গার্লফ্রেন্ড হলো দুনিয়ার এমন আজব এক প্রানী, যাদের নিকট উঠতে বসতে আপনাকে কৈফিয়ত শুনাতে হবে। আপনার সামান্য ভুলকেও তারা তিল থেকে তাল বানিয়ে ছেড়ে দিবে। এরা সকালে আপনার সাথে ভালোভাবে কথা বললেও বিকালেই মোড় ঘুরে ঘুর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে ফেলবে। তার উপর যদি হয় এলাকার কোন প্রভাবশালীর মেয়ে, তাহলে তো কোন কথাই নেই। এদের আপনি না পারবেন ছাড়তে আর না পারবেন রাখতে। রাখতে গেলে প্যারার উপর প্যারা আর ছাড়তে গেলে লোক দিয়ে মাইরের ভয়। আমার প্রেমিকার নাম খুকু। অবশ্য ভালো নাম আছে মারিয়া। কিন্তু ছোট থেকে সবাই খুকু বলেই ডাকে। সে আমাদের এলাকার বর্তমান চেয়ারম্যান এর মেয়ে। একবার বলেছিলাম, অনার্সে পড়া এতবড় বুড়ি মেয়েকে মানুষ কিভাবে খুকু বলে ডাকে আমার বুঝে আসেনা।
ওমনি শুরু হয়ে গেলো ঝাড়া, সাথে তো কান্না আছেই। এত ছোট বাচ্চা একটা মেয়েকে বুড়ি বললাম কেন?, তার মা বাবার ডাকা আদরের নামকে আমি অবহেলা করি, আসলে নাম অবহেলা করিনা আমি নাকি তাকেই অবহেলা করি, সে আমার কাছে পুরাতন হয়ে গেছে, তাকেই আর ভালো লাগেনা আর ইত্যাদি ইত্যাদি। বুঝাতে গেলেও সমস্যা। তাই চুপ করে থাকি। কথা শুনি। কথা শেষ হলে আমার সাড়া না পেয়ে কল কেটে দেয়। ঝগড়ার পর আমি কল দিলেও ঝামেলা, কল না দিলেও ঝামেলা। কল দিলে, কল দিলাম কেন?? আর যেনো কখনো কল না দেই বলে ঝাড়ি শুনাবে। আর কল না দিলে কল দিলামনা কেন?? রাগ ভাংগালাম না কেন?? আসলেই পুরাতন হয়ে গেছে আমার কাছে বলে কথা শুনাবে।
এলাকার বড় ভাই হিসেবে ছোটরা বেশ সম্মান করতো। আর নম্র ভদ্র ছেলে হওয়ায় এলাকার লোক যথেষ্ঠ স্নেহ করতো। ছোট থেকেই একটু নেতা টাইপ ছিলাম বলে অনেক এলাকার অনেক ছেলের সাথে ভালো পরিচয় গড়ে তুলেছিলাম। ভার্সিটি লাইফ শেষ হওয়ার কারনে নির্বাচনের সময় বাড়িতেই ছিলাম ফল নির্বাচনী প্রচারণার জন্য চেয়ারম্যান সর্বদা আমাকে সাথে রাখতো। তখনি কিভাবে যেন প্রেমটা হয়ে যায়। কিন্তু এই প্রেম আমার লাইফকে এভাবে দৌড়ের উপর রাখবে কে জানতো। উঠতে প্যারা বসতে প্যারা, এমনকি টয়লেটে গেলেও প্যারা। মাঝে মালঝে দোয়া করি এমন গার্লফ্রেন্ড যেন অন্য কারো না হয়।
একটা বেসরকারী ব্যাংকে চাকরী হওয়ার প্রায় মাসখানেক পরেই খুকু আমার কাছে ফোন দিয়ে বলে, বাসা থেকে তার বাবা বিয়ে ঠিক করেছে। আগামীকাল দেখতে আসবে। আংটিও পড়িয়ে যাবে। ছেলেও ভালো তাই ওর বাবা চাচ্ছেন না ছেলেটা হাতছাড়া করতে। তাই ও সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজ রাতেই পালাবে আমার সাথে। আমি জিজ্ঞাসা করি, “ছেলে দেখতে কেমন? কি করে? খুকু অগ্নিমুর্তি হয়ে উত্তর দেয়, “পালাবে কিনা বলো? ছেলে কি করে সেটা জেনে তুমি কি করবা? এটুকু হলেও ঠিক ছিলো কিন্তু আমি স্তব্ধ হয়ে যাই যখন ও কেদে কেদে বলে, “ও বুঝছি আমার বিয়ে হয়ে গেলেই তো বেচে যাও। আমাকে এখন আর ভালো লাগেনা। যাও লাগবে না পালানো।” মনে জিদ উঠে। জিদ থেকেই বলি, “রাত এগারোটাই রেডি থেকো। আসবো আমি।”
আমার পোস্টিং তখন ময়মনসিংহ তে যার ফলে আমিও তখন সেখানেই থাকি। একটা বাসা নিয়ে। সাথে আরো দুজন। ভাবছি বাবাকে বলবো কিনা। কিন্তু বাবাকে বলে কাজ হবে বলে মনে হয়না। আর সময় মাত্র আজ রাতটাই। তাই বেশী কিছু না ভেবেই বের হয়ে গেলাম। বাড়িতেও জানাইনি। আমাদের বাসা থেকে বাইকে মোটামুটি আড়াই ঘন্টার পথ ময়মনসিংহ। তাই বন্ধুর বাইক নিয়েই বের হয়ে গেলাম রাতে। দাঁড়িয়ে আছি খুকুদের বাসার পিছনে। যথেষ্ঠ ঝোপঝাড় থাকায় মশার কামড় খেতে হচ্ছে সেকেন্ডে সেকেন্ডে। রাত প্রায় বারোটা বাজলেও যখন খুকুর কোন সাড়া পেলাম না। তখন ফোন দিলাম খুকুর কাছে। দুইবার দেওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।
বললাম, কি করো এত দেরী কেন?? “একটু সাজতেও দিবেনা নাকি?? পাচ মিনিট অপেক্ষা করো আসতেছি।” আমি বুঝিনা, আজ পালাবে তার আবার সাজ কিসের। পাচ মিনিটের কথা বলে খুকু এলো প্রায় আধাঘন্টা পর। খুকুকে নিয়ে যখন ময়মনসিংহ পৌছাই তখন রাত প্রায় তিনটা। আপাতত রাতের জন্য আমার এক বন্ধুর বোনের বাসায় রাখি ওকে। সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গে বাবার ফোনে। ফোন নিয়ে ঘুম জড়িত কন্ঠে ‘হ্যালো’ বলতেই বাবা বললেন, ‘তুই তো এত সকাল পর্যন্ত ঘুমাস না, সারারাত কি করছিস??’ আমি বলি, ‘নাহ কিছুনা। হঠাৎ ফোন দিয়েছো এই সকালে।’
-‘আচ্ছা তুই সত্যি করে একটা কথা বলতো, আমাদের চেয়ারম্যান এর মেয়ের সাথে কি তোর প্রেম ছিলো?? আমার কাছে মিথ্যা বলবিনা একদম।
– না মানে, হ্যা ছিলো।
– চেয়ারম্যান এর মেয়ে নাকি পালিয়েছে। সকাল থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। সত্যি করে বলবি তোর কাছে কিনা??
– আসলে বাবা আমরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসতাম তাই ওর বিয়ের কথা শুনার পর এছাড়া আর কোন পথ ছিলোনা।
বাবা একটু চুপ থাকলেন। বললেন, ‘ওরে গাধা একটু তো খোজ নিয়ে শুনতে পারতি ছেলেটা কে। বিয়েটাতো তোর সাথেই ঠিক করেছিলাম।