অল্প বিদ্যা ভয়ংকর

অল্প বিদ্যা ভয়ংকর

আপা মনি কিছু মনে না করলে একখান কতা কইতাম। বসে বসে ফেসবুকিং করছিলাম তার মধ্যে জরিনার একথা।জরিনা আমাদের বাসায় কাজ করে। জরিনার কথা শুনে মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম

__ কি কথা বল।
__ না মানে আপা মনি আম্নে যদি আমারে ফেসবুকের কিছু জিনিষ একটু শিখাই দিতেন তাইলে একটু উপকার হইতো। জরিনার কথা শুনে তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে বললাম

__ তোকে ফেসবুক আইডি কে খুলে দিয়েছে।

আমার কথায় জরিনা আমতা আমতা করে বলে আমার খালাতো ভাই সৌরভ নাকি তাকে আইডি খুলে দিয়েছে। সৌরভ এই কাজটা ভালো পারে কেউ আইডি খুলে দিতে বললেই অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করেই আইডি খুলে দিবে।সৌরভের ক্লাসতো পরে নিবো। আপাতত জরিনাকে ফেসবুকের টুকিটাকি কিছু জিনিষ শিখিয়ে দিলাম।সে সাথে জরিনা তার ফেসবুক পাসওয়ার্ডটাও আমাকে দিয়ে দিলো সুবিধা অসুবিধায় তাকে সাহায্য করতে।তা না করলে সে আমার ক্রাশের কথা আম্মুকে বলে দিবে। দেখিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষন পরেই দেখি এঞ্জেল জরিনা নামের একটা আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসছে।সেই সাথে রান্নাঘর থেকে জরিনার গলা “আপা মনি রিকুয়েস্টটা এক্সেপ্ট করেন” আমি ও রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে অন্য কাজে মন দিলাম।এর কয়েকদিন পরে আবার জরিনা তাড়াহুড়ো করে আমার রুমে এসে একটা প্রোফাইল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে

__ আপা মনি এখানে সালমান খান লিখা নাহ তার মানে এটা সালমান খানের আইডি হবে

__ হে কিন্তু এটা তো তার আসল আইডি না অন্য কেউ কথাটা পুরো বলার আগেই জরিনা দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তার মধ্যে আর আসেনি।এদিকে জরিনার কাজে ও ঠিক মত মন নেই।তাই আম্মু জরিনার কি হয়েছে তা জিজ্ঞাসা করতে আমাকে বলেছে।আমি ও আমার দায়িত্ব মত কাজ করলাম।

__ জরিনা তুই ঠিক মত কাজ করতেছিস না কেন সারাদিন কি করিস এত

__ আপা মনি সারাদিন ফেসবুকে চ্যাট করি। জরিনার কথায় আমার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা তাই নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম

__ তুই ঠিক মত টাইপ করতে পারিস ?
__ কি কন আপা মনি এটা না পারার কি আছে।একটু হইলেও আমি ক্লাস ফাইভ অবধি পড়ছি।তাই ভালো মতই ফেসবুকে চ্যাট করতে পারি।

সেদিন জরিনাকে আর কিছু না বলে উঠে আসি।এদিকে মনের মধ্যে কেন জানি কেমন সন্দেহ সন্দেহ লাগছিলো।তাই জরিনার আইডিতে লগ ইন করে দেখি সেই সালমান খানের আইডির সাথে জরিনার অনেক ভাব।ছেলেটা কথায় কথায় হিন্দি বলে।এদিকে জরিনাও তার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু সালমান ছেলেটা একটুও সুবিধার না।বেচারি সহজ সরল জরিনাকে ঠকাচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম জরিনাকে বলবো ছেলেটাকে ব্লক করতে ।কিন্তু এ কথা বলার পর জরিনা কিছুতেই আমার কথায় রাজি না।সে বিশ্বাসই করে না এটা নকল সালমান খান।তার কথা আমার নাকি বুঝতে ভুল হচ্ছে। জরিনাকে বুঝাতে না পেরে অবশেষে নিজেই সেই সালমানকে তার আইডি থেকে ব্লক মারলাম। এদিকে জরিনা সালমানকে না পেয়ে কান্নাকাটি করে শেষ।শেষমেশ আমার কাছে এসে বললো

__ আপা মনি আমার সালমানকে খুইজা পাইতাছিনা।
__ তোমার সালমান এখন তার ক্যাটরিনাকে নিয়ে বিজি আছে তাই খুঁজে পাচ্ছো না। জরিনাকে কথাটা বলেই বই পড়ায় মন দিলাম।এদিকে জরিনা আমার মাথা খেয়েই যাচ্ছে ক্যাটরিনা কে তা জানার জন্য।আমি তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা টিভি চালিয়ে সালমান খান আর ক্যাটরিনার নতুন ছবিটার বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে দিলাম।

তা দেখে জরিনা কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি দিয়ে সাগর বানাচ্ছে আর বলেই যাচ্ছে সালমান তুমি আমারে ছাইড়া চইলা গেলে তুমি না বলছিলা তোমার নতুন ছবিতে আমারে নায়িকা বানাবা।আর ওহন তুমি আমার ভালোবাসার এদাম দিলা বেচারি জরিনা সালমান খানের ছবি দেখতে দেখতে বলতে লাগলো একটা প্রেম কপালে জুটেছিল তাও হলো না।আল্লাহ না জানি আমার ভাগ্য নীহা আপা মনির মত না হয়।যে আজকে এতদিন ক্রাশের পিছনেই ঘুরে বেড়াচ্ছে।কিন্তু কিছুতেই তাকে ফটাতে পাচ্ছে না। এদিকে জরিনার কথা আম্মু শুনতে পেরে বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে জরিনাকে বললাম সালমান খান তোকে তার মুভিতে না নিলেও আমার মুভিতে তুই ঠিকই ঢুকে গিয়েছিস ভিলেন হিসেবে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত