আমার অনেক দিনের ক্রাশ সাদিয়ে কে ম্যাসেঞ্জারে পটানোর চেষ্টা করতেছি। এই কোয়ারেন্টেন এ কোনো কাজ নেই সে হিসেবে সাদিয়ার সাথে মোবাইল ভালোই সময় কাটছে। সাদিয়ার বাবা ব্যাপক বড়লোক্স।
তাকে পটিয়ে বিয়ে করতে পারলে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যেতে পারবো। তাই সাদিয়াকে পটানোর জন্য মেয়ে পটানো থেরাপি সেন্টারে তিন মাসের একটা কোর্স করেছি। এখন মেয়ে পটানো আমার কাছে ডালভাত। ইতোমধ্য ছোট বোন এসে হুংকার দিলো- আম্মা দেখো তোমার ছেলে মোবাইল টিপতেছে।বিরক্ত নিয়ে দরজার দিকে তাঁকিয়ে দেখি ছোটবোন মিলি হাসছে। মিলি হচ্ছে আমার একমাত্র আদরের ছোটবোন। সদ্য ইন্টারমিডিয়েট ভর্তি হয়েছে। একটা বজ্জাতের হাড্ডি। দিনরাত আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।
ওর কথা পাত্তা না দিয়ে আমি আবারও মোবাইল টিপায় মন দিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে আমার একমাত্র ক্রাশ সাদিয়াকে পটিয়ে ফেললাম। এই পর্যন্ত ছোটবোনের ষড়যন্ত্রে আমি একাধিক বার ছেঁকা খেয়েছি। তাই সাদিয়াকে পটানোর ক্ষেত্রে আমি যথেষ্ঠ সচেতন। পূর্বের ন্যায় ছেঁকা খেয়ে বেঁকা হতে চাই না আমি। প্রেমে পড়লে মানুষের মাঝে একটা হিরো হিরো ভাব চলে আসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নয়। আমার প্রথম প্রেমিকা ছিলো মিম। একাদশ শ্রেনীতে থাকাকালীন আমি তার প্রেমে পড়ি। দিনরাত তার প্রেমে মশগুল থাকতাম আমি। খাওয়া,দাওয়া, পড়ালেখা ছেড়ে উদাসী হয়ে তার কথা ভাবতাম সবসময়। কখনো রাত জেগে মোবাইল এ কথা বলতাম কিংবা কখনো চ্যাটিং করে মুচকি মুচকি হাসতাম।
আর আমার বোন ছিলো গোয়েন্দা বিভাগের একজন দজ্জাল ছেমরি। সবসময় আমার পিছে লেগে থাকে আর সুযোগ বুঝে বাঁশ দেয়। সেদিন মিমের সাথে পুরোদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম। বিকালে বাড়ি এসে দেখি সবাই আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমার ভয়ে হাত পা কাঁপা শুরু করছে। এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম। ছোটবোন মিলি আব্বু আম্মুর কাছে প্যাঁচ লাগাইছে। আব্বার টাকা চুরির অপরাদে আমাকে মেরে তক্তা বানিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর আমার প্রেমের ১৩টা বাজলো। আমার থেকে মোবাইল নিয়ে মিমের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করছে। বেচারী জীবনে আর কারো লগে প্রেম করবে বলে আমার মনে হয় না।
রাগে, দুঃখে, শোকে তিন দিন ভাত খাই নাই। প্রথম প্রেম বলে কথা। এতো সহজে কি ভুলা যাই। শরমে মিমের সাথে আর কথা বলা হয় নি। কারণ আমাকে আর মোবাইল দেওয়া হয় নি। আমার দ্বিতীয় প্রেমিকা ছিলো পাশের বাড়ির জংলি মেয়ে রোকেয়া। রোকেয়া দীর্ঘ দিন যাবত আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে কিন্তু শরমে বলতে পারছে না। আমিও তার প্রেমে সাড়া দিলাম। সেদিন টেবিলের উপর একটা কাগজ পেলাম। সেখানে লেখা ছিলো, ওগো আর ময়নার বাপ আন্নে মেলা গরম, মনের কতা কইতে গেলে আর করে শরম। মনের কতা কইতে চাই যদি রাজি থাকেন, হাঞ্জের দিকে হারার হিছে চুপি চুপি আইয়েন।
~ইতি আন্নের রোকেয়া।
হেতীর চিঠি পড়ে তো আমার পরাণ জুড়াই গেলো। ভালেবাসা প্রকাশ করতে আমিও তারে একটা চিঠি লিখলাম-
ওগো আর ময়নার মা তুমি আমার টুনটুনি, গঞ্জে থেইক্কা কিন্না আইছি তোমার জন্য ঝুনঝুনি। ওগো আর কৈতরী ভালোবাসার সই, তোয়ার লগে নিত্য আই মনের কতা কই। হাঞ্জের দিকে হারার পিছে প্রেম করিবো দুজন মিলে, দুটি মনের আজ হবে একজোড়া সন্ধি, থাকবো আমি আসবে তুমি হাঞ্জের দিকে জলদি।
~ইতি তোয়ার বুঝে নিও।
কিন্তু দূভাগ্য জনক ভাবে রোকেয়াকে প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে আমি ধরা পড়ে যায়। তবে সেই যাত্রায় আমি বেঁচে গেলেও রোকেয়ার হালুয়া টাইট হয়ে যায়। আমার জল্লাদ বোনটা রোকেয়ার চুলের মুঠি ধরে ঘুরাইছে। আক্রমণাত্মক হামলায় বিরুধী দলীয় নেত্রী বেগম রোকেয়া হার মানতে বাধ্য হয়। সেদিনের পর থেকে রোকেয়া ভয়ে আমার সামনে আসে না।
মিলি আর আমি পিঠাপিঠি ভাই বোন। ছোটবেলা থেকেই ঝগড়া মারামারি করেই বড় হয়েছি। বাবার একমাত্র আদরের মেয়ে বলে ঘরে তার দাপট বেশি। বদরাগী ও বজ্জাত বোন আমার। না জানি বিয়ের পর জামাই এর কি অবস্থা করে? তার ষড়যন্ত্রে একে একে আমার সাত সাতটা প্রেম জলাঞ্জলী দিতে হলো। কিছুক্ষন পর রুমে এসে ছেঁচিয়ে বলল, দেখো মা তোমার ছেলে প্রেম করছে? আমি কপট রাগ দেখিয়ে বললাম; তুই যাবি এখান থেকে?
আমি আবারও সাদিয়ার সাথে প্রেমে মেতে উঠলাম। একটু পর মিলি এসে শুদ্ধ ভাষায় শুধালো: ভাইয়া তুমি যত কিছুই করো না কেনো এই মিলি জীবত থাকতে তোমার একটা প্রেমও সফল হতে দিবো না। এই বলে দিলাম।
আমি ভেংচি দিয়ে বললাম: কানের বরাবর যখন ঠাশ ঠাশ করে দুইটা মারবো, তিন ঘন্টা বিটিভির মতো ঝির ঝির করবে। যা ভাগ আমার সামনে থেকে।
মিলি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল: খুব তো সাহস দেখানো হচ্ছে তাই না, দাঁড়াও আব্বুকে এখনি বলছি। আরে যা পেত্নী বল, আমি তোর আব্বু কে ডরাই নাকি? নিজে তো কোনোদিন একটা প্রেম করতে পারিস নাই আর আমি প্রেম করলে তোর এতো জ্বলে কেনো? মিলি রাগে কটমট করতে করতে আমার রুম ত্যাগ করলো। এরমধ্য সাদিয়া আমাকে একটা রোমান্টিক ম্যাসেজ পাঠালো। বাবু আমার শখ জেগেছে কিন্না দিবা বাবরী ডল, ঘুম আসছে না দেখবো তোমায় দাও না একটা ভিডিও কল। আমি তোমার পরাণ পাখি শুনছো আমার জানটি, মার্কেট থেকে আনবা কিনে, আমার জন্য হীরার একটা আংটি।
~ইতি তোমার গুলুমুলু টা।
সাদিয়ার এমন রোমান্টিক ম্যাসেজ পেয়ে আমি আবেগ আপ্লুত হইয়া তারে দিলাম ভিডিও কল। বাবুনি তুমি আমার কাছে একটা জিনিস চাইছো আমি না পারি। কালকেই তোমার জন্য সব কিনে নিয়ে আসবো বেবী।সাদিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলল: সত্যি বাবু এসব কিইন্না দিবা আমারে।
আমি: সত্যি সত্যি সত্যি তিন সত্যি।
সাদিয়া খুশিতে আমায় একটা প্লায়িং পাপ্পি দিলো। মেয়েদের মন খুব নরম। মিষ্টি কথা বললে এরা অল্পতেই পটে যায়। তাই সাদিয়াকে ইম্প্রেস করার জন্য একটা কথা বললাম, আচ্ছা বাবুনি তুমি ঘুমাও কখন, সকালে থাকো আমার কল্পনায়, বিকালে থাকো আল্পনায়, সারারাত আমার স্বপ্নে বিচরণ করো। আচ্ছা তুমি কি ঘুমাও না, তোমায় দেখে দেখে দুচোখ আমার ক্লান্ত হয়ে যায়। আমি বড্ড শান্ত হয়ে যায়। জানো সাদিয়া তোমার জন্য একটা কবিতা লিখেছি, মনের দামে মন কিনেছি ভালোবাসা পূর্ণ, তোমায় ছাড়া এই জীবনটা আমার লাগে শূণ্য। তুমি আমার মনের মানুষ এই হৃদয়ের আশা। তোমার তরে রইলো আমার অশেষ ভালোবাসা। কবি যেমন কবিতা লেখে সুরকার বোনে সুর, তোমায় নিয়ে হারিয়ে যাবো তেমনি সাগর সমুদ্দুর।
ভালোবাসার এই শুভলগ্নে পেছন থেকে ছোটবোন হুংকার ছেড়ে বলল, ছি্ ভাইয়া ছি্, তুমি এতো খারাপ আগে জানতাম না। তোমাকে ভাই বলে ডাকতে আমার লজ্জা করছে। কয়টা মেয়ের জীবন নষ্ট করছো তুমি। তোমার মতো ভন্ড আমি জীবনে দেখি নি। এভাবে মিষ্টি মিষ্টি কথা মেয়েদের পটিয়ে তাদের সর্বস্ব নষ্ট করছো তুমি। তুমি আমার ভাই না। তুমি ভাই নামের কলংক। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সাদিয়া আমায় গালি দিয়ে বলল, শালা কুত্তা, বদমাইশ। আজ থেকে তোর লগে ব্রেক আপ। আজকের পর থেকে যদি আমার আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস, এমণ ছেঁচা দিমু জীবনে বিয়ে করতে পারবি না।
আর আমি অসহায় দৃষ্টিতে আহম্মকের মতো ছোট বোনের দিকে তাকিয়ে আছি। বোন চোখ টিপ দিয়ে বলল, কেমন দিলাম ভাইয়া। মুখ চিপে চিপে হাসছে। আমি ছেঁকা খাওয়া প্রেমিকের মতো মিনতির সুরে কহিলাম, তুই আমার বোন না। তোর মতো একটা বোন থাকলে শত্রুর প্রয়োজন হয় না। তুই আমার শত্রু। তোরে আই খুন করুম। মিলি একটা ভেংচি কেটে রুম থেকে দৌঁড়ে পালালো। আর আমি অষ্টম বারের ছেঁকা খেয়ে বেঁকা হয়ে আছি। কেউ আইসা আমারে সোজা কর। আহারে সাদিয়া তুমি আমারে বুঝলানা?