রাত ২ টা বেজে ৩৮ মিনিট। সাদিয়া তার বয়ফ্রেন্ড রাকিবকে খুব আগ্রহ সহকারে মেসেজ দিলো,
: চলো না বাবু লুডু খেলি।
: কি বলো! আবার? এই নিয়ে আজকে ১৪ বার খেললাম। আজকে আর ইচ্ছা করতেছে না বাবু। ঘুম পাচ্ছে। চলো ঘুমিয়ে যাই।
: তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না রাকিব। মাত্র ১৪ বার খেলেই না করছো। অথচ আগে তুমি নিজেই খেলার জন্য ইনভাইট করতা।
: আচ্ছা বাবু প্লিজ কালকে খেলি? আজ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। একটু বোঝার চেষ্টা করো।
: তুই খেলবি নাকি তোরে ব্লক দিবো? অন্য কারোর সাথে খেলতে বলতাছোস তুই আমারে? তোর এত সাহস? রাকিবের আজকের ঘুমটাও গেলো। সাদিয়া মোট ১৭ বার খেলে রাকিবকে গুড নাইট বাবু বলে ঘুমিয়ে পড়লো। ১৭ নাকি ওর খুব প্রিয় সংখ্যা। রাকিব জিজ্ঞাসা করায় ও বলেছিলো, “লুডু খেলায় ২ ছক্কা ৫ সব মিলিয়ে ৬+৬+৫=১৭ হয়, এই জন্য এই সংখ্যাটাকে ও সব থেকে বেশি পছন্দ করে। একবার কথাচ্ছলে রাকিব জিজ্ঞাসা করেছিলো,
: তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো সাদিয়া?
গুনে গুনে ১৭ টা লজ্জার ইমোজি দিয়ে সে বললো, আমি তোমায় লুডু খেলায় ২ ছক্কা পাঁচের মতো ভালোবাসি বাবু।” মানে এই মেয়ে লুডু খেলা ছাড়া কিছু ভাবতেই পারে না। তবুও শান্তি ছিলো যদি না প্রতিবার ওকে জিতিয়ে না দিতে হতো।
যতবার জিতে ততবার স্টোরিতে স্ক্রিনশট দিয়ে এড করে। রাকিব যদি সাদিয়ার কোনো গুটি খেয়ে দেয় সাথে সাথেই ব্লক করে দেয় ওকে। কত রকম আকুতি মিনতি করে ব্লক ছাড়িয়ে নিতে হয়। ব্লক ছাড়িয়েও বা কি লাভ! লুডু খেলা ছাড়া ওর মুখে অন্য কোনো কথাই নেই। সাদিয়ার কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অনলাইন গেম হচ্ছে লুডুক্লাব । কিসের পাব্জি,কিসের ফ্রি-ফায়ার! লুডুর সাথে কারোর তুলনাই চলে না। পাব্জি আর ফ্রি- ফায়ার খেলোয়াড়রা যখন ঝগড়া করে, সাদিয়া তখন মাঝখান থেকে লুডুর শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করতে বসে।
সাদিয়ার কথা যে পর্যন্ত তারা না মানে, ততক্ষণ তর্ক চলতেই থাকে। সাদিয়া আহ্লাদে গদগদ হয়ে রাকিবকে বললো,”তোমায় আমি কবে থেকে এত পছন্দ করি জানো? যেদিন থেকে বুঝেছি তুমি অনেক কেয়ারিং। সত্যিই তোমার মতো বয়ফ্রেন্ড কপাল জোরে পেতে হয়।” রাকিব খুশিতে আটখানা হয়ে বললো, “হু… কিন্তু তুমি কবে থেকে বুঝলা আমি অনেক কেয়ারিং?” সাদিয়া আবার ১৭ টা লজ্জার ইমোজি দিয়ে বললো,”যেদিন তোমাকে লুডু খেলায় “Don’t Kill” মেসেজ দেওয়ার সাথে সাথে তুমি “ok” বলে আর আমার গুটি খেলে না, সেদিন থেকেই আমি বুঝে গেছি তুমি বয়ফ্রেন্ড হিসেবে কতটা যোগ্য।”
রাকিব দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো বলদের মতো কেন যে ওই কাজটা করতে গেছিলাম। সেদিন যদি খেয়ে দিতাম তাহলে হয়তো আজকে আর কলুর বলদের মতো খাটতে হতো না। কথায় বলে না? ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা, সারাজীবনের কান্না। কিন্তু রাকিব সারাজীবন কাঁদতে চায় না। তাই সিদ্ধান্ত নিলো যখন খাওয়ার চান্স আসবে তখনই খেয়ে দিবে। এতে যদি সাদিয়া ব্লক দেয় তাহলে তো ভালোই। এই অত্যাচার আর সহ্য করতে হবে না।
খেয়ে দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী সাদিয়া তাকে ব্লক করে দিলো। আহ! রাকিবের খুশি দেখে কে! কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই সাদিয়া ব্লক খুলে বললো, “১৭ মিনিট হয়ে গেছে। তাই ব্লক খুললাম। এবার আর খাবা না, কেমন?” রাকিবের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেলো। রেগে গিয়ে বললো,”এই তোর সাথে আমার ব্রেকআপ। পাইছোসটা কি তুই আমারে? যা বলবি তাই করমু? আজকে তোরে আমিই ব্লক দিলাম। যাহ্ ব্রেকআপ। অন্য কারোর সাথে লুডু খেল।” সাদিয়া কাঁদোকাঁদো হয়ে ২টা স্ট্যাটাস দিলো :
১.আমি তোমায় ২ ছক্কা পাঁচের মতো ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু তুমি আমায় তিন ছক্কার মতো ভালোবাসা দিয়েছিলে।
২.তুমি আমার লুডু খেলায় জেতার জন্য সেই একটা “কানা।” যাকে অনেক চাই কিন্তু পাই নাহ্। অন্য জন পেয়ে জিতে যায় আর হেরে যাই আমি।