আমি নিশাতের দিকে আরও একবার তাকালাম।লাল খয়েরী মিক্সড শাড়িতে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগলেও ওর মুখের হাসিভাবটা এখনও আমার চোখে পড়েনি। আমি একটু চুপ থেকে বললাম,
-নিশাত নামের অর্থ জানেন?
মেয়েটা আমার কথায় সেই একই ভাবে তাকালো।অনুভূতিহীন চোখে।ওর এই মুখটা দেখে মনে হচ্ছে এ নামের অর্থ জেনে কি লাভ।জেনেও লাভ নেই না জেনেও লাভ নেই।মেয়েটা আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো,
-হু জানি।আনন্দ। মেয়েটার কথায় আমি একটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,
-জ্বী নিশাত নামের অর্থ আনন্দ।কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে ভেতরটা নিস্প্রভ।কোন আনন্দ নেই।নেই কোন হাসির রেখা।নেই অনুভূতি। আমার কথায় মেয়েটা এবার কিছু বললো না।একদৃষ্টিতেই তাকিয়ে রইলো ধোয়া ওঠা কফির মগের দিকে।মেয়েটা কফিতে চুমুক দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-আপনি হয়তো কারনটা জানেন।
-হু। তবে এই সামান্য কারনটাই কি পাত্রপক্ষগুলার মেয়ে পছন্দ না হওয়ার কারন? আমার কথায় নিশাত একটু অবাক চোখেই তাকিয়ে বলে,
-এটা আপনার কাছে সামান্য মনে হচ্ছে?আপনি নিজেও এই কারনটার জন্যেই বাসায় গিয়ে বলবেন মেয়ের নাক বোচা,এ মেয়েকে বিয়ে করা সম্ভব নয়। নিশাতের কথায় আমি হাসি।মেয়েটা একঘেয়েমি তে চলে গেছে।অবশ্য এটাই স্বাভাবিক।কোনকিছু বারবার ঘটতে থাকলে একসময় সেটাই বিশ্বাসে রূপ ধারন করে।আমি নিশাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,
-নাকটা ঠিকঠাক আছে।তবে ওজনটা হয়তো বেশি। আমার কথায় মেয়েটা এবার চট করেই বললো,
-এইতো আমাকে পছন্দ না হওয়ার নতুন কারন খুজে বের করেছেন।
নিশাতের কথায় আমি আবারও হাসি।মেয়েটাকে যতটা গম্ভীর ভেবেছিলাম ঠিক ততটা গম্ভীর নয়।মন খুলে কাউকে বিশ্বাস করে কিছু বলতে পারলে এই মেয়েগুলাই সবচেয়ে বেশি কথা বলবে।এরা চুপচাপ স্বভাবের হলেও যার সাথে ফ্রি হয়ে যায় তার কাছে সব গোপন কথাও নির্দিধায় বলে ফেলে।
নিশাতের বাবা মার ডিভোর্স হয়ে গেছে বছর সাতেক হবে।তবে কেন হয়েছে সে কারনটাও আমার অজানা।জানতেও চাইনা। নিশাত তার বাবা মায়ের ডিভোর্সের পর থেকে ই ওর ফুফুর বাসায় থাকে।অবশ্য ওর ফুফুই ওকে নিজ ইচ্ছেয় রেখেছে।বলতে গেলে ভালবাসে নিজের মেয়ের মতই।কিন্তু এরকম ভাঙা কোন ফ্যামিলির মেয়ে নিতে নারাজ পাত্রপক্ষ গুলা বেশ সহজেই না করে দিয়েছেন।তবে আমার ক্ষেত্রে এই কারনটা একদমই তুচ্ছ।অন্যকারও কাছে জটিল তবে আমার কাছে নয়। আমি নিশাতের দিকে তাকিয়ে এবার মুচকি হেসে বললাম,
-আমার তো আপনার মত মেয়েই পছন্দ।তুলোর বস্তার মত।এই টাইপের মেয়েগুলা খাবে আর বরকে খুব ভালবাসবে। আমার কথায় নিশাত রেগে গেলো নাকি খুশি হলো বুঝতে পারলাম না।মেয়েটা একটু চুপ থেকে আস্তে করে বললো,
-আমি তুলোর বস্তার মত?
-কেন,আমি বললে সমস্যা?অবশ্য বিয়ের পর আমি তুলোর বস্তা বলেও ডাকতে পারি।
আমার কথায় নিশাত কিছু বলে না।চুপ করে থাকে।যে নীরবতা বলে দিচ্ছে তুলোর বস্তাতে ও রাগ করে নি।করেছে অভিমান।ভালবাসা না পাওয়া এই মেয়েগুলাকে একটু ভালবাসা দিলে তারা হাজারগুন ভালবাসা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে।তারা চায় কেও তাকে একটু ভালবাসুক।কাছে ডাকুক।কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে জড়িয়ে ধরুক শক্ত করে।ব্যাস এটুকুই।এরা অল্পতেই খুশি। আমি নিশাতের দিকে তাকিয়ে বললাম,
-মেয়ে তুলোর বস্তা হলেও আমার একেই লাগবে। নিশাত আমার কথায় গোমরা মুখে বলে,
-সবাই এটা বলেই চলে যায়।আপনিও যাবেন।
নিশাতের কথায় আমি কিছু বলি না।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসায় ফোন দেই।এই মেয়েটাকে হারানো যাবে না।দ্রুত বিয়ের দিন ঠিক করতে বলে আমি ফোনটা কেটে নিশাতের হাতটা একটু শক্ত করেই ধরি।মেয়েটা আমার দিকে তাকায় না।না তাকালেও আমি ওর জলে ভরা চোখ বেশ স্পষ্টভাবেই দেখতে পাই।আমি হাতটা ছাড়তে চাইলেও নিশাত ছাড়ে না।মেয়েটা এবার আমার থেকেও দ্বিগুণ শক্ত করে ধরেছে।নিশাতের হাত আমি ছাড়ি না।এ হাত ছাড়াও যাবে না।কোন ভাবেই না, কোন মতেই না।