং ব্যাগেই আছে,ফোনের জন্য এই অবস্থা?”

তখনই পায়েল আসল।আমি আবিরের কথার আর জবাব দিলাম না। পায়েল এসেই আমার ডান পাশে বসল,আর আবির বাপাশে। নার্স দেখলাম মেডিসিন দিয়ে গেছে।কিন্তু কিছু খেয়ে তারপর মেডিসিন খেতে বলেছে।তাই আবির কিছু খাবার আনতে গেলো বাইরে। আবির চলে যাওয়ার পর পায়েল বলে উঠল,

-“দেখে শুনে চলতে হয় এটা জানেন না?”
-“খেয়াল ছিল না,তাছাড়া ইচ্ছে করে করিনি তো!”

পায়েল এই সম্পর্কে আর কথা বাড়াল না।কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপ রইলাম।পায়েল মাঝে মধ্যেই আমার দিকে তাকাচ্ছে।কেমন জানি মুখটা ভারি হয়ে আছে তাঁর।মাঝে মধ্যেই দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটা। আবির খাবারটা দিয়ে আবার কই যেন চলে গেলো। পায়েল বক্সের ওপর থেকে পানি আর খাবার নিয়ে আসল।খাবারটা নিজের হাতে খাইয়ে দিল,তারপর মেডিসিন।

-“আচ্ছা একটা কথা বলার ছিল!” কথাগুলো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল না পায়েল।নিচু হয়ে বলল।আমি কেন জানি কোন প্রত্যুত্তর দিলাম না পায়েলের কথায়।মাথাটা বেশ ব্যাথা করছে।চোখটা যেন আটকে আসছে।

-“মাথা ব্যাথা করছে?”
-“হুম কিছুটা,মাথায়’ই তো আঘাতটা লাগছে।ভাগ্যিস কাটেনি।”
-“মাথায় হাত বুলিয়ে দেই ভালো করে শুয়ে পড়ুন।”

কেন জানি ‘না’ করতে যাব ঠিক সেই সময়ে দরজায় চোখ পড়ল।তিথি দাঁড়িয়ে দেখছে।ভেতরে আসতে বলব ঠিক সেই সময়ে মুখটা ফিরে চলে গেলো।পায়েল’কে আর কিছু বলতে পারলাম না।এদিকে বন্ধুত্বের বাহানায় পায়েল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।হয়ত নতুন কোন বাহানায় আগাবে এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক’টাও….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত