মোহনার রুম টা খুব সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করা। চারদিকে ঝলমলে আলো, অসংখ্য বেলুন, আর সুন্দর ভাবে দেয়ালে রঙ দিয়ে লেখা ‘শুভ জন্মদিন মোহনা’। সামনে বার্থ ডে কেক। অলোক বলল ‘হ্যাপি বার্থডে মোহনা। জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।’ মোহনা আনন্দে হেসে উঠলো। মোহনা আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো
-আমার জন্য কি গিফট এনেছো অলোক??
-এত আয়োজন করলাম তারপর আবার গিফট??
-গিফট না আনলে কি কিন্তু আমি ভীষণ রাগ করবো।
-আচ্ছা আচ্ছা রাগ করতে হবে না। এই নাও। মোহনার হাতে একটা চাবি তুলে দিল অলোক।
-এটা কিসের চাবি?
-গাড়ির।
মোহনা অবাক হয়ে বলল
-গাড়ি! সত্যি!!
-হ্যা।
-কিন্তু আমি তো গাড়ি চালাতে পারি না।
-আমি শিখিয়ে দিব।
-ঠিক আছে।
-আচ্ছা এখন কেক টা কাটি??
-হ্যা চলো।
-মোহনা..এই মোহনা একটা ডাকে মোহনার ধ্যান ভাঙলো। মোহনা জবাব না দিয়ে মুখ টা তুলে চাইলো। কোনো জবাব না পেয়ে অলোক আবার বলল
-তুমি এত রাতে বারান্দায় বসে কি ভাবছিলে??
মোহনার মনে হলো এতক্ষণ তাহলে ও এতসব কিছু নিজের অবচেতন মনে ভেবে যাচ্ছিলো। বাস্তবে ওর জন্মদিনে ওসব কিছুই হয় নি। কিন্তু ও মনে মনে ভেবে নিচ্ছিলো যেন ওর রুম টা সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে, বিশাল একটা কেক সামনে নিয়ে অলোক দাঁড়িয়ে আছে। আর জন্মদিনের উইশ করছে। আর গিফট হিসেবে অলোক ওকে একটা গাড়ি দিয়েছে। কিন্তু অলোকের ওত সামর্থ কোথায়?? ১৫ হাজার টাকা মাইনে দিয়ে কোনো মতে সংসার টা চলে যায় ওদের। বিয়ের পর থেকে ওর কোনো শখ আহ্লাদ পূরণ হয় নি। অথচ বাবার ঘরে ওর কোনো ইচ্ছে অপুর্ণ থাকে নি।
-কি হলো মোহনা?? কথা বলছো না কেন?
-কিছু না। এমনি ভালো লাগছিলো না।
-ওহ
অলোক অপেক্ষা করছে কখন বারোটা বাজবে। ঠিক বারোটার সময় সবার আগে ও মোহনা কে উইশ করবে। ইউটিউব থেকে কেক বানানোর রেসিপি দেখে মোহনার জন্য নিজের হাতে কেকও বানিয়েছে অলোক। অবশ্য কেক টা একটু পুড়ে গেছে। এই প্রথমবারের মত রান্নাঘরে পা রাখলো অলোক। প্রথমবারের মত বানানো কেক হিসেবে খুব একটা মন্দ হবে না। মোহনা এসব কিছুই জানেনা।
-অলোক, তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। অলোক দেখলো ঘড়িতে তখন ১১.৫৯ মিনিট।
-হ্যা তোমার সব কথা শুনবো। তার আগে তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি আসছি।
অলোক হাসিমুখে রান্না ঘরে রাখা কেকটা নিয়ে আসলো। ঠিক বারোটা এক বাজার মুহূর্তে ও কেকটা মোহনাকে দিবে। নিশ্চয়ই মেয়ে টা খুব খুশি হবে। বিয়ের পর তো ওর কোনো শখ আহ্লাদ ই পূরণ করতে পারেনি ও। অলোক হাত দিয়ে পেছনে কেক টা লুকিয়ে রেখে বলল
-হ্যা মোহনা কি বলছিলে বলো।
-তোমাকে কীভাবে কথা টা বলল বুঝতে পারছি না।
-আরে নির্ভয়ে বলো।
-আমি তোমার এই অভাব অনটনের সংসারে থাকতে পারছি না অলোক। জানো, আজ আমার জন্মদিন। এই জন্মদিন টা আমার বাসায় কতটা ধুমধাম করে পালন করা হতো! প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪-৫ টা ড্রেস কিনতাম আমি। গাড়ি করে স্কুল কলেজে যাতায়াত করেছি। অথচ তোমার সংসারে আসার পর আমার সামান্যতম চাহিদাও তুমি পূরণ করতে পারো নি। অলোক এতক্ষণ চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছিলো। চোখে পানি ছলছল করছে।
-তুমি কি চাও মোহনা?
-ডিভোর্স। অলোকের হাতে ধরে রাখা কেকটা নিচে পড়ে গেলো। অলোক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
-তোমার জন্মদিনে তুমি আমার কাছে মুখ ফুটে এই গিফট চেয়েছো। আমি অবশ্যই তোমাকে এটা দিবো।
অলোকের হাতে ধরে রাখা হালকা পোড়া কেকটা মোহনাকে আর দেয়া হয় না। এই কেকটার বদলে গিফট হিসেবে ডিভোর্স দিলে হয়ত মোহনা বেশি খুশি হবে। অলোক মোহনার সামনে থেকে চলে গেলো। আর নিচে পড়ে রইলো অলোকের যত্ন নিয়ে বানানো কেকটা। সময় ১২.০২ মোহনার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে। ‘হ্যাপি বার্থডে মোহনা। আজকে তোমার জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল এক পার্টির আয়োজন করেছি। তোমাকে কিন্তু আসতেই হবে।’ মোহনা হেসে উঠলো।