একটি টিউশনি এবং আমার ছাত্রী

একটি টিউশনি এবং আমার ছাত্রী

“আরিফ ভাইয়া, একটা কথা বলি?” পড়ার ফাকে বলে উঠে আমার দশমে পড়ুয়া ছাত্রী সুমনা। প্রাইভেট টিউটর হিসেবে শুরুতে স্যার ডাকলেও কালের বিবর্তনে সেটা ভাইয়া ডাকে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। সুমনার যুক্তি হলো স্যার ডাক নাকি কেমন আঙ্কেল আঙ্কেল টাইপের। তার থেকে ভাইয়া ডাক তার কাছে ভালো লাগে।
“আগে পড়া শেষ করো, তারপর।

সুমনার দিকে তাকাই আমি। সুমনাও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ পড়ে সুমনার চোখে। চমকে উঠি আমি, সুমনার চোখে যা দেখি তা কখনো সম্ভব না। গত কিছুদিন যাবৎ দেখে আসছি এই চোখ আমি। আমি বুঝতে পারি সুমনা কি বলতে চায় আমাকে। মাথা নিচু করি আমি। মনে মনে ভাবি, এই টিউশনিও টা টিকবেনা হয়তো। সুমনা কোথায় ষোল বছরের বালিকা আর আমি ছাব্বিশ বছরের তাগড়া যুবক। যেখানে বয়সের এত পার্থক্য, সেখানে সুমনা আর আমি, না না এসব ভাবাও পাপ। আর সুমনার বড় বোনের সাথে আমার রিলেশম আছে এটা সুমনাকে অতি সত্ত্বর জানানো উচিত। যদিও পড়ানোর ইচ্ছা ছিলোনা কখনো কিন্তু সুমনার বোন মোহনার জন্যই সুমনাকে পড়াতে আসা।

“না ভাইয়া, এখনি বলবো। কিন্তু মুখে না। আমার সে সাহস নেই” বলেই সুমনা একটি কাগজ এগিয়ে দেয়। চোখে মুখে লজ্জা দেখতে পাই আমি। বিব্রত বোধ হয় আমার খুব। আমি কাগজটা হাতে নেই। “এখন না স্যার, পরে দেখবেন” আমি হাতে নিতেই আবার বলে উঠে ও। আমি মাথা নিচু করে সায় দেই। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া আমার ছোট ভাই জারিফ, আজকাল আমাকে বেশ মান্য করে চলে। মাঝে মাঝে আমার প্রতি ওর শ্রদ্ধা আর বিনয় দেখে আমি অবাক হই। মনে মনে ভাবি আমি ভুল করে পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোন গ্রহে চলে আসলাম না তো। যে কথায় কথায় আমার অবাধ্য হতো। যাকে ডানে যেতে বললে বামে যেতো সে আজ আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে ভাবতেই অবাক লাগে।

চাকরি না করে বেকার বসে আছি বলে যে মা আর ভাই মিলে সব সময় খোচা দিয়ে কথা বলতো। আজ মা আমার বেকারত্ব নিয়ে কথা বললে সেই ভাই আমার কত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে ” আহা মা, ভাইয়াকে এতো বকা দাও কেন?? আজ না হয় কাল চাকরি তো হবেই।” ছোট ভাইয়ের এমন আচরনে আমি কেন মা নিজেও বেশ অবাক। আমাকে এসে বলে, “আচ্ছা আরিফ, তোর ভাইকে আবার জ্বীন ভুতে ধরলো না তো। ও তো এমন ছিলনা। হঠাৎ কি হলো ওর?? আমি কিছু বলিনা, চুপ করে ভাবি। কেন ওর এই পরিবর্তন। জীবনে কখনো গোয়েন্দাগিরির কথা চিন্তাও করিনি। আজ থেকে দেখি ওর জন্য হলেও গোয়েন্দাগিরি করতে হবে।

“ভাইয়া কাগজটা খুলে দেখছিলেন??” সুমনা প্রশ্ন করে। আমি উত্তরে না বলি।
“কেন দেখেননি আজকে অবশ্যই দেখবেন” এক প্রকার শাসনের সুরেই বলে সুমনা। আমি অবাক হই এতটুকুন পিচ্চি মেয়ের কথার ধরন দেখে।

“যদি না দেখি তাহলে কি হবে??” আমি প্রশ্ন করি।
“তাহলে আমি রাগ করবো।”
“ওমা সেকি কথা, আমি তোমার কে লাগি যে আমি ওইটা না দেখলে তুমি রাগ করবা।”
” সব উত্তর ওই চিঠিতেই পাবেন।”
“দেখো সুমনা তুমি যা ভাবছো, সেটা কোনদিনও সম্ভব না। এসব ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশুনায় মন দাও।” আমি রাগান্বিত হয়েই বলি এক প্রকার।

“কেন সম্ভব না সেটা, আর আমি কিচ্ছু শুনতে চাইনা আপনি আজকেই চিঠিটা পড়বেন আর কাল আমাকে উত্তর জানাবেন। প্লীজ ভাইয়া, প্লীজ।” বলতে বলতেই আমার হাত ধরে ফেলে সুমনা। কিন্তু মন্দ কপাল হলে কেউ তা রুখতে পারেনা। যেই সুমনা আমার হাত ধরছে ওমনি মোহনা রুমে প্রবেশ করছে। আমি কি বলবো বুঝিনা, শুধু মনে মনে তিনবার বলি “খাইছেরে।” তিনদিন হয়ে গেলো মোহনা রাগ করে আছে। আমিও আর সুমনাকে পড়াতে যাইনা। মোহনা আমাকে ভুল বুঝে বসে আছে। এমনিতেই মেজাজ গরম। যদিও মোহনার আম্মু বেশ কয়েকবার ফোন করেছে যায়নি বলে। তাই বাধ্য হয়ে জারিফকে পাঠিয়েছি সুমনাকে পড়াতে। বলে দিয়েছি এখন থেকে জারিফই ওকে পড়াবে।

মোহনাকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি কিন্তু কোন রেস্পন্স নাই। অনেক গুলা টেক্সটও করেছি। শেষ পর্যন্ত মোহনা একবার ফোন রিসিভ করে। আমি হ্যালো বলার আগে একটা গালির ঝড় বয়ে যায় আমার উপর। কিছুক্ষন ঝাড়ার পর আবার ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষন পর আমার ফোনে একটা মেসেজ আসে। প্রথমে ভেবেছিলাম মোহনা কিন্তু না মেসেজটা সুমনার। সেখানে লিখা, “ধন্যবাদ ভাইয়া, আপনি আমার বড় ভাইয়ের মতোই। আপনার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবোনা। চিঠিতে আমি আপনার কাছে যা চেয়েছি তা আপনি পুরন করেছেন।”

আমি দ্রুত চিঠিটা বের করি, পড়ার পর আমি পুরাই বোকা বনে যাই। মনে হয় মাটির নিচে ঢুকে যাই। এবার বুঝতে পারি, জারিফের এমন পরিবর্তন এর কারন। চিঠিতে লিখা ছিলো, “ভাইয়া আপনার ছোট ভাইকে আমি ভালোবাসি। আর সেও আমাকে ভালোবাসে। যদি আপনার বদলে তাকে পাঠাতেন তাহলে খুব খুশি হবো। আর যদি আমার কথা না শুনেন তাহলে আপনি আর মোহনা আপু যে প্রেম করেন, চুরি করে দেখা করেন সেটা কিন্তু আম্মুকে বলে দিবো।”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত