বিয়ে বিড়ম্বনা

বিয়ে বিড়ম্বনা

মেয়ে দেখতে গিতে এমন বিড়ম্বনায় পড়ব তা কখনো ভাবিনি। আমরা মেয়ে দেখতে এসেছি না মেয়ে আমাদের দেখতে বসেছে তা বুঝতে পারছি না! ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি যে, মেয়ে দেখতে আসলে, মেয়েরা শাড়ি পরে। মেয়েকে সাজগোছ করানো হয়। লম্বা ঘোমটার আড়ালে থাকে মুখ। হাতে থাকে শরবতের গ্লাস। সময় এতটাই পরিবর্তন হয়েছে, তা জানাছিল না।

মেয়েটি চাপা চাপা প্যান্ট আর শার্ট পরে সামনে এসেছে। হাতে নিয়ে এসেছে কয়েকটা সিগারেটের প্যাকেট। ঘোমটা তো দূরে থাক। সামনে এসে মেয়েটি বললো, “হোয়াটস আপ গাইজ? তোমরা নাকি আমাকে দেখতে আসছো? আমি কানে কানে মামাকে বললাল, বিয়ের স্বাদ মিঠে গেছে মামা। চলো পালাই। এ তো মেয়ে না, একেবারে আগুনের গুলা। মামা আমার কথার উত্তর না দিয়ে মেয়েকে বললো, “মামনি তুমি পাবনার কোন মানষিক হাসপাতালে ছিলে?

মেয়ে মুচকি হেসে বললো, “ভয় পাওয়ার কিছু নাই। মাত্র তেরোটা প্রেম করছি। তবে সবগুলা ছিলো হাবলার হাবলা। প্রেম-ই করতে বুঝতো না। আচ্ছা ভালো কথা, আপনাদের মাঝে পাত্র কে?” মামা আমার দিকে আঙুল তুলে বললো, “এইযে পাত্র। পাত্র কিন্তু তোমাকে খুব পছন্দ করেছে মামনি।” চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, “মামা বলে কী? কোথায় একটা লাজুক লাল লজ্জাবতী ললনাকে খুঁজছি বিয়ে করতে, আর আমি কী না এই মেয়েকে পছন্দ করেছি! কিন্তু মেয়ের সামনে বলতে সাহস পেলাম না”। ভেটকি দিয়ে বললাম, “মামা আসলে মজা করেছে ভাই। আপনিই বলেন, কোনো ছেলে কী আরেকটা ছেলেকে বিয়ে করতে পারে?

মেয়েকে ছেলে বলাতে মনে হলো তাঁর একটু গায়ে লাগলো! বললো, “এইযে মিস্টার, আমাকে কোন দিক দিয়ে ছেলে মনে হয়? শার্ট প্যান্ট পরতে আমার ভালো লাগে, তাই পরি। এর মানে এই না যে, আমি ছেলে। আর আমার লজ্জা-টজ্জা কম। আমি সোজাসুজি কথা বলি। আমার পাত্রকে পছন্দ হয়েছে। এখন পাত্র বলেন আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে? আমি বললাম, ভাই আমি তো পাত্র না। পাত্রের বন্ধু। পাত্রকে নিয়ে কালকে আবার আসবো। বলার সাথে সাথেই মেয়ের মা-বাবা সহ কয়েকজন লোক এসে হাজির! সবাই এসে এই অবস্থায় মেয়েকে দেখে বললো, এই বিয়েটাও ভাঙ্গলি। মেয়ে দৌড়ে রুম ত্যাগ করলো। মেয়ের মা সহ বাড়ির লোকজন বুঝাতে চাচ্ছেন যে, মেয়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে কিন্তু মেয়ে ভালো!

আমরা কোনো রকমে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছি! এই মেয়ে নাকি ভালো! এই কথা যদি ভালো মেয়েরা শুনে তাহলে তারা নির্ঘাত আত্মহত্যা করবে। মামাকে নিয়ে প্রথম মেয়ে দেখে প্রায় বাঁশ খাওয়ার দ্বারপ্রাতে ছিলাম। তবুও একটা মাত্র মামা। তাঁকে নিয়েই আবার মেয়ে দেখতে এসেছি। তিন তালায় আমাদের বসতে দেয়া হলো। একজন মহিলা মেয়েকে আমাদের সামনে বসিয়ে রেখে চলে গেলো! মামা জিজ্ঞেস করলো, মামনি তোমার নাম কী? মেয়েটি গানে গানে বলছে, নাম আমার রোজিনা ভাল মন্দ খুজি না পড়ি আমি কলেজে নাই আমার নলেজ। মামা দাঁড়িয়ে বললো, তা মামনি গানের সুরে বলছো কেন?

রোজিনা আবারো গানের তালে তালে বলল, গান যে আমার নেশা-পেশা, গান যে আমার প্রাণ। গানের লাইগা দিতে পারি, আমার এই যৌবন খান। আমার মাথাটা ঘুরছে রোজিনা গান শুনে। মনে হচ্ছে সে যাত্রাপালার নাইকা। মামা আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো, “একেবারে খাপে খাপ পাইছি ভাইগ্না” আবার রোজিনার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমাকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে মামনি।” আমি পাথরের মতো জমে গিয়েছি! রোজিনা আবারও গানে গানে বলল, ও মামা, ও মামা আপনি দেখেন গো চাইয়া আমি যে এক অবলা মাইয়া মামা গাল ফুলিয়ে বলল, “ঘোমটা সরিয়ে নিজেই সব দেখিয়ে দাও মামনি।”

যেই কথা সেই কাজ। রোজিনা নিজেই ঘোমটা সরিয়ে আবারও গানে গানে বলল, আমার হাত যে হচ্ছে গঙ্গার জল, পা তো সোনার কণা চুলের বাহার আর রূপের লাইগা সবাই ডাকে যে রোজিনা নাক যে আমার ময়ূর পাখা, চোখে জাদুর ভেলা। দেহের গঠন যেমন তেমন, কণ্ঠ যে কোকিলা। আমি আর সহ্য করতে না পেরে চিৎকার দিয়ে কান্না করে রোজিনার পায়ে ধরে বললাম, “দয়া করে আপনার কোকিলা কণ্ঠের রেডিও বন্ধ করেন। এতো জলদি মরতে চাই না।” তারপর আমি আর মামা চলে আসতে লাগলাম। আর পিছন থেকে রোজিনা গানে গানে বলছে, যাইয়েন না যাইয়েন না হবু বর গো ও বর, আমারে ফালাইয়া আপনার লাইগা কাঁদতে কাঁদতে শেষে মরিবো ডুবিয়া।

মামার সাথে গিয়ে দুবার হতাশ হয়ে ফিরেছি। তাই এবার বাবার সাথে আসলাম পাত্রী দেখতে। বাবা আমার একদমই মেকাপ পছন্দ করে না। করে না মানে একদমই না। সেজন্য জন্মের পরে কোনোদিন মাকে মেকাপ করতে দেখিনি। অদ্ভুত মেয়ে একদমই মেকাপ করেনি! না লিপস্টিক, না টিপ আর না ফেয়ার এন্ড লাভলি। একটু পাউডারও দেয়নি গালে! বাবার চোখ দেখে বুঝতে পারছি যে, বাবা মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেছে! বাবা বললো, নাম কী তোমার মা? মেয়ে বললো, আসল নাম বলবো নাকি ডাকনাম বলবো? বাবা অবাক হয়ে বললো, আসল নাম আর ডাক নামের মধ্যে পার্থক্য কী?

মেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল, “আসল নাম হলো একটা নাম। যেই নামটা একরকম লুকায়িত থাকে। মা বাবা বা কাছের মানুষ ছাড়া সেই নাম বেশি কেউ জানে না। আর ডাকনাম হলো সেই নাম যে নামে সবাই সাধারণত ডাকে।” বাবা মুচকি হেসে বললো, পুরোনামই বলো, সমস্যা নাই। মেয়ে আবারও তড়িঘড়ি করে বলল, না, না এটা তো হয় না। আপনাকে বলতে হবে যে, আমি কোন নামের পুরোনাম বলবো সার্টিফিকেটের নাম?

নাকি ডাকনাম?
নাকি আসল নাম?
নাকি বান্ধবীদের দেয়া নাম?
নাকি আমার দেয়া নাম?
নাকি বংশের দেয়া নাম?
নাকি বাবার দেয়া নাম?
নাকি মায়ের দেয়া নাম?
নাকি ভাইয়ের দেয়া নাম?
নাকি ঠাম্মা-দাদুর দেয়া নাম?
নাকি বিয়াই এর দেয়া নাম?
নাকি তালই এর দেয়া নাম?
নাকি মাওই মায়ের দেয়া নাম?
নাকি দুলাভাইয়ের দেয়া নাম?
নাকি মামার দেয়া নাম?
নাকি মামির দেয়া নাম?

অবশ্য পিসা-পিসির দেয়া নামগুলো ভুলে গেছি। আর হ্যাঁ আমার বয়ফ্রেন্ডের দেয়া একটা নাম আছে, এ নামটা বলব না। তো বলুন আমি কোন নামের পুরোটা বলবো? বাবা বুকে হাত দিয়ে সোফায় শুয়ে পড়ল। এখনো বাবার মাথায় জল ঢালতেছি….

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত