বিয়ে করলে এত সুযোগ সুবিধা এ যদি আমি আরো আগে জানতাম তা হলে সে সময়ই বিয়ে করতাম।এখন এত আফসোস করে কোনো লাভ নেই! করেছি তো।
— কেন কি হয়েছে তোর?
— কি আর হবে, নতুন শ্বশুর বাড়িতে আদর স্নেহ বাড়িতে সকলের গুনগান বউয়ের জন্য।বাবা- মায়ের গালাগাল থেকে বাছলাম।
— ও এই কথা, নতুন তো তাই একটু যত্ন বেশি পুরাতন হোক তখন বুঝবি।
— হ! সবার বউয়ের মত আমার বউ না, সারা দিন কত খোজ খবর নেয়।আর আমি না খেলে সে তো খায় না।
— নতুন বিয়ে করলে তখন সবাই এটাই বলে, তা শ্বশুর বাড়ি থেকে কি দিল তোকে।
— তা আর বলতে, ঘরে যা যা লাগবে সব, তার সাথে সামনের মাসে একটা নতুন বাইক।
— তোর শ্বশুরবাড়ি তো তা হলে সেই অবস্থা?
–আরে না, অতটা না?
— তোকে এত কিছু দিল কোথা থেকে?
— এত কিছু আমি জানি না, তবে বউটা খুব ভালো।
— তোরা কিছু কি বলেছিলি দেনা পাওনার কথা।
— বলা লাগে না কি? ভালো চাকরি করি তাতে তো যে কোনো মেয়ের পরিবার এ সব কিছু দিবে।
— তোদের কি সামর্থ নেই এসব কিছু ক্রয় করার।
— এসব কথা বাদ দে, এখন বল আমার বিয়েতে কেন উপস্থিত ছিলি না। আসলে কি বলতে যাচ্ছিস বল দেখি আমাকে।
— আরে তেমন কিছু।
— তুই যে ভাবে বলতেছিস মনে হয় যেন আমি শ্বশুর বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে এনেছি।
— যৌতুক একটা সমাজিক অপরাধ,এটা তুই করবি তা আমি কখনো কী বিশ্বাস করতে পরি।
— শ্বশুর বাড়ি থেকে যা দিয়েছে তা তো সব তাদের মেয়ের জন্য , আমার তো এ সব কিছুর প্রয়োজন হয় না।
— তাই তো! এখন মেয়ের পরিবার মেয়েদের অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার সময় সংসার গোছানোর সব কিছু দিয়ে দেয়।এটা তো ভালো, ভবিষ্যতে সংসার গোছাতে কষ্ট কম হয়।
— তুই তো বিয়ে করেছিস, এটা ও তোর জানার কথা? আর এটা তো এক কথায় উপহার বলা যেতে পারে।
— হ্যা! আমাকে ও দেওয়ার চেয়েছিল, কিন্তু ছোট্ট একটা ঘরের ভেতর রাখার জায়গা হয় নি তাই গ্রহন করি নেই।
— তা হলে তো অন্য কথা, আমার তো বড় ঘর। রাখার জায়গা আছে। আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিলি না তো?
— ও! একটা জরুরি কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম,সে জন্য তোর বিয়েই উপস্থিত হতে পারি নেই ।
— আচ্ছা সময় করে এক সময় ভাবিকে নিয়ে বেড়িয়ে যাস।
— আচ্ছা, ভালো থাকিস!
দিন বদলে যায়, সাথে মানুষ। যাদের নিয়ে এক সময় নানা ধরেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছি তারাই এখন সেই কাজটি করতেছে। ছাত্র জিবনে কত যে যৌতুক, বাল্যবিবাহ, সুদ-ঘুষ,বন্ধ করেছি আর এখন। আমি পারি না আর পারতে ও চাই না, যদি চেষ্টা করতাম আজ ওদের থেকে অনেক টাকা-পয়সার মালিক থাকতাম, এত দিয়ে কী হবে।মা- বাবা ও পরিবার নিয়ে তিন বেলা ঠিকভাবে খাবার পেলেই আমার হয়ে যায়।হালাল টাকা আর হারামের মধ্যে অনেক পার্থক্য।আজনা হয় শ্বশুরের কাছ থেকে এসব আনতেছে।কাল তো ওর বউ ওকে দুই কথা বেশি কথা বলবে না এর কোনো নিশ্বয়তা আছে।আর ও দুদিন পর বউয়ের কাছে শ্বশুর বাড়ি থেকে অর্থ আনতে বলবে না তার ও কোনো নিশ্বয়তা নেই।আমি মনে করি নিজের স্বভাবকে যদি প্রথম থেকে ভালো রাখি সারা জিবন ভালো থাকবে।পরিবারে শান্তি আসবে,মনে কোনো দুর্বলতা থাকবে না।
সকল মেয়ের বাবা- মায়ের প্রয়োজন তার মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছেন সাথে ও সব দেওয়ার প্রয়োজন কী? যারা আপনার মেয়েকে তাদের ঘরের বউ করে নিতেছে তাদের কি সংসারে কিছু নেই।যদি না থাকে তা হলে আপনার মেয়েকে ওই পরিবারে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।দীর্ঘ ১৮+ বছর নিজের অর্থ খরচ করে পড়াশোনা সহ সকল খরচ বহন করেছেন। আর তাকে অন্যের ঘরের বউ হিসেবে পাঠানোর জন্য ঘর গোছানোর সব দিয়ে পাঠাবেন। কিন্তু কেন?
প্রয়োজনে তো তারা আপনাকে কিছু দিবে।এত বছর তার জন্য ব্যায় করলেন, নিজের বাড়ি থেকে অন্যের বাড়িতে চলে যাচ্ছে তার পর ও আপনার দিতে হবে।যারা নিচ্ছে তাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই, আবার বলবে তার মেয়ের জিবন গড়ার জন্য সব ওদের কিছু না।সংসারের সব দিবেন তা তো আপনার মেয়েরই থাকবে,বাইক দিবেন তাতে তো আপনার মেয়েই চড়বে।তা হলে সে সব ছেলেদের বলার ভাষা নেই।
জিবনে সকলের কিছু না কিছু চাওয়া- পাওয়া থাকে, ঠিক আমার জিবনেও একটা চাওয়া আছে। অসহায়, অবহেলিত মানুষগুলো পাশে দাড়ানো । সমাজে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা করছি এবং করবো,কিন্তু কোনো ভাবে সম্ভব হতে পারতেছি না।যাদের নিয়ে শুরু করব তারাই কিছুদিন সংঘ দিয়ে সুযোগ বুঝে চলে যায়,আর একা একা এসব করা কখনো সম্ভব না।এক সময় দেখা যাচ্ছে নিজেদের ভেতরি এই অসামাজিক কাজ গুলো চলতেছে।তখন নিজেকে নিজের কাছে খুব অসহায় প্রাণী মনে হয়। বাড়িতে এসে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসে গেলাম, বাড়িতে শুধু মা-বাবা আছে বউ তার বাবার বাড়িতে গেছে।মা বলতে লাগল!
— তুই এখন কি এসব ছেড়ে দিতে পারিস, যত লোক না তোকে ভালো বলে তার থেকে অনেক বেশি লোক মন থেকে গালাগাল করে।তাই বলতেছি নিজের কাজ ঠিক ভাবে কর , ও সব জনসেবা দিয়ে তোর কোনো কাজ নেই।যারা নেতা কর্মী আছে তারা করবে।এতে তোর তো কোনো লাভ নেই?
— মা আমি আমার নাম কামানোর জন্য এসব করি না,আমি আমার মন থেকে করি।কে কী বলল না বলল সে সব আমার দেখার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার দ্বারা যদি একটা লোক উপকৃত হয় সেটাই আমার অনেক বড় পাওয়া।
— এসব করে কি কোনো লাভ আছে আমাদের, দেশে আরো কত লেক আছে টাকা পয়সা ওয়ালারা আছে তারা তো এসব করতে পারে।
— সেইটা যার যার ইচ্ছা।
— আজ না হয় এ সংসারটা ছোট আছে, কালকের চিন্তা তো করতে হবে।এখন তোর একটা সংসার হয়েছে তার ও ভবিষ্যৎ আছে।
— এসবের সাথে পরিবারের সম্পর্ক কী?
— ভবিষ্যতের জন্য তো কোনো পুজি করে রাখতে হবে, যখন তোর সন্তান হবে, আমাদের কথা না হয় বাদ দিলাম, হঠাৎ যদি কোনো বড় ধরনের দুর্ঘটা ঘটে যায় তখন কী হবে? একটু ভেবে দেখ। এ জন্য বলতেছি কাজের দিকে আরেকটু বেশি মনযোগ দে।আর এসব পারলে ছেড়ে দেওয়া চেষ্টা কর,দেখবি তখন তোর কোনো শত্রু থাকবে না।
— এ সব কি বলছ , মা হয়ে যদি তুমি এসব বলো তা হলে লোকে বলতে বাকি রাখবে কিছু । আমি মানুষের কি কোনো ক্ষতি করতেছি,না কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত পেতেছি।নিজের কাজের ফাঁকে তাদের একটু খোজ খবর নেই।আচ্ছা ও সব বাদ দেও তো লোকের কথায় কান না দিয়ে নিজেের মত থাক,ভবিষ্যতের চিন্তা আমি করি না। আল্লাহ যে কোনো এক ভাবে পার করে দিবে।
— যা বুঝিস তুই।
— কথাটা আমার সব সময় মনে হয়,যে চলতে চলতে পথ চলা শিখতে হয়, হাতে ধরে এখন আর কেউ পথ চলা শিখিয়ে দেয় না । জিবনের প্রতিটা সময় এক প্রকার যুদ্ধের মাধ্যমে পার করতে হয়,যেখানে যুদ্ধটা চলে নক আউট। মানে যে একবার হেরে যাবে কখনো সে আর এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারে না ।
খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে শুয়ে চিন্তা করলাম,আজ আমি কত ভালো আছি সুন্দর একটা বিছানা পেয়েছি, উপরে টিন দিয়ে ছাউনি,বাবা মা সাথে আছে,লোকের সামনে মাথা উচু করে কথা বলতে পারতেছি,তিন বেলা পেট ভরে না হলে খাবার পেতেছি,কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে,কিন্তু এই মুহূর্তে যারা ফুটপাতে ঘুমিয়ে আছে, আসহায়, দুস্ত,পরিবার তাদের অবস্থা কেমন, তারা ও তো বেঁচে আছে।আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া আদায় করি, নিজের একটা আশ্রয় স্থল থাকার জন্য।আর যেহেতু আমার সুযোগ আছে তাদে সাহায্য করার তাই অর্থ দিয়ে না পারি দুটো কথা দিয়ে যত দিন পারি তাদের পাশে থেকে যাবো।