– তোমার নবাবজাদা ছেলেটা কি এখনো উঠেনি?
– ২ টা বাজছে? নবাবজাদার ঘুম কী আর ২ টার আগে ভাঙ্গে।
– তুমি তোমার ছেলেকে বলে দিও আজ বিকেলেই যেনো আমার সাথে আমার বন্ধুর বাড়ি যায়। চাকরি তো করবেই না। বাপের হোটেল আছে তো। কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেটা আমারও জানা আছে।
কথা গুলো মা’কে বলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন বাবা। তবে বাবার চিল্লাচিল্লিতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কিছুক্ষণ পর আবারো ঘুমের দেশে চলে গেলাম। ঘুমাতে কে না ভালবাসে। তবে আমি একটু বেশিই ঘুম ভালবাসি। ২টা ১৫ মিনিটে ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেলাম। ফ্রেশ-ট্রেশ হইলাম। খাবারের টেবিলে গিয়ে বসলাম।
– মা। ও মা। খেতে দাও। খুদা লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে মা খাবার নিয়ে আসে। এবং খাবারের প্লেট রাখার সাথে সাথে বলতে শুরু করে।
– তোর বাপঠাকুর কী বলছে জানোছ?
– আহা। আগে খেতে দাও তো মা। বাবা কী বলছে সবই শুনেছি।
– শুনলে তো শুনছোতই।
খাওয়া শেষ করে চলে আসলাম রুমে। শীত কালে কেনো জানি কম্বলের কাছ থেকে কোনোভাবেই দূরে যেতে ইচ্ছে করেনা। তাই তো কম্বলটা জড়িয়ে নিয়ে আবারো একটু শুয়ে পরলাম। মোবাইলটা হাতে নেই। ডাটা অন করতেই এত এত নোটিফিকেশন। মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়। এত নোটিফিকেশনই আসে যে মনে হয় কত বছর পর ডাটা অন করেছি অসয্য।
– মা,,,,, পানি গরম করো তো। গোসল করবো।
– গোসল করে আর কী করবি। ৭ দিন ধরে গোসল করছিস না। আরো সাত দিন পর একেবারেই করিস।
– শিউর তুমি? সাত দিন পর করবো?
– চুপ বেয়াদব। কোনো পানি গরম করতে পারবো না। ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করবি তুই।
– মা। এই শীতে ঠান্ডা পানি দিয়া গোসল করলে আমি আর জীবিত থাকবো না তো।
– বললামই তো কোনো গরম পানি পাবি না।
বলেই মা আমার রুম থেকে চলে গেলো। আর সাতদিন ধরে গোসল করিনা এটা মিথ্যা কথা। তবে ৪ দিন হবে গোসল করছিনা। গরম কালে প্রতিদিন দুই দুই বার করে গোসল করতাম। তাই শীত কালে গোসল একটু কমিয়ে দিয়েছি। আর কোথায় যেনো আমি দেখেছিলাম যে শীত কালে প্রতিদিন গোসল করলে আয়ু কমে যায়। তাই অনেকদিন পর পর গোসল করতাম। কারণ আমি এত তাড়া-তাড়ি দুনিয়া ছেড়ে যেতে চাই না।
আচ্ছা এখন আমার পরিচয় দেই। আমি আলম। আবার হিরো আলম ভাইবেন না। আমি শুধু আলম। যদিও নামের আগে কিছু নাই। তবে পরে আছে। মানে আলম রহমান। অনার্স পাশ করেছি আরো ৪ বছর আগে। কেনো জানি পড়া লেখা করতে খুব বোরিং লাগতো। তাই শেষ পর্যায় পড়া লেখাটাও ছেড়ে দিয়েছি। হুম সব শেষে ঘুম নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছি।
– আলম।
– হুম আব্বা বলো।
– তাড়া-তাড়ি রেডি হয়ে নে। তোর করিম চাচার বাড়িতে যাবি আমার সাথে।
– কিন্তু কেনো?
– কেনো মানে? তোকে বলছি যেতে হবে তাই যাবি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। রেডি হচ্ছি।
কম্বলটা শরীরের উপর থেকে সরিয়ে বিছানা থেকে উঠলাম। বাথরুমে গিয়ে দেখলাম আসলেই গরম পানি করে দেয়নি মা। কি আর করার। ঠান্ডা পানি দিয়েই গোসল করে বের হইলাম। ঠান্ডায় কাপতেছিলাম। পানি তো নয় যেনো কেউ বরফ দিয়ে রাখছিলো। রেডি হয়ে গেলাম। এই কী মা এবং টিনাও যাবে নাকি? টিনা হচ্ছে আমার ছোট বোন। আংকেলদের এর বাড়িতে কি কেউ মারা গেছেন নাকি? সবাই যাচ্ছে কেনো? ধ্যাত ওইখানে গেলেই বুঝতে পারবো কি হয়েছে না হয়েছে।
আমাদের বাসা থেকে বের হইলাম। করিম আংকেলের বাসা হচ্ছে সিলেট। আর আমাদের বাসা ঢাকাতেই। আমি ভাবতেছিলাম এখন সিলেট গেলে বাসায় আসবো কখন? মনে হয় না আজ আর বাসায় আসা হবে। ৫ টায় বাস ছাড়ে। কমপক্ষে তো ৫ ঘন্টা লাগবেই। আর যদি জ্যাম থাকে তাহলে তো যাওয়া হয়েছেই। আমার পাশে আমার ছোট বোন বসেছে। আর আব্বা – আম্মা একসাথে বসেছেন। আমি টিনাকে জিজ্ঞাসা করলাম। কেনো সিলেট যাচ্ছি এই ব্যাপারে টিনা কিছু জানে কিনা সেটা জানার জন্য। কিন্তু টিনা কিছু বলছে না। শুধু হাসছিলো। ওর হাসি দেখে আমার মনে সন্দেহ হয়। অনেক চেষ্টার পরেও তার মুখ দিয়ে বের করতে পারলামই না। ব্যর্থ হয়ে বসে আছি চুপ করে।
একটু যে ঘুমাবো সেটাও আসছে না। কে জানে কি হয়। তবে বন্ধুদের কাছে অনেক শুনেছি সিলেটি ফুরি (মেয়ে) নাকি দেখতে খুব সুন্দরী। মন থেকে দুশ্চিন্তা অনেক কিছু ভেবে সরিয়ে ফেললাম। মনের মধ্যে কথা জমিয়ে রাখলে কোনো কিছুই ভাল লাগে না। একটু ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সিলেট চলে এসেছি। তখন রাত ১১:৩০ টা বেজে যায়। বাস থেকে নামলাম সবাই। আংকেল গাড়ি পাঠিয়েছিলো আমাদের জন্য। তো সবাই উঠলাম গাড়িতে। আমি মনে মনে ভাবছিলাম এমন কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে। আব্বার এই কথা শুনে তো এখন একেবারেই টেনসন চলে আসলো।
-ড্রাইবার ভাই। আশে পাশে মিষ্টির দোকানে কাছে গাড়িটা রাইখেন তো।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
কিছুক্ষণ ভাবার পর মনে হলো। হয়তো অনেকদিন পর তার বন্ধুর বাড়িতে যাচ্ছে তাই মিষ্টি নিবে। একটু পর গাড়ি থামালেন ড্রাইবার আংকেল। এবং আব্বা গেলেন মিষ্টি আনতে। কিন্তু একটা জিনিষ খুব খারাপ লাগলো। অন্তত আমাকে তো সাথে করে নিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু না সাথে করে ড্রাইবার আংকেল’কে নিয়ে যায়। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর আব্বা আসেন মিষ্টি নিয়ে। কিন্তু এত প্যাকেট কেনো? আরে কারো বিয়ে হলেও তো কেউ এত মিষ্টি নিয়ে যায় না।
– আব্বা মিষ্টির দোকানে কি আর মিষ্টি ছিলো না?
– কেনো? কম হয়ে গেছে?
– না। ঠিক আছে।
কচু ঠিক আছে। সব কিছু কেনো জানি মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছিলো। অবশেষে আংকেলের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাই। এই কী বাড়িতে লাইটিং করে রেখেছে কেনো এত? একেবারেই বিয়ে বাড়ি। কিন্তু আমাকে একটু জানালেও তো পারতো। বিয়ে বাড়িতে আসবো একটু মাঞ্জা মেরে আসতাম। কিন্তু কেনো যে বললো না। শীতের কাঁপুনিতে একেবারেই শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।
তাদের বাসায় গিয়ে বসলাম। সবাই আড় চোখে আমাকে কিভাবে জানি দেখছিলো। জিনিষটা অনেকক্ষণ ধরেই নোটিশ করতেছিলাম। মোবাইলটা বের করে ক্যামেরা অন করে নিজের চেহারাটা দেখলাম। না তো চেহারাতে তো কোনো কিছু নেই । কিন্তু এভাবে তাকিয়ে কি দেখছে তারা।
– বাবা তোমাদের আসতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো?
– জ্বি না আংকেল সমস্যা হয়নি।
– আচ্ছা আর একটু বসো তাহলে দিয়া রেডি হয়ে আসছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
মানে দিয়া রেডি হয়ে আসছে মানে। কিছুই তো বুঝলাম না। দিয়া কে? আর তার আসা না আসার সাথে আমার কী সম্পর্ক। টিনা আমাকে হাতে চিমটি দিলো।
– কি হয়েছে?
– ভাইয়া। এখনো বুঝছো না কিছু?
– হ্যা বুঝবো না কেনো। সবই বুঝেছি।
ব্যাঙেরছাতা বুঝছি। কিছুই বুঝিনি তখনও। কিছুক্ষণ পর আমাদের নাস্তা দিলো। খিদে ছিলো খুব। তাই ইচ্ছে মতো খেলাম। আহ পেট শান্তি তো সব শান্তি। তবে এখন যদি একটু বিশ্রাম নিতে পারতাম। কতক্ষণ ধরে তো বসেই আছি। রাত তখন সাড়ে বার’ টা বেজে যায়।
– পাত্র কোথায়?
একটা মহিলার মুখে এই কথা শুনে তার দিকে নজর দিলাম। আর মনে মনে ভাবছি পাত্র কে? কেনো জানি নিজের অজান্তেই মনে হয়ে গেলো পাত্রটা আমি না তো। আর যদি তাই হয় তাহলে জীবনে অনেক বড় একটা ভুল সিদ্ধান্তে পা দিতে হবে। বিয়ে মানুষ করে। বিয়ে যে কত প্যারা। সেটা এলাকার চ্যাংড়া পোলাপাইনের বিয়ের ইতিহাস শুনেই বুঝেছি। তবে মা’য়ের কথা শুনে চিন্তাজগত থেকে বর্তমান সময়ে ফিরি।
– আলম। সালাম দে তোর আন্টিকে।
– আসসালামু ওয়ালাইকুম।
– ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা। মাশাআল্লাহ্। দিয়ার সাথে মানাবে।
কথাটি শুনে পুরাই বোকা হয়ে গেলাম। রাগান্বিত চোখে মায়ের দিকে তাকালাম। আমার রাগান্বিত তাকানো দেখে মা বলে উঠে।
– কোনো সমস্যা? যা হচ্ছে তুই ছাড়া সবার মতামতেই হচ্ছে। কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস। তবে সেটা বিয়ের পরে।
আমার আর কিছু বলার সাহস হলো না। আজব লাগছিলো সব। না করতাম কোনো জব, না করতাম কোনো ব্যবসা। বিয়ে করে বউকে খাওয়াবো কি? তার থেকে বড় কথা হলো। আমি তখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। একটু তো পার্সোনালি মেয়ের সাথে কথাও বলতে পারতাম। কিন্তু না সেটাও হয়নি।
কিছুক্ষণ পর তাদের মেয়েকে নিয়ে আসলো। এত বড় ঘোমটা দিইয়ে। মনে মনে ভাবছি এভাবে ঘোমটা দিয়ে কি হবে। বিয়ের কয়েকদিন পর তো হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এখন এত ভদ্রতা দেখিয়ে কি লাভ। আর কত আজব আজব কথা যে মনে আসছিলো সেই মুহূর্তটায়। আচ্ছা এখন ইতিহাস বাদ দিয়ে সংক্ষেপে বলি। তাদের মেয়ে এসে বসলো আমার বিপরীত পাশে। তখনও আমি সে মেয়েকে দেখিনি। আর আব্বা তার পকেট থেকে তখনই একটা রিং বের করে দিলো আমার হাতে এবং আব্বা কানের সামনে এসে বলেন তাকে পড়িয়ে দিতে। আব্বার দিকে একটু তাকালাম। তাকানোর সাথে সাথেই আব্বার চোখের ইশারায় চোখ নামিয়ে নিলাম। কারণ আর যাই করি না কেনো। আমার বাবার চোখের ভাষাটা খুব ভাল করেই বুঝতাম।
আংটি পড়িয়ে দেই তাকে। তার মানে বিয়ে নয় এংগেজ হচ্ছে। কিন্তু আব্বা চাচ্ছেন তখনই বিয়ে হয়ে যাক। কারণ আমার আব্বা ভাল করে জানেন যে আমার মতিগতি তেমন সুবিধার না। কারণ আমি তো তারই ছেলে। সেই মুহূর্তটায় খুব বেশি কান্না করতে গিয়েও পারছিলাম না। চোখ বুঝে সব কিছু সয্য করে নিলাম। হুজুর নিয়ে আসেন আব্বা এবং তার বন্ধু করিম আংকেল গিয়ে। রাত তখন ১ টার কাছাকাছি। হুজুর আসেন এবং বিয়েটাও শেষ হয়। আমি বুঝলাম না এভাবে কোনো বিয়ে হয় নাকি? কোনো হলুদের অনুষ্ঠান হইলো না। আরে ঢাকায় গেলে বন্ধুদের কি বলবো। ওরা তো সবসময়ই আমাকে নিয়ে হাসা-হাসি করবে। না আর সয্য হচ্ছিলো না। এইবার মুখ খুললাম।
– আব্বা-আম্মা তোমাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে। কথাটি বলে একটু সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
– কি হয়েছে কী?
– এটা কি হলো? আমার বিয়ে অথচ এরকম নিরবে কেনো?
– তোকে বললে কী তুই বিয়ে করতে রাজি হইতি? তাই এভাবেই করতে বাধ্য হয়েছি।
– তাই বলে এভাবেই? আমার বন্ধুরা কি ভাববে? কোনো হৈচৈ নাই। নিরবে বিয়ে হয়ে গেলো।
– বুঝতে পারছি তুই কি বলতে চাচ্ছিস। সমস্যা নাই বিয়ে তো হয়ে গেছেই। বাসায় গিয়ে সবাইকে দাওয়াত করে খাওয়াবোনে। এইবার খুশি তো?
– আমার আর খুশি। বাসায় যাচ্ছি কখন?
– যতদিন না পর্যন্ত তোর করিম চাচা। ও এখন তো আর চাচা নেই। তোর শ্বশুর আব্বা যেইদিন আমাদের বিদায় দিবে সেইদিনই যাবো।
– কী????
– কি ব্যাপার বন্ধু কোনো সমস্যা?
– আরে না বন্ধু। আলম বলছিলো এভাবে নিরবে কেনো বিয়ে হলো। বাদ দে ওর কথা। আর শোন এখন আমরা কিন্তু আর বন্ধু নই আমরা বিয়াই হয়ে গেছি।
– হ্যা বন্ধু আমার এখন বিয়াই।
তাদের হাসি ঠাট্টা দেখে একটা সময় আমিও মুচকি হেসে দেই। বিয়ে যেহেতু হয়ে গেছেই কী আর করার ভাই। একটু সয্য করে থাকি। আমার এক বন্ধুর কথা “যদি পস্তাতেই হয় তাহলে মিষ্টিটা খেয়েই পস্তাও” তা নাহলে বুঝবি কিভাবে মিষ্টির স্বাদ কেমন। এখন একটাই ভাবনা বউটা যেনো অন্তত আমার মনটা বুঝে। জ্বালাবে তো বটেই তবে লিমিটে যেনো থাকে। তখনও তার চেহারাটাও দেখিনি। তবে কথা শুনেছি। প্রথমে সব মেয়েরাই একটু ভদ্রতা দেখায়। কয়েকদিন গেলেই বুঝতে পারবো আসলেই ভদ্র নাকি অভদ্র। আচ্ছা বাকিটা পরবর্তী পর্বে প্রকাশ করবো। আসলেই কী পস্তাতে হয়েছে, নাকি পস্তাতে হয়নি।