ভুলোমন

ভুলোমন

তানিশার বিয়ে হয়েছে ১ বছর ৬ মাস হলো। ওর স্বামী রফিকুল জীবিকা নির্বাহের জন্য থাকে আমেরিকায়। বিয়ের প্রায় ১ মাস পরেই নতুন বউকে রেখে চলে যেতে হয় তাকে। কিন্তু এই দূরত্ব তাদের সম্পর্কের ছেদ ঘটাতে পারে নি কখনো। বরং দিনে দিনে তাদের প্রেম-ভালোবাসা যেন ফুলে ফেঁপে উঠছে। দিনে অন্তত ১০ বার ভিডিও কলে দীর্ঘ সময় কথা বলা চাই। একটু সময় পেলেই সাথে সাথেই তানিশাকে কল দেয় রফিকুল। যেন নতুন প্রেমের শুরু। রাতে ফোনে কথা বলতে বলতেই দুজনে ঘুমিয়ে পড়ে। তাদের সম্পর্কটা দেখে মনে হয় না স্বামী-স্ত্রীর। মনে হয় যেন সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক-প্রেমিকা।

বিয়েটা তাদের হয়েছিলো পারিবারিক ভাবেই। প্রথম দেখাতেই রফিকুল তানিশাকে দেখে পছন্দ করে ফেলে এবং সিদ্ধান্ত নেয় এই মেয়ে ছাড়া অন্য কাউকেই সে বিয়ে করবে না। যদিও তানিশাদের আর্থিক অবস্থা ওদের থেকে তুলনামূলক অনেক খারাপ ছিলো। কিন্তু ছেলের জেদ দেখে অবশেষে ওর বাবা-মা রাজী হয়ে যায় প্রথম দিকে বহুবার না করলেও। এই জন্য কম ঝামেলা পোহাতে হয় নি ওর! বিয়ের পর শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মন জয় করে ফেলে তানিশা। তারা এখন তাকে একদম নিজের কন্যার মতোই স্নেহ করেন। সুতরাং, তানিশা সুখী ছিলো।

বেশ কয়েকদিন যাবত রফিকুল তানিশাকে ফোন করছে না। যে ছেলে প্রায় সারাদিন ভিডিও কলে কথা বলার জন্য ব্যস্ত হয়ে থাকতো, সেই ছেলে কি-না তানিশাকে কল করাই বাদ দিয়েছে। সারাদিনে একবারও না। হঠাৎ করে রফিকুল এর এই পরিবর্তনের কারণ তানিশা ঠিক ধরতে পারে না। ও ভাবে আর ভাবে একটা মানুষ হুট করে কিভাবে এত পরিবর্তন হয়ে যায়! তানিশা শুনেছে বিদেশে না-কি অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ের পাল্লায় পরে ছেলেরা বিপথে চলে যায়। রফিকুল এমন করবে না তো আবার? বরাবরই তানিশার অনেক ইগো। রফিকুল ওকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তাই সব সময় রফিকুলই ওর সাথে বেশি বেশি কথা বলতে চাইবে কিন্তু ও পাত্তা কম দিবে এমন একটা মনোভাব পোষণ করতো ও। যদিও সেও তাকে অনেক ভালোবাসতো। সেই জেদে তানিশাও অভিমান করে বসে থাকে। রফিকুল যে পর্যন্ত তাকে কল না করবে, সে-ও আর করবে না।

কিন্তু প্রায় ১০ দিন হতে চললো কোনো কল বা মেসেজ ওর ফোনে আসে নি। চাতক পাখির মতো হা করে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকে একটা কলের অপেক্ষায়। কিন্তু লোকটার যেন কোনো পাত্তাই নেই। । আচ্ছা ও কি তানিশার উপর রাগ করেছে? কিন্তু রাগ করার মতো তো ও কিছুই করে নি। লাস্ট যেদিন ফোনে কথা হলো সেদিনও তো বেশ হাসিমুখেই কথা বলেছিলো তারা। বরং প্রতিদিনের তুলনায় সেদিন আরও বেশি উৎফুল্ল ছিলো তারা দুজনেই। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? নাকি রফিকুল ওর সাথে ভালো ব্যবহার করার নাটক করলো? নাকি ও সেই দেশের কোনো মেয়েকে বিয়ে করে ফেললো? তার কি সতীনের সাথে সংসার করতে হবে? কিভাবে করবে সে এটা? সহ্যই বা করবে কিভাবে? তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি কি ওই মেয়েকেই বেশি ভালোবাসবে তার থেকে? তাদের যে ফোনে কথা হয় না এটা সে তাদেরকে জানায় নি। তার কি জানানো উচিত? জানিয়েই কি লাভ? বলবে কি করে এই কথা?হঠাৎ করে খুব কান্না পেতে লাগলো ওর। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েও গেলো এক সময়। ছোটখাটো একটা স্বপ্নও দেখলো স্বামীকে নিয়ে।

ঘুম থেকে উঠে তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিলো। ভেবেছিলো রফিকুল ফোন করেছিলো হয়তো।সে ঘুমে ছিলো তাই টের পায় নি। কিন্তু কোনো কল আসে নি। স্বপ্নটার কথা ভেবে নিজের অভিমানকে আর সংযত রাখতে পারলো না ও। সব অভিমান ভুলে কল দিয়ে দিলো। রিং হচ্ছে আর ওর বুকে ধুকপুকানি বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু রফিকুল কল ধরে না। তখন ও ভীষণ ঘাবড়ে যায়। আচ্ছা ওর কোনো অসুখ হলো না তো? নয়তো কোনো এক্সিডেন্ট?কল কেন রিসিভ করে না সে! ও কি তবে….উঃ!! আর ভাবতে পারে না সে। ওকে কল দিতে দিতে চিৎকার করে বলতে থাকে, “ওগো! কোথায় তুমি? তুমি আমার কল কেন রিসিভ করছো না!!!”

একটু পর রফিকুল দৌঁড়ে এসে বলে,”কি হয়েছে? কল দিচ্ছো কেন? আমি বাথরুমে ছিলাম।” রফিকুলকে দেখে তানিশা প্রথমে অবাক হলো।তারপর আনন্দ ধ্বনি দিয়ে বলে,”ও আচ্ছা! তুমি তো ১০ দিন যাবত দেশে ফিরেছো। আমি ভুলেই গিয়েছিলাম”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত