দে দৌড়

দে দৌড়

জাফর ইকবাল স্যারের কাছে একদিন এক কলেজ পড়ুয়া মেয়ে জানতে চাইল,

“আপনি কি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন?”

স্যার তখন হাসি মুখে উত্তর দিলেন,”ভাগ্যে আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি। কেননা, আমি দেখেছি, পৃথিবীতে যে যতবেশি পরিশ্রম করে তার ভাগ্য তত ভালো!” জাফর ইকবাল স্যারের গল্প এইখানেই শেষ। এইবার আমি নিজের কথা কই। ছেলেবেলায় এক ইস্কুল মাস্টারের কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম,”সাফল্যের সূত্র কি?” স্যার বললেন,”সাহস এবং সেক্রিফাইস।” আমি কইলাম,”আচ্ছা বেশ!” স্যার আমারে ছোট্ট একটা উদাহরণ দিতে গিয়ে বললেন,”মন কর যে, তুচ্ছ একটা বন্দুক কেনার সামর্থ তোর নাই।”

“হু।”

“তবুও সাহস করে তোকে কামান চাইতে হবে।”

“হু।”

“এরপর বগলের নিচ দিয়া দশটা রকেট-লাঞ্চার চলে গেলেও ধরবি না।”

“অকে।”

“পায়ের কাছে গড়াগড়ি খেলেও লোভ করবি না।”

“আচ্ছা।”

“তোর সব ধ্যান-জ্ঞান হল কামান নিয়া। তুই শুধু কামান খুজে বেড়াবি।”

“জ্বি।”

“নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার প্রতিটা হালাল-হারাম রাস্তার খোঁজ নিবি।”

“ওকে।”

“হালাল-হারাম দুইটাতেই দৌড়াতে বলছি কিন্তু!”

“জ্বি, আমি শুনেছি।”

“হারাম মানে কি?”

“নিষিদ্ধ!”

“হা। সিদ্ধ এবং নিষিদ্ধ দুইটাতেই দৌড়াতে হবে।”

“দৌড়াব।”

“এরপরে নিজের সাধ্যের মধ্যে সবচাইতে হালাল উপায়ে একটা কামানের মালিকানা আদায় করে নিতে হবে।”

“জ্বি।”

“আমার কথায় কোন ভেজাল আছে?”

“নাহ।”

“আদায় করে নেওয়ার কথা কেন বলছি জানিস?”

“কেন?”

“তোর জন্মের আগেই পৃথিবীর সব মানুষ পৃথিবীর সব কামানের উপর নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে রাজ্যপাট মেলে বসে রয়েছে। সত্যই যদি তুই একটা কামানের মালিকানা পেতে চাস, তোকে ওদের বিরুদ্ধে ফাইট দিতে হবে..”

“দিব।”

“বিজয়ী হতে হবে।”

“হইব।”

“তাই যদি পারিস তবে তুই হবি সেই অমৃতের সন্তান, যার হাতে রচিত হবে আগামীর ইতিহাস।”

“রচিব!”

“শাব্বাস বেটা সাহসের বাচ্চা, এইবার তাইলে দৌড়া।”

“জ্বে আচ্ছা।”

“যাওয়ার আগে আরেকটা কথা শুনে যা..”

“কি?”

“পাঠ্যবইয়ের খরগোশ আর কচ্ছপের গল্পটা মনে আছে?”

“জ্বি আছে।”

“এইটা মন থেকে মুছে ফেল। এইটা একটা ফালতু উদাহরণ। ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে..”

“কি বলে?”

“একটা কচ্ছপ ও খরগোশের মধ্যে দৌড় হলে, কচ্ছপ জেতে ভাগ্যগুণে, খরগোশ আপন হিম্মতে।”

“জ্বি।”

“এখন আমারে বল, দৌড়ের মাঠে তুই খরগোশ হয়ে নামবি, নাকি কচ্ছপ?

পুরনো অভ্যাসবশত আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম,”কচ্ছপ!” স্যার আমার কান বরাবর একটা চঠাস করে একটা থাবড়া বসিয়ে দিয়ে হুংকার দিয়ে বলে উঠেন,”খ-র-গো-শ!” কান্নাভেজা কণ্ঠে বললাম,”জ্বি, খরগোশ।” তিনি আবারও গর্জে উঠলেন,”খরগোশ।” এইবার আমিও পাল্লা হুংকার দিলাম,”খরগোশ মানে, খরগোশের আব্বা আমি!” “শাব্বাস বেটা খরগোশের বাচ্চা, এইবার যা, দৌড়া..” স্যারের কথার জাদুতে শুরুতে আমি হুদাই একটা দৌড় দিলাম। এরপর এই দৌড়টাই হয়ে গেল অভ্যাস। এই হল আমার যোগ্যতা।

জীবনে আর কিছু পারি বা না পারি, যখন যেইটা মন থেকে চেয়েছি, তারজন্যে সবার আগে সবচেয়ে সেরা দৌড়টা আমি দিতে পেরেছি! বগলের নিচ দিয়া রকেট লাঞ্চার যায়৷ যার-তার হাতে ধরা খায়। আমি ফিরেও চাই না। লোভ করি না। দূর থেকে অনেকেই আমারে বেকুব কয়। এতে আমার কিচ্ছুটি আসে যায় না প্রতিটা সাহসের বাচ্চা জানে- সে কি চায়, কেন চায় এবং কীভাবে চায় ইতিহাস তার পক্ষেই সাক্ষ্য দেয়, যার হাতে সে রচিত হয়…

প্রতিটা সাহসের বাচ্চা এখন এই কথা মানে যে, একটা কচ্ছপ ও খরগোশের মধ্যে দৌড় হলে কচ্ছপ জেতে ভাগ্যগুণে, খরগোশ আপন হিম্মতে সুতরাং দৌড়ের মাঠে কচ্ছপ কেন? তুমি বরং খরগোশ হয়েই নামবে এবং অবিরাম দৌড়াবে দিনভর দৌড়াবে রাতভর দৌড়াবে…

গল্পের বিষয়:
গল্প
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত