সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি সারা বাড়িতে হইচই।আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী সবাই আজকে আমাদের বাড়িতে। ভাবলাম, বড় কোনো পার্টি হয়তো। একটু পরেই মনে হলো আরে আজকে তো আমার বিয়ে। ইদানিং সবই ভুলে যাই দেখছি।নিজের বিয়ের কথা নিজেই ভুলে যাই এমন মানুষ মনে হয় আমিই প্রথম।।
কিন্তু বিয়ে বাড়িতে কান্নার আওয়াজ আসবে কেনো।তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই দেখি উঠোনে অনেক মানুষের ভীড়। সবাই কান্না করছে কমবেশি।মনে হচ্ছে, কান্না প্রতিযোগীতায় নেমেছে একেকজন। ভাবলাম, “মেয়েপক্ষ বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিয়েছে মনে হয়”।আগেই বুঝতে পেরেছিলাম এমন কিছু ঘটবে। মেয়েটাকে আমার মোটেও সুবিধার মনে হয় নি।তারপরও কারনটা একবার শোনা উচিত।। “মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যায়নি তো!!” ভাবতেই ফোন হাতে নিয়ে কল ঢুকিয়ে দিলাম মেয়েটার নাম্বারে। ওপাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো, ‘সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে নাহ।’ আরে, আমি কি বোকা।কল ঢুকবে কি করে! মেয়েটা পালিয়ে গেলে তোহ আর ফোন খোলা রাখবে না।
যাকগে হবু শ্বশুরকে ফোন দিয়ে একটু শান্তনা দেই। কত টাকা খরচ করলো মেয়েটার বিয়ে উপলক্ষে!! আর সেই মেয়ে কিনা এবারে ফোন ধরলো।কিন্তু আমার কথা শুনেও না শোনার ভান করছে লোকটা।ভাবলাম লজ্জা পেয়েছে হয়তো। তাই কেটেই দিলাম ফোন।। এতক্ষণে বাড়ীতে কান্নার আওয়াজ আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে। মহিলাদের কন্ঠই বেশি শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই নারীজাতি না থাকলে কানটা আরো তরতাজা থাকতো। যদিও নারীরা না থাকলে আমরা কেউই দুনিয়ায় আসতাম নাহ।তবে সুশীল সমাজে এসব কথার কোনো দাম নেই। “তুমি যতক্ষন পারো এদেরকে শোষন করো আবার সুযোগ বুঝে নারীবাদী হয়ে উঠো।” তাহলেই সমাজ তোমাকে বাহ বাহ দিবে।।
ভীড় ঠেলে উঠোনের মাঝখানে যেতেই চোখ পড়লো একটা খাটিয়ায় কাফনের কাপড়ে মোড়ানো লাশের উপরে।তারমানে আমার ধারনা ভুল। বিয়ে ভাঙ্গে নাই। কেউ একজন মারা গেছে।কিন্তু আজব ব্যাপার,, “বাড়ীতে একজন মারা গেলো আর আমাকে কেউ ঘুম থেকে জাগালোই নাহ।।” ভাবলাম হয়তো দাদু মারা গেছে।অনেক বয়স হয়েছে তাঁর। সামনে তাকাতেই দেখি দাদু লাশের পাশে বসে অঝোরে কাদছে।তাহলে কে মারা গেলো? কাকে জিজ্ঞেস করি এখন। এমনসময়ই আমার চাচাতো বোন সাদিয়া আমার দিকে দৌড়ে আসছে।ভাবলাম কিছু হয়তো বলবে আমাকে।সাদিয়ার এভাবে দৌড়ে আসা দেখে মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। সাদিয়া আমার প্রথম জীবনের ক্রাশ। “দুনিয়ার সবচাইতে সুস্বাদু খাবারের চাইতেও বেশী সুস্বাদু আর হট কফির চেয়েও বেশি হট” এই সাদিয়া। কত লাইন মারার ট্রাই করেছি। পাত্তা দেয় নি।আর আজকে এভাবে দৌড়ে আসছে ভাবতেই আনন্দ লাগছে। সাদিয়া একদম আমার সামনে চলে এসেছে।
ভাবলাম, জড়িয়ে ধরে কিস করবে হয়তো। কি আশ্চর্য!! মেয়েটা আমার শরীরের মাঝখানে দিয়ে চলে গেলো।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব!! পরক্ষণেই শুনতে পারলাম,, ছোট চাচী কাদঁছে আর বলছে, আহারে! ছেলেটার আজকে বিয়ে। আর আজকেই মরে যাওয়া লাগলো।। কথাটা শোনামাত্র আমার শরীরের সবকয়টা পশম দাড়িয়ে গেল। তাড়াতাড়ি গিয়ে লাশের ঘোমটা সরাতেই দেখি,আরে এটা তোহ আমি!! একটুপরেই মনে হলো কালকে রাতের ঘটনা। আমি তোহ কালকে রাতেই মারা গেছি!! তারমানে মরে এখন ভূত হয়ে গেলাম। বেচে থাকতে অনেক শুনেছি, “মরে গেলে মানুষ ভূত হয়ে যায় আর আজকে আমি নিজেই ভূত।” ভাবতেই ভালো লাগছে।।
সবাই আমার লাশ ধরে কাদছে আর ভাবছে, এটা দুর্ঘটনায় মৃত্যু।কিন্তু আসল কারনটা কেউ জানে নাহ, যে এটা একটা মার্ডার। আমাকে খুন করেছে আমারই এক্স গার্লফ্রেন্ড দিশা।কলেজে থাকতেই ওর সাথে আমার পরিচয়। সেই থেকে প্রেম। প্রথমে আমি ওর সরলতায় মুগ্ধ হয়ে ওকে ভালোবাসি।কিন্তু যখন জানতে পারি ওর সরলতার আড়ালে নষ্টামি।তখন ওর থেকে দূরে সরে আসি আমি। পরিবারের ইচ্ছাতে বিয়ে ঠিক হয় আমার। আর এটাই মেনে নিতে পারেনি দিশা।। হঠাৎ কালকে রাতে দিশার ফোন আসে।ফোন ধরামাত্রই বলে উঠে,, “আসিফ আমাকে বাচাও।ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।ওরা আমার বাসায় চলে এসেছে মারার জন্য।”
কথাটা শুনেই কোনোরকম দেরী না করে বাইক নিয়ে চলে যাই ওদের বাসায়। শত হলেও এক্স গার্লফ্রেন্ড। একটা মায়া কাজ করে। বাসায় যেতেই দেখি, বাসা খালি। কেউ নেই। দিশা মেসেজ করে, ছাদে যেতে বলে। ছাদে যাওয়া মাত্রই দিশা আমাকে জড়িয়ে ধরে। বলে,আসিফ তুমি এই বিয়েটা ভেঙ্গে দাও,প্লিজ। তুমি আমি মিলে সুখের সংসার করবো। কিন্তু আমি তাতে রাজী হইনা। এতোরাতে এভাবে ডাকার জন্য রেগে যাই আমি। একটা থাপ্পর দেই রাগের মাথায়। আমাকে রাগতে দেখে দিশাও রেগে যায়। “আসিফ,শুনে রাখো,তোমাকে আমি না পেলে অন্য কেউও পাবে নাহ” বলেই হঠাৎ আমার চোখের মধ্যে মরিচের গুড়া ছিটিয়ে দেয়। প্রচন্ড ভাবে চোখ জ্বলা শুরু করলো, কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি নাহ।
এমনসময় দিশা আমাকে টেনে কোথায় যেনো নিয়ে গেলো। একটুপরেই বুঝতে পারলাম। “গুড বাই আসিফ”, “ভালো থেকো” বলেই আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো দিশা। ছয়তলার উপর থেকে পড়ে একদম স্পট ডেড। মুখটা থেতলে গেছে।লাশটা দেখে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছি নাহ। এভাবে কেউ কাউকে মারতে পারে!! আসলেই খুনীরা খুব নিষ্ঠুর হয়।। অবশ্য ভুত হয়ে আমার খারাপ লাগছে নাহ ভালোই লাগছে।কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে নাহ। কিন্তু আমি সবাইকেই দেখতে পাচ্ছি। এতো আনন্দ বিয়ে করলেও পেতাম নাহ। বাবা মাকে গিয়ে কতবার বোঝালাম যে কান্না করো নাহ, তোমাদের আসিফ ভালো আছে। কিন্তু তারা আমাকে দেখতেই পায় নাহ,শুনবে কি করে।।
হঠাৎ খুব ক্ষুধা লাগলো আমার।ভুতদের ও তাহলে ক্ষুধা লাগে।মানিব্যাগ বের করে দেখি কয়েকশো টাকা আছে।কিন্তু টাকা থেকেই বা কি লাভ।এই টাকা আমি চালাবো কিভাবে। কেউ তোহ আমাকে দেখতেই পায় নাহ। এমনসময় মাথায় আসলো,আচ্ছা আমার হবু শ্বশুর বাড়ীতে তোহ বিয়ের রান্নাবান্না হয়ে গেছে মনে হয়।ওখানে গিয়েই খেয়ে আসি।কেউ তোহ আর আমাকে দেখবেনা। আর ওই বাড়ীরও একটু খোজ নিয়ে আসি কি অবস্থা এখন। ভাবলাম,, হয়তো মানসম্মান বাচাতে মেয়েটাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিয়ে দিবে। অথবা ওরাও খুশি হবে এইভেবে যে,, ভাগ্যিস ছেলেটা বিয়ে হবার আগেই মারা গেছে।নইলে মেয়েটা বিধবা হয়ে যেতো বিয়ের পরেই।।
হাটতে হাটতে চলে গেলাম হবু শ্বশুরবাড়ী। এখানেও একই অবস্থা। সবাই কাঁদতেছে।তবে বুঝতে পারলাম নাহ সবাই আমার জন্য কাদঁছে নাকি এই বাড়ীর মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে গেসে বলে। অবশ্য সবার উদ্দ্যেশ্যও এক নয়। একেকজনের ডিমান্ড একেকরকম। কেউ হয়তো কাদছে এতোগুলো টাকা নষ্ট হলো এইজন্য। আবার মেয়েটা হয়তো কাদছে, “আজকে তার বিয়ে হলো না এইজন্য।” আরও অপেক্ষা বেড়ে গেলো তার।। আমিও গিয়ে চুপচাপ খাবার টেবিলে বসলাম। কিন্তু আমাকে খাবার দিবে কে? তাই নিজেই নিয়ে নিলাম।যখনি খেতে যাবো এমনসময় কেউ আমার হাত চেপে ধরলো শক্ত করে। সামনে তাকিয়ে দেখি আমার হবু বউ ফিহা। লাল বেনারশী তে খুব সুন্দর লাগছে ওকে।আর বলে উঠলো,,
“কি ব্যাপার আসিফ! হাত না ধুয়েই খাবার খাচ্ছো কেনো?” ওর কথা শুনে আমি থমকে গেলাম।ও কিভাবে আমাকে দেখতে পেলো, আমাকে তো ভূত ছাড়া কারও দেখতে পাওয়ার কথা নাহ। এমন সময় ফোনে একটা মেসেজ আসে।হবু শ্বশুর পাঠিয়েছে,, “বাবা আসিফ,তুমি হয়তো কখনো জানতেও পারবেনা, তোমার মৃত্যুর কথা শুনে আমার মেয়েটাও সুইসাইড করেছে।।