হকার

হকার

গার্লফ্রেন্ডের চেয়ে, তার মা এত ভয়ংকর হতে পারে তা আমার জানা ছিলনা। সেদিন আমি আর মিতু রিক্সায় ঘুরতেছিলাম। কোথায় থেকে যেন, মিতুর মা আমাদের দেখে ফেলে। রাতে অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে, আমি ফোন রিসিভ করলাম…

— হ্যালো ওপাস থেকে বলল, “আমি মিতুর মা বলছি” আমি থতমত খেয়ে গেলাম। আমাদের রিলেশনের কথা কেউ জানে না, শুধু আমার এক ফ্রেন্ড, নিশাত জানে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, “জ্বি আন্টি” মিতুর মা বলল, “মিতুর কাছ থেকে সব শুনেছি। আমি তুমার সাথে কাল সরাসরি কথা বলতে চাই। কাল কি তুমার সময় হবে” আমি আমতা আমতা করে বললাম, “জ্বি আন্টি” কোথায় দেখা করব, তা ঠিক করে ফোন রেখে দিলাম।

একটু পর মিতুকে ফোন করে জানতে চাইলাম ঘটনা কি? মিতু বলল, ” আজ তুমাকে আমাকে রিক্সায় একসাথে মা দেখে ফেলছে। বাড়ি আসার পর মা জানতে চাইলে, আমি সব বলেদিছি। বলছি, তুমি অনেক ভালো ছেলে, তুমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না। কাল তুমাকে মা যে প্রশ্ন করবে, সোজা করে উত্তর দিবা, কোন ঘাউরামি করবা না। ” মিতুর সাথে বেশি কথা বললাম না। ফোন রেখে দিলাম। টেনশন হচ্ছিল খুব। টেনশনে রাতে ঘুমাতে পারলাম না। আন্টির আসার কথা বিকাল ৪টায়। আমার টেনশন হচ্ছিল তাই আমি ৩টা হতেই আগে এসে “আয় খাই রেস্টুরেন্ট” এ বসে আছি। বিকাল ৪টায় মিতুর মা আসল, মিতুকে সাথে আনেনি। আমার সামনে এসেই বলল, তুমি শুভ? আমি বললাম, জ্বি খাবার অর্ডার করা হলো। আমার গলা দিয়ে খাবার নামছে না টেনশনে।

হঠাৎ আন্টি বলল, “তুমি কি সত্যি মিতুকে ভালোবাস?” আমি বললাম, “আমারা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি” আন্টি বলল, “তুমাকে ছোট একটা পরীক্ষা দিতে হবে। যদি তুমি পাশ করতে পার, তাহলে আমি বুঝব সত্যি তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাস।” আমি বললাম, “বলুন কি পরীক্ষা দিতে হবে? যেকোন পরীক্ষাই দিতে পারব।” আন্টি বলল, “গুড বয়! তুমাকে একদিনের জন্য গুলিস্থান গিয়ে হকারগিরী করতে হবে। তাহলেই বুঝব, তুমি আমার মেয়েকে ভালোবাস। সত্যি তুমি ভালোবেসে থাকলে, তার জন্য তুমি সবকিছু করতে পারবে।”

আমার মুখ হা হয়ে গেল। কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না আন্টি আবার বলল, “তুমাকে তাজমহল বানাতে বলি নাই, বার বছর বরশি বাইতে বলিনাই, পাড়ার কাটতেও বলিনাই! একদিন হকারের কাজ করবা, এটা এমন কি কঠিন কাজ?” আমি ঢোক গিলতে গিলতে বললাম, পারব…তয় মিতু যদি জানতে পারে আন্টি বলল, “মিতু জানবে না। গুলিস্থান আমার লোক থাকবে তুমাকে দেখার জন্য। কাল সারাদিন তুমার ডিউটি।” আমি থ মেরে বসে রইলাম। আন্টি খাবারের বিল দিয়ে বের হয়ে গেল। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার বন্ধু নিশাতকে ফোন দিয়ে বললাম। নিশাত বলল, “আরে ব্যাপার না, একদিনই তো, তাছাড়া সব কাজেরই অভিজ্ঞতা থাকা দরকার।”

পরদিন কিছু ইদুর-তেলাপুকা মারার ঔষুধ নিয়ে গুলিস্থান রাস্তায় চলে গেলাম। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম পরিচিত কেউ আছে কি না পরিচিত কেউ নেই। হাতে ইদুর-তেলাপুকা মারার ঔষুধ নিয়ে শুরু করলাম হকারী ইদুর মারেন, তেলাপুকা মারেন, ছারপুকা মারেন, পিপড়া গুলা মারেন। জাদুর কাঠি ম্যাজিক চক, দাগ দিলে মরে, ঘষা দিলে মরে। তেউল্যাচুরা মরে, চুরার ঘরে চুরা তেউল্যাচুরা, জাগায় খায় জাগায় বেরেক, ইদুর গুলা বেরেক, লাইন এ খায় ছিরিয়ালে মরে, কাইত হয়া খায় চিত হয়া মরে, লাফায়া খায় ধপায়া মরে, ইদুর গুলা মরে ইদুর চিকা মারামারি, নষ্ট করে বাসা বাড়ি, ঔষুধ কিনেন তাড়াতাড়ি। ময়নার মার ঘুম নাই, ইদুর তর বাঁচন নাই, ধরা পড়লে জামিন নাই, জাগায় খায় জাগায় বেরেক, ইদুর গুলা বেরেক। মাত্র ২০টাকা ২০টাকা ২০টাকা।

সন্ধ্যায় গুনে দেখি ভালই ইনকাম হইছে, ২২০ টাকা। ৮৯ টাকা দিয়ে রবি এক জিবি কিনলাম। অনেকদিন হলো এমবির জন্য ফেসবুক চালাইতে পারি না। মনে মনে ভালই লাগছে, দিনটা ভালই পার করতে পারছি বলে। কিন্তু সেই ভালো বেশিক্ষন টিকল না ফেসবুক লগইন করেই দেখি, ম্যাসেনজারে মিতুর ম্যাসেজ সহ একটি পিক পাঠাইছে ম্যাসেজে লেখা, “শালা, তরমত হকারের সাথে এতদিন রিলেশন করছি, ঘৃনা লাগছে ভাবতেই।” পিকটাও আমারই, দুই হাতে ইদুর মারার ঔষুধ সহ গলায় ঔষুধের টুপলা নিয়ে দাড়িয়ে আছি।

ম্যাসেজ রিপ্লাই দিতে পারলাম না। মিতু ব্লক করে দিয়েছে। মোবাইলে ফোন দিলাম, তাও ব্লক। কোন উপায় না পেয়ে আন্টিকে ফোন দিলাম। আন্টি ফোন রিসিভ করল না। বুঝতে পারলাম, এসব আন্টিরই কাজ। মনের দুঃখে আন্টিকে ম্যাসেজ দিলাম, “আন্টি এইভাবে বাঁশ দিলেন” একটুপর আন্টি রিপ্লে দিছে, “যে বাঁশ দিছি, ওটা দিয়েই কিছু কইরা খা, আমার মেয়ের পেছনে না ঘুরে।

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত