আক্ষেপ

আক্ষেপ

~ সিফা মেয়েটা আমাকে দেখলেই কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। এই তাকানোর মানে কি আমি ঠিক বুঝতে পারি না। এলাকার আট দশটা ছেলের মতো কি সে আমাকেও কেলাতে চাই। শুনেছি সিফা তো কোন ছেলেকে এমনি এমনি মারে না। যারা যারা সিফার হাতের মাইর খেয়েছে তারা সবাই এক টা না একটা অন্যায় করেছে। কেউ তাকে প্রপোজ করেছে। কেউ আবার মেয়েদের বিরক্ত করেছে। কিন্তু আমি তো তার, কোন টাই করে নি তবে কেন শুধু শুধু আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকে। সে তো আমাকে আবার ভালবাসে না? আরে দুর কি ভাবছি আমি সিফা মেয়েটা তো মনে হয় ভালবাসার মানেই বুঝে না।

এলাকার সবচেয়ে বড মেজাজি।, গুন্ডা টাইপের মেয়ে হচ্ছে সিফা। তার বাবা এলাকার চেয়ারম্যান হওয়ার ফলে যেন তার আরো সুবিধায় হয়েছে। যে কোন সময় যে কোন পরিস্থিতি তে সে ছেলেদের ধরে মারে। কেউ তার বিচার ও করতে পারে না। যেহুতু সে এলাকার চেয়ার ম্যানের মেয়ে।

সাইকেল চালিয়ে কলেজে যাচ্ছি তখন সিফার সাথের মেয়েগুলো আমার রাস্তা আটাকায় ধরে। এ দিকে আমার কলেজের লেট হয়ে যাচ্ছে? এক প্রকার বাধ্য হয়েই সাইকেল ব্রেক করে বললাম। কি সমস্যা আপনাদের এভাবে রাস্তা আটকালেন কেন? মেয়েগুলোর মধ্যে একটা মেয়ে বলল, ইচ্ছে করেছে তাই আটকিয়েছি। তাতে সমস্যার কি হল।আরেক মেয়ে বলল, ভাইয়া আপনাকে ডাকছে? আমি একটু রাগান্তি কণ্ঠে বললাম, কে ডাকছে?। মেয়েটা হাতে ইশারা করে দেখিয়ে দেই রাস্তার ধারে বড় আম গাছটার দিকে। সেদিকে তাকাতেই দেখি সিফা সেখানে দাড়িয়ে আছে? সিফাকে দেখে যেন আরেকটু রাগ হল মনের ভিতর। এই মেয়েটার কি কোন কাজ নেই। শুধু শুধু আমার পিছু লেগে থাকে কেন বুঝি না!

কেন আমাকে ডাকছে বলুন তো? মেয়েটা জবাব দেই। কেন ডাকছে তা তো জানি না। আপনাকে বলেছে যেতে এটুকু জানি। আমার কলেজের লেট হয়ে যাচ্ছে, আপনার বস সিফাকে বলবেন আমি তার ডাকে সাড়া দিতে পারবো না।

বলেই সাইকেলের পেঠ্যাল মারি। সাইকেল চালিয়ে দ্রুত চলে আসি কলেজে। এদিকে মেয়েটা সিফাকে গিয়ে বলে আমি আসি নি। একথা বলতে যেন সিফার চোখ দিয়ে আগুন বের হতে থাকে। এলাকার কারো সাহস নাই তার কথার অবাধ্য হবে। আর সেখানে আমি একটা সহজ সরল ছেলে হয়ে তার কথার পাত্তা দিলাম না। বিষয়টা সে কোন ভাবে মেনে নিতে পারছে না।

-তখন আপনাকে ডেকেছিলাম কেন আসেন নি?

বিকাল বেলা খালের পাড়ে আনমনা বসেছিলাম। অন্য আট দশটা ছেলের মতো আমার খেলাধুলা করতে ভাল লাগে না। তাই এই সময়টা এই খালের ধারে বসে কাটিয়ে দেয়।আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রতিদিনের মতো বসে আছি তখনি কেউ একজন কথাটা বলে। কথাটা শুনে বুঝতে পারি এ আর কেউ না সিফা ছাড়া। তাই আর তার দিকে তাকা নি ।আকাশের দিকে তাকিয়ে জবাব দেই, ইচ্ছে হয় নি তাই।

সিফা কিছুটা রেগে যায়। তারপরো রাগটা কন্টোল করে বলল, আপনার সাথে কিছু কথা আছে এই দিক টায় চলুন। কি বলবেন এখানে বলুন। ওই দিকে যেতে পারবো না। আরে চলুন না একটু? আমি ওঠে দাড়িয়ে উল্টো দিকে হাটা ধরি। এই মেয়েটাকে দেখলেই আমার ভয়। করে কখন জানি মেরে বসে? আবার বলছে ওই দিকে যেতে। নিশ্চয় সেদিক টায় নিয়ে আমাকে আচ্ছা মতো কেলাবে যেহুতু সকালে তার ডাকে সাড়া দেই নি।

পড়ার টেবিলে বসে আছি। কিছু যাবৎ সিফার একটু বেশি করছে মনে হয় আমার সাথে। সারাক্ষন আমার পিছু লেগে থাকে। কিন্তু কেন থাকে? আর আড়ালেই বা আমার সাথে কি কথা বলবে। যার জন্য বলে আড়ালে যেতে?আড়ালে গেলে যদি খারাপ কিছু করে বসে তাই আর যায় না। ভাবছিলাম।,হুট করে বাবা এসে বলল, বাবা আরাফ তুই নাকি চেয়ার ম্যানের মেয়ে সিফার সাথে বেয়াদবি করছিস? কি বল আমি তার সাথে বেয়াদবি করতে যাব কেন? উল্টো সেই তো… কথাটা শেষ করার আগে বাবা আবার বললেন, তাহলে মেয়েটা আমাকে রাস্তায় বলল কেন, তুই নাকি তাকে বিরক্ত করিস? কে সিফা বলেছে। হ্যা সে তো বললো।দেখিস আবার কোন ঝামেলা যাতে না হয়। এখন বাদ দিয়ে এইসব চল খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।

প্রত্যেক শুক্রবার সিফাদের বাড়ির সামনের মাঠে মারবেল খেলার মেলা বসে। আশে পাশের গ্রাম থেকে ছেলেরা আসে এখানে খেলা করতে। আমার বন্ধু রানাও মারবেল খেলতে পার্দশি। তাই সে আমাকে জোর করে নিয়ে আসে এখানে। রানা মারবেল খেলছে আর আমি রাস্তার ধারে গাছটা নিচে বসে তাদের খেলা দেখছি। তখন সিফা পিছন থেকে এসে আমার পাশে বসে। এভাবে সিফার বসা দেখে সবাই খেলা বন্ধ করে আমাদের দিকে তাকায়। যেন তারা অসম্ভব কোন কাজ করতে দেখছে। আমি কিছুটা সরে বসি। সিফা আমাতে ঘেসে বসতে এদিকে আরেকটু চাপে। তখনি আমি বললাম, কি সমস্যা আপনার? কই সমস্যা নাই তো? তাহলে এভাবে চেপে আসছেন কেন? ইচ্ছে হয়েছে তাই। বলেছিলাম না আপনার সাথে কথা আছে আমার, তখন শুনেন নি তাই এখন এভাবে তার সাজা দিচ্ছি? আবার তার কথায় মাথায় রক্ত চড়ে? মেয়েটা তার বাবা জোরে যা ইচ্ছে তাই করবে। এমন কি বাবা কাছে নালিশ করে আমি তাকে বিরক্ত করি। আমি বসা থেকে ওঠে একটু চিৎকার করে বলালাম

-কি কথা হ্যা, বলেন যার কারণে বাবার কাছে নালিশ করেছেন। যেখানেই যায় সেখানে আপনি আমার পিছু পিচু ছুটে আসেন। বলুন এখন

সিফা আমার হাত ধরে বলে, বলবো তবে তুমি একটু শান্ত হও। তারপর বলি! এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নিযে বলি, আমি শান্তই আছি কি বলবেন বলেন, সিফা আবার আমার হাত ধরে বলল আরাফ আমি তোমাকে ভালবাসি। বিশ্বাস করো কিভাবে যে নিজের অজান্তে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি জানি না। তবে তোমাকে বিষণ ভালবাসি। আমি এবার অবাক হয়ে যায় বলে কি মেয়েটা আমাকে নাকি ভালবাসি। সে তো ভালবাসার মানেই জানে না। জানে সারাক্ষন ঝগড়া মার পিট করতে। এখন বলছে আমাকে ভালবাসে । বাহ ব্যাপার টা বেশ হাস্যক্কর তো।

আমি একটু শব্দ করে হাসতে থাকি। সিফা আমার এমন হাসি দেখে আবার বলল কি হল হাসছো কেন? আমি কি হাসার মতো কিছু বলেছি। হাসির মতো ই তো মনে হচ্ছে। ভালবাসো তুমি আমাকে ব্যাপার একটু অদ্ভুত না। যে মেয়ে সারাক্ষন মারপিট আড্ডা বাঝি নিয়ে মেতে থাকে সে আমাকে ভালবাসে? দেখুন আপনার এটা ভালবাসা না, এটা ভাল লাগা। দেখবেন কিছু দিন পর টা কেটে যাবে।বলে আমি রাস্তা দিয়ে হাটা ধরি। সিফা পিছন থেকে আমাকে জড়য়ে ধরে। কাদো কাদো কন্ঠে বলে। বিশ্বাস কর আরাফ আমি তোমাকে সত্য ভালবাসি। এবার আমার রাগ ওঠে গেল মাথায়। পিছু ফিরে সিফা থাপ্পার মারে বলতে লাগলাম।

ভালবাসো হে আরে তুমি তো ভালবাসা কি তাই জান না। তবে কিভাবে ভালবাস বে। দেখ এর পর যদি কখন তুমি আমার সামনে এসে বল ভালাসার কথা তবে। আমি তোমার বাবার কাছে বিচার দিব। শুধু বিচার না আমিই গ্রাম ছেড়েই চলে যাব। বলে হনহন করে চলে আসলাম। সিফা সেখানে দাড়িয়ে মাথা নিচু করে কাদছে। হতো এই কান্না আবেগের যা কিছুদিন পর কেটে যাবে। আজ তিন হতে চললো, সিফাকে দেখি না।মেযেটাকে মনে হয় একটু বেশি বলেছি।আবার চর মারলাম। না এটা ঠিক হয়। তাকে পেলে মাফ চেয়ে নিতে হবে।

কিন্তু সেদিনের পর থেকে আর আসে নি আমার সামনে। এখন আমি সিফাকে মিস করছি।খুব মিস করছি রাস্তার ধারে দাড়িয়ে থাকা কোন লেডি গুন্ডাকে যে আমাকে দেখে হাসতো। যে আমার জন্য সব মেয়েদের কে বলে দিতো এটা তোদের দুলাভাই।কেউ বিরক্ত করবি না। সেদিনের পর থেকে অনেক খুজাখুজি করে পায় নি তার খুজঁ।তারপর থেকে প্রায় তার অপেক্ষায় থাকতাম কিন্তু পায় নি তাকে। একদিন সিফার অপেক্ষায় বসে আছি তখন দেখি তার এক বান্ধবী যাচ্ছে। আমি তার কাছে সিফার খুজ জানতে চায়। কিন্তু সে বলতে নারাজ। এক প্রকার জোর করে তার কাছ থেকে জানতে পারি।

সেদিনে পর সিফা গ্রাম ছেড়ে ঢাকা চলে যায়। যাতে সে আমার সামনে না পড়ে। পড়লে যে আমি গ্রাম ছাড়ে যাব বলেছি। তাই সিফা আমার কাছ থেকে দুরে চলে যায়। সেখানে যাওয়ার কিছু দিন পর নাকি তার বিয়ে হয়ে যায়। তাই আর আসবে না আমাদের গ্রামে। সিফার বান্ধবীর কথা গুলো সেদিন মানতে পারি নি। তার পর তার অপেক্ষায় থাকতাম যদি কোন দিন আসে। তবে সিফাকে বলব সিফা আমাকে মাফ করে দিও আমি ভালবাসার মুল্য দিতে পারি। সেদিন বুঝতে পারি নি। ঝগড়াতে মেয়েটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।

৮বছর পর আমি একটা প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি করি। আজকে আমার স্কুলে একটা বাচ্ছা ছেলে আরেকটা বাচ্চার সাথে ঝগড়া লেগে তার মাথা ফাটিয়ে ফেলে। তাই তাদের গার্জিয়ান দের দেখেছে হেড মাষ্টার স্যার। হঠাৎ দেখি সিফা সেই বাচ্চা টার হাত ধরে আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। আমাকে দেখেও কোন কথা না বলে। হেড মাষ্টারের রুমে চলে যায়। হেডমাষ্টারের সাথে এর সমাধান করে সিফা চলে যাচ্ছে তখনি আমি পিছন থেকে ডাক দেই।

আমার ডাকে সিফা পিছু না ফিরে দাড়িয়ে থাকে। আমি তার কাছে মাফ চাই সেদিনের জন্য। বললাম সিফা আমি বুঝতে পারি নি সেদিন তোমার ভালবাসা,তবে আজ ঠিক বুঝতে পারেছি ভালবাসার কি? তাই তো দেখে এখন ও কাউকে জীবনে জাড়ায় নি। আমি যে তোমাকে ভালবাসতাম।কিন্তু তখন তা বুঝি নি। আর যেদিন বুঝতে পারি সেদিন তুমি আর ছিলে না। আমাকে মাফ করে দিও সিফা। মাফ করে দিও। বলে হাত দিয়ে চোখের জল মুছে উল্টো দিকে হাটা ধরলাম। ভালাবাসার আক্ষেপ টা যে এখন আমায় কাদায়। নিজে থেকে হাড়ালাম সেদিনের প্রিয় মানুষটা কে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত