প্রত্যাবর্তন

প্রত্যাবর্তন

আমি যে বাসায় টিউশনি করাতাম, সেই বাসার আংকেল মানে আমার ছাত্রী আনিকার বাবা কেমন করে যেন আমার দিকে তাকাতো। ওই মানুষ টা বাসায় থাকলে আমার খুব অস্বস্তি হত পড়ানোর সময়। পেশায় তিনি ছিলেন একজন হোটেল ব্যবসায়ী। তার নাম ছিল কালাম শিকদার। নতুন বাজার এলাকায় তার তিনটি হোটেল ছিল। আর্থিক অবস্থাও বেশ ভাল। বাপের বাড়ি কাছে হওয়ায় আন্টি মানে আনিকার মা প্রায় সময়ই বাপের বাড়ি গিয়ে পড়ে থাকতেন। বাবার বয়সী একটা লোক সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ধারণা করতে আমার বিবেকে বাঁধতো। কিন্তু তারপরও মনের মধ্যে খচখচ করতো খুব। একবার ভেবেছিলাম এই টিউশনি টা ছেড়ে দিবো কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠে নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। বাবা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। রোড এক্সিডেন্টে মাস ছয়েক আগে আমার বাবা মারা যান। তারপর থেকে শুরু হয় আমাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন।

মা আমাদের দুই বোন কে নিয়ে খুব অসহায় হয়ে পড়েন। এই অবস্থায় একদিন মামা এসে আমাদের তিনজন কে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। মামী ছিলেন খুব বদমেজাজি। সংসারে হঠাৎ করে তিনজন বাড়তি সদস্য তিনি মেনে নিতে পারছিলেন না। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমার মামাও আর্থিকভাবে খুব একটা স্বচ্ছল ছিলেন না। আট বছরের দুই যমজ ছেলে কে ভরণপোষণ করতেই টানাটানি লেগে যেত মামার। আমার কোনো ভাই ছিল না, বাবার মৃত্যুর পর মা খুব ভেঙে পড়েন। শুধুমাত্র আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই মামা নিজের কষ্ট স্বীকার করে আমাদের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। আমার এই একটাই মামা। আর কোনো মামা বা খালা নেই। অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তি হই তখন আমি। মামা কে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই অন্তত নিজের পড়াশুনার খরচ টা নিজে চালানোর জন্য তিনটে টিউশনি করতাম। সব মিলিয়ে মাস শেষে ৬০০০ টাকা হাতে আসতো।

সেদিন সন্ধ্যায় আনিকা কে পড়াতে গিয়ে দেখি আনিকার খুব জ্বর। আন্টি বাসায় ছিলেন না, আনিকার নানু কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলেন। বাচ্চা মেয়েটা কে এভাবে জ্বরে কাতরাতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছিলো। ওকে হালকা কিছু খাইয়ে মেডিসিন খাওয়ানোর সময় আংকেল এসে বললেন,

– চুমকি মা, তোমার এই মাসের বেতন ডা নিয়া যাইয়ো। আমি কিছুদিন থাকবো না তাই বেতন ডা দিয়া যাইতে চাইতেছি।

– জ্বী আচ্ছা।

মনে মনে খুব খুশি হলাম আমি। টাকাটা আমার দরকারও ছিল। ফর্ম ফিলআপের ডেট সামনে। পুরো টাকা ম্যানেজ করতে পারি নি এখনো। আংকেল কে তখন ফেরেশতা বলে মনে হল। আনিকা ঘুমিয়ে পড়েছিলো বলে আমি নিজেই আংকেলের কাছে ভিতরের রুমে গেলাম,

– আমি এখন চলে যাব আংকেল।

আংকেল বালিশে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। আমাকে দেখে সিগারেট টা বাইরে ফেলে দিয়ে উঠে এসে টাকা টা আমার দিকে এগিয়ে দিলেন। আমি হাত বাড়িয়ে টাকা নিতে যাব এমন সময় উনি আমার হাত টা খপ করে ধরে ফেললেন। ভয়ে আমি আঁৎকে উঠলাম। একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে আমার গা ঘেষে দাঁড়ালেন,

– আমারে সন্তুষ্ট করতে পারলে আরো অনেক টাকা পাইবা। শুধু টাকাই না, যখন যা চাও তাই….

আমি আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম হাত ছাড়ানোর। কিন্তু দানবের মত লোকটার সাথে পেরে উঠছিলাম না। দানব টা আমাকে টানতে টানতে বিছানার উপর নিয়ে ফেলে দিলো। আমি চিৎকার করতে নিলে আমার গায়ের ওড়না দিয়ে আমার মুখটা বেঁধে ফেললো। তারপর আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আমার। সিগারেট আর তার শরীরের উটকো গন্ধে আমার গা গুলাচ্ছিলো।

দু’চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। টপটপ করে চিবুক বেয়ে চোখের পানি পড়ছিলো নিঃশব্দে। জানপ্রাণ দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে ওই দানব টা আমার শরীরের অনেক জায়গায় নিজের হিংস্রতার ছাপ বসিয়ে দিয়েছে। এত ব্যথা লাগছিলো আমার,বলে বুঝাতে পারবো না। এভাবে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শেষ সর্বনাশ টা হওয়ার আগে হঠাৎ করে আন্টি চলে আসলেন। সৌভাগ্যবশত আনিকার ওই অবস্থা দেখে আমি সেদিন ঘরে ঢুকে মেইন দরজার ছিটকিনি লাগাতে ভুলে গিয়েছিলাম। আন্টিকে দেখে আমি যেন জানে পানি পেলাম। দ্রুত গিয়ে আন্টির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। আমার মুখ বাঁধা তখনো। এমন দৃশ্য দেখে আন্টি যেন হতভম্ব হয়ে গেলেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওই দানব টা আন্টির কাছে নালিশ দেয়া শুরু করলো,

– এমন নষ্টা মাইয়্যা মানুষ রাখছো আমাগো মাইয়্যারে পড়ানোর লাইগ্যা। খালি বাসায় আমারে একা পাইয়্যা উশলাইয়া দিতাছিলো। তিন আংগুইল্যা মাইয়্যা, আর শরীরের টান এত!

কথাগুলো শুনে সংগে সংগে আন্টি আমার চুলের মুঠি ধরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন। আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম। অনেক কষ্টে কাঁপা কাঁপা হাতে মুখের বাঁধন খুলে আন্টি কে সব সত্যি টা বলতে চাইলাম। কিন্তু আন্টি আমার কোনো কথাই শুনতে চাইলেন না। কাঁদতে কাঁদতে আমি হেচকি তুলে ফেলেছিলাম। আমার চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে আমাকে বাইরে নিয়ে এসে লাথি দিয়ে আবার ফ্লোরে ফেলে দিলেন। বাইরে এসে হাকডাক করে চেঁচাতে চেঁচাতে আশেপাশের সবাই কে জড়ো করলেন। পেছন পেছন ওই দানবটাও আসলো। সবার সামনে আন্টি আমার নামে আজেবাজে কথা বলে আহাজারি শুরু করে দিলেন। সাথে দানবটাও তাল মিলাতে শুরু করলো। আমি ভীড়ের মাঝখানে ফ্লোরে কাত হয়ে অসহায়ের মত পড়ে রইলাম। আমার উঠে দাঁড়ানোর মত শক্তি ছিল না একদম। ঠোঁট দিয়ে রক্ত পড়ছে। পুরো শরীরে ব্যথা। ওড়না টা কোনোমতে গায়ে জড়িয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আবার পড়ে গেলাম। সবাই ততক্ষণে ছিঃ ছিঃ শুরু করে দিয়েছে। পাশের বাসার কাজের বুয়া আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল।

এই ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকায় আমার নামে কুৎসা রটে গেল। মামা কে সবাই এক নামে চেনে। গরীব হলেও মামা খুব সম্মানী মানুষ ছিলেন নতুন বাজার এলাকায়। অথচ আমার কারণে মামা কারো কাছে মুখ দেখাতে পারছিলেন না। উঠতে বসতে মামী কথা শুনাতেন আমার মা’কে। ছোট বোন টা স্কুলে যেতে পারতো না আমার কারণে। স্কুলে গেলেই নাকি ওকে সবাই “বাজারের মেয়ের বোন” বলে ক্ষেপাতো। মামা আর মা আমাকে বিশ্বাস করলেও তাদের কিছু করার ছিল না। প্রথমত মামা’র কোনো আধিপত্য ছিল না, আর্থিকভাবেও দূর্বল। আর দ্বিতীয়ত মামা ছিলেন অশিক্ষিত এবং খুব সহজ সরল মানুষ।

বাসায় টিকে থাকাটা আমাদের তিনটে প্রাণীর জন্যে খুব দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছিলো দিনদিন। বাসায় মামীর অত্যাচার আর বাইরে তো বের হওয়ারই কোনো উপায় ছিল না আমার। সারাক্ষণ একটা ঘরে বন্দী থাকতাম। তিনবেলার মধ্যে একবেলা খেলে খেতাম, না খেলেও দেখার মত কেউ ছিল না। মামীর অপমানে অতিস্ট হয়ে মা ও একসময় আমাকে অভাগিনী বলে দিনে পাঁচ ছয়বার মরার কথা বলতেন। মামা ছিলেন নিরুত্তাপ। সংসারের শান্তির জন্য মুখ বুজে সব সহ্য করতে হত তাকে। যে বাড়িটায় আমরা থাকি, এই টিনশেডের হাফ বিল্ডিং এর বাড়ি টা নানা মারা যাওয়ার আগে মা আর মামার নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিলেন। সহায় সম্বল বলতে মামার এই বাড়িটুকুই আছে। তাছাড়া মামার মুদি দোকানের ব্যবসাও এখানে। তাই এখান থেকে অন্য জায়গায় শিফট করা সম্ভব ছিল না।

অন্তু কে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালবাসতাম, ভরসা করতাম। সব কিছু শোনার পর অন্তুও কেমন যেন বদলে যেতে লাগলো। মামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অন্তু কে একদিন বললাম,

– আমাকে নিয়ে যাও এই জাহান্নাম থেকে। এখানে থাকলে আমি মরে যাব। চলো না আমরা পালিয়ে যাই।

আমার আর্তনাদ শুনে অন্তু দিশেহারা হয়ে যাবে। ছুটে এসে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে,এ বিশ্বাস আমার ছিল। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে অন্তু সেদিন আমার মুখের উপর বলে দিয়েছিলো,

– দেখো চুমকি, তোমাকে আমার বাড়ির কেউ মেনে নিবে না। তাই আমি অযথা আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছি না। আমাকে আর বিরক্ত করো না প্লিজ।

একটা দূর্ঘটনা,একটা মিথ্যে অপবাদ এক নিমিষেই যেন আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমি হারে হারে টের পাচ্ছিলাম বাপ মরা একটা মেয়ের যন্ত্রণা কতটুকু হতে পারে! এই দিনগুলোতে আমার সময় যেন কাটতেই চাইতো না। সারাদিন মনে মনে নিজের সাথে অনেক কথা বলে চলতাম। তখন আমার একমাত্র সংগী আমি নিজেই। ১২ বছরের ছোট বোন টা তেমন করে কিছু বুঝতে না পারলেও, এতটুকু ঠিক বুঝতে পেরেছিলো যে আমি নষ্ট হয়ে গেছি। আমার কাছে আসা পাপ। তাই সেও যত সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলতো। আমার না বাবার কথা মনে পড়তো খুব। নির্ঘুম রাতগুলো তে বাবার সাথে আনমনে কথা বলে যেতাম। বাবা কে প্রায়ই প্রশ্ন করতাম,

– আচ্ছা বাবা তুমি তো কখনো আমাকে ওই দানবটার মত বিশ্রীভাবে স্পর্শ করো নি। তোমার চোখে তো আমি কখনো কোনো লোলুপতা দেখি নি। ওই চোখে শুধু স্নেহের ছায়া দেখতাম সবসময়। তাহলে তোমার বয়সী ওই দানবটা কেন এমন করলো আমার সাথে। একটুও মায়া হল না আমার জন্য?! জানো বাবা, এখন মামার সামনে যেতেও প্রচণ্ড ভয় লাগে আমার।

কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠতাম। নামাজে মোনাজাতে নিজের মৃত্যু কামনা করতাম। কিন্তু কখনো সুইসাইডের কথা মাথায় আসে নি।

দিন এভাবেই যাচ্ছিলো। এর মধ্যে মামী একদিন একটা বিয়ের সম্বন্ধ আনলেন তার দুঃসম্পর্কের এক আত্নীয়ের মাধ্যমে। পাত্র প্রবাসী, ওমানে থাকে। বয়স ৪২। মামীর ভাষ্যমতে,

– রাজপুত্র জুটছে আমাদের চুমকির কপালে। ছেলের টাকা-পয়সার অভাব নাই। হ, বয়স একটু বেশি, দেখতে যেমনতেমন হইলেও চুমকির মত মেয়েমানুষের জন্যে এই ছেলে রাজপুত্রই বলা যায়। নাইলে এই অবস্থার মইধ্যে এমন মেয়েরে কেউ বিয়া করবে! আমি তো চুমকির বিয়ার আশা ছাইড়াই দিছিলাম।

মামা প্রথমে রাজি হলেন না। কিন্তু মামীর জোরাজুরি তে শেষমেষ রাজি হতে বাধ্য হলেন। মায়ের এ ব্যাপারে কোনো ভূমিকা ছিল না। আর আমার মতামত? আমি তো মানুষ হিসেবেই গণ্য ছিলাম না। আমরা সবাই এ সংসারে কোণঠাসা ছিলাম। অবশ্য মামীকেও সব দোষ দেয়া যায় না। তিনি তো আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ না। অযথা পরের মেয়ের জন্যে এত ভুগতে যাবেন কেন! যাই হোক, পাত্রপক্ষ আমাকে দেখতে আসলো। দেখে তাদের পছন্দও হল। তারপর দেনাপাওনার হিসেবের বেলায় পাত্রের চাচা বললেন,

– মেয়ে তো মাশাল্লাহ্ ভারী সুন্দরী। তাই সে হিসেবে আমরা খুব বেশি কিছু আবদার করবো না। নগদ ১ লাখ টাকা আর ১ টা মোটরসাইকেল দিলেই আমরা মেয়ে ঘরে উঠাইয়া নিবো, ইনশাআল্লাহ্‌।

মামা এ কথা শুনে মামীর দিকে শুধু একবার আড়চোখে তাকালেন। পরিস্থিতি বুঝে মামী বলে দিলেন,

– মোটরসাইকেল দিতে পারবো না ভাইজান। মেয়ের গায়ে তো স্বন্ন দিতে হবে। তাছাড়া ছেলে কি বিদেশে মোটরসাইকেল নিয়া যাবে? এমনেও মেয়ে যেমন সুন্দরী তেমন গুণবতী। আপনাদের ছেলে সাত জনমের ভাগ্য কইরা এমন বউ পাইতেছে। তাই…

একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পাত্রের চাচা এতেই রাজি হলেন।পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর মামা সাফ জানিয়ে দিলেন মামী কে, এত টাকা উনি নগদ দিতে পারবেন না। আর স্বর্নের গয়না কোথ থেকে পাবেন! মামী বললেন,

– আঃ মরণ, তোমার আদরের ওমন সুকন্যা ভাগ্নির যে বিয়ে হইতেছে, এডাই তো অনেক বেশি। আর দেয়ার চিন্তা তোমার করতে হবে না। আমি ভাবী মানে পাত্রের মা’র সাথে কথা বইলা নিবো। যেমনেই হোক আমি এই আপদ বিদায় করবো।

বিয়ের দিনতারিখ ঠিক হল। দিন ঘনিয়ে আসছে আর এক অজানা আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করে নিচ্ছে। সেদিনের পর থেকে কোনো পুরুষমানুষের ছায়াও আমি সহ্য করতে পারি না। তাই বাসর রাত টা কে আমি ধরে নিয়েছিলাম এক বিভীষিকাময় রাত। বিয়ের ঠিক দু’দিন আগে সংবাদ এলো, ছেলেপক্ষ এ বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানালো না। মামীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। এ বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর আমার গায়ে “অপয়া,অলক্ষ্মী” তকমাগুলো ভালভাবে লেগে গেল। মানসিক অত্যাচার আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল। এ বাড়িতে মায়ের অংশ ছিল বিধায় মামী শুধু পারছিলেন না আমাকে গলাধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে। উঠতে বসতে খাওয়ার খোটা শুনতে হত। আমার পড়াশুনা প্রায় বন্ধই হয়ে গেল। নিজেকে এ পৃথিবী তে খুব অনাকাঙ্ক্ষিত আর মূল্যহীন মনে হত। কোনো কিছুই স্বাভাবিকভাবে নিতে পারতাম না।

মামীর এক ফুফাতো বোনের ছেলের বৌভাত। তারা আমাদের পাড়াতেই থাকে। বিয়ের দিন সারাদেশে হরতাল চলছিলো বিধায় ওরা বউ কে নিয়ে পার্লারে যেতে পারছিলো না। আর এলাকার মধ্যেও তখন কোনো পার্লার ছিল না। তাই মামীর কাছে এসেছিলো একটু ভালভাবে সাজিয়ে দিতে। মামী এমনিতে টুকটাক আধুনিক হলেও সাজগোজের ব্যাপারে ছিলেন খুবই আনাড়ি। নিজের মুখ রক্ষা করতে কাজের বাহানা দেখিয়ে মামী আমাকে বললেন বউ সাজিয়ে দিতে। মামী জানতেন বাবা বেঁচে থাকতে আমি পার্লারে টুকটাক কাজ শিখেছিলাম। আমি ভয়ে ভয়ে কিন্তু খুব যত্ন নিয়ে বউ সাজিয়ে দিলাম। বউয়ের সাজ দেখে সবাই খুব প্রশংসা করলেন। একজন তো বলেই বসলেন,

– ঠিকঠাক সুযোগ পেলে এই মেয়ে একদিন নামকরা বিউটিশিয়ান হতে পারবে।

আমি শুধু একটা শুকনো হাসি দিলাম। মামা,মামী, মা সবাই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আমার গুণগান মামী একদম সহ্য করতে পারতেন না। তারা চলে যাওয়ার পর “এত ভাল করে কেন সাজিয়ে দিলাম” এজন্য মামী আমাকে খুব মেরেছিলেন সেদিন। এত মার মেরেছিলেন যে রাতে জ্বর চলে এসেছিলো। মা যদি না ফিরাতেন তাহলে ওইদিন ই মনে হয় আমার জীবনের শেষ দিন ছিল। মামা তখন বাড়িতে ছিলেন না। ওইদিন রাতেই আমি প্রথমবারের মত সুইসাডের সিদ্ধান্ত নিলাম। আর যে পারছিলাম না, নষ্টা হই আর যাই হই, রক্তে মাংসে গড়া মানুষ তো! রাতে সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর মামা চুপিচুপি আমার ঘরে এলেন। তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে এ পর্যন্ত বলেই চুমকি আপু থেমে গেল। আমি খেয়াল করলাম চুমকি আপুর চোখের পাপড়িগুলো ভেজা। কথা বলতে বলতে নিজের অজান্তে চোখ দিয়ে পানি পড়ছিলো তার। দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে স্থির হয়ে বসে রইলো কিছুক্ষণ। আমি খুব আতংকিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

– তারপর কি হয়েছিল চুমকি আপু? তোমার মামাও কি আমাকে থামিয়ে দিয়ে চুমকি আপু আবার বলতে শুরু করলো,

– মামা পা টিপে টিপে বাইরে এসে বারান্দায় যে কাঠের বেঞ্চি টা পাতা ছিল, ওখানে আমাকে নিয়ে বসলেন। তখন শীত ছিল খুব। জ্বরে কাঁপছিলাম আমি। মামা নিজের গায়ের চাদর টা আমার গায়ে জড়িয়ে দিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর এই প্রথম আমাকে কেউ এমন করে স্নেহ করলো। মামার প্রথম কথাটা ছিল, “আমি একটা অন্যায় কইরা ফেলছি রে মা। তুই কি আমারে ক্ষমা করতে পারবি?” আমি অবাক হয়ে মামার মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। আমাকে চুপ থাকতে দেখে মামাই বলা শুরু করলেন, ” তোর বিয়া ডা আমিই ভাইঙ্গা দিছিলাম। ওই সংসারে তুই কখনো সুখী হইতে পারতি না। ওরা খুব লোভী আর ছেলের চরিত্রও খুব একটা সুবিধার না। আমি খোঁজ নিয়া দেখছি। আমি জানি, তুই এই জাহান্নাম থাইকা মুক্তি পাওনের দিন গুণতাছিলি। কিন্তু বিশ্বাস কর্, ওরা তোরে ভাল থাকতে দিতো না।” আমি আর কান্না ধরে রাখতে পারলাম না। মামার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদলাম কিছুক্ষণ। তারপর খানিক বাদে চোখের পানি মুছতে মুছতে মামার কাছে জানতে চাইলাম,

– কিন্তু মামা, বিয়েটা ভাঙলে কি করে?

– ওই যে ওই পাড়ার আব্বাস তালুকদার আছে না? ওর মাইয়্যার তো বয়স হইয়্যা যাইতেছে কিন্তু গায়ের রঙ কালো হওয়ার কারণে পাত্র পাইতেছে না। আব্বাস মিয়ার তো বিশাল স্বয়-সম্পত্তি। ভাল যৌতুক দেয়ার ক্ষমতা আছে। ঘটক রে দিয়া ছেলের বাড়ি তে ওই প্রস্তাব পাঠাইছি। ছেলের বাপ চাচা আব্বাস মিয়ার সম্পত্তি দেইখাই লোভে পইড়া গেছে। আর আমি তো জানতাম এইডাই হবে। আমার এই সহজ সরল মামাটাও যে এত বুদ্ধি খাটাতে পেরেছে শুধু আমাকে বাঁচানোর জন্য তা দেখে আবারো নিজেকে মানুষ ভাবার সুযোগ পেলাম।

– আমি জানি রে মা, তোর এখানে থাকতে অনেক কষ্ট হইতেছে। কিন্তু আমি যে নিরুপায়। তুই কি আমারে ভুল বুঝতেছিস?

– না মামা। আমি সব বুঝি। আমার মনে কোনো ক্ষোভ নেই সত্যি। মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,

– শোন্, যা বলার জন্য তোরে এইখানে নিয়া আসছি। ওইদিন সালেহার মাইয়্যা ডা কি যেন বলতেছিলো, ভাল সুযোগ পাইলে তুই বিসিশিয়ান না কি যেন হইতে পারবি…!

– ওইটা বিউটিশিয়ান মামা। কিন্তু কেন?

– এইডা কি অনেক বড় কিছু?

– হ্যাঁ, ঠিকভাবে নিজের পরিচিতি তৈরী করতে পারলে অনেক বড় কিছুই।

– এইডা হইতে হইলে কি কি করতে হয়?

– বিভিন্ন কোর্স আছে। ওগুলো করতে হয়। কেন মামা?

– তোরে আমি এইডা তে ভর্তি করাবো।

– কি বলো মামা! এইটাতে অনেক খরচ, তুমি জানো না। আর তাছাড়া বিউটিশিয়ান হওয়া এত সোজা না। অনেক খাটতে হয়। আবার অনেক সময়ও দিতে হয়।

– দিবি। সময় দিতে হইলে দিবি। খাটতে হইলে খাটবি। আর খরচের ব্যাপার টা আমার উপর ছাইড়া দে। আমি যে তোরে অনেক বড় দেখতে চাই রে মা।

– কিন্তু মামা, আমার তো পড়াশুনাই বন্ধ হয়ে গেছে।

– পড়াশুনাও করবি, পাশাপাশি এইডাও করবি। শোন, জীবনে কষ্ট না করলে কখনো বড় হইতে পারবি না। আর এখনো যে খুব সুখে আছোস, তা তো না।

– ঠিক আছে। তোমার কথাই মানলাম। কিন্তু মামা, মামী এখন আর আমাকে পড়াশুনা করতে দিবে না। মামা একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন, – জানি রে মা। সেই উপায়ও বের করছি। এইখানে থাইকা তুই কিছু করতে পারবি না। তোরে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা কইরা দিমু। পারবি না থাকতে?

– পারবো। মামী কে কি বলবা?

– তারে বলবো, তুই একটা চাকরী পাইছস। তাই চাকরীর জন্য তোরে ওইখানকার হোস্টেলে থাকতে হবে। চাকরীর কথা শুনলে সে আর “না” করবে না।

– কিন্তু মামা, এখানেও ঝামেলা আছে। চাকরীর কথা বললে প্রতি মাসে মামীর কাছে টাকা পাঠাইতে হবে। টাকা কই পাবো?

– সেই ব্যবস্থাও আমি কইরা রাখছি।এলাকা থাইকা অনেক দূরে রংমিস্রির কাজ নিছি। দোকানে বসার সাথে সাথে এই কাজও করবো। তারপর তোর মামীর হাতে মাস গেলে ২০০০ টাকা তুইলা দিবো। বুদ্ধি ডা কেমন?

– না মামা, তোমার অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। বাদ দাও এসব চিন্তা। আমার কপালে যা আছে তাই হবে।

– পাগল মেয়ে আমার। জীবন একটাই। সময়ডাও খুব কম। এই অল্প সময়ের মধ্যে এত হতাশা নিয়া জীবন কাটানোর কোনো মানেই হয় না। তুই এখন যে জীবন ডা কাটাইতেছিস, এইডা কোনো জীবন না। বাঁচতেই যখন হবে তখন বাঁচার মতোই বাঁচ। মাথা উঁচু কইরা বাঁচ। আর তোর মা বইনেরেও তো তোরেই দেখতে হবে। আমি আর কতদিন! প্রতিদিন এমনে ধুইকা ধুইকা মরার চেয়ে, মাথার ঘাম পায়ে ফেইলা সফল হইয়া মরা ভাল।

আমিও ভেবে দেখলাম মামার কথাগুলোই ঠিক। মামার কথামতো আমি হোস্টেলে চলে গেলাম। নতুন করে আবার পড়াশুনা শুরু করলাম। পার্লারের কাজ শেখার জন্য ৬ মাসের কোর্সে ভর্তি হলাম। বাবার একাউন্টে কিছু টাকা ছিল। এই টাকার সাথে মামাও কিছু টাকা যোগ করে এইসব খরচ মিটালেন। দিনে ভার্সিটির ক্লাস করতাম আর সন্ধ্যেয় কোর্স করতাম। খুব খাটনি হত। তবুও হাল ছাড়ি নি। মরণকামড় দিয়ে এই সংগ্রামে নেমেছিলাম। এভাবে ধাপে ধাপে সব ধরনের কোর্স কমপ্লিট করলাম। পড়াশুনোর দিকে আমার খুব একটা মনোযোগ ছিল না কোনোকালেই। শুধু সার্টিফিকিট অর্জন ছিল আসল উদ্দেশ্য। তবে আমার ইংলিশের স্কিল খুব ভাল ছিল। কোর্স টা খুব আগ্রহ নিয়ে শেষ করলাম। এর মধ্যে আমার অনার্সও কমপ্লিট হয়ে গেল। কোনো চাকরীর চেষ্টা না করে খুব কম পুঁজি নিয়ে একটা ছোটখাটো পার্লার খুললাম। নাম দিলাম “সাজঘর”।

ভালো সাড়াও পেলাম। কিন্তু তারপরও অনেক বাঁধা এসেছিলো। এক এক করে সব বাঁধা অতিক্রম করে দিনের পর দিন আমি অভিজ্ঞ হয়ে উঠলাম। তারপর নিজের যোগ্যতার প্রমাণস্বরূপ অনেক সাহস নিয়ে “সাজঘরের” আরো তিনটি ব্রাঞ্চ খুলে ফেললাম। আজকের এই বিখ্যাত “বিউটিশিয়ান চুমকি বনিতা” হওয়ার পেছনের গল্প টা খুব মসৃণ ছিল না। এ পর্যন্ত আসার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমাকে। এমনকি আপন মানুষগুলোর সাথে ছলনার আশ্রয়ও নিতে হয়েছে। মেয়েদের সাফল্য অর্জনের পথ টা খুবই পিচ্ছল। খুব সাবধানে বুদ্ধি খাটিয়ে ধের্য্য ধরে নিজের সম্মান রক্ষা করে এই পথ পারি দিতে হয়। মামা মাঝখানে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন জোর করে মামা কে সব কাজ থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসি। মামার এখন বয়স হয়েছে। যার হাত ধরে আমি এ পর্যন্ত এসেছি বৃদ্ধ বয়সে আমি তার হাতের লাঠি হতে চেয়েছি। তারপর পুরো সংসারের দায়িত্ব আমি বুঝে নিই।

পুরনো বাড়ি টা ভাড়া দিয়ে নতুন ফ্ল্যাট কিনি। এখন শুধু আমার রোজগারে সংসার চলে। দুই মামাতো ভাইয়ের পড়াশুনা, আমার বোনের পড়াশুনা, মা, মামা, মামী সবার দায়িত্ব এখন আমার উপরে। মামী এখন আমাকে খুব কদর করেন। যদিও আমি এসব চাই না। তবুও সংসারের প্রতিটা কাজে মামী আমার মতামতের প্রাধান্য দেন বেশি। এতগুলো মানুষের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে আমার কখনো এতটুকুও খারাপ লাগে নি। বরং খুব আনন্দ হয়েছে। মনের মধ্যে খুব প্রশান্তি কাজ করে। এই যে চারিদিকে আমার এত নামডাক, আমি ভুলেও কখনো এ নিয়ে অহংকার করি না। কারণ আমি আমার অতীত ভুলে যাই নি। নিজেকে এখন সর্বসুখী মনে হয় জানিস! খুব কৌতুহলী হয়ে চুমকি আপু কে জিজ্ঞেস করলাম,

– কিন্তু তুমি বিয়ে করো নি কেন এখনো?

– দরকার মনে করি নি। আর কেন জানি পুরুষ মানুষের উপর থেকে বিশ্বাসটাই উঠে গিয়েছিলো। দেখ্, আমি কিন্তু এতকিছুর পরও মানসিক শক্তি হারাই নি। কখনো থেমে যাই নি। হ্যাঁ, ধৈর্য্যহীন হয়ে সুইসাইডের কথা ভেবেছিলাম ঠিকই পরে কিন্তু আবার ঠিকই সামলে নিয়েছি। অবশ্য এই পুরোটা অবদান ই আমার মামার। ইনফ্যাক্ট, আমার এ পর্যন্ত আসার পেছনে সবটুকু অবদান ই তো মামার। অথচ আজকালকার ছেলেমেয়েরা কিছু হতে না হতেই হতাশ হয়ে পড়ে। আত্নবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ভয়ংকর রকমের ডিপ্রেশনে চলে যায়। সুইসাইড এটেম্প নিয়ে ফেলে। এগুলো দেখে আমি খুব অবাক হয়ে যাই। কিন্তু তারা এটা বুঝে না যে, সুইসাইড কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না। মরে গেলে তো মরেই গেলাম। আজ মরলে কাল দুইদিন। কিন্তু মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মাথা উঁচু করে সম্মানের সহিত বাঁচার নামই হচ্ছে জীবন।

প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্ত নতুন করে নিজের মত করে উপভোগ করার নামই হচ্ছে জীবন। জীবনে দুঃখ, হতাশা, উথানপতন থাকবেই। এসব কিছু জয় করে সামনে এগিয়ে চলার নামই হচ্ছে জীবন। আর সবসময় এটা মাথায় রাখা দরকার, আমার জীবন টা শুধু আমার একার না। আমার জীবনের সাথে আরো অনেকের জীবন জড়িয়ে আছে। আমার অনুপস্থিতি বা ব্যর্থতা তাদের জীবনেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। তাই এসব কিছু ভেবে নিজের মত করে ছোট ছোট আনন্দ সুখগুলোকে আঁকড়ে ধরে লড়াই করে যেতে হবে। যাই হোক, আজ পুরো জীবনকাহিনী বলে ফেললাম তোকে। তুই বোর হস নি তো অবন্তী? আসলে তুই যখন টিউশনির কথাটা তুললি তখনি হঠাৎ মনে পড়ে গেল আমি চুমকি আপুর একটা হাত ধরে বললাম,

– তুমি জানো না চুমকি আপু, নিজের অজান্তেই তুমি আমার কত বড় উপকার করেছো! চুমকি আপু মুচকি হাসি দিলো,

– মানে? কি উপকার?

– ও তুমি বুঝবে না। আচ্ছা আপুর কি এখনো হয় নি?

আপুর কথা বলতে বলতেই আপু চলে এল। চুমকি আপু হচ্ছে আমাদের ফ্যামিলি বিউটিশিয়ান। ফ্যামিলির সবাই চুমকি আপুর এই সাজঘরেই আসে। এছাড়াও অনেকদিনের পরিচিত বলে চুমকি আপুর সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠতাও রয়েছে খুব। আমরা চুমকি আপুর পুরনো ক্লায়েন্ট। আপু আজ চুল কাটাতে, মেনিকিউর, পেডিকিউর, আর ফেসিয়াল করতে এসেছে। আমার খুব মন খারাপ ছিল বলে আপু আমাকেও সাথে করে নিয়ে এসেছে। আজ চুমকি আপু কে ফ্রি পেয়ে আপু কে ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে আড্ডা দিতে বসে গিয়েছিলাম চুমকি আপুর সাথে। তারপর কথাপ্রসঙ্গে আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা টিউশনি বা একটা কাজ যোগাঢ় করে দিতে বলছিলাম চুমকি আপু কে।

বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে প্রথমে সুইসাইড নোট টা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেললাম। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম, এটা আমি কি করতে যাচ্ছিলাম! সামান্য রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে আর স্যার দুটো কড়া কথা শুনিয়েছেন বলে আমি সুইসাইড করতে যাচ্ছিলাম! ওহ না, তার সাথে তো আবার সায়েমের প্রত্যাখানও আছে। সায়েম কে আমার মনের কথা জানানোর পর সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি আত্নহত্যা করলে তো আমার বাবা-মা’কে ফিরিয়ে দেয়া হত। নাহ, অনেক ভুলভাল চিন্তা হয়েছে। এখন থেকে সব পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। চারপাশে প্রচুর পজিটিভ ভাইবস রাখতে হবে। মনে মনে শপথ নিলাম, আজকের পর থেকে আর কখনো নিজের উপর আত্নবিশ্বাস হারাবো না। এত সহজে হাল ছেড়ে দিবো না।

কিছুদিন পর সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চা খেতে খেতে পেপার টা হাতে নিলাম। পেছনের পাতা টা মেলে ধরতেই একটা হেডলাইনে চোখ আটকে গেল, “নতুন বাজার এলাকায় কালাম শিকদার নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীর ১৯ বছরের মেয়ে আনিকা গতকাল রাতে গণধর্ষণের স্বীকার হয়েছে”

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত