হুরপরীর তিনটি ইচ্ছে

হুরপরীর তিনটি ইচ্ছে

বাম গালে প্রথম চড়টা পাবার পর মনে হলো দুনিয়াদারি লাটিমের মতো ঘুরছে।

‘খুব জোরে লাগেনি তো আপনার?’
‘হে হে, কি যে বলেন না। লাগবে কেন? আপনি এবার ডান গালে মারুন।’
‘আপনি সিউর? মারবো আরেকটা চড়?’
‘অফ কোর্স। শুনেছি এক গালে চড় খেলে নাকি বিয়ে হয় না। দু গালে খেলে সমস্যা নাই।’
‘কিন্তু আপনি তো বিবাহিত। আমি আপনার বউ। আরেকটা না খেলে হয় না?’
‘ওহ, তাও তো কথা।

তবুও কেমন জানি লাগছে। আপনি মারুন তো। না মারলে মনের খচখচানি যাবে না।’ সেধে আরেকটা চড় খেলাম। ব্যথায় চোখে সর্ষে ফুল দেখছি। মনে হচ্ছে চাপার হাড়গোড় চুরচুর হয়ে গেছে। কিন্তু ভুলেও চেহারায় তা ফুটতে দিলাম না। হাসিমুখ বানিয়ে বেক্কলের মতো চেয়ে রইলাম তুলির দিকে।

‘আপনার প্রথম ইচ্ছে পূরণ করলাম। কি যে খুশি লাগছে। মনে চাইছে শাহরুখ ভাইয়ার লুঙ্গি ড্যান্স গানটা ছেড়ে কিছুক্ষণ নাচানাচি করি। কিন্তু আমি আবার নাচতে পারি না। তাই এটা আপাতত বাদ। আপনি এবার আপনার দ্বিতীয় ইচ্ছেটার কথা বলুন।’ ‘আজ না। আপনাকে চড় মেরে ভালো লাগছে না। মনটা খারাপ হয়ে গেছে। অন্যদিন বলি।’
‘অন্যদিন বলবেন! আচ্ছা ঠিক আছে। বইলেন কিন্তু।’

লক্ষ্মী বউ আমার। নাম তুলি। বিয়ের এক বছর পর আমরা একসাথে হতে পেরেছি। এই এক বছরে কখনো কোনকিছু চায়নি আমার কাছে, কোনকিছু আবদার করেনি। এমনকি কথাও হয়নি একটাবার! এখন যখন একসাথে থাকার সুযোগ হয়েছে, সে আমাকে তার তিনটি ইচ্ছে পূরণের কথা বলেছে। আমি কি না পূরণ করে থাকতে পারি? উহুম, পারি না তো। তাই আজ একটা ইচ্ছে পূরণ করলাম।

ওর খুব ইচ্ছে ছিলো কাছের কাউকে চড় মারবে। জীবনে কোনদিন কাউকে চড় মারেনি তুলি। কারও গায়ে কখনো হাত তোলেনি। মশা পর্যন্ত মারেনি। এতটাই নম্র-ভদ্র আর শান্ত মেয়ে। তার জন্য সামান্য চড় কেন, পারমাণবিক বোমা খেতেও রাজি আমি। আমি প্রবাসী বাঙালী। গত দশ বছর সৌদিতে থেকেছি। খেজুর ফলের ব্যবসা আমার। মার্কেটে বড় বড় তিনটি দোকান আছে নিজের। গরীব ঘরের সন্তান হয়েও নিজের চেষ্টায় আর পরিশ্রমে আজ টাকা-কড়ির কোন অভাব নেই। নিজ গ্রামের সবচাইতে ধনী পরিবার এখন আমরা।

বড় দুই ভাইয়ের অনেক আগেই বিয়ে গেছে। বাকি ছিলাম কেবল আমি। মা যখন তুলির সাথে আমার সম্বন্ধ ঠিক করে তখন আমি সৌদিতে। ইমো অ্যাপসে তুলির ছবি পাঠানো হলো আমাকে। তুলিকে প্রথম দেখেই আমার হার্টফেল হলো। সিরিয়াসলিই হার্টফেল হলো। হাসপাতালে নেওয়া হলো আমাকে। এক সপ্তাহ চিকিৎসার উপর থাকার পর কাঁপতে কাঁপতে আবার তুলির ছবিখানা দেখি। ওমা! এ যে পরী। ডানাকাটা পরী।

আমি ধারণাই করে ফেললাম তুলি একটা পরীর ছানা। পৃথিবীতে ঘুরতে এসেছিল। ওর বর্তমান মা-বাবা ওকে খপ করে ধরে পিঠ থেকে ডানা দুটি কেটে ফেলে। এরপর মানুষের বাচ্চার মতোন পেলেপুষে এতবড় করেছে। তা নাহলে এত সুন্দরী কোন মেয়ে হতে পারে! আমার মাথায় কিছু খেলে না। আবার তুলির সাথে যে আমার বিয়ে হবে এটাও বিশ্বাস হয় না।

কিভাবে সম্ভব? আমি লজিক্যালি চিন্তা শুরু করি। তুলি অনার্স কমপ্লিট করা মেয়ে। রূপে-গুণে অনন্য। আর আমি ক্লাস টেন ফেল করা ছেলে। রূপ-গুণ নাই। ব্যবসা জানি, তাই টাকা আছে। সবচাইতে বড় পার্থক্য হলো তুলি অসম্ভব রকম ফর্সা। ফর্সা মানে সেই ফর্সা, সাদা ধবধবে। আর আমি দেখতে কালো। অনেক মানুষ কালোর পরিমাণ কমিয়ে শ্যামলা বলে থাকে, আমাকে তাও বলা যায় না। আমি হচ্ছি কুচকুচে কালো। কি করে হুরপরীর মতো একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো ভেবে পাই না। যখনই ভাবতে চেষ্টা করি, দুই চোখে অন্ধকার দেখি। নিজের চুল টেনে ছিড়তে থাকি। শেষমেষ কিছু ভেবে না পেয়ে মাকে কল দেই।

‘মা, এইটা তুমি কি করছো? ক্যামনে কি, হ্যা?’ ‘ক্যামনে কি মানে! আমগো পরিবারে মাইয়া দেওনের লাইগা কত মানুষ লাইনে আছে তার কোন খোঁজ রাখোস? তুলির বাপ-মা রোজ আইসা খবর নেয় তুই বিয়াতে হ্যা কইছোস কিনা। অথচ তোর খবরই নাই। কই ছিলি গত এক সপ্তাহ?’

‘যেখানেই থাকি, তোমার শোনা লাগবে না। আচ্ছা তুমি চিন্তা করে দেখো নাই কি করছো? এত ফর্সা একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে যে ঠিক করলা, মেয়েটা কি আমাকে দেখেছে? আমি হলাম দুনিয়ার কালা। আর তুমি বাইছা নিয়ে আসছো দুনিয়ার ধলা। তাই হয়? মেয়েটার মনের অবস্থা একবার চিন্তা করলা না? রাজি হবে ভেবেছো?’
‘মাইয়া রাজি হবে না ক্যা? মাইয়ার বাপ-মা তো মেয়েরে রাজি করায়েই বিয়ার প্রস্তাব নিয়া আসছে। আর ধলা হইছে তো কি হইছে? আমি তো বুঝে-সুঝেই মাইয়াটারে পছন্দ করছি। বিয়ার পর তোগো বাচ্চা যেন সুন্দর হয় এজন্যই তো ধলা মাইয়া বাইছা লইছি।’ ‘পাগল হইছো তুমি। আমি কালা আর সে ফর্সা, এতেই বাচ্চা ফর্সা হবে। এইসব আজগুবি কথা কই পাও মা?’ ‘তোর এতকিছু ভাবা লাগবো না। বাচ্চা পুরা ফর্সা না হইলেও আমার সমস্যা নাই। একসাইড সাদা আর আরেক সাইড কালা হইলেও কোন সমস্যা না। তুলির সাথেই তোর বিয়া হবে। আইজকাই তোগোরে বিয়া দিমু আমি।’

আধা পাগল মাকে ভুলবশত ক্ষেপায় দিয়ে পুরো পাগলই করে দিলাম। তিনি তুলিকে ওর পরিবারসহ বাসায় ডেকে আনলেন। ডেকে আনলেন কাজী সাহেবকেও। মোবাইলেই বিয়ে পড়ানো হলো। মনের ভেতর অসংখ্য দ্বিধা থাকা সত্বেও বিয়ে করলাম, কোনপ্রকার টু শব্দ ছাড়াই। মা দ্রুত দেশে ফিরতে বললেন। কিন্তু ব্যবসার ব্যস্ততার কারণে তা আর সম্ভব হলো না। একটা বছর থেকে তারপর দেশে ফিরতে হলো। দেশে ফিরে মহা ধুমধাম করে বউ উঠিয়ে আনলাম। আমার কাছে সবকিছুই কেমন জানি স্বপ্নের মতোন লাগে। জীবনের প্রথম বিয়ে। তাও আবার হুরপরীর মতো সুন্দরী বউ। খুশির ঠ্যালায় ঠিকঠাক দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। মৃগী রোগীর মতো হাত-পা কাঁপতে থাকে। আনন্দে চোখ ভিজে আসে। চোখের পানি নাকের পানি এক হয়ে যায়।

বউ ভাতের দিন আবিষ্কার করি আমার বিয়েতে আমি, আমার পরিবার আর তুলির পরিবার ছাড়া দুনিয়ার সবাই কেমন যেন নাখোশ। লোকে প্রকাশ্যে বলাবলি করছে বাদরের গলায় মুক্তো পড়ানো হয়েছে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে যায়। আমার মতো কালো ছেলের সাথে এমন ফর্সা সুন্দরী মেয়ের বিয়ে কেউ মেনে নিতে পারছে না। লোকজন এতটাই হতাশ যে বউ ভাতে এসে খাবারও মুখে দিতে পারছে না। যার কারণেই কিনা জানি না ২০০ মানুষের খাবার আয়োজন করে ৩০০ মানুষ খেয়ে যাবার পরেও দেখা গেল খাবার বেঁচে গেছে। লোকজন খাইতেই পারে নাই কষ্টে!

এসব অবশ্য আমাকে অতটা ভাবায়নি। আমি সারাক্ষণ কেবল তুলির কথাই ভেবেছি। চিন্তা করেছি কিভাবে তুলির তিনটি ইচ্ছে পূরণ করা যায়। বাসর ঘরের কথা বারবার মনে পড়ছে। তুলি বধূবেশে বিছানার মাঝখানটায় বসে। আমি বহুত কায়দা করে বিছানার এক কোণায় চুপটি মেরে বসলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এমন সময় মা এসে ডাকাডাকি শুরু করলো। ‘বউমা, বাবু দুধ খেয়েছে?’ লজ্জায় লাল হয়ে যাই আমি। মনে চায় মাটি খুঁড়ে পাতালে চলে যাই। কি মনে করে যে ছোটবেলায় আমার নাম মহিউদ্দিন বাবু রেখেছিল বুঝে উঠতে পারি না। বউ বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ‘হ্যা মা, খেয়েছে।’

‘আচ্ছা। দুধের গ্লাসটা দাও, নিয়ে যাই। তারপর তোমরা ঘুমাও।’ মা চলে যাবার পর বউ আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। বিছানায় এসে বসে। আমি আধ ঘণ্টা খিচ মেরে বসে থাকি। পরিস্থিতি হালকা করতে একা একাই কিছুক্ষণ হেসে তারপর কথা বলা শুরু করি। ‘আমার মা একটু কেমন জানি। এতবড় হয়ে গেছি, তবুও বাবু ডাকে।’ ‘বাবু-ই তো আপনার নাম। বাবু বলেই তো ডাকবে।’ ‘ও হ্যা, তা ঠিক। আমার নামই তো বাবু। হে হে।’ ‘যদি কিছু মনে না করেন তাহলে একটা কথা বলি?’ ‘হ্যা, হ্যা। অফকোর্স। একটা কেন, একশটা কথা বলেন। কোন সমস্যা নাই।’

‘জ্বি। আসলে আমি খুব রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছি তো, বাইরে খুব বেশি মেলামেশা করার সুযোগ হয়নি কখনো। অপরিচিত তো দূরে থাক, পরিচিত মানুষদের সাথেই কখনো মনখুলে কথা বলা হয়নি। চলাফেরাও হয়নি। আমি চাইছিলাম আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হোক তার আগে আপনি আমার তিনটি ইচ্ছে পূরণ করবেন।’
‘অবশ্যই। শুধু তিনটি ইচ্ছে কেন, আপনার যত ইচ্ছে রয়েছে আমাকে বলতে পারেন নির্দ্বিধায়। আমি সব পূরণ করবো।’

‘শুনে খুব খুশি হলাম। তবে আজকে কিছু বলবো না। সারাটা দিন অনেক ধকল গেছে আপনার উপর। ঘুমিয়ে পড়ুন আজকে। কালকে উঠে আমার ইচ্ছের কথা বলবো।’ এই বলে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো তুলি। আমি তো ভীষণ এক্সাইটেড। ঘুমানোর উদ্দেশ্যে তুলির পাশে শুয়ে পড়লাম ঠিকই, কিন্তু ঘুম কি আর আসে! যে করেই হোক তুলির ইচ্ছে গুলো পূরণ করতে হবে আমাকে। সারাটা রাত এই ভেবে নির্ঘুম সময় কাটালাম।

তুলির প্রথম ইচ্ছের কথা শুনে ভীষণ রকম ভড়কে গিয়েছিলাম আমি। আপন কাউকে চড় মারাটা যে কারও ইচ্ছের মধ্যে পড়তে পারে এমনটা কোনদিন ভাবনাতে আসেনি। অবশ্য তুলির জায়গায় নিজেকে রেখে চিন্তা করি একবার। মায়া জাগে মনে। আহারে, বেচারি জীবনে কাউকে চড়-থাপ্পড় মারেনি। ইচ্ছে জাগা তো স্বাভাবিক। আমি পরমুহূর্তেই রাজি হয়ে যাই। আমারই তো বউ। আমাকে মারবে না তো কাকে মারবে? এমন তো না নিচে ফেলে ইচ্ছামতো লাত্থাইতে চেয়েছে। সামান্য চড়ই তো মারবে। দিলাম পূরণ করে আমার লক্ষ্মী বউয়ের প্রথম ইচ্ছে।

এর দিন কতক পরে বউয়ের দ্বিতীয় ইচ্ছের কথা শুনলাম। মোটরসাইকেলে চড়ে পুরো গ্রাম ঘুরার ইচ্ছা। শুনে কান্না পেয়ে যায় আমার। এক দৌড়ে বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে দেই। ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে থাকি। আমার বেচারি বউটা! জীবনে কোনদিন কোন পুরুষের সাথে মোটরসাইকেলে চড়েনি। ধার্মিক পরিবারের মেয়ে বুঝলাম, তাই বলে এত কড়া শাসন আর নজরদারিতে রাখবে!

মুহূর্তেই আমার ভেতরকার প্রেম জাগ্রত হয়। লাথি মেরে বাথরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে আসি। দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে হাজির হই বন্ধু রুমীর বাসায়। ওর লুঙ্গি উঠিয়ে দুই পা জড়িয়ে ধরি। অনুনয়-বিননয় করি আমাকে মোটরসাইকেল চালানো শেখাতে। বয়স আমার ত্রিশের কোঠায়। কিন্তু মোটরসাইকেল চালাতে পারি না। এটাকে ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা শুরু করি। এদিকে রুমী হাজার চেষ্টা করেও কোন কূল-কিনারা করে উঠতে পারছে না। তার ভাষ্যমতে একটা গাধাকে অনায়াসেই মোটরসাইকেল চালানো শিখিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু আমাকে দিয়ে সম্ভব না।

আমি তবুও হাল ছাড়ি না। রুমীর লুঙ্গি উঠিয়ে আবার দুই পা জড়িয়ে ধরি। কাঁদতে থাকি গায়ের জোরে। বাধ্য হয়ে আমাকে শেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে বন্ধুটা। দীর্ঘ দুই সপ্তাহ লেগে যায় মোটরসাইকেল চালানো শিখতে। খুশিতে লাফালাফি শুরু করি আমি। কিন্তু শরীর ব্যথার কারণে চুপসে যাই। শরীরে অসংখ্য কাঁটাছেড়ার দাগ, জায়গায় জায়গায় ব্যান্ডেজ করা। এই মোটরসাইকেল চালানো শিখতে দুই সপ্তাহ লাগার হিসেব জানলেও কতবার যে এক্সিডেন্ট করেছি তার হিসাব জানা নাই। জানার আগ্রহও নাই। অবশেষে বউয়ের দ্বিতীয় ইচ্ছেটাও পূরণ করলাম। মোটরসাইকেলে বসিয়ে পুরো গ্রাম ঘুরলাম। শুধু কি গ্রাম, বউকে নিয়ে শহরেও গেলাম। বড় বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করলাম। সিনেমাহলে বসে একসাথে শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের সিনেমাও দেখলাম। সারাটা বেলা আমার কাছে স্বপ্নের মতোন লাগছিল।

মোটরসাইকেল চালানোর সময় তুলি যখন আমার কাঁধে হাত রাখে, মনে চায় আকাশে উড়াল দেই। খুশিতে বত্রিশটা দাঁত বের হয়ে আসে। হাসি লেগেই থাকে মুখে। তবে আরও ভালো লাগতো যদি আশপাশের মানুষ আমাদের দিকে নজর না দিতো। যেখানে যেখানে গেছি, মানুষ কেবল আমাদের দিকেই বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে। যেন ভূত দেখছে তারা। এমনকি ছোট ছোট পোলাপানও হা করে তাকিয়ে থাকে। কি যে বিরক্তিকর। এমনটা না হলে দিনটা সবদিক থেকে সেরা ছিলো। বাসায় ফিরে রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করি। বিছানায় বসে বসে সারাদিনের কথা ভাবছি। ভালোই লাগছে। খানিক বাদে ঘরের কাজকর্ম সেরে তুলি এলো। বিছানায় এসে বসলো। আমি হাসিমুখ নিয়ে ওর দিকে তাকালাম।

‘এবার তাহলে আপনার তৃতীয় ইচ্ছের কথা শোনা যাক। আমি যে কি পরিমাণ এক্সাইটেড বোঝাতে পারবো না।’
‘না শুনলে হয় না?’ তুলি মাথা নিচু করে বললো।
‘আরে! শুনবো না কেন? আপনার ইচ্ছে বলে কথা। আমি তো সারাবেলা আপনার তৃতীয় ইচ্ছের কথা শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।’

‘বলে লাভ নেই। আপনি আমার এই ইচ্ছে পূরণ করতে পারবেন না। থাকুক বরং। আপনি ঘুমান।’
‘কি মুশকিল! পারবো না কেন? বলেই দেখেন। আপনার সব ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা করবো আমি।’
‘তাহলে শুনুন। আমার তৃতীয় ইচ্ছে আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন।’

কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো আমার হৃদস্পন্দন থেমে গেছে। শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া বন্ধ ঘোষিত হয়েছে। শরীরের রক্ত চলাচলও বন্ধ। বুঝে উঠতে পারছি না আমি কি বেঁচে আছি না মরে গেছি। কিছু সময় পার হবার পর সবকিছু যখন স্বাভাবিক হয়ে আসলো, মনে হলো কান দিয়ে ধোয়া বেরুচ্ছে আমার। চোখ আর নাক দিয়ে পানি বেরুচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই মুখ দিয়ে শব্দ বেরুচ্ছে না। কত চেষ্টা করলাম। পারলাম না। কথা বেরুচ্ছেই না। বেরুবে কি, বলার মতো কোন ভাষাই তো খুঁজে পাচ্ছি না। তুলিকে শেষতক ডিভোর্স দিয়েছি আমি। দুই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই ডিভোর্স দিয়েছি। তুলি অবশ্য কোন কথা বলেনি। হ্যা-না কিচ্ছু না। বিয়ে করলাম, এক বছর পর প্রথম কাছে পেলাম, একসাথে পনেরো দিন সংসার করলাম, তারপর ডিভোর্স দিলাম। কাহিনী শ্যাষ।

ডিভোর্সের এক সপ্তাহ পর সৌদি চলে এসেছি। কেটে গেছে চার মাস। সময় থেমে নেই। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ভালোই আছি। আমার মা আবার মেয়ে খুঁজেছে আমার জন্য। ছবি পাঠিয়েছে। আমার আর আগ্রহ হয় না। সাহস বা শক্তি কোনটাই নাই। ভাবছি ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে ফেলবো। দেশে ফিরে যাবো। কারণ সকালে তুলি ইমোতে মেসেজ পাঠিয়েছে। লিখেছে: ‘আপনার যদি সারাজীবন আমার ইচ্ছে পূরণ করার সখ থাকে তাহলে দেশে ফিরে আসুন। আমি খাতা-কলমের ডিভোর্সে বিশ্বাসী না।’ আমি মেসেজে লাভ রিঅ্যাক্ট দিয়েছি!

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত